Update Story
📢 গল্পঃসিনিয়র_খালাত_বোন_যখন_বউ পর্বঃ০৬    📢 গল্পঃসিনিয়র_খালাতো_বোন_যখন_বউ পর্বঃ০৫    

ভাইয়ের_বন্ধু_যখন_বর |সিজন_২| পর্ব -৩





ভোরের প্রথম প্রহরে-ই চারদিক থেকে আসা পাখির কিচিমিচির শব্দ কর্ণকুহরে এসে বারি দিয়ে যাচ্ছে।অদ্ভুত প্রশান্তিতে ভরে যাচ্ছে আমাদের মন শরীর। কারণ এমন ঘটনা সচারচর ঘটে না শহরের মানুষের ক্ষেত্রে। তারা তো অভ্যস্ত গাড়ির হর্ণ বা এলার্ম ঘড়ির টো টো শব্দ শুনে নিদ্রা থেকে জাগার।
মজার বিষয় হলো, নানা ধরনের পাখির সমাহারের কারণে এই গ্রামটি পাখি গ্রাম হিসেবেও পরিচিত লাভ করেছে। তাই তো এই গ্রামের মানুষের ঘুম ভাঙ্গে পাখির কিচিমিচির শব্দে। তবে আজ পাখি না মানুষের কোলাহলে ঘুম ভেঙ্গেছে আমার। বিয়ে বাড়ি বলে কথা।আশ্চর্য হবার কিছুই নেই।

'সকালের প্রথম প্রহরে-ই সবাই জেগে উঠেছে। আর তাদের কোলাহলে আমার নিদ্রাও দৌড়ে পালালো কোন এক অচিনপুরে। নিদ্রা থেকে উঠে সোজা রুপকদা দের বাড়ির ছাদে এসে দাঁড়িয়েছি।'
রুপকদাদের গ্রামটা অনেক সুন্দর। চারদিকে সবুজের মেলা, ধানের মাঠ, পাশে কলাগাছ এসব-ই চোখে দেখার মতো। বাড়ির পিছনে বেশ কিছু নাম না জানা গাছ আছে। ছোটোখাটো জঙ্গলের মতো লাগে আমার।এই গ্রামে একটা শুটিং স্পোর্ট ও আছে। প্রতি মাসে কোনও না কোনও নাটক বা সিনেমার শুটিং না-কী চলতে-ই থাকে। অনেক মানুষ তখন সেখানে ভিড় জমায়। পর্দার সে সব নায়ক নায়িকাদের দেখার জন্য।এখানে আসার পর, কাল থেকে রুপকদার সাথে আমার একবারও দেখা হয়নি। আজও না-কী সকাল সকাল বের হয়ে গিয়েছে কোন স্পেশিয়াল গেস্ট আসবে বলে তাকে রিসিভ করতে।

হঠাৎ নিশি ও নিলা দু'জনে নিশ্চুপে এসে আমার ভাবণার মাঝে-ই পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। ওদের এমন আচানক আসার দরুন আমি প্রথমে ভয় পেয়ে যাই।
-'বেয়াদবের গুষ্ঠি!এভাবে কেউ কাউকে ভয় দেখায়।তিশা ছদ্ম রাগ দেখিয়ে বলল'।

-'কেন? এখানে ভয় পাওয়ার কী আছে? আর আমরা যে জলজ্যান্ত দু'জন মানুষ নিজের পায়ে হেটে আসলাম তুই বুঝতে পারিস নিই। কার চিন্তায় এত বিভোর ছিলি। নিশি এক ভ্রু উঁচু করে সন্দেহ নজরে তাকালো'।

তিশা আনমনে বলল, 'চিন্তা না! তবে কেমন জানি অদ্ভুত একটা ফিলিংস তারা করছে মনে সকাল থেকে।বুঝতে পারছি না কেন? খুব অস্থির লাগছে।'

-'তাই না-কী!এই তুই আবার আমার ভাইকে স্মরণ করেছিস না-তো'।

তিশা বিরক্ত চোখে তাকালো। এমন কোনও কিছু-ই ওর মনে নেই। তাই সরল বাক্যে বলল, 'তোর কী মাথা খারাপ হয়েছে নিশি। আমি আবার উনাকে স্মরণ করবো। আমার কী আর কোনও কাজ নেই। আমি তো পারলে তোর ওই উগান্ডা ভাইকে আফ্রিকার জঙ্গলে পাঠিয়ে দিতাম।'

