ভাইয়ের_বন্ধু_যখন_বর😍 -------(season 2) [🖤] Part_25🍁
"কেবিনের বিশাল জানালার থাই গ্লাসটা সরিয়ে,হাতে কপি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জিসান।কিছুক্ষণ পর ধোঁয়া উঠানো কফিতে চুমক দিয়ে সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা এক জোড়া কপতকপতির দিকে চোখ পরে।
দূর থেকে দেখেও বুঝা যাচ্ছে দুজন লাভারস বা হাসবেন্ড ওয়াইফ হবে।কারণ খুব যত্নে ছেলেটি মেয়েটির হাত ধরে রাস্তা পার করালো।
আর এখন ভিড়ের মধ্যেও মেয়েটিকে নিজের সাথে জরিয়ে সেফ করছে।এক চিলতি হাসি ফুটে উঠলো জিসানের ঠোঁটে।ভালোবাসা বুঝি এমনি হয়।"
---স্যার।
"-ইয়েস সোম।সব কি রেডি করেছো।ক্লাইন্টরা কিন্তু যেকোনও সময় এসে পড়বে।
---ইয়েস স্যার ওল সেট।
"সোমকে এখনো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,জিসান বলে উঠলো।কিছু বলবে সোম।
--সোম হিচকিয়ে উঠলো।না মানে স্যার।
"জিসান হেসে,বলো সোম।আমি জানি তুমি খুব চিন্তিত।
--একচুয়েলি স্যার আপনে তো সত্যটা জানেন,তাহলে ম্যাডামকে এতো কস্ট দিচ্ছেন কেনো।ম্যাডাম আপনাকে অনেক বার কল করেছে কিন্তু গতো দুদিন হলো আপনি ম্যাডামের ফোনও রিসিভ করছেন না।এটা হিতে বিপরীতও হতে পারে।
"জিসান এবার হাতের কপিটা শেষ করে মগটা টেবিলে রেখে বললো,জানো সোম তোমার ম্যাডাম খুব একটা সাংগাতিক নারী।ভাঙ্গবে তবু মোচরাবে না।ম্যাডাম ভালোতো বাসে,কিন্তু মুখ ফুটে জীবনেও বলবে না।তাই এবার উনার মুখ খোলার জন্যই একটু দূরত্ব বাড়িয়ে দিলাম।
"কিন্তু স্যার এতে ম্যাডামও তো আপনাকে ভুল বুঝবে।"
--ও তুমি চিন্তা করো না,ওকে কিভাবে সামলাতে হবে আমি জানি।তুমি মিটিং রুমে যাও আমি আসছি।
"ওকে স্যার।সোম চলে গেলো,মিটিং রুমে।"
---' অফিসের মিটিং রুমে,কিছু জরুরী ক্লাইন্টদের সাথে মিটিং চলছে জিসানের।চলতি প্রজেক্টটা নিয়ে জিসান এমনেই ভেজালের মধ্যে আছে।তার রাইবেল কম্পানি গুলো অনেক ট্রাই করেছে প্রজেক্টা নিতে।কিন্তু সবাইকে তাক লাগিয়ে ডিলটা জিসানের কম্পানি পেয়ে গেলো।মূলত জিসানের শর্তের আগে দেশে ফিরে আসার কারণটাই ছিলো এটা।
এই প্রজেক্টটার সাথে লাবনিও জরিত, তাইতো জিসানের পিছনে পিছনে তাকেও আসতে হলো দেশে।জিসানকেও বাধ্য হয়ে লাবণিকে সাথে রাখতে হলো।
"মিটিং রুমে জিসান যখন খুব ব্যস্ত। তখনি ফোনটা বেজে উঠলো।মিটিং এ থাকার কারণে নাম্বারটা দেখে ফোনটা সাইলেন্ট করে রাখলো।লাবণি ও আর চোখে নাম্বারটি দেখে,মুখে এক বিশ্ব জয়ী হাসি ফুটে উঠলো।কারণ নাম্বারটি তিশার ছিলো।
কিছুক্ষণ পর মিটিং শেষ হলে জিসান নিজের কেবিনে চলে যায়।কি মনে করে যেনো রায়হানকে কল দিলো।কিন্তু রায়হান ফোন রিসিভ করেনি,কয়েকবার দেওয়ার পর রায়হান ফোনটা রিসিভ করে।"
