ভাইয়ের_বন্ধু_যখন_বর😍 |সিজন_২| পর্ব (২)
ইচ্ছে গুলো কখনো কখনো কী অদ্ভুত হয় তাই না।যেমন আজ ইচ্ছে করলো,"রাতের আঁধারে মেঘকে উঁকি দিয়ে যে এক ফালি চাঁদ দেখা দিচ্ছে,তাকে মুগ্ধ নয়নে দেখার"।
আমি কোনও জ্যোতির্বিদ নই,যে চাঁদকে দেখে ভবিষৎবাণী করবো।আমার কাছে চাঁদ মানে এখনো রুপালী থালার মতো।যার স্নিগ্ধ পবিত্রতায় আচ্ছন্ন গোটা সৃষ্টি।(কলমে_ইয়াসমিন তানিয়া)
বারান্দায় রাখা দোলনায় বসে কানে হেড ফোন লাগিয়ে মনের আনন্দে গান শুনছি আর হাতে রাখা ডেরিমিল্ক চকলেট টা খেতে খেতে ভেবে চলছি এমন হাজারো উদভ্রান্ত সব কথা।আজ অনেক দিন পর পূর্ণিমা দেখবো বলে বসে আছি। মনটা আজ আমার ভীষণ অস্থির।ভীষণ ভাবে বিরক্ত আমি।আর এর কারণ একজনই,আর সে হল ওয়ান ওনলি মিস্টার জিসান।আজ সারাদিন চলে গেলো কিন্তু জিসানের কোনও ম্যাসেজ আসে নিই।দু'বছরের মধ্যে এমন ঘটনা এই প্রথম হলো।আমাকে জ্বালানোর এক অদ্ভুত ব্যবস্থা তার মনে হচ্ছে।
আমার হাতের ফোনটি,আমার এস এস সি পরীক্ষার পর পরই জিসানের পরিবার থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছিলাম।ফোনটা খুব দামি ছিলো তাই প্রথমে উপহারটি নিতে একদমই মন সায় দেয় নিই।কিন্তু জিসানের মা রাবেয়া আন্টির কারণে অনিচ্ছা সত্যেও না নিয়ে পাড়লাম না।কারণ আমাকে উনি অনেক আদর করে,একদম মেয়ের মতো করে।কিন্তু আমি খুব ভালো করেই জানি উপহারটা আন্টি নিজের হাতে দিলেও,উপহার দেওয়ার মালিক অন্য কেউ।আর আমার সন্দেহই ঠিক ছিলো,সে দিন বাসায় এসে মোবাইলটা অন করার সাথে সাথে একটা ম্যাসেজ আসে আমার ফোনে।
"congratulation জান।অনেক অনেক শুভেচ্ছা আমার পিচ্ছি পাখিটাকে।জীবনে আরো একধাপ এগিয়ে আসলি তুই,আমার কাছে।তোকে পাবার অপেক্ষাটাও কিছুটা কমে আসলো আজ।আমি জানতাম আমার জানপাখিটা এভাবেই একদিন অল্প অল্প করে আমার দিকে এগিয়ে আসবে।এখন হয়তো পাখিটা আমার কিছুটা হলেও বড় হয়েছে।এখন তো আমায় একটু বুঝার চেষ্টা করবি।নাকি এখনো আগের মতো বাচ্চামি করে আমাকে ভুলে যাবি।এমন করার চিন্তাও করিস না পাখি।তাহলে পথভোলা পাখিকে আমি নীড়ে বেঁধে রাখবো।তখন কিন্তু তোর জন্য ভালো হবে না।কারণ
আমার মনটা আজকাল ভীষন বেহায়া হয়ে যাচ্ছে জানিস!তোকে দেখার জন্য।একবার হাত দিয়ে তোকে একটু ছোঁয়ার জন্য।তোকে শক্ত করে আমার এই সিক্ত বুকে একটু জড়িয়ে ধরার জন্য।
জানিস,পাখি!আজ আমি ভীষণ ক্লান্ত। এখন তোর কাঁধে মাথা রেখে ক্লান্ত গুলো দূর করার জন্য তোকে খুব প্রয়োজন।রাতে শান্তির একটু ঘুমানোর জন্য,তোকে খুব প্রয়োজন।আমার এই প্রয়োজন গুলো বক্সে বন্ধ করে রেখেছি,যাতে আমি পাগল না হয়ে যাই।একদিন তোর সামনে আমার এই প্রয়োজনের বক্সটা খুলবো,আর এক এক করে সব অপূর্ণ ইচ্ছাগুলো তোকে দিয়ে পূর্ণ করাবো।মনে রাখিস!
