ভাইয়ের_বন্ধু_যখন_বর😍 -------(season 2) part_19🍁
"সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে বসে আছে লাবণি নিজের রুমে।বেশ কিছুদিন হলো রুম থেকেও বের হয় না।রুমটা পুরো লণ্ডভণ্ড হয়ে আছে।ঠিক তুফান আসার পরের অবস্থা।
ফোনটি অনবরত বেজে চলছে লাবণির।স্কিনে নামটি দেখার পর তুলার কোনও ইচ্ছে নেই।হয়তো অন্যকারো ফোনের ওয়েট করছে লাবণি।কিন্তু যার ফোনের ওয়েট করছে,সে আধোও কোনও ফোন দিবে কি না,তা জানা নেই।তবুও ওয়েট করছে।
বেশ কিছুদিন যাবৎ খাওয়া নাওয়া কিছুই হচ্ছে না।নিচে বসে বেডে হেলান দিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন লাবণি।"
---জীবনে যা চেয়েছে তাই পেয়েছে।বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান বলে,কখনো কিছুতে বাঁধা দেয়নি।নিজের যোগ্যতায় বাবার বিজনেসকে অনেক উঁচুতে উঠিয়েছে।হার জিনিসটা কি তা তো কখনো দেখেনিই।কিন্তু জীবনের সবথেকে দামী জিনিসটা যে লাবণি হারিয়ে ফেলবে তা ধারণা ছিলো না।তাই তো মানতে পারছে না।
মানুষটিকে বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছে।এখন তাকে ছেড়ে থাকার কথা মনে পড়তেই কেঁপে উঠে বুক।কিভাবে ভুলবে সব।ভুলে যাওয়া কি এতোই সহয।
'-জিসান কখনোই লাবণির অনুভূতিকে গ্রাহ্য করেনি।সব সময় লাবণি থেকে এড়িয়ে চলছে।বিজনেস রিলেটেড কথা ছাড়া খুব কমই কথা হতো তাদের মাঝে।লাবণি ভেবেছিলো মানুষটি হয়তো এমনি,রোবোটিক।যার মধ্যে ফিলিংস বলে কিছুই নেই।আর লাবণি এই রোবোটিক মানুষটিকে মন প্রাণ উজার করে ভালোবেসে ফেলেছে।আর ভালো বাসবেই না কেনো,জিসানের পার্সোনালিটি ছিলোই এমন।'
---প্যারিসে থাকাকালীন সময় নিজের কালচার কখনো ভুলেনি জিসান।আর মেয়ে নামক প্রাণীটিতে যেনো জিসানের এলার্জি ছিলো।তাইতো বরাবর সবাইকে এভোয়েড করতো।
তবুও মেয়ে নামক প্রজাপতি তার আশেপাশে ঘুড় ঘুড় করতো।বিদেশি কান্ট্রি হওয়ায় এখানে মেয়েদের খোলামেলা পোষাকেই দেখা যায় বেশি।কিন্তু সামনের ব্যক্তিটি যতোই ছোট পোশাক পরিধান করুক,জিসানের চোখ সামনের ব্যক্তিটির চোখ ছাড়া আর কোথাও নজর যেতো না।
'প্যারিসে বসবাস করার সময় অনেক মেয়ে জিসানকে নিজের দিকে এট্রাকশন করার চেস্টা করে।ফলপ্রসূ অনেক বাজে সিচুয়েশনেও জিসানকে পরতে হয়েছে।কিন্তু অনেক খারাপ সিচুয়েশনেও জিসান নিজেকে সামলিয়ে ফেলেছে।
যেখানে অন্য কোনও পুরুষ হলে হয়তো নিজেকে সংযোত করতে পারতো না।'
"কোনও নারী অর্ধনঙ্গ হয়ে কোনও পুরুষকে নিজের কাছে টানলে সেখান থেকে ফিরে আসা এতো সহয না।বিশেষ ক্ষেত্রে একজন পুরুষের কাছে এসব আশা করা বোকামি। তবে এধরনের বোকামি ও কিছু পুরুষ করে থাকে,আর তারাই হলো সুপুরুষ।
একজন সুপুরুষ এর সব গুণই জিসানের মধ্যে ছিলো।জিসানের এসব গুণেই তো লাবণি ফিদা হয়ে পরেছে জিসানের উপর।
