ভাইয়ের_বন্ধু_যখন_বর😍 ----(season 2) [🖤] part_21🍁
"ভালোবাসার অনুভুতিগুলো বড়ই অদ্ভুত হয়।মনের ভেতর অজস্র ফুল কখন যে ফুটে সুগন্ধ ছড়িয়ে দেয়, আমরা তা অনুভোবও করতে পারি না।আর যখন পারি তখন বড্ড দেরি হয়ে যায়। ফুলগুলো শুকিয়ে ঝরে যায়।
তখন মনের মধ্যে একবিশাল শূন্যতা কাজ করে।ভালোবাসার শুন্যতা,হারনোর শুন্যতা।আজ সেই শুন্যতা অনুভোব করছে তিশা।
ভালোবাসা নামক যে ফুলটা ফুটে উঠেছিলো তিশার মনের বাগানে, সেটা যেনো কেউ ছিনিয়ে নিচ্ছে।হঠাৎ মনে হলো,তিশার নিশ্বাস নিতে কস্ট হচ্ছে।তিশা নিজেও জানে না কেনো।
এগুলোতো তারই পাপ্য ছিলো।সেও তো জিসানকে এভাবে দিনের পর দিন ইগনোর করছে।অথচ জিসানের মনে ভালোবাসার কমতি হয়নি কখনো তার জন্য।কখনো কোনও অভিযোগ ও করেনি।শুধু ভালোবেসে গেছে দূর থেকে।"
---আজ জিসানের সামান্য ইগনোর তিশার সহ্য হচ্ছে না।এখন তিশা কিছুটা হলেও বুঝতে পারছে জিসানকেও কতোটা কস্ট দিয়েছে।ভালোবাসার মানুষের ইগনোর মেনে নেওয়া কতোটা কস্টকর আজ তিশা উপলব্ধি করতে পারছে।এই কস্ট জিসানও প্রতিনিয়ত ভোগ করেছে নিশ্চয়ই।
তিশা ভাবতে ভাবতে বেসামাল হয়ে চলতে থাকে।রাস্তার ওপরপাশ থেকে নিশি হাত নাড়িয়ে তিশাকে তাদের কাছে আসতে ডাকে।
তিশা নিজের মধ্যে ছিলো না।তাই বুঝতেই পারেনি কখন ও রাস্তার মাঝে চলে এসেছে।ডানে বামে না তাকিয়ে সামনের দিকে বাড়তে থাকে।
"-একটা গাড়ী ফুল স্প্রিডএ তিশার দিকে আসতে নিলে,জিসান আচমকা তিশার হাত টান দিয়ে সরিয়ে ফেলে।এক সেকেন্ড এর জন্য তিশা বেঁচে যায়।তিশা জিসানের বুকে গিয়ে পড়ে।খুব শক্ত করে জিসান তিশাকে বুকের মধ্যে চেপে ধরে।
জিসানের বুকের ধুপধুপ শব্দটি কয়কশগুণ বেড়ে গেছে,যার শব্দ তিশাও শুনতে পাচ্ছে কান পেতে।কিছুক্ষণ আগে ভয় পেলেও তিশা এখন জিসানের বুকের মধ্যে নিজেকে সব থেকে সুরক্ষিত মনে করছে।নিজেও জিসানের সাথে লেপ্টে আছে।
জিসান চোখ বন্ধ করে জোড়ে কয়েকটা নিশ্বাস ছেড়ে তিশার কপালে একটা গভীর চুমো দিয়ে দেয়।জিসানের মনে হলে ওর প্রাণটাই মনে হয় চলে যাচ্ছিলো একটু আগে।আর একটু দেরি হলে সবশেষ হয়ে যেতো।"
---রায়হান, নিশি দৌঁড়ে এপাড়ে চলে আসলো।তিশার মাথায় হাত বুলিয়ে তুই ঠিক আছিস।তিশা জিসানের বুকের মধ্যে মাথাটা রেখেই মাথা নাড়লো।
জিসান তিশাকে নিয়ে এখনো ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে।রায়হান বুঝতে পেরে, জিসানকে সামলাতে বললো,রিলেক্স জিসান।ও ঠিক আছে।জিসান মনে হয় এতোক্ষনে ঘোর এর মধ্যে ছিলো রায়হানের কথায় হুশ আসে।
'-নিশি ও তিশা লাঞ্চের সময়ই প্লান করেছিলো,আজ তিশাও নিশির সাথে ওদের বাড়ীতে যাবে।রাতে রায়হান বাড়ী যাওয়ার সময় তিশাকে সাথে করে নিয়ে যাবে।তাই রায়হানকে অফিসে নামিয়ে দিয়ে নিশি ও তিশাকে আহমেদ ভিলার সামনে নামিয়ে দিলো।
নিশিকে ইশারা করে তিশার খেয়াল রাখতে বলে চলে গেলো জিসান।
কারন তিশা এখনো চুপ সারা রাস্তায় কোনও কথা বলেনি। হয়তো ভয় পেয়েছে কিন্তু স্বীকার করতে চাইছে না।'
||
||