'কেন রে? এমন বলিস কেন? কী করেছে ও? তুই কিন্তু মোটেও অস্বীকার করতে পারবি না, ভাইয়া যে তোকে অনেক ভালোবাসে। মনে আছে, চার বছর আগে তোকে হারানোর ভয়ে কী কাজটা না করল। আর তোর ভালোর জন্য-ই  সব কিছু ছেড়ে কত দূরে গিয়ে পরে আছে এখন। আমাদের ছেড়ে গিয়ে কিন্তু ভাইও কষ্টে আছে জানিস! চার বছরের উপর হয়েছে ভাইকে আমরা কেউ চোখে দেখি না। নিশি কিছুটা আহত স্বরে কথাটা বলল।'

'তিশার খারাপ লাগলো, নিশির মলিন মুখটা দেখে। ও এভাবে বলতে চায় নিই। কিন্তু, ভুলবশত মুখ দিয়ে বের হয়ে গেল। আর বলার পর কিছু করনীয় ছিল না।
তিশা নিশির হাতটা ধরে, 'আমি দুঃখিত নিশি। আমি এভাবে বলতে চাই নিই। আমি জানি তুই উনাকে খুব ভালোবাসিস আর খুব মিসও করছিস। কিন্তু আমি কী করবো, তুই বলে দে! উনিতো চলে গিয়েছে, কিন্তু আমাকে একা রেখে যায় নিই। আমার চার পাশে নিজের একটা অদৃশ্য জাল বুনে গিয়েছে। আর সেই জাল থেকে নিজেকে না মুক্ত করতে পারছি, না শান্তিতে থাকতে পারছি। দেখিস না, তোর ওই যমরাজ ভাইয়ের জন্য তো মরতে গেলেও শান্তি মতো মরতেও পারবো না।'

নিশি নিজের মন খারাপ ভুলে, স্বভাবসুলভ আচরণে ফিরে এসে বলল, 'আচ্ছা! এসব বড়ো বড়ো কথা না হয়, ভাই এলে ভাইয়ের সামনে-ই বলিস। আবার ভয়ে পালিয়ে যাবি না তো! বলে-ই,হা হা করে হেসে উঠল।'

তিশায় নিজের ভাবনায় অন্যমনস্ক হয়ে নিশির কাঁধে মাথা রেখে শুধাল, 'পালাতে চাইলে কী তোর ভাই পালাতে দিবে। আমাকে মোটা দড়ি দিয়ে পারলে বেঁধে রাখবে। কোনও ভরসা নাই। সাইকো একটা!'

'হুম! তা ঠিক বলেছিস। শুধু দোয়া করি ভাইয়ের রাগটা যেন আগের থেকে একটু কমে যায়, তা না হলে, থাক  তোকে বলে ভয় দেখাতে চাই না। নিশি মনে মনে ভাবছে।'

নিশি ও তিশা যখন কথা বলতে ব্যস্ত তখন নিলুর চোখ গেল গ্রামের সরু পথ দিয়ে আসা ব্লাক রং এর বিএমডাব্লিউ গাড়িটার দিকে। রুপকদের বাসার দিকে-ই আসছে গাড়িটি শো শো করে। চোখের পলকে গাড়িটি বাড়ির ভেতরে-ই প্রবেশ করতে দেখা গেল। কৌতূহলে নিলু তিশা ও নিশুকেও ইশারা করে দেখালো আগত গাড়িটির দিকে। 
কে এসেছে? এমন বিলাশবহুল গাড়িতে। 
_____________

তিশা ও নিশি দু'জনে-ই পাশাপাশি ছাদে দাঁড়িয়ে আছে।তাদের দু'জনের দৃষ্টি আপাতত বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করা গাড়িটির উপর। কিন্তু প্রায় পাঁচ মিনিট পার হয়ে যাওয়ার পরও গাড়ি থেকে কাউকে নামতে না দেখে, তিশার মুখজুড়ে বিরক্ততা ভর করল। দেখার ইচ্ছা উবে গেছে ওর এখন। তাই পাশ ঘুরে ছাদের কার্নিশে পিঠ ঠেকিয়ে বিরক্ত কন্ঠে বলল, 'দেখ গিয়ে কোন নবাবজাদা এসেছে আল্লাহ-ই জানে। গাড়ি থেকে নামতে না-কী এত সময় লাগে। এখন কী তাকে পালকি দিয়ে নামানোর আমন্ত্রণ করতে হবে। যতসব আজগুবি পাবলিকে ভরা দুনিয়ায়।'