কিন্তু জিসানের বার বার তাকে রিজেকশনের কারণটা জানতো না।তবুও মনের মধ্যে একটু আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছিলো লাবণি,হয়তো জিসানের মনে একদিন নিজের জায়গা গড়ে তোলার।কিন্তু ভাগ্য বলেও কিছু আছে।তাইতো তার ভালোবাসার মানুষটিকে আল্লাহ আরেক জনের আঁচলে বেঁধে দিয়েছে।"
---রুমের দরজা খুলার শব্দে লাবণির ধ্যান ভাঙ্গে।সামনের ব্যক্তিটাকে দেখে নিজের চাপা কান্নাটা আর ধরে রাখতে পারলো না।বাবাকে ধরে সেই কখন ধরে কেঁদে চলছে।
লাবণির পিতা আশরাফ মজুমদার মেয়ের মাথায় পরম স্নেহে হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে।বেশ কিছুক্ষন পর লাবণি চুপ হলে,সব জানতে চায়।লাবণির নিজের পিতার সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ।সব কথাই বাবার সাথে শেয়ার করে,জিসানের ব্যাপারটাও জানে।
জিসানকে তার মেয়ে যে কতোটা পছন্দ করে তা খুব ভালো করেই জানে।মেয়ের কথা শুনে মেয়েকে আশা ছাড়তে মানা করে।
"এখনো সময় আছে,চেস্টা চালিয়ে যাও।বিয়েই তো করেছে,তাও আবার মেয়ের ছোট বয়সে।সংসার তো করেনি।তাহলে জিসান এখনো তোমার হতে পারে।এভাবে ভেঙ্গে গেলে হবে না।
তোমাকে আমি হারতে দেখিনি।এতো সহযে হার মানার প্রশ্নই উঠে না।তোমার চেস্টার পরও যদি জিসানকে না পাও তাহলে ধরে নিবে তোমার জন্য আল্লাহ আরো ভালো কিছু রেখেছে।লাবণির চোখের পানি মুছে দিয়ে,এভাবে টিনেজারদের মতো আচরণ করা বন্ধ কর।আর নিজেকে গুছিয়ে সামনে বারো।
বাবার কথায় লাবণি যেনো নতুন আশা দেখতে পেলে।তাই ও ঠিক করলো ও চেস্টা চালিয়ে যাবে,হয়তো ভাগ্যের চাকা ঘুড়তেও পারে।জিসান নামক হীরাটা তার আঁচলে আসতেও পারে।"
---বার বার ফোন করার পরও যখন লাবণি ফোন রিসিভ করছে না দেখে আশরাফ মজুমদার বুঝতে পারছে কিছু একটা হয়েছে।তা না হলে এটা অসম্ভব তার মেয়ে তার ফোন ধরবে না।তাও আবার নিজের বাবার।
বাড়ীর লেন্ডলাইনে ফোন করলে,বাড়ীতে কর্মরত একজন ফোন রিসিভ করে সব খুলে বলে।এর পর মারুফ সাহেব একমিনিট ও দেরি না করে প্যারিস থেকে সোজা মেয়ের কাছে এসে পরে।মেয়েকে কখনো সে এভাবে ভাঙ্গতে দেখেনি।কিন্তু আজ মেয়ের এই অবস্থা দেখে নিজেকে সামলাতেও কস্ট হয়ে পরেছে,তবুও মেয়ের সামনে নিজেকে সামলিয়ে নিলো।
আজ মেয়েকে এসব না বললে হয়তো, মেয়ে তার ঘুটে ঘুটে মরে যেতো।কিন্তু পিতা হয়ে এটা সে কিভাবে হতে দিবে।তাই লাবণিকে একটা লক্ষ দিলো।
এতে লাবণি নিজেই বাস্তবতা দেখতে পাবে।বুঝতে পারবে।জিসানকে এর পরও না পেলে হয়তো জীবনে আফসোস থাকবে না।এরপর হয়তো একদিন নিজেকে সামলিয়ে ও ফেলবে।
||
||
"তিশাদের ড্রয়িংরুমের শোফাতে বসে ম্যাগাজিন পড়ছিলো নিশি।মূলত তিশার জন্য অপেক্ষা করছে,কোচিং এ একসাথে যাবে বলে।
তিশা রেডি হতে নিজের রুমে চলে গেলে টাইমপাস করার জন্য ম্যাগাজিনে আপাতত দৃষ্টি নিশির।হঠাৎ মুখে পানির ছিটায় চমকে দাঁড়িয়ে যায়।বাহিরে ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে নাতো,হলেও বা পানি ঘরে আসবে কেমনে।