"তিশা কখন ধরে জিসানের জন্য অপেক্ষা করছে।মূলত ওর এখানে আসার কারণই হচ্ছে জিসান।জিসানের রাগ না ভাঙ্গিয়ে যাবে না।
তাইতো বসে বসে অপেক্ষা করছে আর বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। আজ মনে হয় ঘড়িটাও চলছে না।ঘড়িটাও আজকাল বেঈমানী করছে আমার সাথে।তিশার কেনো জানি আর সহ্য হচ্ছে না।"
-'ঠিক ৭টা বাজে জিসান বাসায় আসলো।শোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে রইলো।
আমি পানি নিয়ে উনার সামনে দাঁড়ালাম।উনি চোখ খুলে আমার দিকে একবার তাকালো,তারপর পানিটা খেয়ে পাশ কাটিয়ে চলো গেলো।আর আমি খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।'
---এতো সহযে হার মানার মতো মেয়ে আমিও না।আমি খুব ভালো করেই জানি,কাল রাতে আমার বলা কথা গুলোর জন্যই রেগে আছে।সব রায়হান ভাইয়ের দোষ।কিন্তু আমিও তাকে মানিয়ে ছাড়বো।
উনি অফিস থেকে এসেই ফ্রেস হয়ে কফি চাইবে,তাই আজ আমি আগেই কফি বানিয়ে রাখলাম। তার ডাকার সাথে সাথে কফি নিয়ে ছুটলাম তার ঘরে।
"জিসান মাত্রই ফ্রেস হয়ে আসলো।তিশাকে নিজের রুমে দেখে কিছুটা অবাক হলো,কিন্তু কিছু বললো না।ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো ঠিক করার বাহানায় তিশাকে আড় চোখে দেখছিলো।তিশা কফি ট্রি টেবিলে রেখে জিসানের পেছনে দাঁড়ালো।
জিসান ডোন্ট কেয়ার লুক নিয়ে পাশ কাটিয়ে ট্রি টেবিলে রাখা কফিটা হাতে নিয়ে কয়েকটা চুমুক দিয়ে কি যেনো ভাবতে লাগলো।
কারণ কফির টেস্টটা আলাদা।জিসানের বুঝতে বাকি নেই,কফিটা তিশার হাতের।জিসানের মুখে বাকা হাসি,কারণ ওর পিচ্ছি বউ ওকে মানাবার চেস্টা করছে।কিন্তু সেই হাসিটি তিশা দেখতে পেলো না।"
---কিছু না বলেই আবার আলমারীর দিকে গিয়ে কি যেনো খুঁজতে লাগলো জিসান।তিশা ও জিসানের পিছে পিছে ঘুড়ছে কখন ধরে কিন্ত খাটাইশটার তিশার জন্য একটুও মায়া হয় না।হঠাৎ জিসান পিছনে ঘুড়লে তিশাকে সামনে দেখতে পায়।
"সমস্যা কি।কখন ধরে দেখছি পিছনে পিছনে গুড়ছিস।দাঁতেদাঁত চেপে।"
---আম সরি....করুণ কন্ঠে।মাথা নিচু করে।
"সরি ফোর ওয়াট!চিল্লিয়ে।"
'-তিশা বুঝতে পারে,জিসান যেনেও না জানার ভান করছে।
আম সরি কাল রাতের জন্য।আমি সত্যি জানতাম না স্যার এতো বাজে হবে।আমি ওভাবে বলতে চাইনি।প্লিজ ক্ষমা করে দিন।আর এমন হবে না।প্লিজ......।
বলতে বলতে তিশা কান্না করে দেয়।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে,যাকে বন্ধ করার বৃথা চেস্টা করছে তিশা।না পেড়ে হাতের উল্টা পিঠ দিয়ে চোখ মুছতে লাগলো।'
---জিসান যতোই রাগ করুক।কিন্তু তিশার কান্না একদমই সহ্য করতে পারে না।তিশার হাতটা ধরে একটানে বুকের মধ্যে নিয়ে এলো।
তিশাকে পরম আদরে বুকের মধ্যে চেপে ধরলো।আর তিশাও আজ জিসানের পিঠের দিকে গেন্জীটা মুঠ দিয়ে ধরে রেখেছে।আজ তিশাও জিসানকে জরিয়ে ধরেছে।
আজ কেনো জানি তিশার মাঝে কোনও সংশয় কাজ করছে না।বরং ভালোলাগা বিরাজ করছে।
"স্টোপ জান!একদম চুপ।কিন্তু তিশার থামার নাম নেই বলে,একটা ধমক দিলো জিসান।স্টোপ!"