-'তাই-তো মনে হচ্ছে। কে জানে কোন লাট সাহেবের পদধূলি পড়েছে এই আঙ্গিনায়। নিশিও হেসে বলল।'

কিছু প্রহর বাদে-ই, গাড়ির পিছনের দরজা খুলে রুপক বের হয়ে আসলো। সামনে ড্রাইভিং সিটের পাশের দরজাটা খুলে নেমে আসলো রায়হান। ওয়াইট কালারের শার্টটিতে রায়হান কে যা লাগছে না। নিশি ব্যাচারী তো চোখ-ই সরাতে পারছে না।
উফ!মুখ দিয়ে কেবল এই একটি শব্দ-ই বের হলো নিশির। আর চোখ দিয়ে যেন গিলে খাচ্ছে রায়হান কে।কিছুটা লাজুক স্বরে বলতে লাগলো, 'দেখ আমার হিরো এসে পড়েছে।'

'তিশা নিশির কান্ড দেখে হাসতে হাসতে সামনে তাকায়।আর সামনে তাকাতে-ই এবার যা দেখে তা দেখে ব্যাচারীর ছোটো খাটো হার্ট ফেল হয়ে যাবার উপক্রম।সাথে সাথে মুখের হাসিটা উড়ে গেল। মনে হয় কেউ জোর করে মুখে তিতা করলা পুড়ে দিয়েছে ওর, ঠিক এমন লাগছে তিশাকে দেখে। কারণ ওর যমরাজ স্বয়ং ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এটা কী করে হলো? কেন হলো? কিভাবে হলো? এমন আবলতাবল বকতে লাগলো মনে মনে তিশা।'

রায়হান নামার পর পর-ই ড্রাইভিং সিটের দরজা খুলে নেমে আসলো একটা সুদর্শন পুরুষ। ব্লাক কালারের শার্ট পড়নে তার। হাতাটা কনুই পর্যন্ত ভাঁজ করা। বুকের সামনের দু'টো বোতাম খোলা, আর এতে পুরুষটির লোমে ভরা ফর্সা বুকটা কিছুটা উঁকি দিয়ে বের হয়ে এসেছে। হাতে ব্রান্ডেড ওয়াচ, আর তার সিল্কি চুলগুলো বাতাসের তালে তালে উড়ছে। মনে হয় খেলা করছে।চোখে সানগ্লাস। আর মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি তার সুন্দর মুখটাকে যেন আর-ও বেশি আকর্ষণ করে তুলতে সাহায্য করছে। এ যেন একটা এটোম বোমা। ক্রাশ কেউ খেতে না চাইলেও এই ব্যক্তিটা কে দেখে না খাওয়ার কোনও উপায় নেই। কিন্তু তিশা সে তো শকড!

'জিসান এতক্ষন গাড়িতে বসে থেকে, ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা ওর তিশাকে পর্যবেক্ষণ করছিল। দীর্ঘ চার বছর পর দেখলো তিশাকে। জিসানের কাছে মনে হলো ওর হার্টবিট দ্রুত গতিতে বেড়ে যাচ্ছে হঠাত। একে শান্ত করতে না পারলে হয়তো আজ ওর মৃত্যু নিশ্চিত। আর এটাকে শান্ত করার একমাত্র ঔষুধ হলো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সেই পিচ্ছি পরীটার কাছে। ভাবতে-ই ওর মুখে একটা হাসি খেলে গেল। দীর্ঘ দিনের অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে। আজকের পর থেকে ওর কাঙ্কিত মানুষটি কেবল ওর। আর কারো নয়। সেখানে কারো দখলদারি নিষেধ। 
ভাবনা শেষে জিসান নিজেকে সামলে, গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল। চোখের সানগ্লাসটা খুলে বুকের খোলা সার্টের সামনে রেখে, ছাদের দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিলো।'

জিসান ভাইয়া! বলে-ই নিশি জোরেশোরে একটা চিৎকার দেয়। নিশির গগনবিদারী চিৎকারে তিশার ধ্যান ভাঙ্গতে যথেষ্ট ছিল। কিছু বুঝে উঠার আগে-ই, নিশিকে দৌঁড়ে নিচে নামতে দেখা গেল। নিশি নিচে নেমে ছুটে গেল ভাইয়ের কাছে। আবেগে জিসানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো মৃদু স্বরে। জিসানও এতদিন পর আদরের ছোটো বোনটিকে কাছে পেয়ে কিছুটা আবেগপূর্ণ হয়ে পড়লো। এতক্ষণে বাড়ির সবার কানে পৌঁছে গেল জিসান এসেছে। তাই সবাই বাড়ির বাহিরে বের হয়ে এল দেখতে, ঘটনা আসলে সত্য কী-না!

