Update Story
📢 গল্পঃসিনিয়র_খালাত_বোন_যখন_বউ পর্বঃ০৬    📢 গল্পঃসিনিয়র_খালাতো_বোন_যখন_বউ পর্বঃ০৫    

ভাইয়ের_বন্ধু_যখন_বর |সিজন-২| পর্ব-৪




আমি দুহাতে মেহেদ দিয়ে রুমে বসে আছি। মেহেদির আর্টিস্ট এর উপর ভীষন রাগ করে-ই এখানে এসে পড়েছি। কারণ আমার হাতে জিসানের নাম লিখে দিয়েছে। মেহেদি দেওয়ার পর যখন হাত দুটো দেখলাম, খুব রাগের সাথে অবাকও হলাম। কারণ আমি কারও নাম লিখার কথা একবারও বলে নিই, তাহলে মেয়েটি জানল কী করে। আশ্চর্য!

আমি তড়িত গতিতে মেহেদি আর্টিস্ট করা মেয়েটির কাছে গিয়ে জানতে চাইলে, মেয়েটি তখন হাতের ইশারায় আমাকে জিশান-কে দেখিয়ে দেয়। আমি তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে-ই, লোকটি নির্লজ্জের সীমা ছাড়িয়ে আমাকে চোখ মারে।
কী অসভ্য লোকটা! 
জিসান না-কী মেয়েটিকে বলেছে আমার হাতে উনার নামটা লিখে দিতে। কী আশ্চর্য! আমাকে একবার জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনও মনে করল না। এমন কেউ করে। অদ্ভুত! 
বাড়ির কেউ আমার হাতে উনার নাম দেখলে কী বলব আমি। কী লজ্জাটা না পেতে হবে___সবার সামনে।
উফ!

'খুব আয়োজনের সাথে মেহেদি অনুষ্ঠান শেষ হলো।ছোটদের সাথে সাথে বড়োরাও মেহেদি দিয়েছে দুহাত ভরে। সবাই কম বেশি আনন্দ করেছে আজ।'

রুপদাকেও সব কাজিনরা ধরে মেহেদি দিয়ে দিয়েছে। কারন রুপকদা নিজের বিয়েতে নিজেই না-কী মেহেদি দিবে না। এটি না-কী মেয়েদের দেওয়ার জিনিস, তাহলে সে কেন দেবে।
কিন্তু তার কথা কেউ তোয়াক্কা না করে মেহেদি অবশেষে দিয়েই দিল।
এসবের মাঝে একটা মজার ঘটনা হলো, জিসানকে দেখে রুপকদার কাজিন আশা আপু ভীষন ভাবে ক্রাশ খেয়েছে। আশা আপু রুপকদার মামা তো বোন। অবশ্য উনাকে প্রথম দেখায় বাড়ির সব মেয়েরাই এমনে-ই ক্রাশ খেয়েছে, কিন্তু আশা আপু একটু বেশি সিরিয়াস মনে হয়। তাই সবাইকে না-কী শাসিয়ে বলেছে, 'জিসানের দিকে কাউকে নজর দিতে না। তাহলে সবার খবর আছে।'
আমরা যতগুলো মেয়ে আছি বিয়ে বাড়িতে তার মধ্যে আশা আপুই সবার বড়ো। এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে। তাই তার ক্রাশ কে কেউ নজর দিতে পারছে না। কিন্ত সে তো আসল ঘটনা জানেই না, জানলে কী করবে আল্লাহই জানে!

আজ অনুষ্ঠানেও জিসানের আশপাশের ঘুরতে দেখেছি, কয়েকবার সেধে সেধে কথা বলতেও দেখেছি। জিসান অবশ্য যতটা পারছে এড়িয়ে চলছে। কিন্তু মেয়েটা চিপকু টাইপের। ব্যাপারটা আমার ভীষন মজা লাগছে। কিন্তু জিসানের রাগ সম্পর্কে আশা আপুর ধারনা নেই, মেজাজ গরম হলে, থাপ্পর দিয়ে গাল লাল করে ফেলবে। উনার কোনও ভরসা নেই।