---তিশা ধমকে চুপতো হয়ে গেলো,কিন্তু চোখের জল বন্ধ হবার নাম নেই।জিসান আলতো হাতে চোখ মুছে দিয়ে দু'চোখে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ালো।
মুহুর্তের মধ্যে তিশার পুরো শরীরে ঠান্ডা স্রোতের শিহরণ বয়ে গেলো।কারো ঠোঁটের স্পর্শ যে এতো ভালোলাগা কাজ করতে পারে তা তো জানাই ছিলো না তিশার।অদ্ভুত সেনসেশন কাজ করছে।
তিশার চোখদুটো এখনো বন্ধ করে সেই স্পর্শটা অনুভোব করছে।তিশা জানে না কেনো তার সাথে এমন হচ্ছে।
তবে আজকাল যে, ও জিসানকে চরম ভাবে মিস করে তা জানে।কিভাবে যেনো এই মানুষটি তিশার কলিজায় গেঁথে গেছে।এখন মানুষটি দূরে সরে গেলে,কলিজাটা ও যেনো ছিঁড়ে যাবে।
"জিসানের মুখে এক চিলতি হাসির রেখা ফুটে উঠে।জিসান বুঝতে পেরেছে ওর পিচ্ছি বউটাও আজ কাল ওর একটু স্পর্শ পেতে চায়।
তাই জিসানও সুযোগ পেয়ে তিশার দুগালে কপালে চুমো দিয়ে দিলো।কারো চুমো যে এতো মিস্টি হতে পারে,তা তিশা আজ অনুভোব করলো।
তিশার আজ চিৎকার করে বলতে মন চাইছে...ভরিয়ে দেন না আজ আমাকে আপনার চুমোতে।আজ আমিও যে আপনার চুমো পাগল হয়ে গেলাম।এতো মিস্টি স্বাদ তো মিস্টিতেও নেই।যতোটা মিস্টি আপনার চুমোতে আছে। "
---তিশাকে এখনো এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,তিশার ঘাড়ের হাড়গুলোতে ঠোঁট ছুঁয়ে জিসান আস্তে আস্তে তিশার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো।আমি কিন্তু এখনো মাপ করিনি।এর জন্য শাস্তি পেতে হবে তোকে।শাস্তির কথা শুনে চকিতে চোখ খুললো তিশা।
'শাস্তি!ক ককিসের শা শ শাস্তি।ঢোক গিলে।'
---তিশাকে একদম নিজের কাছে টেনে এনে, শাস্তি নিতে রেডিতো।
'তিশা জিসানের দিকে ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে মাথা নাড়লো।'
জিসান আলমারি থেকে কয়েকটা সোপিং ব্যাগ বের করে তিশার হাতে দিলো।এসব কি?