'এত বছর পর, নিজের ছোটো ছেলেকে দেখতে পেয়ে জিসানের মাও কান্না করে দিলো। বাকি সবাই সারপ্রাইজ! আর সবাই-কে সারপ্রাইজ দিতে-ই জিসানের এখানে না বলে আসার আয়োজন। শুধু রায়হান  আর রুপক জানতো জিসান আসবে।সবার সাথে কুশল বিনিময় করে জিসান। এরপর সবাই এক প্রকার টেনে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেল জিসানকে। আর জিসানের নজর তখনও বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা হতবিহ্বল সেই  যুবতীর দিকে।'

'তিশা মনে হয় এখনও কোনও ঘোরের মধ্যে আছে।ভাবছে হয়তো দিবা স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু কী ভয়ানক এই স্বপ্ন, এমন স্বপ্ন তো স্বপ্নেও দেখতে চায় না তিশা।'

'হঠাত নিলুর ধাক্কায় সম্বিত ফিরলো তিশার। তিশার অবস্থা দেখে নিলু প্রশ্ন করল, 'কী রে তুই এমন কাঁপছিস কেন? চল আমরাও নিচে যাই। জিসান ভাইয়া এসেছে তোকে সারপ্রাইজ দিতে। দোস্ত তোর হিরোটা এত হ্যান্ডসাম কেন রে। আমি তো চোখ-ই সরাতে পারছিলাম না তার থেকে।'

তিশার হঠাত রাগ উঠল নিলুর কথা শুনে। কেন? জানা নেই। তবে খারাপ লেগেছে এটা সত্য। তাই নিলুর দিকে খানিক রাগি চোখে তাকাতে-ই, ব্যাচারী ভয় পেয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়ায়।
মুখে বলে, 'আরে হিরো তো তোর-ই, আমাদের তো ভাইয়া লাগে।'
এখন চল নিচে যাওয়া যাক। তিশাকে এক প্রকার টেনে নিয়ে গেল।
_______________
জিসান সোফায় বসে মাকে জড়িয়ে ধরে আছে, কারণ আন্টি এখনও কান্না করছে। এটা হয়তো আনন্দের কান্না। জিসান বরাবর-ই মায়ের আদরের সন্তান ছিলেন।ছোটো বেলা থেকে ভীষণ জেদি টাইপ এর মানুষ ছিলেন তিনি। তার যেটা চাই, তো চাই। নিজের পছন্দের জিনিসটি-তে কারো স্পর্শ ও উনি পছন্দ করতেন না।মাঝে মাঝে আমার মনে হয় উনি একটা সাইকো।

জিসানের বিদেশে যাওয়ার পর আন্টি অনেকদিন অসুস্থও ছিলেন। তাইতো আজ এত বছর পর ছেলেকে পেয়ে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছে না। জিসান কিছুক্ষন চুপ থেকে এবার মায়ের পায়ের নিচে বসে মায়ের কোলে মাথা রাখলো।
উফ! মা, এবার তো থামো। দেখও আমি এসে পড়েছি তোমার কাছে। আর কোথাও যাবো না। তুমি কান্না বন্ধ করে আমাকে একটু আদর করে দেওতো। দেখও তোমার একটু আদর কত বছর ধরে পাই-না।