'এসব ভাবতে ভাবতে হঠাত খুব বিরক্ত লাগছে। বিরক্ত লাগার কারনটা হচ্ছে নিলা, সেই কখন ওকে ডেকে পাঠালাম এখনও আসছে না।
একচুয়েলি মেহেদির অনুষ্ঠানের জন্য আমি হালকা নীল কালারের একটা লেহেঙ্গা পড়েছিলাম, বেশ ভালোই মানিয়েছিল, তবে হঠাত কিছু একটা বিঁধতে লাগল পিঠে। হয়তো ব্লাউজের হুকের কারনে এমন পেইন হচ্ছে পিঠে। আমি মেহেদির কারনে দেখতে পারছিলাম না, তাই নিলাকে খবর পাঠালাম। কিন্তু নিলা মনে হয় বিদেশে চলে গিয়েছে তাই আসতে এত লেট হচ্ছে।
হঠাত দরজা খুলার আওয়াজে, আমি মনে করলাম হয়তো নিলু এসেছে। তাই পেছনে না দেখেই বললাম___নিলু ইয়ার দেখত আমার পিঠের চুলগুলো সরিয়ে, ব্লাউজের হুকটাতে ব্যথা লাগছে। একটু ঠিক করে দে না।'

'কেউ একজন আমার চুলগুলো খুব যত্নের সাথে পিঠ থেকে সরিয়ে এক কাঁধে রাখল। কেন জানি তার স্পর্শে আমার শরীরে শিহরণ জেগে উঠল। আমি বুঝতে পারলাম এটা নিলার হাত না, তাহলে কে?'

আমি লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। পেছনে ঘুরতে ঘুরতে বললাম, কে? এত বড়ো সাহস হয় কী করে আমাকে টাচ করার।
কিন্তু সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটাকে দেখে আমার চোখ চড়কগাছ। একি আ...আ..পনে এখানে।

'কেন অন্য কাউকে আশা করেছিস তুই। জিসান ভ্রুটা কুঁচকে জিজ্ঞেস করল।'

'আ...আমি ভেবে এ ছিলাম নিলা এসেছে তাই। আমি তার চোখের দিকে লজ্জায় তাকাতে পারছিলাম না।'

জিসান অনেকক্ষন ধরে তিশাকে নিচে খোঁজাখোঁজির পর যখন পেল না, তখন উপরে আসল চেক করতে।কারন জিসান ভালো করেই জানে তিশা এখন একটু অভিমান করে বসে আছে। তাই ওকে খুঁজতে এসেছে।

জিসান তিশার সামনে এগোতে থাকলে তিশাও ভয়ে পিছিয়ে যায়। আর পেছনের আলমারীর সাথে আটকে যায়। জিসান তিশার কাছে এসে কোমড়টা ধরে ঘুরিয়ে ফেলে। ব্লাউজের হুকটার দিকে হাত বাড়ালে, 'তিশা বাঁধা দেয়____থাক লাগবে না। আমি এখনি চেঞ্জ করে ফেলছি।'

'তোকে কী আমি জিজ্ঞেস করেছি, লাগবে কী না!তাহলে কেন নিজের ব্রেনে এত চাপ দিচ্ছিস। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকবি।'

হুকটা ঠিক করার সময় জিসানের হাতের স্পর্শে তিশা বার বার কেঁপে উঠছে। চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাত তিশার মনে হলো পিঠে কারো ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়া পড়ছে। 
সাথে সাথে তিশা সামনে ঘুরে যায়। তা দেখে জিসানের মুখে  বাঁকা হাসি ফুটে উঠে। জিসানের এই হাসির রহস্য তিশা বুঝে উঠতে পারছে না, তাই তিশা জিসানের সাইড দিয়ে চলে যেতে নিলে, জিসান কোমড়টা ধরে আবার নিজের সামনে দাঁড় করায়।
জিসানের চোখে কেমন এক কামুকতার নেশা দেখতে পাচ্ছে তিশা। আজ জিসানকে একদম অন্যরকম লাগছে। কেমন নেশা ভরা চোখে তাকিয়ে আছে, তিশা বুঝতে পেরেই চলে যেতে চাইছিল। কিন্তু এখন জিসান তাকে আটকে ফেলেছে।

জিসানের হাত কোমড় থেকে আস্থে আস্থে তিশার পিঠে স্লাইড করছে, তা দেখে তিশা _____পি...প্লিজ ছা..ড়ুন।ক কী করছেন?