শোন!তোর পিঠের মাঝবরাবর তিলটা আজকাল আমাকে খুব জ্বালাচ্ছে জানিস!সাবধান করে দে,ঐ বেহায়া তিলকে আমার ঘুমে যেনো বার বার এসে না জ্বালায়।তা না হলে আমি এসে ওকে পুড়িয়ে ফেলবো।
কারণ আমি পুড়ছি,ভীষন ভাবে পুড়ছি।মনে রাখিস আমার দহনে তোকেও আমি একদিন পুড়াবো।
আমি তোর থেকে অনেক দূরে আছি বলে,মনে করিস না।কারণ আমি তো তোর ছায়া হয়ে তোর সাথে চলি,তোর ওতোটাই কাছে,ঠিক হৃদয়ের পাশে"।
সেদিনের এই অদ্ভুত ম্যাসেজ টাও আমাকে জিসানই পাঠিয়ে ছিলো।কী অদ্ভুত মানুষ মাইরি।ম্যাসেজ এর ভেতরেও আমাকে ভয় দেখায়।ম্যাসেজটা পরে আমি দু'দিন শকড এর মধ্যে ছিলাম।মনে করতে লাগলাম,সে কখন,কিভাবে আমার পিঠের তিলটা সম্পর্কে জানতে পারলো।ব্যাপারটা সত্যিই লজ্জাজনক।তার মানে ছেলেটি কতটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমাকে লক্ষ্য করে,ভাবতেই শরীরে শিহরণ বয়ে গেলো সেদিন আমার।
'এভাবে প্রতিদিন তিশাকে ম্যাসেজ এর মাধ্যমে নিজের মনের অনুভুতি গুলো প্রকাশ করতো জিসান।কারণ তিশা এই চার বছরে একটি বারও ফোনে জিসানের সাথে কথা বলেনি।আর বলবে বা কেন? সে মানুষটিকে দেখলে তিশার ভয়ে হাতপা কাপাকাপি শুরু হয়ে যায়,কথা বলতে গেলে গলা মনে হয় কেউ চেপে ধরে রাখে।সে মানুষটি থেকে দূরে থাকাই ভালো মনে করে তিশা।কিন্তু তিশা জানেই না তিশার এই দূরে থাকাটা জিসানের ভেতরের যন্ত্রনা টা আরো অনেক বাড়িয়ে দিচ্ছে দিনকে দিন।আর তিশাকে দিয়েই একদিন জিসান তার সব যন্ত্রনাগুলো দূর করবে'।
হঠাৎ কারো কন্ঠে তিশার ঘোর কাটলো।পাশে তাকিয়ে দেখে রায়হান ভাই নিষ্প্রভ চাহনিতে তিশার দিকে তাকিয়ে আছে।তিশা কিছু বলবো তার আগেই বলতে লাগলো,"তুই নাকি আজ কোচিং মিস করেছিস।কথাটা কী সত্য"?