নিশি সামনে কিছু দেখতে না পেয়ে পেছনের দিকে ঘুড়তে নিলে একটা দেওয়ালের সাথে বাধা খেয়ে পরে যেতে নেয়।
আর তখনি একটা শক্ত হাত নিশির কোমড়টা ধরে বাঁচিয়ে ফেলে।নিশি সামনে তাকিয়ে একটা বিশাল ঝটকা খেলো।কারণ নিশির কোমড়কে ধরে রাখা ব্যক্তিটি আর কেউ না রায়হান।
তাও আবার খালি গায়ে ভেজা শরীরে।মনে হয় মাত্র শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে,তাইতো লেপটে যাওয়া ভেজা চুল বেয়ে পানি এখনো শরীরে পড়ছে।
লোকটা মাথাটাও কি ভালো মতো মুছতে পারে না নিশির ভাবণা।নিশি হা হয়ে তাকিয়ে আছে। "
---মাত্র শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে রায়হান।নিজের রুমের বাথরুমে কিছু একটা সমস্যার কারণে পানি আসছে না।সকালে অফিসে যাওয়ার সময় মাকে বলে গিয়েছে,মিস্ত্রী এনে চেক করাতে।
খুব সকাল সকাল আজ অফিসের কাজে গাজীপুর যেতে হয়েছিলো।সেখান থেকে আসতে আসতে রায়হান এর অবস্থা খুবই খারাপ।
এক তো রাস্তা ভালো না, তার উপর জ্যাম।রায়হান ঘেমে ওখানেই এক গোছল দিয়ে ফেলেছে এই গরমে।তাই সেখান থেকে আর অফিসে যায় নি, বাসায় এসে সোজা ডুকে পড়লো শাওয়ার নিতে।
রুমের বাথরুমে সমস্যা আছে বলে ড্রয়িংরুমের বাথরুমে চলে গেলো।বাথরুম থেকে একটা টাওজার পরে,খালি গায়ে বের হয়ে নিজের চুলগুলো ঝাড়তে লাগলো।
কারণ তোয়াল দিয়ে মাথা মুছতে একদমই ভালো লাগে না তার।আর তখনি নিশির সাথে আচমকা ধাক্কা লাগে।রায়হান নিজেও জানতো না নিশি এখন এখানে।
'-রায়হানের একহাত নিশির কোমড়ে,আর নিশির হাত দু'টো রায়হানের উন্মুক্ত বুকের উপর।রায়হানকে এভাবে খালি গায়ে দেখে নিশি কিছুটা ফ্রিজ হয়ে গেলো।
নিশির দৃষ্টি এখন রায়হানের উন্মুক্ত বুকের পশমে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু জলের দিকে পড়লো।কি মারাত্মক ব্যাপার।নিশির তো মন চাইছে লজ্জা শরমকে সাইডে রেখে কিছুক্ষণের জন্য একটু বেহায়া হয়ে যেতে।আর ছুয়ে দিতে মন চাইছে এই বিন্দুবিন্দু জল কণাগুলোকে।'
---এসবের মাঝে নিশি ভুলেই গিয়েছে,ওর হাত দু'টো কখন ধরে রায়হানের বুকের উপর।রায়হান মুখে বাকা হাসি রেখে,একটা তুড়ি বাজালো নিশির সামনে।আর অমনেই নিশি ছিটকে রায়হান থেকে দূরে সরে গিয়ে দাঁড়ালো।
সাথে সাথে চোখের দৃষ্টিও সরিয়ে ফেলে।এর পরই নিশি ঝংকার দিয়ে বলে উঠে,ছিঃ রায়হান ভাই আপনে এভাবে অর্ধনঙ্গ হয়ে ঘুরছেন কেনো।লজ্জা শরমের মাথা কি খেয়ে ফেলেছেন একেবারে।এইভাবে কেউ আসে কোনও মেয়ের সামনে।
"রায়হান কোমড়ে দু'হাত রেখে,আমার ঘর আমি যেমনে খুশি, তেমনে ঘুরবো,এতে শরমের কি আছে। এমন তো না আমি পেন্ট পরিনি।তাহলে এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে।লজ্জার জায়গা তো ঢাকা আছে।তাহলো!"
