ভাইয়ের_বন্ধু_যখন_বর😍 ------(season 2 [🖤] part_15🍁
"এতিমখানার সব কাজ শেষ করে, তাদের থেকে বিদায় নিয়ে নিলো জিসান।জিসানের কাজিন নীড় ও হীরা বয়সে জিসানের ছোট হলেও তাদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ জিসানের।
আর এতো বছর পর কাজিনদের পেয়ে জিসানও বেশ খুশি।তাইতো তাদের সাথে গল্প করতে করতে ড্রাইভ করে বাসার দিকে আসছিলো।বাড়ীর খুব কাছাকাছি চলে এসেছে তারা।"
---এমন সময় রাস্তার ফুটে দাঁড়িয়ে থাকা একটা মেয়ের দিকে জিসানের চোখ পড়ে।।কয়েকজন বখাটে ছেলে একটা মেয়েকে ঘিড়ে দাঁড়িয়ে আছে।ওয়াইট কালারের সালোয়ার কামিজ,মাথায় ওড়না দেওয়া।চেহারাটা পুড়ো দেখা না গেলেও হাতের ডায়মন্ডের চুড়িটা দেখেই দূর থেকে জিসানের চিন্তে কস্ট হয়নি মেয়েটি কে?
"কারন এই চুড়িটা জিসানই আজ সকালেই তিশাকে পড়িয়ে দিয়েছিলো।প্যারিস থেকে তিশার জন্য এনেছিলো চুড়ি জোড়া।কিন্তু দিতে ভুলে গিয়েছিলো।তাই আজ নিজেই তিশাকে পড়িয়ে দিয়েছিলো।"
---সাথে সাথে গাড়ী ব্রেক করে থামিয়ে দেয় জিসান।হঠাৎ গাড়ী এভাবে থামানোর কারন জিঙ্গেস করে,তাওহিদ।
'জিসান সিট বেল্ট খুলতে খুলতে সামনে ইশারা করে,তিশা এখানে কি করছে।দাঁতেদাঁত চেপে।'
---তাওহিদসহ তাদের কাজিনরাও তাকিয়ে দেখে,আসলেই মেয়েটি তিশা।কিন্তু সবার মুখে একই প্রশ্ন ও এখানে কেনো।
'রায়হান ও তৌফিক সাহেব মাত্রই বাসায় আসলেন।এসেই শুনে তিশাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
তৌফিক সাহেব বাড়ীর সবার উপর রাগান্বিত হয়ে জিঙ্গেস করলো,খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মানে কি?....কি হয়েছে।'
---নিশি কিছু কথা সংক্ষেপে বললো,যতোটুকু ও জানে।
'এদিক দিয়ে রায়হান বুঝতে পারছে,তিশা আর কোথায়ও না বাসার দিকেই যাবে।কিন্তু এখানকার রাস্তা গুলো তিশার জন্য নিরাপদ না।কোনও অঘটন ঘটার আগেই ওকে খুঁজতে হবে।তাই রায়হানও গাড়ী নিয়ে বের হয়ে গেলো বোনকে খুঁজতে।'
---তিশা তখনি বাড়ী থেকে বের হয়ে যায়।হাতে টাকা পয়সা কিছুই নেই।তাই পায়ে হেটেই বাড়ীর দিকে রওনা দিলো।চোখের পানি এখনো কোনও বাধ মানছে না।একহাত দিয়ে চোখ মুছছে আরেক হাত দিয়ে মাথার ঘুমটাটা ধরে রেখেছে।
এক প্রকার দৌঁড়েই যাচ্ছে।হঠাৎ পা দু'টো থেমে গেলো।সামনে কিছু বখাটে টাইপের ছেলেদের দেখে।কি করবে বুঝতে পারছিলো না।সামনে বাড়বে কি বাড়বে না। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই।রাস্তাটা এমনেই নিরব থাকে।আর এখন তো আরো বেশি।
তবুও সাহস করে মাথা নিচু করে সামনের দিকে আগতে লাগলো।কিন্তু তিশাকে একা পেয়ে ছেলেগুলো পথ আটকে দাঁড়ালো।তিশা এই ভয়টাই পেয়েছিলো।
তিশা বার বার বলার পরও ছেলেগুলো পথ ছাড়লো না বরং ঘিরে ফেললো ওকে এবং বাজে ইংগিত করতে লাগলো।ঠিক ঐ সময়ই জিসানের গাড়ীটা ওখান দিয়ে যাচ্ছিলো।
"তিশা... বলে ডাক দিলে,ছেলেগুলো পিছনে ঘুড়ে তাকায়।জিসানকে দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো।কারন জিসান এখানকার স্হানীয়।জিসানের আগের সব রেকর্ড জানা এদের।আর ছেলেগুলোও এই এলাকার তাই জিসানকে খুব ভালো করে চিনে।"
'ভ ভভাই আ..আপনি।আ..আপনি এখানে।কিছু লাগবে।ছেলেগুলো ভয়ে ঢোক গিলে বলে।'
---তোরা যে মেয়েটাকে ঘিরে রেখেছিস জানিস ও কে?
