ভাইয়ের_বন্ধু_যখন_বর সিজন-২ পর্ব-৫
তিশার মা মিসেস রেণু, কখন ধরে তিশাকে ডাকছে।কিন্তু তিশা বিছানা থেকে ওঠার নামই নিচ্ছে না। আজ না-কী এই রুম থেকেই বের হবে না, হলুদেও যাবে না।তিশা জিসানের উপর জেদ করেই শুয়ে আছে। আজ জিসানের সামনেই আর যাবে না। কী মনে করে লোকটা আমাকে, খেলার পুতুল। যেমনে নাচাবে তেমনেই নাচবো আমি, একদম না! আমার নামও তিশা.....হুম!
'তিশাকে ওঠাতে না পেরে বিরক্ত হয়ে রেণু বেগম চলে গেল।'
'এদিক দিয়ে ডাইনিং টেবিলে সবাই নাস্তা করতে বসেছে।'
জিসান এসে দেখে সবাই আছে কিন্তু তিশা নেই। তাই নিশিকে জিজ্ঞেস করে তিশা কোথায়?
'ভাইয়া ও এখনও ঘুমায়। আমরা অনেক ডেকেছি কিন্তু ও আসবে না।'
জিসানের মেজাজ গরম হয়ে গেল। তিশাকে ডাকার জন্য চেয়ার থেকে উঠতে নিলে, আশা এসে বাদ সাধে।
'আরে কোথায় যাচ্ছেন____ আপনি আগে নিজে নাস্তা করে নিন। ও বাচ্চা মানুষ যখন খিদে লাগবে দেখবেন নিজেই এসে পড়বে। আশা আপু জিসানকে নাস্তা বেড়ে দিতে দিতে বলল কথাটা।'
জিসান নাস্তার প্লেটটা হাত দিয়ে সরিয়ে, থ্যাংকস্, বাট আমি তিশাকে সাথে নিয়েই নাস্তা করব। আমার চিন্তা আপনাকে করতে হবে না।
জিসান ওঠে চলে গেল। আশার মুখটা দেখার মত ছিল।
আর ডাইনিং টেবিলে বসা সবাই মিটমিট করে হাসতে লাগল আশার এমন অবস্থা দেখে।
'জিসান সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় রেণু বেগমের সাথে দেখা হয়। আরে জিসান বাবা____ভালই হলো তোমার সাথে দেখা হয়েছে।'
'কেন আন্টি?'
'এই মেয়েটাকে নিয়ে আমি আর পারছি না,দেখো কাল রাতেও কিছু না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে আর এখনও না-কী কিছু খাবে না। আজ না-কী রুম থেকেই বের হবে না। গৃহবন্দি বাসিন্দা তিনি আজ, বুঝছ কিছু!'
জিসানের মাথাটা সকাল সকালই গরম হয়ে গেলো।ওর মন চাইছে তিশাকে এখন মাথায় উঠিয়ে এক আছাড় মারতে পারলে, হয়তো মনটা একটু শান্তি পেতো।এই মেয়েটা আমাকে জ্বালাতে খুব মজা পায়।পরক্ষনে নিজেকে শান্ত করে রেনু বেগমকে বলে_____আপনে চিন্তা করবেন না,আমি এখনি ওকে নিয়ে আসছি।
__আচ্ছা যাও।
||
||
"ঘুমকাতুর তিশা কোলবালিসকে জরিয়ে ঘুমিয়ে আছে।হঠাৎ পেছন দিয়ে কেউ ওকে খুব শক্ত ভাবে জরিয়ে ধরে।জরিয়ে ধরা ব্যক্তিটার হাত তিশার পেটের উপরে।"
---তিশা কিছুটা বিরক্ত হয়ে হাতটা সরিয়ে দেয়।আসলে ও ভেবেছে হয়তো নিশি।কারন নিশিই তিশাকে ঘুমাতে দেখলেই প্রায়ই পেছনে দিক দিয়ে জরিয়ে ধরে শুয়ে থাকে।
'কিন্তু হাতটি আবারও তিশার পেটকে জরিয়ে ধরে নিজের সাথে আরো চেপে ধরে।'
---এবার তিশা ঘুম থেকেই বলে উঠে..এসব কি নিশি।সবসময় ভালো লাগে না।আমি কি তোর বর নি তুই আমাকে এভাবে জরিয়ে ধরবি।জরিয়ে ধরার এতো শখ থাকলে আন্টিকে বল একটা বিয়ে করিয়ে দেবে।এসব বলে হাতটা আবার সরিয়ে দেয়।