'-নিশি কানে হাত দিয়ে,উফ! এসব কি বলছেন রায়হান ভাই।এভাবে কেউ কথা বলে একটি মেয়ের সাথে।আপনাকে আমি ভালো মনে করেছিলাম।আপনে ও দেখি একি ক্ষেতের মূলা।লাজ শরম কিছুই নেই।খালি গায়ে থাকতে মন চাইলে নিজের রুমে থাকুন।এভাবে সবার সামনে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন কেনো।'
---সবার সামনে মানে,এখানে তুই ছাড়া আর কে আছে।চারদিকে তাকিয়ে।
"আমিও তো তাই বলছি,আপনে আমাকে কি দেখতে পান না।"
---রায়হান একটু বাকা হেসে,তুই কিছু দেখার মতো দেখালে অবশ্যই দেখবো।তবে অবশ্যই আমার মতো ইন্টেরেসটিং হতে হবে।
"আপনে আবার থার্ড মিনিংস ইউস করছেন।আপনে আসলেই একটা অসভ্য।"
'-নিশি রেগে চলে যেতে নিলে,রায়হান নিশির হাতটা পিছনের দিকে বেঁকিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।নিশি একটু ব্যাথা পেয়ে আ করে শব্দ করে।
লাস্ট ওয়ার্নিং আমার সাথে তর্ক একদম করবি না।তর্ক করা পছন্দ না আমার।
আর কি বললি... অসভ্য।তোর সাথে অসভ্যের কি করেছি আমি,যার কারনে এমন তেজ দেখাস।'
-এখন আমি যদি তোর এই নরম নরম গোলাপের পাপড়ীর মতো ঠোঁট দু'টোতে কিস করি তাহলে সেটা অসভ্যতামি বলা হতো।কিন্তু আমিতো ভদ্র ছেলে,তাইতো তুই বেঁচে গিয়েছিস।
আর কোনও দিন আমার সাথে এমন বেয়াদবি করলে গালদুটো লাল করে ফেলবো মনে রাখিস।এটা বলেই রায়হান, নিশিকে ছেড়ে দিলো।
---রায়হান যাওয়ার আগে নিশির দিকে নিজের ভেজা তাওয়ালটা ছুড়ে মারে।এটা বেলকানিতে শুকাতে দে।ভেজা তোয়ালও আমার পছন্দ না।
নিশি তোয়ালটা রেগে ফেলে দিতে নিয়েও ফেললো না।কারণ তোয়ালটা থেকে খুব সুন্দর একটা স্ম্যাল আসছে।নিশি তোয়ালটা নাকের কাছে নিয়ে ভাবতে লাগলো,লোকটি কোন সাবান ইউস করে,এতো সুন্দর ঘ্রান, কেমন মাতাল মাতাল করা ফিলিং।
"দরজার আড়ালে দু'টো চোখ এতোক্ষন ধরে সব দেখছিলো।আর সেই চোখের মালিক হলো রুহি।নিশি বুঝতে না পারলেও রুহি রায়হানের চাওনিতেই ঠিক বুঝে গিয়েছে,রায়হান নিশিকে পছন্দ করে।
আর এটা ভাবতেই রুহির শরীর জ্বালাপড়া করতে লাগলো।কি আছে এই মেয়ের মাঝে যা আমার মাঝে নেই,বরং এই মেয়ে থেকে বেশি সুন্দর আমার গায়ের রং।
আর রায়হান এই শ্যামবর্ণ মেয়েটাকে পছন্দ করে।রাগে রুহি নিজের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে,যার ফলে কাচের চুড়ি ভেঙ্গে রুহির হাতে ডুকে যায়।আর রক্তও বের হয়।কিন্তু এই রক্ত যেনো কিছু না।মন থেকেও যে আজ রক্তক্ষরণ হচ্ছে সেটার জ্বালায় মরছে ও।"
'--লাবণি ও রুহি দুজনেই ভালোবেসে আহত হয়েছে।হয়তো এখানে তিশা বা নিশির কোনও দোষ নেই,না আছে জিসান ও রায়হানের। তবুও তারা দোষী আজ।আহত মন ক্ষুধার্ত শিকারের মতো হয়।আহত মনের ব্যক্তি তার নিজের সুখের জন্য সামনের সব কিছু ধ্বংস করে দেয়।লাবণি ও রুহির কারণে তিশা-জিসান, রায়হান-নিশির কপালে কি আছে তা শুধু আল্লাহই জানে।কার ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে আর কে ভালোবেসে হেরে যাবে তা তো সময় বলবে।