--কি হলো ফোন রিসিভ করছিস না কেনো।এখন কি তোর বোনের মতো আমার তোর পিছেও গুড়তে হবে।
'জিসানের কথা শুনে ফোনটা কেটে দিলো রায়হান।'
---জিসান আবার ফোন করে,সমস্যা কি,এমন করছিস কেনো।
'সমস্যা হচ্ছে, কাউকে অনেক বিশ্বাস করে নিজের কলিজার বোনকে তার হাতে তুলে দিয়েছিলাম।কিন্তু আমিতো ভুলেই গিয়েছি সে তো ইগোস্টিক ম্যান।তার ইগুতে হার্ট হলে সে কাউকে ছাড়ে না।'
--কি সব আজোবাজে বকছিস রায়হান।
'আজেবাজে বকছি না।সত্য বলছি।আমার বোনকে যদি আর ভালোই না লাগে বলে দিলেই পারতি।আমি এখনো বেঁচে আছি ওর খেয়াল রাখার জন্য।'
--রায়হান প্লিজ শান্ত হো দোস্ত কি হয়েছে।
'কি আর হবে,তোর কারনে আমার বোনটি দুদিন ধরে নিজেকে রুমে বন্দি করে রেখেছে।খাওয়া দাওয়া ছেড়ে।কতোবার চেস্টা করেছি ওকে বের করতে।কিন্তু ওর একই কথা আমি এখনো মরিনি ভাই।আমাকে একা থাকতে দেও।এবার বল যার বোনের এই অবস্থা সে শান্ত কিভাবে থাকবে।বিনা দোষে আমার বোনকে কেনো শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।বল আছে কোনও জবাব তোর কাছে।বিশ্বাস যদি ওকে না করতে পারিস তাহলে এই সম্পর্ক থেকে ওকে মুক্ত করে দে।'
'জিসানের নিরবতায়,রায়হান আর কিছু বললো না, ফোনটা কেটে দিলো।'
---অনেক খেলেছো আমার জীবন নিয়ে মিসেস তিশা আহমেদ। আর না,আজ তোকে আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।আজ থেকে তোর নিজের উপর কোনও অধিকার থাকবে না।তোর উপর শুধু আমার অধিকার।আর আমার জিনিসকে কস্ট দেওয়ার সাহস তোকে বুঝাবো।
পিচ্ছি মনে করে ছেড়ে দিয়েছি তো,তাইতো এতোটা মাথায় উঠেছিস।
জিসান সোমকে ডেকে আজকের বাকি সব মিটিং ক্যানসেল করে দিতে বলে।বাকিটা তুমি সামলিও,আমার এখন বেড়তে হবে।কাউকে একটু লাইনে আনা জরুরী।
"জিসান তিশার রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কিছুক্ষণ হলো।কিন্তু ভেতর থেকে তিশার কোনও রিসপন্স না পেয়ে জিসান কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।তাই বারান্দা দিয়ে রুমে ডুকে।তিশা খুব ক্লান্ত আর দূর্বল ছিলো,তাই সেন্সলেস হয়ে পড়ে রয়েছে ফ্লোরে।জিসান তারাতারি তিশাকে কোলে তুলে বিছানায় শুয়ে দিলো।বুকের ভেতরটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো জিসানের।মুখটা একদম শুখিয়ে গেছে তিশার,রাতে না ঘুমানোর কারনে চোখের নিচে হালকা কালিও পরে গিয়েছে।জিসানের চোখে নিরবে জল এসে পড়লো।সাথে সাথে তিশার কপালে গালে কিস করতে লাগলো।
---দরজা খুলে আগে কিছু খাবার নিয়ে আসলো।তিশার মুখে পানি ছিটিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে জ্ঞান ফিরে এলো তিশার।জ্ঞান ফিরে সামনে থাকা ব্যক্তিটিকে দেখে ভয়ে লাফিয়ে উঠলো।
আ আ আপনে এএখানে ক কি ককরে এলেন।
"জিসান তিশার বাহুু দুটো চেপে ধরে,ইম্পোরটেন্ট এটা না,আমি কি করে আসলাম।ইম্পোরটেন্ট এটা তুই এমন কেনো করেছিস।"