তিশা হেড ফোনটা কান থেকে খুলে,কিছুক্ষণ ভাইয়ের দিকে ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে থেকে বুঝার চেষ্টা করলো ব্যাপারটা।ওর বিস্ময়ের ঘোর কাটতে কিছু প্রহর সময় লেগে গেলো।
-'কী হলো কথা বলিস না কেন?রায়হান বিরক্ত কন্ঠে আবারও জিজ্ঞেস করলো'।
-'আচ্ছা! তুমি কী করে এসব জানলে।আর তোমাকে আমার সম্পর্কে এত ইনফোরমেশন দেয় কে আজকাল?সত্যি করে বলো তো'।
-'সে টা তোর না জানলেও চলবে।আগে আমি যা জানতে চাইছি,সেটা বল।রায়হান এবার কিছুটা গম্ভীর হয়ে বলল'।
-'হুম, ঠিক শুনেছো।চকলেট খেতে খেতে বললো তিশা।রায়হানের গম্ভীরতা একটুও আমলে নিলো না তিশা,বরং ভাবখানা এমন ভীষণ বিরক্ত ও।কারণ ও কোনো কিছু লুকিয়ে করতে পারে না।ভাই নামক মানুষটি কিভাবে যেনো সব জেনে যায়।যার রহস্য তিশা আজও বের করতে পারে নিই'।
-'কেন?রায়হানও বিরক্ত তিশার এমন উদাসীন ব্যবহারে।মেয়েটি যেনো কোনো কিছুতেই সিরিয়াস হতে পারে না'।
-'স্যার ছুটি দিয়ে দিলে,আমি কী করবো'?
-'তাই নাকি!কিন্তু কোন খুশিতে এমন মহৎ কাজের উদ্যোগ নিলো শুনি'।
-তিশা আচানক বসা থেকে উঠে,এক পিস চকলেট ভাইয়ের মুখে পুড়ে হাসতে হাসতে বলল,"স্যারের বউয়ের বাচ্চা হয়েছে।নেও, এই খুশিতে একটু মিস্টি মুখে নেও"।
-রায়হান বিস্ময়বিমূঢ়! কী বলে মেয়েটি।মুখের চকলেট টি কোনো রকম শেষ করে তিশার দিকে তাকিয়ে বলে,"তোর স্যারের বয়স তো মিনিমাম ৪০-৪৫ হবে।তাহলে এখন বাচ্চা মানে!কিভাবে সম্ভব"।
ভাইয়ের কথা শোনে তিশা অবাক চোখে তাকালো।কন্ঠ স্বাভাবিক রেখে বলল,"ও মা! স্যারের বয়স হয়েছে বলে কী হয়েছে।বাচ্চা তো আর উনি জন্ম দেয়নি।দিয়েছে উনার বউ।আর উনার বউয়ের বয়স তো কম,তাহলে এতে অবাক হবার কী আছে।আমার মনে হয় অতিরিক্ত চাপে তোমার আসলেই মাথার তার সব ছিঁড়ে গেছে।কেমন উদ্ভট প্রশ্ন করো আজকাল।আর বলো,আমাকে গাধী"।
উঁহু!
-'কথার পরিপ্রেক্ষিতে রায়হান আর কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেলো না।কারণ জানে এই মেয়েটা কথা ঘুরাতে পটু।কথার জালে ওকেই ফাঁসিয়ে দিবে'।
-'রায়হান চলে যাওয়ার পর,তিশা আবারও চকলেট খাওয়াতে মনোযোগ দিলো'।
-'তবে বোনকে একটু না জ্বালালে ওর ও যে পেটের ভাত হজম হবে না।তাই দরজার কাছে গিয়েও থেমে গেলো।পিছনে একটু ঘুরে তিশার দিকে তাকিয়ে বলল,"এতো চকলেট খাইস না গাধী,একদিন সত্যিই ফেটে যাবি"।
রায়হানের কথা শুনে তিশার ভীষণ রাগ উঠে।ভাই যাওয়ার সাথে সাথে তাই ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে মুখ গোমরা করে বসে পড়ে বিছানায়।এমনেই একজনের কারণে মেজাজ আজ চরম রুপে গরম হয়ে আছে।তার উপর ভাইয়ের এসব কথা আগুনে ঘি ঢালে।তিশা মনে মনেই আওড়াতে লাগলো," এখন কী আমি একটু শান্তি মতো চকলেটও খেতে পারবো না।যত্তোসব"!