||
||
"সাব্বির স্যারের কোচিং ছিলো আজ।নিশি বাসায় এসেই শোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবছে,কেনো যে কমার্স নিতে গেলাম।জীবনটা তেজপাতা করে তুলেছে।
প্রথম প্রথম তো সহযই মনে হয়েছিলো।কিন্তু এখন বুঝতে পারছি কমার্স ইজ নট সো ইজি।
তবে সাব্বির স্যার ভালো বোঝায় বলে সিলেবাস শেষ করতে পারছি।কিছুটা চিন্তা মুক্ত হয়ে।"
---কিন্ত আমি যে পরীক্ষার খাতায় ঘোলায়া খেয়ে ফেলি,সে সমস্যা দূর করবো কে?গালে হাত দিয়ে নিশি সামনের টি টেবিলে পড়ে থাকা হিসাব বিজ্ঞানের বইটির দিকে তাকিয়ে আছে।
হিসাব বিজ্ঞানের জটিলতা থেকে বের হওয়া এতো সহয না।আর তো বেশি দিন বাকিও নেই।তারপর তো যুদ্ধে নামতে হবে।
কিন্তু একে দেখলে যে আমার কলিজার পানি শুকাইয়া যায় তা আমি কাকে বলবো।কে যে বলছে এ প্যারা নিতে।তারে পাইলে আগে থাপড়াইতাম।এই সিচুয়েশনে নিশির খুব কান্না পাচ্ছে।
'-জিসান অফিস করে আজ খুব ক্লান্ত। সারাদিন একবারও তিশার সাথে কথা হয়নি।নতুন একটা প্রজেক্ট নিয়ে বিশাল জামেলার মধ্যে পরে গেছে।কিন্তু লাবণি সাথে আছে বলে,জিসান অনেকটা স্বস্তিতে শ্বাস নিতে পারেছে।
লাবনির বিজনেস সেন্স ধারুন।এটা জিসানও মানে।তাইতো লাবণিকে বিজনেস পার্টনার করেছে শুধু মাত্র বিজনেসের স্বার্থের জন্য।তবে শীঘ্রই আলাদা হয়ে যাবার প্লানিং করছে জিসান।যা লাবণির অজানা।'
---ড্রয়িংরুমের শোফায় বসে হাতের ব্যাগটা পাশে রেখে বুয়া খালার কাছে পানি চায়।জিসান শোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।বুয়া খালা পানি রেখে চলে গেলে,পানিটা খাওয়ার সময় সেন্টার টেবিলে রাখা হিসাব বিজ্ঞান বইটির উপর চোখ পরে।
যার উপরে তিশার নাম লিখা।জিসান বইটা হাতে নিয়ে ভাবতে থাকে তিশার বই এখানে কেনো।হয়তো নিশি এনেছে।ভুলে এখানে রেখে গিয়েছে।নিশিকে দিয়ে দিই,কাল কলেজে গিয়ে দিয়ে দিবেনি,সামনে তো আবার পরীক্ষা ওদের।
বইটা নিয়ে উঠতে নিলে একটা কাগজ বই থেকে পড়ে।জিসান কাগজটা উঠিয়ে বইয়ের ভেতর রাখতে গেলে একটু খটকা লাগে।তাই কাগজটি খুলে পড়তে শুরু করে।এটা একটা লাভ লেটার।লেটারটি পড়ে শরীরের রক্ত গরম হয়ে যায় জিসানের।চিল্লিয়ে নিশিকে ডাক দেয়।
"নিশি নিজের রুমে শুয়ে ছিলো,জিসানের হাড় কপানো ডাকে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে।দৌঁড়ে জিসানের কাছে আসে।
ক ককি হয়েছে ভাইয়া।
নিশি জিসানের দিকে তাকিয়ে দেখে জিসান রাগে লাল হয়ে গিয়েছে।জিসানকে দেখে নিশি নিজেও ভয় পেয়ে যায়।মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।"
'জিসান দাঁতেদাঁত চেপে,এই বইটি কার।'
---বইটি হাতে নিয়ে এ এএটাতো তিশার বই ভাইয়া।
'এখানে কেনো।'
---ও ভুলে গাড়ীতে ফেলে গিয়েছে,তাই আমি নিয়ে এসেছি কাল দিয়ে দ দেবোনি।
'সাব্বির টা কে?'