'এবার তিশা অনুভব করে কেউ ওকে আবার জরিয়ে ধরে চুলে মুখ ডুবাচ্ছে গভীর ভাবে।'
---তিশার এবার মেঝাজ গরম হয়ে যায়।লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে যায়।জরিয়ে ধরা ব্যক্তিটাকে না দেখেই বলে ফেলে,ওই তোরা ভাই বোন এতো লুচু কেনো।এ কথা বলেই তিশা মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে জিসানকে দেখে।
'আ...আপনে এখানে ক...কি করেন।'
---জিসান মাথার নিচে দুহাত দিয়ে পায়ের উপর পা দিয়ে আরামে শুয়ে বললো__কি করছি মানে,তোর সাথে ঘুমাতে আসছি।
'-এ কথা বলেই আমার হাত ধরে টান দিলে আমি বেসামাল হয়ে তার বুকের উপর পরি।উনিও সুযোগ পেয়ে আমাকে দু'হাত দিয়ে জরিয়ে ধরে।'
---শুনলাম তুই নাকি নাস্তা করবি না,হলুদে যাবি না,এমনকি এই ঘর থেকেই আজ বের হবি না।সারাদিন ঘুমিয়ে কাটাবি।তাহলে আয় দু'জনে এক সাথেই ঘুমিয়ে থাকি,তুই একলা গৃহবন্দি থাকবি কেনো।এতে বোর ফিল করবি।দুজনে একসাথে থাকলে আরো ভালো হবে।এই বাহানায় তোর সাথে আমি একটু রোমাঞ্চ ও করতে পারবো। কি বলিস!
"এই নানানানা.....।"
আমি জিসান থেকে ছুটেই____আমার আর দু'দিনও ঘুম আসবে না,থাক।
আমি ছুটে ওয়াসরুমের দিকে দৌঁড়।কিন্তু!!
"আর কতো পাগলী পাগল করবি আমায়,তোর দিওয়ানা হয়ে অবশেষে পাগলাগারদে না যেতে হয়।"
'জিসানের কথায় আমি পেছনে তাকাই _____উনি আমার ওড়নাটা আমার শরীরে জড়িয়ে দিয়ে রুম থেকে চলে যায়।
হায় আল্লাহ এতোক্ষন ধরে তার সামনে ওড়না ছাড়াই ছিলাম।আমারতো লজ্জায় এখন এক গ্লাস পানিতে ডুবে মরে যেতে মন চাইছে।উফ!
---ফ্রেস হয়ে আমি নিচে চলে আসি,ওখানে জিসান এখনো আমার জন্য অপেক্ষা করছে।আমি জিসানের পাশের চেয়ারটা ছেড়ে অন্য চেয়ারে বসতে নিলে জিসান আমার হাতটা ধরে,টান দিয়ে নিজের পাশে বসায়।
আমি ভীষন অবাক জিসানের এমন আচরনে। কারন তখন আশেপাশে অনেক আত্মীয় স্বজন ছিলো।তারা যে ব্যাপারটা দেখেনি এমন না,সবাই দেখেছে।
'জিসান উনার প্লেটটা আমার দিকে এগিয়ে দিলো,খাও।'
---আমি এতো খেতে পারবো না।আপনেই খান, আপনারটা।
'তুই খাবি, নাকি আমি খাইয়ে দেবো।জিসানের স্থির দৃষ্টি আমার দিকে।'
"আমি জিসানের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে,আশেপাশে চোখ বুলালাম।আশেপাশে অনেক মানুষ।এখন না খেলে এই লোকটা সত্যিই সবার সামনে আমাকে খাইয়ে দিবে।কোনও বিশ্বাস নেই।তার চেয়ে ভালো নিজের হাতেই খাই।"
আর এসব দূর থেকে দাঁতেদাঁত চেপে আশা আপু দেখছিলো।
||
||
"আমরা সব কাজিনরা মিলে রুপদা দের উঠানে বসে গল্প করছিলাম।আজ রুপকদার হলুদ সন্ধ্যা।তাই সবাই মিলে আলোচনা করছে কে কি পরবে, কে কি করবে।"
---আমিও বসে বসে নিশির সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম।হঠাৎ চোখ গেলো বাড়ীর গেটের দিকে।জিসান দাঁড়িয়ে আছে।