-খুলে দেখ।
তিশা সোপিং ব্যাগ খুলে,মুখ একহাত হা হয়ে যায়।কারণ ব্যাগগুলোর মধ্যে সব ডিজাইনার বোরখা,হিজাব ম্যাচিং করা।প্রায় পাঁচ ছয়টা হবে,এতো বোরখা কেনো।
"জিসান তিশার হাতটা ধরে নিজের কাছে টেনে এনে,এগুলো সব তোর জন্য।কোচিং, কলেজ,আর বাহিরে যাওয়ার জন্য।আজ থেকে এসব পড়েই বাহিরে যাবি।
আমি চাইনা আমার তিশাকে কেউ দেখুক।আমি সবার চোখতো বন্ধ করতে পারবো না।কিন্তু আমার পাখিটাকে তো আড়ালে আঘলে রাখতে পারবো।আমি চাইনা এর পর কোনও সাব্বির তোর দিকে এভাবে নোংরা চোখে তাকাক।আমি সহ্য করতে পারবো না।
আর আমাদের ধর্মেও তো পর্দা করার কথা বলেছে।আমার জন্য না হলেও নিজের জন্য হলেও পড়িস। তিশা অবাক চোখে জিসানের দিকে তাকিয়ে আছে।কি অদ্ভুত লোকটি।তাকে বুঝা বড় দায় তিশার জন্য।উনাকে দেখে বুঝা যাবে না উনার মনটা কেমন।"
"আমি মাথা নেড়ে তাকে বললাম,আমি এগুলো পরবো।এতে আমার কোনও সমস্যা নেই।জিসানে হেসে তিশার কপালে আরোও একটা চুমো দিলো।"
||
||
"রায়হান ড্রয়িংরুমে বসে সবার সাথে কথা বলছে।তিশা আসলে তিশাকে রেডি হতে বলে,যাবার জন্য।কিন্তু জিসানের মা ডিনার না করে কিছুতেই যেতে দিবে না।তাই এখন বসে থাকা ছাড়া কোনও উপায় নেই।তাওহিদ ও তৌফিক সাহেবের সাথে গল্প করার ফাঁকে জিসানের কথা জিঙ্গেস করে।
-ভাইয়া জানি কোথায় গিয়েছে খুব তাড়াহুড়া করে।'ওওও আচ্ছা হয়তো কোনও কাজ পরেছে।'
---তিশার সাথে কথাবলার মাঝেই একটা কল আসে জিসানের।কলটা রিসিভ করার পরই জিসানের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।কোনও রকম তিশাকে বুঝ দিয়ে বাড়ী থেকে বের হয়ে গাড়ী নিয়ে সোজা কোথাও চলে যায়।তিশা কিছুটা অবাক হয় জিসানের এমন তড়িৎগতিতে যাওয়ার জন্য।
"হালকা অন্ধকার রুমে একটা শক্ত কাঠের চেয়ারে একজনকে বেধে রাখা হয়েছে।জিসান ঘরে ডুকেই চেয়ারে বসে থাকা লোকটির বুকে লাত্তি মারে।চেয়ার সহ ছিটকে গিয়ে পড়ে লোকটি।
এতে প্রচণ্ড আঘাত পায়।নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে যায়।জিসান লোকটিকে চেয়ার সহ তুলে।আমি কি বলেছিলাম, শুধু ভয় দেখাতে।
আর তুই কু*****কি করছিলি।একটুর জন্য ও বেঁচে গেছে।আজ যদি ওর কিছু হতো,তাহলে জানিস কি হতো সুনামি নেমে যেতো, সব শেষ করে দিতাম আমি।সসসব........! বলেই লোকটাকে নিজের হাতের হকি স্টিক দিয়ে মারতে লাগলো।সোম এসে জিসানকে থামালো।স্যার মরে যাবে প্লিজ স্যার।"
---বিশ্বাস করেন বস আমি ঠিক মতোই আইতাছিলাম।২০ বছর ধইরা গাড়ী চালাই আজও কোনও ভুল হয়নি।আপনার কতো কাজ করছি।তাহলে এটা কেমনে ভুল করি।
কিন্তু ম্যাডামেরি কোনও হুস ছিলো না।সে কোনও দিকে না তাকাইয়া রাস্তা পার হইতাছিলো।আমি তো চাইছি উনার পাশ দিয়ে গাড়ীটা খুব স্প্রিডএ নিয়া যামু। আমার কোনও দোষ নাই।
"-জিসান কিছুটা শান্ত হলো।হাতের ইশারায় সোমকে বললো।ওকে এখান থেকে নিয়ে যাও।আজকের পর যেনো ওকে না দেখি।আর প্লান অনুযায়ী বাকি কাজ করে ফেলো।
জিসান জানালার পর্দা সরিয়ে সামনের ভিউর দিকে তাকিয়ে আছে।বাড়ীটা শহরের কোলাহল থেকে কিছুটা দূরে।
যখন জিসান খুব ক্লান্ত হয়ে পরে সব কিছু থেকে তখন নিবিড় ভাবে একা কাটানোর জন্য এখানে চলে আসে।এই বাড়ীর ঠিকানা ওর পি এ সোম ছাড়া কেউ জানে না।
মাথাটা ভীষন পেইন করছে,পেকেট থেকে একটা সিগেরেট জ্বালিয়ে বাতাসে ধোঁয়া ছড়াতে থাকে।সোম পিছনে এসে....