-'জিসানের মা সাথে সাথে জিসানের কপালে একটা চুমু দিয়ে দিলো'।

ড্রয়িংরুম এ বসে সবাই যে যার সাথে গল্প করতে ব্যস্ত।আর জিসান উনি তো তারিনকে কোলে নিয়ে সবার সাথে কথা বলছে  আর আড় চোখে বার বার আমাকে দেখছে। আর আমি পালানোর রাস্তা খুঁজছি।
তখন-ই রায়হান ভাই আমাকে দেখে-ই হাত ধরে তার পাশে বসালো। আর এখন তো পালাতেও পাড়বো না।কিছুক্ষণ পর সব বড়োরা যার যার কাজে চলে গেল।আশ্চর্য জনক বিষয় হলো, জিসান সবার সাথে কথা বললেও আমার সাথে কোনও কথা বলেনি এখনও।এদিক দিয়ে ভয়ে আর টেনশনে আমার শরীর দিয়ে ঘাম ছুটছে। কারণ এই চার বছর উনি হাজারবার চেষ্টা করেছে, ফোনে একবার আমার সাথে কথা বলার। কিন্তু আমি-ই কোন না কোনও বাহানায় তার ফোনটা পর্যন্ত রিসিভ করি নিই। তাই উনি ভীষণ রেগে আছেন আমার উপর আমি জানি। আমাকে তো যথারীতি হুমকিও দিয়ে দিয়েছে, যেদিন উনি দেশে আসবে সুদে আসলে সব না-কী তুলে নিবে।

-'কী রে তিশা তুই এত ঘামছিস কেন'? রুপকদা প্রশ্ন করল।

আমি ভ্যাবলার মতো কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আসলে কী জবাব দিবো এই মুহুর্তে ভেবে কূল পাচ্ছিলাম না। হঠাত মা সবাইকে নাস্তার জন্য ডাকতে-ই আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম মনে হলো। বাড়ির বড়োদের নাস্তা অনেক আগে-ই হয়ে গিয়েছে বাকি ছিল শুধু ছোটোরা। রায়হান ও জিসান ভাইও নাস্তা করতে বসে গেল। রুপকদা আমাকে জিজ্ঞেস করল, 'আমি নাস্তা করেছি কী-না?'
আমি মাথা নেড়ে না বলতে-ই, উনি তার পাশের চেয়ারে বসার ইশারা করেন, নাস্তা করার জন্য।
জিসান ভাই আমার সামনের চেয়ারে বসে-ই নাস্তা করছিল। একবার তার দিকে দৃষ্টি পড়তে-ই বুঝতে পারি  উনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে-ই তাকিয়ে আছেন। তার চোখে চোখ পড়তে-ই আমি সাথে সাথে চোখ নামিয়ে ফেলি। এই চোখের চাহনি একদিন নিশ্চিত আমাকে খুন করে ফেলবে। কোনও রকম নাস্তা করে উঠে দাঁড়ালে, সামনে মাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিঞ্চিত ভ্রুযোগল কুঁচকে আসে। আমি কিছু বলবো তার আগে-ই মা দাঁতেদাঁত চেপে বলা শুরু করল,
'তিশা তুই এসব কী পরে ঢ্যাং ঢ্যাং করে ঘুরছিস বিয়ে বাড়িতে।'
মায়ের কথা শুনে নিজের দিকে একবার ভালো করে তাকালাম,
'সত্যি তো! আমি সালোয়ার, জামা, ওড়না,তিন কালারের তিনটা পরেছি। কাল এত বেশি টায়ার্ড ছিলাম যে ব্যাগ খুলে হাতে যা পেয়েছি তাই পরে নিয়েছি। আমি একটা জোর পূর্বক হাসি দেওয়ার চেষ্টা করলাম নিজের বোকামি লুকাতে। ছি! কী লজ্জার ব্যাপার। সকাল ধরে আমি এসব পরে-ই ঘুরছি সারা বাড়ি।

এমনে-ই সবার সামনে এমন প্রশ্ন করে, মা আমার ইজ্জত এর ফালুদা করে দিয়েছিল। তাতে আবার কিছুটা বরফ ঢেলে জমিয়ে তুলতে সাহায্য করল রায়হান ভাই। বলল, 'মা তোমার মেয়েকে দেখে মনে হচ্ছে এই বাড়ির কাজের লোক। দেখও না নিজের কী হাল করে রেখেছে। কেমন ফকিরের মতো আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একটু চালডাল থাকলে দিয়ে একে, আমাদের উদ্ধার করও।'

আমি অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে রায়হান ভাইয়ের কথাগুলো শুনছিলাম। কী অপমানটা না করছে আমায়। মাঝে মাঝে তো মনে হয় এটা কী সত্যি আমার ভাই। না-কী আমার বাপের দ্বিতীয় পক্ষের ঘরের।ষড়যন্ত্র! ঘোর ষড়যন্ত্র চলছে আমার বিরুদ্ধে।