'না ভাই,এলাকায় নতুন আসছে মনে হয়,আপনি চিনেন।'
---ও আমার ওয়াইফ।খুব শান্ত ভাবে কথাটা বললেও চেহারাটা ভয়ংকর লাগছে জিসানের।কথায় আছে না সুন্দর মানুষ রাগলে আরো ভয়ংকর সুন্দর লাগে।
'এবার ছেলেগুলো ভয় পেয়ে যায়।বিশ্বাস করেন ভাই আমরা কিছু করেনি,আর যদি জানতাম আপনার বউ তাহলে সামনেও আসতাম না। মাপ করে দেন এবারের মতো ভাই।'
---জিসান দাঁতেদাঁত চেপে তিশাকে প্রশ্ন করে,এদের মধ্যে কেউ তোকে টাচ করেছে।
"তিশা এই তিন বখাটে কে দেখে যতোনা ভয় পেয়েছে,তার থেকে বেশি ভয় পাচ্ছে এখন জিসানকে দেখে।গলা যেনো শুকিয়ে আসছে। একবার জিসানের দিকে একবার ছেলেগুলোর দিকে তাকাচ্ছে।তিশার মতো ছেলেগুলোর অবস্থা ও খারাপ।"
---তিশা কথা বলছে না দেখে,জিসান জোরে একটানধমক মারে।জিসানের ধমকে তিশা কেঁপে উঠে।
ন..না ওরা কেউ আমাকে টাচ করেনি।
"সত্যি বলছিস।"
---হে একদম সত্যি।
"জিসান ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে___এবারের মতো মাপ করছি।নেক্সট টাইম যদি দেখি পথে ঘাটে মেয়েদের এমন উৎপীড়ন করছিস তাহলে পরিনাম ভালো হবে না।আমি কে, আর কি করতে পারি।অবশ্যই নতুন করে বলতে হবে না।"
'ছেলেগুলো ভয়ে সেখান থেকে দৌঁড়ে পালালো।মনে হচ্ছে জান হাতে নিয়ে দৌঁড়াচ্ছে।'
---এবার তিশার পালা,কিন্তু তিশাতো ওদের মতো দৌঁড়তে পারবে না।তাই ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে।চোখের পানিটা যেনো আরো বেড়ে গেলো।জিসানের প্রশ্নের উত্তর ও দিতে পারছে না।
তাই জিসান আবারও বললো,তুই এখানে একা কি করছিস।বাড়ী থেকে বের হতে মানা করেছিলাম।কথা বলছিস না কেনো।চিল্লিয়ে.....।
"তিশা নিশ্চুপ!শুধু কেঁদেই যাচ্ছে।তিশার এমন বিহেভিয়ার এ জিসান আরো রেগে যায়।কিছু বলতে যাবে তখনি রায়হান ও এসে পড়ে সেখানে।"
'রায়হান কে দেখে তিশা দৌঁড়ে ভাইয়ের কাছে চলে যায়।রায়হান কে জরিয়ে ধরে___ভাইয়া প্লিস আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো।আমি এখানে থাকতে চাইনা।প্লিস ভাইয়া আমি বাসায় যাবো।আমাকে বাসায় নিয়ে চলো।'
----রায়হান বুঝতে পারছে কিছু একটা হয়েছে,যার কারনে তিশা এমন করছে।বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে, ঠিক আছে।তুই শান্ত হো আগে।বাসায় আন্টি আংকেল চিন্তা করছে, তাদের থেকে বিদায় নিয়ে আমরা বাসায় চলে যাবো।ঠিক আছে।