রুপকদা ও তার কিছু ফ্রেন্ডসরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে,দেখেই বুঝা যাচ্ছে সবাই রুপকদাকে টিজ করছে।হয়তো সুরভি ভাবীর কথা বলছে,তাইতো ভাইয়ার মুখটা টমেটো হয়ে যাচ্ছে।
"এসবের মাঝে আমার চোখ গেলো জিসানের উপর।স্কাই ব্লু কালারের একটা সার্ট পড়া তবে কালারটা বেশ মানিয়েছে তাকে।
হাতের দু আঙ্গুলের মাঝে সিগারেট টা রেখে কপালে আসা সিল্কি চুলগুলোকে বার বার হাত দিয়ে সরাচ্ছে।অদ্ভুত বিষয় আজ কেনো জানি তাকে দেখতে আমার ভীষন ভালো লাগছে।সারাদিন তাকিয়ে থাকলেও মনে হয় ক্লান্ত হবো না।উফ....এমন কেনো হচ্ছে।"
---হঠাৎ জিসানের চোখে চোখ পরে যায়।আমি সাথে সাথে চোখ সরিয়ে ফেলি।
আহ! কি লজ্জার বিষয়।কিন্ত ব্যাটা খাটাইশ কি বুঝে গিয়েছে আমি তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছি।
'হঠাৎ নিলুর চিৎকারে আমার আত্মা কেপে উঠে,আর আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম।জমিলা কিছুক্ষন আগে আমার হাতে মুড়ির একটা ঝুড়ি দিয়ে গিয়েছে।গ্রামের ভাজা মুড়ি, একটু অন্যরকম টেস্ট।কিন্ত কথার ঝুরির মাঝে মাঝে খেতে ভালোই লাগে।'
---আসলে আমি জিসান কে দেখতে,এতোটাই মগ্ন ছিলাম যে মুড়ির কথা ভুলেই গিয়েছি।
হঠাৎ নিলু এসে পেছন থেকে ভো বলায় হাতের সব মুড়ি ঝুড়িসহ নিশুর শরীরে উপর পরে যায়।নিশিকে দেখে মনে হচ্ছে ও এই মাত্র মুড়ি দিয়ে গোসল করেছে।ঝুড়িটাও ওর মাথায়।
'নিশি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ওর রাগ দেখে আমি কানে ধরে সরি বলি ইশারা করে।'
__ঠিক ওই সময় রায়হান ভাই ওখান দিয়ে যাচ্ছিলো।নিশির এই অবস্থা দেখে সামনে আসে।
নিশির পুরো শরীরে মুড়ির ছড়াছড়ি।এমনকি ওর হাতের কফিটাও মুড়িতে ভরে গিয়েছে।
'রায়হান ভাই কিছু মুড়ি মুখে নিয়ে____টেস্ট তো ভালোই।তবে সাথে পেয়াজ, মরিচ, টমেটো আর চানাচুর হলে ভালোই হতো কি বলিস।তিশা ওগুলো বাদ রাখলি কেনো।
একথা বলে হনহন করে চলে গেলো।আর এদিক দিয়ে বাকি সবাই হেসে কুটিকুটি নিশির অবস্থা দেখে।'
---আমিতো আবাক!ভাইয়া এসময় এ কথা কিভাবে বললো,এমনেই নিশি ভীষন রেগে আছে।এখনতো সব জ্বাল আমার উপর তুলবে।আমি নিশির দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো হাসি দিলাম।
কিন্তু ব্যর্থ হলাম নিশি এতোক্ষনে তেরে আসতে লাগলো আমার দিকে।আমি ভয়ে দিলাম দৌঁড়।|
"কিভাবে যেনো পুকুরপাড়ে চলে আসলাম দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে।রুপকদা দের এই পুকুরটা অনেক গভীর আর বড়।আমি আবার সাঁতার জানি না তাই রুপকদা আমাকে এটার সামনে আসতে মানা করেছিলো।আমি চলে যেতে নিবো ঠিক তখনিই কেউ আমাকে ধাক্কা দিলে আমি পানিতে পড়ে যাই।
চলবে………
No comments