---তিশা নিরব।
"কি হলো কথা বলছিস না কেনো।"
---তিশা এখনো নিরব হয়ে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছে।
"জিসান নিরাশ হয়ে তিশার কপালে কপাল রেখে,আমার উপর রেগে নিজেকে কেনো কস্ট দিয়েছিস।এটা অনেক বড় অন্যায় করেছিস।তোর কোনও অধিকার নেই,আমার জিনিসকে কস্ট দেওয়ার।তুই জানিস না তোর নিজের উপর কোনও অধিকার নেই।
ভালোবাসতে না পারিস,একটু শান্তিতো দিতেই পারিস।আমার কপালে হয়তো আল্লাহ এই জীবনে তোর ভালোবাসা লিখে নাই।কিন্তু আমি যে পরজীবনেও তোকে চাই।
জিসানও কিছুক্ষণ নিরব থেকে।খাবারটা খেয়েনে তিশা,আমার জন্য না হোক নিজের বাবা মা ভাইয়ের কথাটা ভেবে।"
---জিসান তিশাকে ছেড়ে দিলেও তিশা জিসানকে ছাড়ে না।জিসানের কলারটা দুহাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে তাকে।জিসান কিছুটা অবাক হয়।আর তিশার মনে কি চলছে বুঝার চেস্টা করে।
তিশা কি করছিস।আর এতো কাঁদছিস কেনো,আমি এখনো মরিনি।
আমি না হয় মরলে,যতো খুশি কাঁদিস।জিসানের কথায় তিশা জিসানকে ছেড়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদতে লাগলো।জিসান বুঝতে পারছে না কি হয়েছে তিশার।আর তিশাতো আরো শক্ত করে জিসানকে জরিয়ে ধরেছে।এবার জিসান কিছুটা অস্বস্তি ফিল করছে,কি হয়েছে তোর।প্লিজ ছাড়।আমার দিকে তাকা তিশা।
"নাএএএ,আমি ছাড়বো না।ছেড়ে দিলেই আপনে চলে যাবেন আমাকে ছেড়ে।"
--আরেএ পাগল হয়ে গিয়েছিস।কিসব বলছিস। আর আমি চলে গেলেই বা কি আসে যায়।তোর জন্য তো ভালোই হবে।কেউ তোকে তখন আর বকবে না,শাসন ও করবে না।তোর যা খুশি তাই করতে পারবি।আমার মতো তেতো......জিসান আর কিছু বলতে পারলো না।আচমকা তিশা জিসানের ঠোঁট দুটো নিজের ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরলো।এক সেকেন্ড এর জন্য জিসান শোকড হয়ে গেলো।তিশা এটা কি করলো।"
||
||
"জিসানের থুৎনিতে নিজের মাথাটা রেখে,চোখ বন্ধ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে তিশা।একটু আগের কথা ভেবেই মুখটা লজ্জায় যেনো লাল হয়ে গেলো।কিছুতেই এখন জিসানের দিকে থাকাতে পারছে না।ও হয়তো নিজেও ভাবেনি এই কাজটা করে ফেলবে।জিসান তিশার কোমড়ে হাত রেখেই বলে উঠলো,জান এটা কি ছিলো।
আমি কি স্বপ্ন দেখছিলাম।নাকি সত্য বলতো।আমার মনে হয় আমি স্বপ্নই দেখছিলাম।তুইতো এমন করতেই পারিস না।
এবার তিশার ভীষন রাগ উঠলো।জীবনের ফাস্ট কিস করলো জিসানকে,তাও আবার লিপ কিস।ভাবা যায়!আর ব্যাটার নাকি বিশ্বাসই হচ্ছে না।তিশার এখন মন চাইছে জিসানকে ফুটবলের মতো একটা কিক মেরে উগান্ডাা পাঠিয়ে দিতে।"
---তিশা জিসানের বুকের সামনের শার্টটি খামচি দিয়ে ধরে ,এতে জিসান একটু ব্যাথা পেয়ে আ করে উঠে।কি করছিস?