তিশার রুম থেকে হাসতে হাসতে বের হয়ে হাতে থাকা ফোনটি কানে নিয়ে ধরলো রায়হান।ফোনটি আগের থেকেই রিসিভ করা ছিলো।ফলে এতক্ষণের সকল কতপকথন ফোনের ওপর পাশের মানুষটি নির্বিঘ্নে সব শুনতে পারছিলো।
রায়হান বলল,"শুনতে পেয়েছিস।ওর বাহানার শেষ নেই।আর এটাকে তুই পিচ্ছি বলছিস।শয়তানের খুটা হয়েছে।দিনকে দিন ওর বান্দরামী বেড়েই যাচ্ছে।আমাকে কিভাবে বোকা বানালো দেখলি।দোস্ত একে আর একা সামলাতে পারবো না।তুই তাড়াতাড়ি আয়"।
ফোনের ওপর পাশ থেকে এতক্ষণ রায়হান ও তিশার কথাগুলো শুনছিলো জিসান।তিশার কথা শোনে না হেসে পারলো না।
তাই রায়হানকে আশ্বাসের স্বরে বলল,"তুই চিন্তা করিস না,ওকে কিভাবে লাইনে আনতে হয় আমি ভালো করেই জানি।তুই কেবল ওর একটু খেয়াল রাখিস"।
কথা শেষ করে ফোনটা কেটে দিলো জিসান।
__________
'আজ চার বছর ধরে জিসান প্যারিস শহরে বসবাস করছে।তিন অক্ষরের একটি ছোট শব্দ 'প্যারিস'।তবে এর মাঝে লুকিয়ে আছে সীমাহীন ভালোবাসা।হাজারো অনুভূতি আর শত শত স্বপ্ন পূরন করার ক্ষমতা,সব গুণাগুণ মিলিয়ে প্যারিসকে তাই ভালোবাসার শহর বলা হয়।যদি প্রশ্ন করা হয় পৃথিবীর সবথেকে ভালোবাসাময় ও রোমান্টিক শহর কোনটি?বিনা দ্বিধায় মুখে এসে পড়বে প্যারিস। এই শহরটি কারো কাছে,আলোর শহর আবার কারো কাছে ভালোবাসার শহর।কিন্তু জিসানের কাছে তো এই শহরটিকে অভিশপ্ত শহর বলে মনে হয়।কারণ এই শহরে এসে ও ওর ভালোবাসার মানুষটি থেকে এত দূরে।তবে অনেকে মনে করে,খুব ভাগ্যবান মানুষ হলে নাকি প্যারিস শহরে যেতে পারে।কিন্তু জিসান নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে না।কারণ এমন রোমান্টিক জায়গায়ও জিসানের ভালোবাসার মতো কেউ নেই।তবে মনে সুপ্ত আসা একদিন এই রোমান্টিক শহরে ভালোবাসার মানুষটির হাত ধরে হাটার।সেদিন রাগ টাকে যদি নিয়ন্ত্রণ করা যেতো,তাহলে আজ এই শহরে নিজেকে একা মনে হতো না জিসানের'।(কলমে-ইয়াসমিন তানিয়া)
সেদিনের রাগের মাথায় করা ভুলটার কারণ আজ ও তিশার থেকে এতটা দূরে।এক প্রকার বাধ্য হয়েই সেদিন দেশটা ছাড়তে হয়েছিলো।তা না হলে নিজের জীবনের সাথে সাথে রায়হান এর জীবনের সংকটও বেড়ে যেতো।আর তিশাকে হয়তো সারা জীবনের জন্য হারাতে হতো।কিন্তু এখন আর কোনও বাধা নেই।তিশাকে পাবার পথে এখন যে বাধাই আসুক তার জন্য জিসান এখন একাই যথেষ্ট উপচে ফেলার জন্য।কারণ গত চার বছরে জিসান নিজের যোগ্যতায় অনেক কিছু হাসিল করে নিয়েছে,তাইতো এখন জিসানকে কেউ বাধা দেওয়ার সাহস পাচ্ছে না দেশে আসার জন্য।
জিসান আনমনে আওড়াতে লাগলো,"আমি আসছি জান,তোর কাছে।তোর এতটা কাছে,যেখানে তোর নিশ্বাসের শব্দ গুলোও আমি শুনতে পাবো।অনেক পালিয়েছিস,অনেক জ্বালিয়েছিস,এবার তোকে ধরা দিতেই হবে এই জিসানের বাহুডোরে।যেখান থেকে তুই চাইলেও মুক্তি পেতে পারবি না।অনেক উড়েছো,জান।আমি আসছি তোমার পাখাগুলো কেটে,আমার খাঁচায় প্রবেশ করাতে"।
-'আমি আসছি....'!