হঠাত জিসানের দিকে আবারও চোখ পরে। উনি আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে এখনও তাকিয়ে আছে। এ তাকানোর কারণ আমি বুঝে উঠতে পারছি না। উনি এত শান্ত কেন? না-কী বিদেশে গিয়ে ভালো হয়ে গিয়েছে ব্যাটা।কিন্তু আমি ভুল ছিলাম, এই জন্মে উনি কোনও দিনও ভালো হওয়ার মানুষ নন।

'মাত্র শাওয়ার নিয়ে গোলাপি কালারের একটা সালোয়ার কামিজ পড়ে রুম থেকে বের হলাম।উদ্দেশ্য হলো নিচের ড্রয়িংরুম এ যাওয়া। সবাই আজ মেহেদি দিবে তাই সেই নিয়ে আলোচনা চলছে নিচে। হঠাত কেউ আমার হাতটা ধরে হেচকা টানে রুমের ভেতরে নিয়ে গিয়ে, দেয়ালের সাথে আটকে ফেললো।
ভয়ে আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। চোখমুখ খিঁচে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকি। চিৎকার করতে গিয়েও চিৎকসর করতে পারলাম না। কারণ একটি শক্ত হাত আমার মুখটা চেপে ধরে আছে। মুখের উপর তার গরম নিশ্বাসের আভাষ পেতে-ই চোখগুলো সটান করে খুলে ফেলি। আশ্চর্য না হয়ে পাড়লাম না সামনের মানুষটিকে দেখে, 'এত জিসান ভাইয়া। আমি শুকনো একটা ঢোক গিলি।'
সে এখনও আমার দিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তবে এখন কিছুটা রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে তার ফর্সা মুখশ্রীতে। কিছু প্রহর যেতে-ই, উনি মুখ থেকে হাতটা সরিয়ে ফেলল।

আমি তখনও নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। বার কয়েক জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে কিছুটা ধাতস্থ করে নিলাম। বর্তমানে উনি আমার একদম কাছে দাঁড়িয়ে আছেন। আমাদের মাঝে হয়তো এক ইঞ্চির মতো ফাঁক আছে।

সচেতন নজরে আমাকে উনি উপর থেকে নিচ বরাবর ভালো করে দেখে নিলেন একবার। এর পর মুখের সামনে এসে পড়া ছোটোছোটো চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে আর-ও একটু কাছ ঘেঁষে দাঁড়ালেন।মুখটা কানের কাছে এনে ফিচেল স্বরে বললেন, 'শরীরের দিক দিয়ে-ই শুধু বড়ো হয়েছিস, বুদ্ধির দিক দিয়ে সেই আগের পিচ্ছি তিশা-ই রয়ে গেলি। কি রে!'

উনি এতটা কাছে আসায়, আমার হ্রদস্পন্দন এর ক্রিয়া চক্র মনে হয় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর কিছুক্ষণ পর আমি নির্ঘাত মারা যাবো। আমি কেমন দম বন্ধ হওয়ার অনুভূতিতে মরে যাচ্ছি।

'আকষ্মিক উনি আমার কপালে শব্দ করে প্রগাঢ় একটা চুমো দিতে-ই আমার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠে।'
উনি আবারও কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
'অনেক জ্বালিয়ে ছিস এই চার বছরে। এতদিন পিচ্ছি ছিলি বলে ক্ষমা করে দিয়েছি। কিন্ত এখন! সব তুলবো আমি তোর কাছ থেকে। আমাকে নিজের আসক্তে মাতাল করে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য তোকে অনেক ভুগতে হবে জান।'

-'হঠাৎ আমার একটা হাত তার হাতের মুঠোতে নিয়ে নিজের গালে স্পর্শ করায়। আমি সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেও সফলতা আসে না।'

উনি চোখ বন্ধ করে আবারও বলতে লাগলো,
'আমার মাতাল করা ভালোবাসায় তোকেও আমি মাতিয়ে তুলবো। আমার দু'চোখে যে নেশা তুই ছড়িয়েছিস, সেই নেশার চাদরে তোকেও আমি জড়াবো। এতদিন কেবল আমি একা পাগল ছিলাম, আর আজ থেকে এই পাগলের পাগলামিগুলো তোকে ও দেখাবো।'

 আমি তখনও চোখদু'টো খিঁচে দাঁড়িয়ে তার কথা গুলো শুনছিলাম। কিন্তু শরীর মন সব অবশ হয়ে যাচ্ছে। উনার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা-ই যেখানে কষ্টকর আমার জন্য। সেখানে উনি আমার এত কাছে।