---স্যার এটা করার কি খুব দরকার ছিলো।আজ ভাগ্য ক্রমে ম্যাডাম বেঁচে গিয়েছে।খেলাটা খুব রিস্ক ছিলো।পারমিশন দিলে একটা কথা জিঙ্গেস করতাম।জিসান একটু হেসে,তোমার আবার পারমিশন কবে থেকে লাগলো।
'না আসলে, ব্যাপারটা যে পারসোনাল তাই।'
---বলো কি বলতে চাও।
'এসব কেনো স্যার। ম্যাডামের সাথে তো বিয়ে হয়ে গিয়েছে তাহলে এসব কেনো।'
---জানো সোম,ওকে বিয়ের জন্য আমাকে কিছু শর্ত মানতে হয়েছিলো।প্রথম দুটো শর্ত আমি ভেঙ্গে দিই।কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ৩য় শর্ত।
আমি যাতে ৩য় শর্ত না ভাঙ্গতে পারি তার জন্য নোটিশ জারি করেছে আমার বাবা আর শ্বাশুর।যেদিন আমি প্যারিস থেকে আসি,সেদিনই আমাকে নিয়ে একটা সভা বসে বাড়ীতে।সেখানে আমি রায়হান,আর আমার দুজন শ্রদ্ধনীয় বাবা উপস্থিত ছিলো আর কেউ না।
তারা আমাকে তিশা থেকে দূরে থাকতে বলে।আমার মাথা সেদিন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।চার বছর পর দেশে ফিরে এসব কথা শুনে কার না মাথা গরম হবে বলো।
"আমি তাদেরকে তিশার এইচ এসি পরীক্ষার পর তুলে দেওয়ার কথা বললে আমার শ্বাশুর কিছু চিন্তা না করেই বলে ফেলে,তিশার পড়ালেখা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা এ বিষয় নিয়ে কোনও চিন্তা করবে না।আরো চার পাঁচ বছর আমাকে অপেক্ষা করতে বলে।
তুমি বলো মগেরমুল্লুক পেয়েছে।দীর্ঘ এতো বছর ওর জন্য অপেক্ষা করছি সেই ছোট থেকে ওর।এখন আবার নাকি অপেক্ষা।
কিভাবে বলতে পাড়লো উনি।আমার ফ্রেন্ডদের বিয়ে হয়ে বাচ্চাকাচ্চা হয়ে গিয়েছে।আর আমি এখনো শুধু অপেক্ষা করে যাচ্ছি।তার উপর আরেক শর্ত নিজের বউয়ের কাছ থেকে দূরে সরে থাকতে।
তাদের এই শর্তটা মানতে আমি নারায। তাইতো সেদিন তিশাকে পুকুর থেকে বাঁচাবার পর আমার শ্বাশুর এই বিষয় আর কোনও কথা বলেনি।মেয়ের জীবন বাঁচিয়েছি কোন মুখে বলবে মেয়ে থেকে দূরে থাকতে।ওটা অন্য কথা তিশাকে পুকুরে আমিই ফেলেছিলাম।শুধু তিশার কাছে থাকার জন্য।"
---সেটা না হয় বুঝলাম কিন্ত আজ আবার এটা কেনো।'সব কি আজই শুনবে।ধৈর্য ধরো।ধৈর্যের ফল মিঠা হয় জানোতো।'
"হুম.......।"
---জিসান একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে জানো সোম অপেক্ষা জিনিসটা কতোটা খারাপ একমাত্র সে বুঝে যাকে এটা করতে হয়।তবুও আমি অপেক্ষা করতে রাজি হয়েছিলাম।কিন্তু আমি এখন বুঝতে পারছি তিশার বাবার মনে অন্য কিছু চলছে।
আমার আর তিশার ব্যাপারটা তখন মেনে নিলেও এখন মানতে চাইছে না।কোনও না কোনো ভাবে তিশাকে আমার থেকে আলাদা করতে চাইছে,কারণটা কি আমি জানি না।