---এবার নিশি আরো বেশি ভয় পেয়ে গেলো।কারণ তার ভাই হঠাৎ স্যারের ব্যাপারে জানতে চাওয়ার কারণ নিশ্চয়ই ভয়ানক কিছু,তা না হলে এতো রেগে যেতো না।সাব্বির আমাদের কোচিং টিচার।
'ঠিকানা বল।'
'-নিশি ঠিকানা বলার সাথে সাথে জিসান বাহিরে চলে গেলো।নিশি থো মেরে বসে পড়লো।ওর মন কু ডাকছে,নিশ্চয়ই আজ কিছু হবে।ভয়ানক কিছু।'
||
||
"তিশা পড়ার টেবিল থেকে উঠে ডিনার করতে যেতে নিলো।তখনি ফোনটা লাগামহীন ভাবে বাজতে শুরু করলো।তিশা ফোনটা রিসিভ করে খুব বিরক্ত কন্ঠে হ্যালো বললো___
তিশা, তিশারে সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে।"
'-নিশির কথা শুনে তিশা একটু ঘাবড়ে গেলো।সর্বনাশ! তিশা অন্য কিছু মাইন্ড করে,কোথায়,কিভাবে।কে করেছে তোর সর্বনাশ। '
---আরে দূর,আমাকে কে করবে।তুইও তোর ভাইয়ের মতো কাজের আগে ঘামিস বেশি।
"দেখ নিশি এসব ফালতু কথা বলতে ফোন দিলে,রাখ এখন।আমি ডিনার করেনি, মা ডাকছে পরে কথা বলবো।তিশা ফোনটা রাখতে নিলে,অপর পাশ থেকে আসা কথাটা শুনে তিশা আবার জিঙ্গেস করে নিশিকে,কি বললি।"
'সত্যি বলছি,জিসান ভাই মনে হয় সাব্বির স্যারকে সাইজ করতে গেছে।'
---কেনো?কি হয়েছে।
'নিশি তিশাকে পুরো ব্যাপারটা বলে।কিন্তু কাগজে কি লিখা ছিলো তা নিশিও জানে না।নিশ্চয়ই এমন কিছু ছিলো,যার কারণে ভাই রাগ করেছে।'
---চুপ হারামি,সব তোর জন্য।আমার বই নিয়েছিস কেনো তুই।
"আরে বাবা আমি নিলাম কোথায় তুইতো গাড়ীতে রেখে গেলি।"
---আমি ভুলে রেখে গেছি,তুই কেনো বইটা নিজের কাছে রাখলি না।তাহলে তো যমরাজ কাগজটা পেতো না।
'আরে আমিও তো ভুলে সেন্টার টেবিলে রেখে গিয়েছি।আমি কি জানি ওই সাব্বির স্যার তোকে লাভ লেটার দিয়েছে তাও আবার বইয়ের ভেতর।'
'তুই জানলি কি করে।'
---আরে আমাকে ভাবী বললো,বইয়ের ভেতর থেকে নাকি একটা লেটার পরছে।
"তিশার আর কোনও কথা বলতে ভালো লাগছে না,তাই ফোনটা কেটে দিলো।কিছু একটা মনে করে ভাইয়ের রুমের দিকে গেলো।যা ভাবছে তাই হলো।রায়হান ভাইও নেই।নিশ্চয়ই জিসানের সাথে।"
---ঘড়ির কাটা ১ টা ছুঁই ছুঁই। তিশা ড্রয়িংরুমে বসে রায়হানের অপেক্ষা করছে।কিছুক্ষণ পর রায়হান ফোনে কারো সাথে কথা বলতে বলতে মেন ডোর খুলে প্রবেশ করলো।
ড্রয়িংরুমে তিশাকে বসে থাকতে দেখে অবাক হলো।দেওয়ালে টাঙ্গানো ঘড়িটির দিকে একবার তাকিয়ে তিশার দিকে তাকালো।কিরে কয়টা বাজে দেখছিস,ঘুমাস নি কেনো এখনো।
'তিশা ভাইয়ের সামনে এসে,কোথায় ছিলে ভাইয়া।'
"একটু কাজ ছিলো বাহিরে,তুই ঘুমাতে যা।রায়হান নিজের রুমের দিকে যেতে নিলে।"