জিসান কানে একটা কিস করে। এরপর নিরবতা একদম। আমি চোখ খুলে দেখি কেউ নেই সামনে। এ কী! কোথায় গেলো?আমি কী স্বপ্ন দেখেছি এতক্ষণ, একদম না। উনি-ই ছিলেন এখানে। আমি সিউর!
___________________

রায়হান এসে-ই কাজে লেগে গেল।  ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা। জিসানের জন্য এমনে-ই একদিন দেরি করে আসছে। তাই চাচার সাথে হাত লাগিয়ে কাজ কিছুটা কমানো দরকার।
পুরো বাড়িতে লাইটিং এর কাজ চলছে। আর রায়হান তা তদারকি করছে, সব ঠিক করে করছে কী-না! হঠাত মনে হলো পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে, রায়হান পিছনে ঘুরে দেখে নিশি দাঁড়িয়ে আছে।
রায়হান বিরক্ত স্বরে বলল, 'এই তুই এখানে কী করছিস?'

'নিশি বিশাল একটা হাসি দিয়ে, আমি-তো দেখছি।'

তো-কী দেখছিস এখানে! দেখার মতো কী এমন আছে, যার কারণে চোরের মতো পিছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে হচ্ছে। এক মিনিট....! এই লাইটিং ম্যানদের মধ্যে কারো প্রেমেটেমে পড়েছিস না-কী তুই আবার। সত্যি করে বলতো!

'রায়হানের এমন কথায় নিশি কী রিয়েক্ট দিবে বুঝতে পারছে না। শুধু চিন্তা করছে, রায়হান ভাই এমন একটা কথা কিভাবে বলতে পারলো। আমার পছন্দ কী এত-ই খারাপ। কী সাংঘাতিক মানুষ। নিজে দুধ, চিনি ছাড়া চা বানিয়ে ফেলছে, এখন সেই তেতো চা আমাকে গিলতে বলবে।'

'কী রে কথা বলছিস না কেন?'

'ছি! রায়হান ভাই কিসব বলছেন, আমার পছন্দ এত-ই খারাপ না....বুঝলেন।'

'রায়হান হাতের ফোনটা পকেটে রেখে, তা তো দেখতে-ই পাচ্ছি।'

'কী দেখতে পাচ্ছেন?'

দেখ-তো তুই কী পড়ে আছিস। ছেলেদের মতো পেন্ট, ফতুয়া পড়ে আছিস। তকে তো আমার মেয়ে মেয়ে মনে-ই হয়-না। এই তোর পছন্দ। তোর থেকে সুন্দর লাগছে, দেখ আমাদের জমিলা কে।(জমিলা রুপকদের বাসায় কাজ করে। বিয়ের জন্য জমিলা বারান্দায় বসে মশলা বাটছিলো।)

'রায়হানের কথা শুনে জমিলা বারান্দা দিয়ে রায়হানের দিকে তাকিয়ে তার পান খাওয়া বত্রিশটা দাঁত বের করে হাসি দিলো।'

আচ্ছা! জমিলা যদি তার এই পান খাওয়া লাল লাল ঠোঁট দিয়ে রায়হান ভাইকে কিস করে, তাহলে রায়হান ভাইয়ের ঠোঁট দু'টো পানের পিকে লাল হয়ে যাবে না তো। তখন দেখতে কেমন লাগবে! জমিলা-তো ইতি মধ্যে-ই রায়হান ভাইয়ের প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে পরে গেছে। তাই-তো বত্রিশটা দাঁত বের করে হাসছে।
নিশি জমিলার  হাসির রহস্য বুঝে নিজেও খিলখিলিয়ে হেসে উঠল, হাসতে হাসতে রায়হান এর উপর গিয়ে পড়লো।

'এই তুই কী করছিস? আর এভাবে হাসছিস কেন?ফাজিল মেয়ে! আমাকে কী তোর জোঁকার মনে হয়।এখন-ই এখান থেকে যাবি, না হলে থাপ্পড় দিয়ে দাঁত সব ফেলে দিবো।
দাঁতেদাঁত চেপে রায়হান রাগে কথাটা বলে।"

'রায়হান-কে রাগতে দেখে নিশি কিছুটা চুপ হয়ে হন্তদন্ত হয়ে বাড়ির দিকে দৌড় দিলো।'

চলবে………।

No comments