জিসান হঠাত তিশার গলায় মুখ ডুবিয়ে শ্বাস নেয়। প্রগাঢ় মায়ায় বলে, 'কেন তোর ভালো লাগছে না।'

'ন... না প্লি জ ছাড়ুন। কাঁপাকাঁপা গলায়।'

'জানিস তোকে আজ খুব হট লাগছে। একদম সানি লিয়নের মত। সানির মত সুন্দর তো তুই আগেই ছিলি, আজ দেখছি সানির মত আগুন লাগা দেহ তোর। তার উপর এত সেজেগুজে, বড়ো গলার ব্লাউজ পরে আমাকে পাগল করে ফেলেছিস। ভাবছি আজ একেবারে বাশরটা সেরেই ফেলি। কী বলিস!'

তিশা এতক্ষন চুপ থাকলেও এখন কান্না করে দেয়।রাগে মাথার চুলগুলো ছিঁড়ে ফেলতে মন চাইছে। তিশা ভাবতেও পারেনি জিসান ওকে এসব কথা বলবে।
আপনে একটা অসভ্য মানুষ। প্লিজ জান এখান থেকে।তিশা চোখমুখ খিঁচে কথাটা বলে।

'এবার জিসানের চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝড়ে। এতক্ষন ও ইচ্ছা করেই কথাগুলো বলেছিল তিশাকে।
আচানক জিসান তিশার গাল দুটো চেপে ধরে_____ও আচ্ছা আমি এখন অসভ্য। আর তুই যে ফিটিং আর বড়ো গলার ড্রেস পরে পর পুরুষের সামনে শরীর দেখিয়ে আনন্দে ঘুরছিস সে টা কী! তোর দিকে সবাই কতটা খারাপ নজরে তাকিয়ে ছিল জানিস।
আর এখন আমি বলছি বলে, অসভ্য হয়ে পরেছি।অসভ্য কাকে বলে জানিস। জিসান এক টান দিয়ে তিশার ব্লাউজ টা ছিড়ে ফেলে।'

'জিসানের এমন কান্ডে তিশা হতভম্ভ হয়ে যায়।'

তিশার বাহু দুটা চেপে ধরে বলে, 'আমি সেই প্রেমিক পুরুষ না, যে প্রেমিকার ভুলগুলো দেখেও চুপ হয়ে থাকবে। বা তার সব অন্যায়গুলো বাচ্চামি মনে করে মাপ করে দেবে। আমি যেমন ভালোবাসতে পারি তেমনি শাসনও করতে পারি। তাই আজ লাস্ট ওয়ার্নিং তোকে। এর পরেও যদি দেখি এমন ড্রেস পরেছিস, তাহলে তোর এমন অবস্থা করব যে নিজের দিকে নিজেই তাকাতে পারবি না। মনে রাখিস।'

জিসান তিশাকে ছেড়ে দিয়ে ঘটঘট করে চলে গেল রুম থেকে। আর তিশা ধপাস করে নিচে বসে পড়ল। ভীষন কান্না করতে মন চাইছে তিশার এখন।।
_____________

নিশি অনেকক্ষন ধরে ডাইনিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, উদ্দেশ্য একটু পানি খাবে। কিন্তু কাউকে পাচ্ছে না। হঠাত রায়হান কে দেখতে পেল। মুখ দিয়ে একটা 
উফ! শব্দ বের হলো। 
ওয়াইট কালারের পান্জাবী টাতে কী জোশ লাগছে আমার হিরোটাকে। এই লোকটা ওয়াইট কালারটা একটু বেশিই পরে, অবশ্য ভালোও লাগে অনেক।

রায়হান ভাইকে দেখলেই আমার বুকটা ধুপধুপ করতে লাগে। এক অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করে কিন্তু এই লোকটা সবসময় আমার অনুভুতিতে এক বালতি গরম পানি ঢেলে দেয়, আর এতে আমার শরীরের জ্বালাপুরা আর বেড়ে যায়। হঠাত নিশি মৃদু স্বরে  রায়হানকে হাঁক পেরে বলে, একটু এদিকে আসবেন।

'রায়হান ভ্রুটা কুঁচকিয়ে জিজ্ঞেস করল কী হয়েছে, তুই আমাকে এভাবে ডাকলি কেন?'