জিসানদের বাসায় যাওয়ার কথা শুনে___তিশা চিল্লিয়ে উঠে,না আমি যাবো না ঐ বাসায়।তুমি ফোনে করে বলে দিও আন্টি আংকেল কে।আমি এখন আমাদের বাসায় যাবো।
"তিশার এধরনের কথা শুনে জিসানের এবার ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে গেলো।জিসান বুঝতে পারছে,বাসায় কিছু একটা অঘটন হয়েছে,যার কারনে তিশা এমন উদ্ভট আচরণ করছে।
না জানা পর্যন্ত তিশাকে কোনও ভাবেই একা ছাড়া যাবে না।জিসান তিশার হাত চেপে ধরে নিজের দিকে নিয়ে আসলো।আমার প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত তুই কোথাও যাবি না।তিশাকে নিজের গাড়ীতে বসিয়ে চলে গেলো।"
---তাওহিদ, হীরা,নীড়,রায়হান নিরব দর্শকের মতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে।রায়হান কে উদ্দেশ্য করে তাওহিদ বলে___এই ব্যাটার সাথে জীবনেও কোথাও যামু না।কিছু হলেই আমাকে মাঝ রাস্তায় ফেলে চলে যায়।এমন ভাই আল্লাহ আর কারো না দেখ।
||
||
"তানজিলা রাবেয়া বেগমের মাথা টিপে দিচ্ছে।তিশাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না শুনার পর থেকেই উনার বি পি লো হয়ে গিয়েছে।ব্যাচারী শোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে।টেনশন তার একটাই।জিসান এলে না জানি কি করে।"
---হঠাৎ রাবেয়া বেগমের চোখ গেলো দরজার দিকে।জিসান তিশার হাত ধরে টেনে সবার সামনে দিয়ে উপরে নিজের রুমে নিয়ে গেলো।
সবাই চেয়ে রইলো,কিন্তু ঘটনা এখনো বুঝতে পারছে না,তিশাকে এভাবে আনার।
'জিসান তিশাকে রুমে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।তিশাকে বেডে বসিয়ে নিজেও একটা চেয়ার নিয়ে তিশার সামনে বসলো।খুব শান্ত ভাবে তিশাকে জিঙ্গেস করলো,কি হয়েছে খুলে বল এভ্রিথিং।কিন্তু জিসান হাজার বলেও যখন তিশার মুখ খুলতে পারলো না,তখন চেয়ারটা লাথি মেরে ফেলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।'
---কিছুক্ষন পর রায়হান এসে তিশার পাশে বসলো।তিশা এখনো মাথা নিচু করে বসে আছে।রায়হান তিশার মাথায় হাত রেখে.....তিশা বল বোন কি হয়েছে।তুই কেনো কাউকে কিছু না বলে এভাবে বাড়ী থেকে বের হলি।যদি তোর কিছু হয়ে যেতো।
'তিশা এখনো চুপ।তিশা জিসানের রাগ সম্পর্কে খুব ভালো করে পরিচিত। তাই ও বলতে চাচ্ছে না কাউকে কিছু।'
---তিশা এভাবে চুপ থাকলে হবে না,অন্তত আমাকে বল।কি হয়েছে?