তিনি হয়তো অন্য কিছু চিন্তা করছেন।সে কিছু করুক তার আগেই আমার জিনিসটি আমার কাছে নিয়ে আসতে হবে।ইচ্ছা করলে জোড় করে নিয়ে আসতে পারি।কিন্তু এতে আমি একটা মূল্যবান জিনিস হারাবো।আর তা হলো রায়হান।
'-রায়হান কে আমি হারাতে চাইনা।আর তিশার বাবার অমতে তিশাও আমার কাছে আসতে চাইবে না।আপসে যেহেতু কিছু হবে না তাহলে একটু আঙ্গুল বেঁকিয়ে নিয়ে নি।
সমস্যা কি?কোনও অবৈধ জিনিসতো চাই নি আমার বিয়ে করা বৈধ বউকেই চাইছি।'
--সোম অবাক দৃস্টিতে তাকিয়ে আছে জিসানের দিকে।এই মানুষটিকে বুঝা তার জন্য অনেক কঠিন।গতো কয়েক বছর ধরে জিসানের পি এ এর পেশায় আছে।যথেষ্ট সৎ,আর কাজের প্রতি নিষ্ঠা দেখে জিসান সোমকে খুব পছন্দ করে।তার সাথে বিশ্বাস ও।তাইতো জিসানের এই রুপটা একমাত্র সোমই দেখতে পায়।
||
||
"জিসান বাসায় আসতে আসতে একটু লেট হয়ে যায়।তবুও এসে ভাগ্যক্রমে রায়হানকে পেয়ে যায়।রায়হান আর তিশা মাত্রই সবার থেকে বিদায় নিয়ে বের হবে।তখনি জিসান বাসায় প্রবেশ করে।"
---কোথায় ছিলি,ফোন কোথায় তোর।কয়টা ফোন দিয়েছি জানিস।রায়হানের কথায় জিসান ফোন চেক করে।
'সরি ইয়ার চার্জ নেই।'
---এভাবে না বলে কোথাও যাবি না এর পর বুঝলি।এমনেই তোর শত্রুর অভাব নেই।
"জিসান মৃদ হেসে,এভাবে বউয়ের মতো জেরা করা বন্ধ কর।আমার পিচ্ছি বউটাকে এসব শিখাতে নেই।তাহলে আমার কপাল পুড়বে ।
"সেট আপ.... রায়হান হেসে।"
---এমন সময় রায়হানের কল আসে,বাসা থেকে।রায়হান কলটি রিসিভ করে টেনশনে পড়ে যায়।ওকে আমি আর তিশা তাড়াতাড়ি আসছি।তোমরা রেডি থেকো।তোমাদের স্টেশনে ছেড়ে দিয়ে আসবো।কলটা কেটে তিশাকে বলে,তাড়াতাড়ি চল,মা বাবা এখনি গ্রামে যাবে।
'তিশা প্রশ্ন করার আগে জিসানই প্রশ্ন করে বসে কেনো।
---মামার অবস্থা ভালো না।হসপিটালে এডমিট আছে বর্তমানে।মা শুনেই কান্নায় ভাসিয়ে দিয়েছে।ভাইকে নিজ চোখে না দেখা পর্যন্ত থামবে না,তা বাবা ভালো করেই জানে।তাই এখনি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।তিশাকে বাসায় রেখে আবার বাবা মাকে স্টেশনে দিয়ে আসতে হবে।
"তুই স্টেশনে গেলে তিশার সাথে কে থাকবে।"
---কেউ না,আমি বাহির দিয়ে দরজা লক করে যাবো।
"আর কাল!কাল যখন তুই অফিসে থাকবি তখন।রায়হান খুব ভালো করে বুঝতে পারছে,জিসান কি বলতে চাইছে।তাই ও চিন্তায় পরে গেলো।"
---সমস্যা নেই আমি একা থাকতে পারবো।
'-তোকে কেউ জিঙ্গেস করেছে,তাহলে রায় দিতে আসলি কেনো।কোথায়ও যাবি না তুই।যতোদিন বাবা মা না আসে।
তিশার হাতটা ধরে বাসার ভেতরে নিয়ে গেলো।'
---তিশা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।রায়হান মাথা নাড়িয়ে হা বলে।তাই তিশাও চুপ হয়ে গেলো।