---সাব্বির স্যারকে কি করেছো ভাইয়া।রায়হান থেমে যায়।তিশার দিকে ঘুরে, কাল কথা বলবো এই ব্যাপারে।এখন যা।
'কাল না আমি এখন কথা বলতে চাই।কি পেয়েছো কি আমাকে তোমরা।যখন যা খুশি তখন তাই করো।আমার দিকটা কেউ ভাবে না।আর তোমার ওই বন্ধু জিসান,সমস্যা কি তার।এমন সাইকোর মতো কেনো করে।কিছু হলেই মারামারিতে চলে যায়।সামন্য একটা ব্যাপারকে এতো হাইলাইটস করা কি দরকার ছিলো।'
---দেখ তিশা তুই জানিস না কি হয়েছে,তাই এসব উল্টাপাল্টা বকছিস।
"আমার জানতে হবে না কিছু(চিল্লিয়ে)।আমি বলে দিচ্ছি ভাইয়া এসব এভাবে চলতে থাকলে আমি চলে যাবো, একদিন কোথাও সবাই কে ছেড়ে।তখন বুঝবে।আমি বলে দিলাম কিন্তু।"
---এতো রাতে তিশার চিল্লাচিল্লিতে,তিশার বাবা ড্রয়িংরুমে এসে নিজের ছেলেমেয়েদের কথা শুনে ফেলে।
তিশা চলে যাওয়ার পর।____দেখ রায়হান এসবের কারণেই এতোবছর জিসানকে তিশা থেকে দূরে রেখেছি।এখন ও আসার পর আবার শুরু হয়ে গিয়েছে।ওর এই যখন তখন মারামারি,হাইপার হওয়া আমার একদম পছন্দ না।এসব চলতে থাকলে এবার তিশার থেকে একেবারে আলাদা করে দেবো।একবার ওর জিদের কাছে নতো হয়েছি।কিন্তু এবার আর না।এবার আমি শুধু আমার মেয়ের কথাই ভাববো।আমি আমার মেয়েকে এমন ছেলের হাতে কখনো তুলে দেবো যে ছোটখাটো বিষয় এতো সিনক্রিয়েট করে।
---কিন্তু বাবা আমার কথাটা একটু শোনও,তিশার বাবাও রায়হানের কথা না শুনে চলে গেলো।
"জিসানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো।রাগে যেনো চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে।তিশাকে সামলে পেলে যে কি করতো আজ তা নিজেও জানে না।
রায়হান জিসানের সাথে কথা বলতে বলতেই বাসায় ঢুকছিলো।কিন্তু তিশার কথায় থেমে যায়।ফোনটা কাটতে ভুলে যায়।যার ফলে তিশা আর রায়হানের কথোপকথন সব শুনে জিসান।
এমনকি তিশার বাবা শামসুর রহমানের কথা গুলোও কানে বাজছে এখন।"
---খালিগায়ে নিজের বেলকানিতে দাঁড়িয়ে জিসান বাকা হেসে,খুব বেশি বাড় বেড়েছিস জান।আমি কি, আর তোকে পাওয়ার জন্য কি কি করতে পারি তা তো তোর ধারণার বাহিরে।
আজ থেকে নতুন খেলা শুরু জান তোকে পাওয়ার।ভেবেছিলাম আপসে সব কিছু হবে, কিন্তু এখন আঙ্গুল বাঁকাতে হবে।বিয়ে করা বউ তুই আমার,আমার থেকে আলাদ হবার চিন্তাও আমি তোর চেতনায় আসতে দেবো না।
বি রেডি তিশা।সাইকো মনে হয় আমাকে,এখন এই সাইকোর ঝাল থেকে নিজেকে বাঁচা।তোকে একটু সময় দিতে চেয়েছিলাম।কিন্তু আর না।এখন তোকে আমার কাছে নিয়ে আসার সময় হয়ে গিয়েছে।এরপর দেখবো কে আমাদের আলাদা করে।তোকে আমার কাছ থেকে আলাদা করা প্রতিটি হাত আমি কেটে ফেলবো।ইটস জিসান প্রোমিজ......।
চলবে......
No comments