'এবার তিশা মুখ খুললো।ভাইয়া আমি কি খুব খারাপ।'
---কি বলছিস এসব।তোকে কেউ কিছু বলছে।
'ভাইয়া আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও আমি এখানে থাকতে চাই না।'
---রায়হান তিশার মুখটা দু'হাত দিয়ে ধরে,আগে তোকে বলতে হবে,কি হয়েছে।কার জন্য আমার বোনের এ অবস্থা আমাকে জানতে হবে।না যেনে আমি এক কদমও নড়বো না, না তোকে কোথায়ও যেতে দেবো।তাই বল বোন আমার,প্লিস।
"তিশা ভাইয়ের বুকে মাথা রেখে,ভাইয়া তোমার কাছে কি মনে হয় আমি লোভী।আমি লোভে পরে জিসান ভাইকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছি।আমি তাকে আমার রুপ দেখিয়ে পাগল করে তুলেছি।তিশা মাথা তুলে-----
ভাইয়া সত্যি করে বলছি তোমাদের কসম,আমি এমন কখনো কিছু করেনি।যার কারনে জিসান ভাইয়ের মনে আমার প্রতি কোনও অনুভূতি আসুক।
আমিতো জানতামও না জিসান ভাইয়ের মনে আমাকে নিয়ে কি আছে।আর তাকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করার কথা কিভাবে ভাববো।
তখনতো আমার মাত্র ১৩ বছর বয়স ছিলো।বিয়ে কি,ভালোবাসা কি, ছেলেদের ফাঁসাতে হয় কিভাবে তা কি করে জানবো।সত্যি করে বলো ভাইয়া,আমাকে দেখে কি এমন মেয়ে মনে হয়।'
আমি উনার যোগ্য না আমি জানি,কিন্তু আমিতো বলেনি আমাকে বিয়ে করতে।তাহলে এখন কেনো আমাকে দোষী করা হচ্ছে।আজ মামীদের মনে এসব প্রশ্ন উঠেছে,কাল বাহিরের মানুষও এসব কথা বলবে।আজ আমাকে বলেছে কাল হয়তো কেউ তোমাকেও বলবে,তুমি বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে বোনকে বড় লোক বন্ধুর গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছো।"
'আমি এসব কথা শুনতে চাই না আর ভাইয়া।আমার চাই না এসব বাড়ী গাড়ী,টাকা পয়সা,বড় লোক শ্বশুর বাড়ী।কেনো বিয়ে দিলে ভাইয়া আমায় এতো উচ্চ ঘরে,কেনো?
তিশার কান্না করতে করতে হিচকি উঠে গেলো।'
---ত ততুমি জিসান ভাইকে বলো,আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিতে।এর পর নিজের যোগ্য অনুযায়ী কাউকে বিয়ে করে নিবেনি উনি।এএএ এতে উনিও সুখে থাকবে,আর আমাকে কেউ আর আমার বাবা মা কে নিয়ে কথা শুনাতে পারবে না।
তোমাদের নিয়ে কেউ কিছু বললে,আমি সহ্য করতে পারবো না ভাইয়া আমি সহ্য করতে পারবো না।তিশা আবার কান্না করছে।"
(তিশা কখনো এধরনের সিচুয়েশনে পরেনি,তাই নিজেকে কিভাবে সামলাতে হবে তা বুঝতে পারছে না।সমাজের সব মানুষ এক না।কিছু মানুষের কাজই হচ্ছে অন্যকে ছোট করা।)
---রায়হান চুপচাপ তিশার কথাগুলো শুনলো।একহাত দিয়ে বোনকে জরিয়ে ধরেছে,আরেক হাত দিয়ে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
এবার বুঝতে পারছে।কেনো তিশা এখানে আসতে চাইছিলো না।তিশা কান্না করছিলো,অনেক কস্ট করে তিশাকে শান্ত করে রায়হান।