" মাথাটা নিচু করেই বললো,চুপ।একদম চুপ।এটা মনে করে দিবে আমি সত্য বলেছি,নাকি মিথ্যা।"
---ওয়াট!(জিসান)
"ভালোবাসি,বড্ড বেশি ভালোবাসি।আমি আমার এই হিটলার বরটাকে।এই বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে চাই।আমার যে শুধু আপনাকেই চাই।
একটু না পুরোটা চাই।
ছেড়ে চলে যাবেন যেদিন মরে যাবো।
কবরেও আপনার পাশেও আমি শুধু নিজেকে চাই।
ভুল করেও আমাকে ভুলে যাবেন না,সইতে পারবো না।আপনাকে ছাড়া আমি একা বাঁচতে পারবো না।
I love u, I love u so much.I can't live without u.I can't!
---জিসান স্থব্ধ, তিশার বলা প্রতিটি কথা জিসানের কানে এখনো বাজছে। যে কথাগুলো শোনার জন্য এতো অপেক্ষা সে কথাগুলো আজ শুনেও যেনো জিসানের বিশ্বাস হচ্ছে না।তিশাকে নিজের সাথে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।আজ নিজেকে একদম পরিপূর্ণ লাগছে।নিজের অনেক সাধনার জিনিসটি পেলে,মনের অনুভুতিগুলো ব্যক্ত করা যায় না।আজ জিসান আর তিশা নিরব থেকেই নিজেদের অনুভুতিগুলো প্রকাশ করছে।এই নিরব নিস্তব্ধতার মাঝে দুটো হ্রদয়ের স্পন্দন গুলো শুনা যাচ্ছে শুধু।
"কিছুক্ষণ আগে গৌধুলি পেরিয়ে নেমে এলো সন্ধ্যা।সকল ক্লান্তি কে দূরে ফেলে গৌধুলি কে বলতে মন চায়,আমি আজ ধন্য।আমার গৌধুলি যে আমার পাশে।তাকে পেয়ে আমি ধন্য,তার মাঝে উজার হয়ে ধন্য।বালকানিতে রাখা দোলনায় তিশা ও জিসান পাশাপাশি বসা।
দুদিন পর খাবার পেটে যাওয়ায় শরীরটা কেমন নিস্তেজ হয়ে পড়ছে তিশার।তাইতো জিসানের কাধে মাথা রেখে পরম শান্তিতে চোখ বন্ধ করে আছে।জিসান তিশার কাধে হাত রেখে নিজের আরোও একটু কাছে নিয়ে আসলো।হঠাৎ তিশার কি যেনো মনে হলো,নিভু নিভু চোখে জিসানের দিকে তাকিয়ে।ও ছবিগুলো আমার না,আমি সত্যি বলছি।বিশ্বাস করুন।"
--জিসান দেখলো তিশার চোখগুলো ছলছল করছে।তিশার মুখটা দুহাতে নিয়ে, আমি জানি,জান।ওগুলো এডিট করা।
"তাহলে আমাকে সেদিন বকলেন কেনো।"
---সেদিন জানতাম না জান।তিশাকে বুকে জরিয়ে,তোর সাথে আমি অন্য কাউকে সহ্য করতে পারবো না।ছবিগুলো দেখে নিজের হিতহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলিছিলান।
তাইতো তোর সাথে এমন খারাপ আচরন করেছি।আম সরি জান।যখন রাগ কমে তখন বুঝতে পারি,আমি ভুল করেছি।আমার তিশা এমন কাজ করতেই পারেনা।তোকে কোনও কিছু বলার আগেই তুই নিজেকে শাস্তি দিয়ে দিলি।তাই একটু রাগ হলো।
"সব জানেন যখন, তাহলে ফোন ধরেননি কেনো।"
--কারণ কিছু হলেই তুই নিজেকে কস্ট দিস,যা আমার একদম পছন্দ না।আর বলে না,যা হয় ভালোর জন্যই হয়।তাইতো দেখ,যা আমি এতোদিন চেস্টা করেও পারিনি।আজ হয়ে গেলো।
"হুম!তিশাও জিসানকে জরিয়ে ধরে।
একটা গান গাইবেন।
--শুনবি।
'-হুম।'
জিসান গান ধরলো....
অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম
তোমার মন
পেলাম খুঁজে এ ভুবনে আমার আপনজন।
♪♪♪♪♪♪♪♪
বিধাতা আমাকে তোমার জন্য
গড়েছে আপন হাতে
জীবনে-মরনে, আধারে-আলোতে
থাকবো
তোমার সাথে।।
♪♪♪♪♪♪♪♪
যাবেনা কখনও ফুরিয়ে যাবেনা
আমার ভালোবাসা
তোমাকে পেয়েছি, পেয়েছি
আবারো বাঁচার
নতুন আশা।।
তুমি বুকে টেনে নাওনা প্রিয়
আমাকে
আমি ভালোবাসি, ভালোবাসি,
ভালোবাসি তোমাকে।
[পার্সোনালি আমার এই গানটা অনেক পছন্দের।অনেকে ভাববেন এতো পুরোন গান দেওয়ার কি আছে,কারণ আমি পুরাতন গানগুলো বেশি পছন্দ করি।এখনকার গানগুলো আমার মনে তেমন সারা দেয় না।এর আগে ও এ গানের দুটো কলি দিয়েছিলাম।আমার মনে হলো জিসানের জন্য একদম পার্ফেক্ট গানটা তাই পুরোটা দিলাম।]
---তিশা গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যায়।জিসান তিশাকে কোলে করে বিছানায় শুয়ে দিয়ে গায়ে চাদরটা দিয়ে দেয়।কপালে আলতে করে একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে দেয়।
মায়ের কাছে সব শুনে রায়হানও বাসা এসে পড়েছিলো।তবে জিসান তিশার সাথে আছে বলে আর ডিস্টার্ব করেনি।জিসান রায়হান ও তিশার মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায় বাসায়।
"পরের দিন তিশার বাবা শামসুর রহমান, নিজের মাকে নিয়ে ঢাকায় ফিরেন।বয়সের কারণে প্রায়ই অসুস্থ থাকে,তাই তার ভালো চিকিৎসার জন্যই নিজের সাথে নিয়ে আসেন।
তিশা দাদীকে দেখে ভীষন খুশী।রুপকদার বিয়ের সময়ও দাদী আসতে পারেনি অসুস্থতার কারণে।এবার নাকি দুনায়-নাতনীর বিয়ে দেখেই তার পর পরকালে গমণ করবেন।"
---তিশার দাদী মমতা বেগম,এতোদিন পর নিজের নাতনী কে দেখে আবেশে চোখে জল চলে এলো।দেখ শামসুর নাতীতো আমার দামড়া হইয়া গেছে।এহন তো বিয়াশাদী দেওয়া লাগতো।
"জি মা,কিন্তু এতো জলদির কি আছে।আরো কয়েক বছর যাক।"
---কি বলস শামসুর,জোয়ান মাইয়া ঘরে রাইখা কি পাপের ভাগিদার হইতে চাস।
"মা এসব কি বলছেন।"
---দেখ বাজান,আমি বাচুমি বা কয়দিন।তার আগেই আমি আমার এই দুই নায়নাতনীর বিয়া দেইখা যাইতে চাই।
তিশা এতোক্ষন ওর মায়ের সাথে রান্না ঘড়ে ছিলো,তাই কিছুই শুনে নাই।রায়হান কিছু বলতে নিলে,শামসুর রহমান থামিয়ে দেয়,আহা,অনেক কথা হয়েছে।এবার দাদীকে আড়াম করতে দেও।তিশা দাদীকে কে রুমে নিয়ে যাও।
রায়হান কিছুটা অবাক নিজের বাবার ব্যবহারে।
||
||
একমাস কেটে গেলো____
"তিশা ও নিশির রেজাল্ট মোটামুটি ভালোই আসলো।কিছুদিন পর ভাগ্যক্রমে তিন বান্ধবী একই কলেজে চান্সও পেয়ে গেলো।এরি মাঝে মিসেস রাবেয়া তৌফিক সাহেবকে রাজি করিয়ে ফেললো জিসান ও তিশার ব্যাপারে।