'রায়হান ওর বাবা মাকেও এই ব্যাপারটা বলে,তার পর উনারাও বুঝতে পারে জিসান কথাটা মন্দ বলেনি।তাই তিশা ওখানেই থাক কিছুদিন।এতে টেনশন ও কম হবে।
রায়হান ও জিসান দু'জনে গিয়ে তিশার বাবা মাকে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে আসে।
রায়হানকে বাড়ীর সামনে নামিয়ে দিয়ে আসতে আসতে ১২টা বেজে যায়।'
---নিজের রুমের দিকে যাওয়ার সময় হঠাৎ কি মনে করে নিশির রুমে উকি মারে।তিশা নেই,গেলো কোথায়।আমার রুমে নাতো।
জিসান নিজের রুমেও তিশাকে পায় না।ভাবতে লাগে কোথায় থাকতে পারে।হঠাৎ হাটা ধরে ছাদের দিকে,যা ভেবেছিলো।তিশা ছাদে দোলনাতে বসে আছে।
"চাঁদের স্নিগ্ধ আলো তিশার মুখে পরে,এক অপরুপ সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে।কি যে মায়া লাগছে,তা উপলব্ধি করার মতো না।এই মায়ার জালেই তো আমি ফেঁসে গেছি।যার থেকে আমি মুক্তি পেতে চাই না।
হালকা ঠান্ডা বাতাস বইছে,হয়তো কোথায়ও ঝড় হচ্ছে।জিসানের মনেও এই মেয়েটাকে দেখলে কেমন ঝড় হতে থাকে।এই ঝড়কে শান্ত করতে তোর ঐ কাজল কালো আখি দুটির শান্ত চাওনি যথেস্ট।"
--জিসান একটু মুচকি হেসে তিশার পাশে গিয়ে বসলো,তিশা আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো।জিসানকে পাশে বসতে দেখে একবার তাকিয়ে আবার আকাশ দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
"মন খারাপ"।
---উঁহু।
"তাহলে,এতো রাতে এখানে কিরছিস।"
---চাঁদ দেখছি।কতো সুন্দর তাই না।
"হুম,অনেক সুন্দর।তিশার দিকে তাকিয়ে।"
---তিশা একটু হেসে, আপনিতো দেখলেনি না,তাহলে কি করে বললেন।
'-আমি আমার আকাশের চাঁদের কথা বলছি।ঐ আকাশের চাঁদকে তো সবাই দেখে,অনেকে কাছেও পেতে চায়।কিন্তু আমার আকাশের চাঁদটা শুধু আমার।এতে কারো অধিকার নেই।আর আমি কাউকে দেখতেও দেবো না।'
---তাহলে কি করবেন।ঘরে বন্দি করে রাখবেন।এর পরও যদি দেখে ফেলে।
"উঁহু, ঘরে বন্দি করবো না।তবে কেউ যাতে আশেপাশে না আসতে পারে তার ব্যবস্থা করে দেবো।এর পরও যদি দেখে আমার ভেতরে তাকে আড়াল করে ফেলবো।"
---তিশা এবার জিসানের দিকে তাকালো।জিসান মাথাটা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।কি অদ্ভুত লোকটি।বিচিত্র তার চিন্তা ভাবণা।
তার অর্ধেক কথা আমি কিছুই বুঝিনা।বাকি অর্ধেক কথা বুঝেও লাভ নেই।রহস্যময় তার সব কিছু আমার জন্য।
তিশা গুডনাইট বলে চলে যেতে নিলে।
"জিসান হাতটা ধরে ফেলে।তিশা তাকিয়ে আছে জিসানের দিকে।কফি খাবো,খাওয়াবি।"
---ঠিক আছে আমি বানিয়ে নিয়ে আসছি।
'এখানে না।রুমে নিয়ে আসিস।'
তিশা চলে গেলো কফি বানাতে।