'হঠাৎ কিছু ভাঙ্গার শব্দ শুনতে পায় নিচ থেকে রায়হান।রায়হান বুঝতে পারে,নিচে কি হচ্ছে। তাই নিশিকে কল করে রুমে আসতে বলে তিশার সাথে থাকার জন্য।আর রায়হান নিচে চলে যায় দেখতে।'
---এতেক্ষণ ফোনের লাউড স্পিকারে জিসানসহ বাড়ীর সবাই জানতে পারে কি হয়েছে।তিশা ও রায়হানের সব কথা শুনছিলো এতোক্ষণ সবাই।তিশাকে জিঙ্গেস করেও যখন কোনও উত্তর পাচ্ছিলো না,তখন জিসান রায়হান কে পাঠায় তিশার কাছে।
জিসান রেগে কপালে দু'হাত দিয়ে মাথা নিচু করে শোফায় বসে সব কথা শুনছিলো।এমনেই রেগে ছিলো,তার উপর আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করলো তিশার মুখে ডিভোর্স শব্দটা শুনে।
"রেগে সামনে রাখা টি টেবিলটি জোড়ে লাত্তি মারে,মুহুর্তে কাচের টি টেবিলটি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।"
---জিসানের মা রাবেয়া বেগম বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। ছেলের রাগকে তিনি নিজেও অনেক ভয় পায়।মামীদের দিকে তেরে আসতে নিলে তাওহিদ গিয়ে সামনে দাঁড়ায়।
'রিলেক্স জিসান,রিলেক্স!শান্ত হো ভাই।'
"মামীরাও রাবেয়া বেগমের পিছে লুকিয়ে পড়ে ভয়ে,সুযোগ বুঝে।"
---কিভাবে শান্ত হবো,শুনলে না তিশাকে কিসব কথাগুলো বলেছে।হাউ ডেয়ার ইউ,সাহস কি করে হলো।
ইটস্ মাই লাইফ।আর আমার লাইফে আমি কাকে বিয়ে করবো কাকে নিয়ে থাকবো এটা আমার ব্যাপার।নাক গলাতে কে বলেছে।চিল্লিয়ে।
"আই নো ভাই।কিন্তু তুই এখন শান্ত হো।উনারা বড় আমাদের।অবশ্যই তাদের বুঝার কোনও ভুল আছে।আমরা বুঝিয়ে বলছি।আর মামীরাতো তিশাকে ঠিকমত চিনে জানে না,তাই হয়তো এসব বলে ফেলেছে।তুই মাপ করে দে।"
---বড়ওও!! আমার বা*** বড়ও এরা।
"জিসান!মুখ সামলাও(তৌফিক সাহেব)মামী হয় তোমার।"
---আজ না বাবা,মাথায় রক্ত চড়ে আছে।ভাগ্য ভালো এখনো বেঁচে আছে।উনাদের জায়গায় অন্য কেউ হলে এতোক্ষণ মাডার করে ফেলতাম।আমার বউকে এসব বলার জন্য।
"মাএএএ,টেন মিনিট সময় তোমার কাছে।এখনি এই মুহুর্তে তোমার ভাইয়ের বউদের বিদায় করো এই বাসা থেকে।তা না হলে আমি যদি আজ বাসা থেকে বের হই,তাহলে তুমি আর আমার মুখ দেখবে না।"
---জিসান বাবা কি সব অলক্ষণি কথা বলছিস তুই।একটু শান্ত হো।(রাবেয়া)
"জাস্ট টেন মিনিট।দাঁতেদাঁত চেপে।
জিসান উপরে চলে গেলো।"
'রাবেয়া বেগম অসহায় চোখে নিজের স্বামী আর ভাইদের দিকে তাকালো।তৌফিক সাহেব কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলেন।ছেলে যেহুতু একবার বলেছে,তাহলে এখন আর হাজার চেস্টা করেও থামাতে পারবে না।তা উনি খুব ভালো করে জানে।'
||
||