সে বিষয় কথা বলতেই তিশাদের পুরো পরিবারকে ডিনারে ডাকা হলো।শামসির রহমানের ইচ্ছা না থাকা সত্যেও ছেলেমেয়ে এবং নিজের স্ত্রীর জ্বালায় আসতে হলো।ডিনার করে বাকি সবাই আড্ডা দিলেও তৌফিক সাহেব ও শামসুর রহমানের মিটিং চলছে স্টাডি রুমে।প্রায় ঘন্টাখানিক পর শামসুর রহমান কাউকে কিছু না বলে চলে গেলো।স্বামীর এমন বিভেবিয়ারে রেণু বেগম ভীষন লজ্জিত হলো।তিনিও স্বামীর পিছন পিছন চলে গেলেন।"
___রায়হান আর জিসান বুঝে উঠতে পারছিলো না কি হয়েছে।তিশা করুণ চোখে জিসানের দিকে তাকিয়ে আছে।আর জিসান চোখের ইশারায় আশ্বাস দিলো,টেনশন করিস না।আমিতো আছি।
কিছুক্ষণ পর রায়হান ও তিশা সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।জিসান ওর বাবাকে অনেকবার জিঙ্গেস করেও কোনও লাভ হয়নি।তৌফিক সাহেব কিছু বলতে নারায।
"সেদিনের পর থেকে তিশার জিসানদের বাসায় যাওয়া ও নিশেধ হয়ে পড়লো।নিজের বাবার এমন আচরণ তিশা কিছুতেই বুঝতে পারছে না।আজকাল তো জিসানের সাথে বাহিরে যাওয়াও নিশেধ ওর।রায়হান এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে,শামসুর রহমান বলে,সেদিনের এক্সিডেন্ট আর ছবির কাহিনী পুনরাবৃত্তি করতে চায়না সে।তাই তিশার ভার্সিটি ছাড়া সব জায়গায় যাওয়া বন্ধ।"
---কিন্তু এসব করেও তিশা আর জিসানের সম্পর্কের ঘাটতি করতে পারেনি।বরং এখন দুজন লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করা শুরু করেছে।তবে এটা তিশার পছন্দ না হলেও জিসানের কাছে কিছুটা রোমাঞ্চোকর লাগছে।বউয়ের সাথে লুকিয়ে প্রেম।ওয়াও!
"রায়হান তিশাকে কলেজএ নামিয়ে দেওয়ার সময়, কলেজ গেটে নিশিকে দেখতে পায়।মেয়েটাকে অনেকদিন পর দেখলো রায়হান।আগেতো তবুও প্রতিদিন সকালে একবার হলেও দেখতে পেতো।কিন্তু আজকাল ওর বাবার হুকুম তিশাকে রায়হানই দিয়ে আসবে।অন্যকেউ যাতে ওকে নিয়ে না যায়।
বাবার হঠাৎ এমন আচরণে রায়হানও নিশির থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।রায়হান আর তিশাকে দেখে নিশি এগিয়ে এসে,কেমন আছেন রায়হান ভাই। রায়হান কিছুক্ষণ নিরব থেকে,আস্তে করে মাথা নিচু করে উত্তর দিলো ভালো না।
___কি?নিশি জিঙ্গেস করলো।
"কই কিছু নাতো।আমি আসি।রায়হান চলে যেতে নিবে আর তখনি জিসানের গাড়িটি সামনে এসে দাঁড়ায়।"
---জিসান গাড়ী থেকে নামলেই আশেপাশের সব মেয়েরা কেমন হা করে তাকিয়ে থাকে।কারণ আজ জিসান ফরমাল লুকে নেই।ব্লু জিন্স,ব্লাক শার্ট আর চোখে আছে সানগ্লাস। চুলটাও আজ জেল দিয়ে সেট করা।গাড়ী থেকে নেমে রায়হানের পাশে দাঁড়ায়।