--জিসান বেলকানিতে দাঁড়িয়ে, বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।হালকা মৃদ বাতাস এসে মাঝে মাঝে শরীরকে বুলিয়ে দিচ্ছে।অদ্ভুত শিহরণ জাগে পুরো শরীরে।তিশা কফি এনে জিসানের হাতে দিলো।
কফিতে চুমুক দিয়ে কিছু একটা কম আছে।
-'তিশা চিন্তায় পরে যায়,আমিতো সব দিলাম তাহলে।' ---বিশ্বাস না হলে খেয়ে দেখ।
'তিশা এক চুমুক খেয়ে দেখে সব ঠিকই আছে।সব তো ঠিক,একদম পারফেক্ট।'
তাই দেখি!জিসান কফিতে চুমুক দিয়ে হুমম এবার ঠিক আছে।
'তিশা বুঝতে পারলো জিসান ইচ্ছা করে করেছে।মুখটা অন্যদিকে ঘুড়িয়ে ফেললো।কিন্তু ঠোঁটের কোনে একচিলতি হাসি ঠিকই ফুটে উঠলো তিশার।'
--আবছা অন্ধকারেও সেই হাসি জিসান দেখে ফেলে।
'অনেক রাত হয়েছে,আমি এখন আসি।বলে তিশা যেতে নিলে জিসান হাতটা ধরে ফেলে।এবার তিশার বুঝতে বাকি নেই জিসান কেনো ধরেছে।'
"একটানে তিশাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে।তিশার পিঠ জিসানের বুকের সাথে লেগে আছে।তিশার কোমড়টা ধরে আরো একটু কাছে টেনে নিলো।তিশার সিল্কি চুলে নিজের মুখ ডুবিয়ে দিলো।
জিসানের স্পর্শে তিশার শরীরে কম্পন হতে লাগলো।তিশার এই কম্পন যেনো জিসানকে আরো পাগল করার জন্য যথেস্ট ছিলো।
গাড়ের পিছের চুলগুলো সরিয়ে টুকরো টুকরো কিস করতে লাগলো।এতে তিশা চোখ দুটো বন্ধ করে কোমড়ে রাখা জিসানের হাতটি শক্ত করে ধরে ফেলে।যার ফলে তিশার নখ লেগে যায় জিসানের হাতে।কিছুক্ষণ পর কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে,
---এই বাড়ীতে তোর নিজের একটা রুম আছে,সেই রুমের মানুষটির উপরও যখন তোর পুরো অধিকার আছে।তাহলে নিজের রুম ছেড়ে,আর মানুষটিকে ছেড়ে অন্যঘরে বসবাস কেনো।
আমার প্রতি বিশ্বাস নেই,নাকি নিজের প্রতি।
"জিসানের কথার উত্তর তিশা দিতে পারে না।তা দেখে জিসান মুচকি হেসে দেয়।"
---বালকনির কাউছে শুয়ে তিশাকেও টান দিয়ে নিজের উপর নিয়ে আসে।পরম যত্নে তিশার মাথাটা বুকের মাঝে চেপে ধরে।
এই হ্রদপিন্ডের ধুপধুপ শব্দ শুনছিস,এসবই তোর জন্য।তুই ছাড়া এটার ক্রিয়া চক্র বন্ধ হয়ে যাবে।জিসানের কথায় তিশার চোখ দিয়ে একফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে জিসানের বুকের উপর পড়ে।অজান্তেই তিশার ঠোঁট দুটো জিসানের বুকে চুম্বন দিয়ে দেয়।
জিসান বুঝতে পেরে তিশাকে নিজের সাথে আরো গভীর ভাবে জরিয়ে ধরে।
জিসান বুঝে গেছে,ওর পিচ্ছি বউ যে ওর প্রেমে পড়ে গিয়েছে।তাও আবার কঠিন ভাবে।এখন শুধু মুখে বলার পালা।
চলবে.....
লাইক কমেন্ট করে সাথে থাকবেন লাইক কমেন্ট বেশি আসলে অতিদ্রুত নেক্সট পর্ব পোস্ট করব
No comments