"জিসান রুমে এসে দেখে তিশা নিশির সাথে বসে আছে।তিশাকে দেখে নিজের রাগটা ধমিয়ে ফেললো জিসান।কান্না করে নিজের কি অবস্থা করেছে মেয়েটি।এখন আবার সারা রাত মাথা ব্যাথায় ঘুমাতে পারবে না।
মনে মনেই ভাবছে জিসান।"
---জিসান নিশিকে চলে যেতে বললো,কিন্তু তিশা নিশির হাত ধরে রেখেছে।তার মানে নিশিকে যেতে মানা করছে।চোখের ইশারায় বলার চেস্টা করছে____প্লিস নিশু আমাকে এই হিটলারের কাছে একা ছেড়ে যাসনা।আমাকে আবার কিমা না বানিয়ে ফেলে।খুব রেগে আছে।
'কিন্তু জিসানের ধমকে তিশা নিশিকে ছেড়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়।'
---জিসানকে নিজের দিকে আসতে দেখে,তিশা ভয় পেয়ে যায়।___আ আইম সরি, আমি আর এএএমন করবো না।না বলে বাসা থেকে বের হবো না।সত্যি বলছি।
প্লিস আআমাকে....তিশাকে আর কিছু বলতে দিলো না।জিসান তিশার হাতটা ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে এনে জরিয়ে নিলো নিজের বুকের সাথে।
"কেনো তুই আমাকে একটু আপন ভাবতে পারিস না বলতো।কেনো নিজের কস্টগুলো আমার সাথে ভাগ করতে পারিস না।কেনো নিজেকে আমার কাছ থেকে এতোটা গুটিয়ে রাখিস।কেনো আমার থেকে সবসময় দূরে যাওয়ার চেস্টা করিস।কেনো??
---জিসান তিশাকে নিজের থেকে সরিয়ে তিশার মুখটা ধরে, তুই আমার অস্তিত্ব।আর নিজের অস্তিত্বকে বিলিন হতে আমি দিতে পারবো না।আমার পুরোটা জীবনে আমি শুধু তোকে জরিয়ে রেখেছি।তুই বিনা আমি শুন্য।আমি জানি আমি জোড় করে তোকে আমার জীবনের সাথে জরিয়ে ফেলেছি।কিন্তু এতে তো তোর কোনও দোষ নেই।তাই কেউ কিছু বললে তুই নিজেকে কেনো দোষ দিবি।দিতে হলে আমাকে দিবি।তোর দেওয়া শাস্তিটাও আমি তোর ভালোবাসা ভেবে গ্রহণ করে নেবো।
আজকের পর থেকে আমার সাথে এমন করিস না জান।তিশাকে আবার নিজের সাথে জরিয়ে।
আমি বলেছিলাম না,কে কি বলে,কে কি মনে করে তাতে আমার কিছু যায় আসে না।আমার লাইফে তুই থাকাটা ম্যাটার করে।বাকি সব কিছু জাহান্নামে যাক।আই ডোন্ট কেয়ার।
কিন্তু তোর সাথে জরিত সব কিছু ম্যাটার করে আমার।তাই আজকের পর থেকে কখনো কিছু আর আমার থেকে লুকাবি না।সেটা যতো ছোট ব্যাপারি হোক না কেনো।promise me।
"তিশা ভয় পেয়েছিলো জিসান হয়তো আজ ওকে খেয়েই ফেলবে।কিন্ত জিসানের এমন শান্ত আচরনে তিশা খুবই আবাক হলো।মনে মনে ভাবছে এ কোন জিসানকে দেখছে ও।এসব কি সত্যি।"
---কি হলো promise কর।জিসানের কথায় তিশার ধ্যান ভাঙ্গলো,আর ও promise করলো।এর পর থেকে সব কিছু জিসানকে বলবে।
'জিসান মুখে একটা বাকা হাসি দিয়ে,তিশাকে বলতে লাগলো___কিন্তু নিজেও যে একটা ভুল করেছিস।এখন এর শাস্তিও তো পেতে হবে।
তিশাকে তখনো জিসান জরিয়ে ধরেছিলো।কিন্তু জিসানের কথা শুনে তিশার চোখ চড়কগাছ। কি বলে লোকটা,শাস্তি!'