দেয়ালে টাঙ্গানো তিশার একটি ছবির দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলছে জিসান।ঠোঁটে তার বাঁকা হাসি।
___________
আজ ছুটির দিন তাই সবাই সকালের নাস্তা একসাথে করতে বসেছে।নাস্তার মাঝেই তিশার বাবা সকলকে উদ্দেশ্য করে বলল,"তোমাদের সবার সোপিং শেষ হয়েছে। নাকি আরো বাকি আছে এখনো।কিছু বাকি থাকলে তাড়াতাড়ি সেরে নেও আর কিন্তু, বেশি সময় বাকি নেই।একদিন বাদেই আমাদের রওনা দিতে হবে"।
হঠাৎ তিশা বলল,"মা নিশি ও নিলুকে নিয়ে যেতে পারি আমাদের সাথে।তুমি তো জানো ওদের ছাড়া আমার একদম ভালো লাগে না"।
নিশির পুরো পরিবার যাচ্ছে তিশা।রুপক তাদেরকেও ইনভাইট করেছে।তুই শুধু নিলুকে জিজ্ঞেস করিস ও আমাদের সাথে যাবে কী না।যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে কালই ব্যাগ প্যাকিং করে আমাদের বাসায় চলে আসতে বলিস।
-'ওকে,মা!থ্যাংকিউ বলেই,তিশা খুশি হয়ে নাস্তা না করেই চলে গেলো নিলুকে ফোন দিতে'।
-'আরে তিশা নাস্তা তো করে যা।এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারছি না।দিনদিন বড় হবার বদলে ছোট হয়ে যাচ্ছে'।
-'মা বাদ দেও তো। একদিন ঠিক হয়ে যাবে।আমার কথা শুনো একটু।আমি কাল তোমাদের সাথে আসতে পারবো না।হাতে কাজ আছে।তবে কাজ শেষ করেই চলে আসবো পরের দিন'।
-'আচ্ছা, ঠিক আছে।তুই বরং রুপককে ফোন করে বলে দিস।তা না হলে আবার রাগ করবে ছেলেটা'।
-'হুম!রায়হান ও সায় দিলো'।
কলেজ শেষে তিশা ও নিলু কথা বলতে বলতে নিলুদের বাসার দিকে যাচ্ছিলো।কারণ নিলুকে নিয়ে আবার ওকে বাসায় যেতে হবে।পথিমধ্যে হঠাৎ পথ আগলে সামনে দাঁড়ায় আবির।আবির হলো নিলার কাজিন।
আবির এসেই প্রশ্ন করে,"হায় তিশা!কেমন আছো"।
-তিশাও হাসি মুখে জবাব দেয়,"হ্যালো আবির ভাইয়া।আমি ভালো,আপনার খবর কী"?
ও! তিশা,তোমাকে না কতবার বললাম এসব ভাইয়া টাইয়া একদম বলবে না আমায়।ভালো লাগে না শুনতে।
you know we're just friends,so why call a brother.