'আমার না খুব পিপাসা পেয়েছে।'

'তো আমি কী করব? তোর পিপাসা নিবারণের জন্য কী কাউকে পঠাতে হবে। আর ফাজিল মেয়ে বড়ো ভাইয়ের বন্ধুর সাথে এমন লেম মার্কা কথাবার্তা বলতে লজ্জা করে না।'

'নিশি একটু বিরক্ত হয়ে, আপনি কী সহজ ভাষায় কথা বলতে পারেন না। সবসময় কথায় থার্ড মিনিংস ইউস করেন কেন?'

'সে টা আমার ব্যাপার, তোর মন না চাইলে কথা বলিস না। আমি আসি এখন।'

'আরে দাঁড়ান আমাকে একটু পানি তো পান করিয়ে দিয়ে জান।'

'কেন তোর হাতে কী হয়েছে।'

'নিশি হাত দুটো রায়হানের সামনে এনে দেখায় হাতে মেহেদি দেওয়া তাই।'

'এই সরা সরা তাড়াতাড়ি, তোর হাত থেকে গোবরের গন্ধ আসছে। ছি! নাক মুখ ছিটকিয়ে।'

নিশি আবাক হয়ে গেল, রায়হানের কথা শুনে।মেহেদির এত সুন্দর ঘ্রাণটা না-কী তার কাছে গোবরের গন্ধ লাগছে। নিশি একটু বিরক্ত হলো আজ রায়হানের এমন ব্যবহারে।
আচ্ছা ঠিক আছে, আমিই চলে যাচ্ছি এখান থেকে আপনাকে আর খাওয়াতে হবে না পানি। আমি অন্য কাউকে খুঁজে নেব। নিশি রায়হানের সাইড দিয়ে যেতে নিলে, খপ করে নিশির চুল ধরে ফেলে রায়হান। 'আমাকে এটিটিউট দেখার সাহস করবি না, দাঁতেদাঁত চেপে বলে। না হলে থাপড়িয়ে তোর দাঁত ফেলে দেবো।'

'শুধু এসব কথাই বলতে পারেন, ভালো কথা তো শিখেনই নাই। বিরবির করে কথাটা বলে নিশি।'

'রায়হান একগ্লাস পানি মুখের সামনে ধরে, নিশিও আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেয়ে নেয়।'
____________

অন্ধকার রুমে নিলা ও তিশা বিছানায় শুয়ে আছে। আর জানালা দিয়ে চাঁদের আলো তাদের মুখে পড়ছে।তখন জিসান যাওয়ার পর পরই নিলা রুমে প্রবেশ করে। এসে দেখে তিশা কান্না করছে। নিলা তখন খুব কষ্টে তিশাকে শান্ত করায়।
শাসন করা তারই সাজে, সোহাগ করে যে____এই কথাটি শুনেছিস নিশ্চয়ই। জিসান ভাইও তোকে অনেক ভালোবাসে।

'কিন্তু আমি কেবল তার শাসনই দেখি, ভালোবাসাতো দেখি নিই কখনও। উনি সর্বদা আমার সাথে এমন করে।'

'উনি তোকে ভালোবাসে বলেই শাসন করে। তোর অন্যায় গুলো কখনও প্রশ্রয় দেয় না। জানিস সত্যিকারের প্রেমিক সেই। কিন্তু কথা হলো, তুই উনার ভালোবাসা কখনও বুঝতে চাসনি। নিজেকে ভাইয়ার কাছ থেকে গুটিয়ে ফেলেছিস। এভাবে চলতে থাকলে একদিন তুই ভাইয়াকে হারিয়ে ফেলবি। সেদিন হয়তো বুঝবি তুই কতটা ভাগ্যবান যে জিসান ভাইয়া তোকে এত ভালোবাসে।'
আমাকেই দেখ, এত ভালোবাসার পরও অবশেষে ধোকা পেলাম।
কিন্তু জিসান ভাইকে দেখ! এত বছর বিদেশ থাকার পরও তোকে ভুলেনি। তার মত ছেলের জন্য যে কোনও মেয়ে পাগল হবে, অথচ দেখ উনি তোর জন্য পাগল।তাই বলছি, উনার রাগের ভেতরে তোর জন্য যে ভালোবাসাটা আছে সেটা অনুভব করার চেষ্টা কর।

চলবে………।

No comments