"নিজেকে জিসানের কাছ থেকে ছুটানোর চেস্টা করে তিশা কিন্তু লাভ হলো না।জিসান তিশাকে নিজের সাথে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।তিশার মনে হচ্ছে এই আজরাঈল আজ আমাকে ধম আটকে মেরেই ফেলবে।কি ভেবেছিলাম।আহারে আমার হিটলারটা ভালো হয়ে গিয়েছে।কিন্তু এতো আমাকে শাস্তি দেওয়ার সব ব্যবস্তা করে ফেলেছে।"
---জানতে চাইবি না,কিসের শাস্তি। তিশার কানের কাছে মুখ এনে।
'ক ককিসের শাস্তি।আমি আবার কি করলাম।'
---সাহস কি করে হলো জান,ডিভোর্স এর কথা মুখে আনার।যে শব্দটির কথা আমি কল্পনায়ও কখনো ভাবি নেই।আর তুই মুখ দিয়ে বলে দিলি,এতো ইজিলি।
কিভাবে...?
বলেছিস যেহেতু এখন শাস্তি ভোগ কর।এ কথা বলেই জিসান তিশার ঘাড়ে একটা কামড় দিয়ে দিলো।
'তিশা আআ করে চিৎকার দিয়ে উঠে।জিসানের কাছ থেকে ছুটারও চেস্টা করে।কিন্তু পারেনা।কিছুক্ষণ পর জিসানই ছেড়ে দেয়।"
---রাক্ষস একটা,কখনো ভালো হবেন না আপনার।থাকবো না আমি এখানে আর, তিশা নিজের ঘাড় ঢলতে ঢলতে চলে যেতে নিলে।জিসান আবার তিশাকে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশে নিয়ে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে,কামড় দেওয়া জায়গায় কয়েকটা কিস করে।
"রাক্ষস বলিস,বা হিটলার।লাভার বলিস বা ভিলেন।ভালো হই বা মন্দ।তবুও তোকে আমার সাথেই থাকতে হবে।
ছেড়ে যাওয়া তো দূরে থাক,কখনো যদি ছাড়ার কথা কল্পনাও করিস।তাহলে এই শরীরে জান থাকবে না।তিশার গলাটা হালকা চেপে ধরে।"
---তিশা চোখ দু'টো বড় বড় করে জিসানের দিকে তাকিয়ে আছে।জিসান তিশার রিয়েকশন দেখে একটা বাকা হেসে তিশার গালে একটা কিস দিয়ে চলে যায়।
যাওয়ার সময় বলে যায়।আজ তিশা এখানেই থাকবে।কোথাও যেতে দিবে না আজ জিসান।
||
||
"রায়হান বাড়ীর সামনের গার্ডেনে দাঁড়িয়ে আছে,হাতে জলন্ত সিগেরেট, শেষ হলেই চলে যাবে।অনেক বুঝানোর পরও জিসানকে রাজি করাতে পারলো না তিশাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
জিসানের একটাই কথা আজ ও কিছুতেই তিশাকে চোখের আড়ালে হতে দিবে না।কাল ও নিজেই নাকি দিয়ে আসবে।তবু আজ তিশা এখানেই থাকবে।অবশেষে একাই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো রায়হান।"
---রায়হান ভাই,প্লিস মামীদের কথার কিছু মনে করবেন না।নিশির গলার শব্দে রায়হান পিছনে তাকালো।মনের ভেতর কেনো জানি ধুপ করে উঠলো রায়হানের আজ।
"গোলাপি কালারের সালোয়ার কামিজ পড়া,চুলগুলো ছাড়া।মুখে নেই কোনও কৃত্রিম সামগ্রী। কিন্তু চেহারায় কিছু ক্লান্তির ছাপ,তবুও মেয়েটিকে রায়হানের কাছে আজ অপরুপ লাগছে।ঠিক যেনো অন্ধকারে জ্বলে উঠা জোনাকিপোকার মতো নিশিও আজ জ্বলে উঠেছে রায়হানের মনের রাজ্যে।"