তিশা আবিরের কথা শোনে মনে মনেই বলতে লাগলো,"আরে আবাল মানুষ,তোর ভালোর জন্যই বলছি।তুই যদি জানতি,আমার আশেপাশে হিডেন ক্যামেরা আছে,যা শুধু আমাকে নজরে রাখার জন্য।সেই ক্যামেরায় তুই বন্ধি হলে,এই সুন্দর চেহারা আফ্রিকার বান্দরের মতো হয়ে যাবে।তখন আমি কেন,কোনও মেয়েই আর তোকে দেখে পাগল হবে না।তোকে তখন চিড়িয়াখানায় রাখতে হবে"।
-'তিশা!কী এত ভাবছো।তিশাকে অন্যমনস্ক হতে দেখে আবির জিজ্ঞেস করলো'।
কিছু না,আসলে....!বাদ দেন আপনাকে না বলছি,এভাবে পাবলিক প্লেসে আমার সাথে কথা বলতে আসবেন না,ব্যাপারটা একদমই আমার পছন্দ না।আর ভাইয়ার কানে গেলে,আমার কপালে শনি নেমে আসবে।
-'আরে এত ভয় পাও কেন? তোমার ভাইকে।আর এখন তোমার ভাইতো অফিসে আমি জানি।তাহলে দেখার তো কোনও চান্সই নেই।সো নো টেনশন'।
-'আপনি বুঝবেন না এসব।এখন বলুন,কিছু বলার থাকলে'।
-'বলতে না,তোমাকে কিছু দিতে এসেছি'।
-'তাই নাকি'!
-'দেখো তোমার পছন্দের ওয়াইট রোজ।'
-'ওয়াও!থ্যাংকিউ ভাইয়া, এগুলো আসলেই অনেক পছন্দ হয়েছে আমার'।
-'ও হো তিশা!আবার ভাইয়া'।
হে অবুঝ বালিকা...আমি হতে চাই তোমার সাইয়া,তুমি কেনো ডাকো বার বার আমাকে ভাইয়া। আবির মনে মনে কথাটা বলছে।
তিশার মুখে বার বার ভাইয়া ডাকটা ওর বুকে মনে হয় তীরের মতো বাজে।কারণ সে তো তার এই অবুঝ বালিকাটার প্রেমে পরে গিয়েছে।কিন্তু এই ভাইয়া ডাকটার কারণে তিশাকে তার মনের কথা বলতে পারছে না।তিশা যদি কিছু মনে করে।ভয় পায় আবির তিশাকে হারানোর।
'তিশা ফুলগুলো নিয়ে নিলুর সাথে চলে গেলো,আর আবির নিরাশ হয়ে ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।আজ কিছু বলার ছিলো আবিরের,কিন্তু আজও তার মনের কথা মনেই রয়ে গেলো'।
__________
রুপকদের গ্রামের বাড়ী আসতে আসতে তিশাদের রাত হয়ে গেলো। জিসানদের পুরো পরিবার ও এসেছে ওদের সাথে।জিসানের পরিবারে জিসানের বাবা তৌফিক আহমেদ,মা রাবেয়া বেগম,আর জিসানের বড় ভাই তাওহিদ এবং তার স্ত্রীর নাম তানজিলা।তাদের একটি মেয়ে আছে তারিন,বয়স মাত্র তিন বছর।আর আছে জিসানের একমাত্র বোন নিশি।আর এখন জিসান বাদে সবাই এখানে উপস্থিত। কারণ রুপকদার বিয়ে।রূপকদা হলো আমার কাজিন।আমার বড় চাচার ছেলে।
সব আত্মীয় স্বজন দিয়ে বাড়ীটা ভরপুর হয়ে পরেছে।সবাই আপ্যায়নে ব্যস্ত জিসানদের পরিবারকে।আমি জার্নি করে খুব টায়ার্ড।তাই সুযোগ বুঝে রুমে চলে আসি,আর ফ্রেস হয়ে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দেই।তখনই ফোনের টু টু শব্দটা আমাকে খুব বিরক্ত করে তুলল।অনিচ্ছা সত্যেও ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি,বড় বড় অক্ষরে লিখা_____
🖤…………….........I'm coming back..............🖤
ম্যাসেজটা পরে তিশা বুঝতে পারলো না কে?কারণ নাম্বারটা আননোন নাম্বার থেকে আসা।প্রথমে তিশা মনে করেছিলো হয়তো জিসান পাঠিয়েছে।কিন্তু নাম্বারটা তো বাংলাদেশের। তাহলে কে আমাকে এমন উদ্ভট ম্যাসেজ পাঠালো।
চলবে…
No comments