'কেমন মায়া ভরা মেয়েটার মুখ।এই মুখটা দেখেই যুগ পাড় করে দেওয়া যাবে।রায়হানের মনের সুপ্ত চাওয়াটা যেনো আজ জেগে উঠেছে,ইচ্ছে করছে এই জোনাকি পোকাটাকে যদি বন্ধি করতে পারতাম।তাহলে হয়তো নিজের থেকে দূরে যেতে দিতাম না কোনও দিন।'
---জলন্ত সিগেরেটি শেষ হয়ে হাতের দু'আঙ্গুল পুড়িয়ে দিলে,রায়হানের ধ্যান ভাঙ্গে।সাথে সাথে সিগেরেটটি ফেলে দেয়।
নিশি দৌঁড়ে গিয়ে হাতটা ধরে দেখে দু'আঙ্গলের অনেকটা পুড়ে গিয়েছে।
ও গোড!অনেকটা পুড়েছে।নিশি রায়হানকে বাগানে পাতানো বেঞ্চটাতে বসিয়ে___
আপনে এখানে বসুন যাবেন না কিন্তু।নিশি দৌঁড়ে ভেতরে গেলো।একটা বাটিতে কিছু বরফ নিয়ে আসলো।খুব যত্নে রায়হানের পোড়া আঙ্গুলে বরফ লাগাতে লাগলো।খুব জ্বলছে তাই না।মন কোথায় ছিলো আপনার।তিশাকে নিয়ে টেনশন করতে হবে না।আমরা আছি সবাই।আমরা খেয়াল রাখবো ওর।
"নিশি কি বলছে রায়হানের যেনো সে দিকে কোনও মনোযোগ নেই।আজতো ও নিশিকে দেখতে ব্যস্ত। নিশির মায়ায় নিজেকে জড়াতে চায়নি, তাইতো বার বার নিশিকে ইগনোর করেছি।বাজে ব্যবহার করেছি।তাহলো আজ কি হলো।আজ কেনো নিজেকে সামলাতে পারছি না।কেনো মন চাইছে একটু ছুঁয়ে দিতে, ভালোবাসার মানুষটিকে একটু ছোঁয়া কি খুব বেশি অপরাধ।তাহলে আমিও এই অপরাধ বার বার করে অপরাধী হতে চাই।"
---রায়হান নিজেকে আজ সামলাতে পারলো না, রায়হানের সামনে বসে থাকা মায়াবী পরীটাকে ছুঁয়ে দিলো।নিশির মুখের সামনে আসা চুল গুলো খুব যত্নে কানের পিছনে গুঁজে দিলো।নিশিতো আবাক হলো রায়হানের এমন আচরণে।কিন্তু রায়হান এখন যা করলো এতে নিশি ৪২০ ভোল্টেজ ঝটকা খেলে।
'একটু আগে'
---রায়হান নিশির চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে নিশির কপালে একটা কিস করলো।নিশির গাল আলতো স্পর্শ করে,তোকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে নিশু।মনে হচ্ছে আসমান থেকে কোনও মায়াবী পরী নেমে এসে আমার সামনে বসে আছে।
নিশাকে এসব বলে রায়হান নিজেও কিছুটা অবাক হলো।বাকা হেসে চলে গেলো।
"রায়হান বাইকে উঠতে উঠতে,নিশিকে বললো,এখনো বসে আছিস কেনো,ভেতরে যা।
রায়হানের চিল্লানিতে নিশি উঠে বাড়ীর ভেতরে দিকে পা বাড়ালে রায়হানের ডাকে আবার পিছে তাকালো।
---নিশি শোন।তিশার খেয়াল রাখিস।আর নিজেরও।এ কথা বলেই রায়হান চলে গেলো।আর নিশি খুশির ঠেলায় একটা চিৎকার দিলো।
'তিশা ডার্লিং আই লাভ ইউ।তোর জন্য আজ আমি অনেক বড় জিনিস পাইছি।'
অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন।
পেলাম খুঁজে এই ভুবনে আমার আপন জন।
......................................................................
---নিশি গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে ভেতরে চলে গেলো
বাড়ীর মেইন গেটের ফাক দিয়ে রায়হান এতোক্ষন সব দেখছিলো।
চলবে....
[ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।কমেন্ট করে জানাবেন কেমন হলো।]
No comments