"রায়হান একটু হেসে, কিরে কাকে খুন করার প্লানিং করছিস।এমন কিলার লুক নিয়ে রাস্তায় চলাটা সেফ না ইয়ার।আজকালকের মেয়েগুলো কিন্তু খুবই dangerous...। কখন না আবার হামলিয়ে পড়ে।"
---জিসান সানগ্লাস টা খুলে বুকের সামনে রেখে।যাকে খুন করার ইচ্ছা সেতো আমার নেশায় পড়েই না।বাকি সবকে খুন করে কি করবো।তিশার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে।আর এদিকে তিশা লুচির মতো ফুলছে।জিসানের দিকে সবাই তাকিয়ে আছে বলে।
"এবার বল,এখানে কি করিস।জিসান কোমড়ে দুহাত রেখে,শালা তুইতো আমার কোনও কাজে আসিস না।তাই নিজেই বউ কিডন্যাপ করতে আসলাম।"
___কি?তিশা ভ্রুটা কুঁচকিয়ে।
"তিশার কোনও কথা জেনো জিসানের কানেই ডুকলো না।হঠাৎ সবার সামনেই তিশার হাতটা ধরে গাড়ীতে নিয়ে বসালো।রায়হান কে বায় বলে গাড়ী স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।"
---নিশি ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।নিশি খুব ভালো করেই জানে রায়হান জিসান ভাইয়ের মতো না।জিসান ভাইয়া ভালোবাসা প্রকাশ করা পছন্দ করে,কিন্তু রায়হান গোপনে ভালোবাসতে জানে।
এরপরও নিশি এই লোকটিকে ভালবাসো।হয়তো এই জীবনে উনার মুখে ভালোবাসি কথাটা শুনা হবে না।নিশি ও চলে গেলো।
রায়হান নিশির যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে চলে গেলো।
"আপনি এমন কেনো, রায়হান ভাইয়ের সামনে এসব কি বলছিলেন।"
--জিসান তিশার দিকে তাকিয়ে,কেনো কি হয়েছে জান।
"কি হয়েছে মানে।বড় ভাইয়া আমার,আপনার লজ্জা করেনা ভাইয়ার সামনে এসব করেন।এছাড়া নিশিও ছিলো,ওতো আপনার ছোট বোন।"
---জিসান শুধু একবার তিশার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।আপাতত ড্রাইভিং এ মনোযোগ তার।
"আমরা কোথায় যাচ্ছি,কিছু বলছেন না কেনো।উফ আপনি গাড়ী ঘুড়ান আমি বাসায় যাবো।বাবা জানতে পারলে,আল্লাহ জানে কি করবে।আপনাকে তো কিছু বলবে না কিন্তু আমাকে ছাড়বে না।"
---জিসান জোড়ে গাড়ীটা ব্রেক করে।
"আরে এভাবে গাড়ী থামালেন কেনো।আপনি দেখি গাড়ী টাও ঠিক.....তিশা আর কিছু বলতে পারলো না।তিশাকে টানদিয়ে কাছে এনে গালটা চেপে ধরে জিসান ওর ঠোঁট দিয়ে তিশার ঠোঁটকে আবদ্ধ করে নিলো।
---হঠাৎ এ ঘটনায় তিশা অবাক হলো।
"আর জিসান যখন তিশার ঠোঁট দুটো নিয়ে পুরো ব্যস্ত হয়ে উঠলো,আবেশে তিশা চোখ দুটো বন্ধকরে ফেললো।তিশা এতোটাই আশ্চর্য হলো যে কোনও রিয়েক্ট দেওয়া ভুলে গেছে।তিশা কিস করছে না,তবে জিসানকে বাধাও দিতে পারছে না।
--তিশার মনে হলো,আজ ও এতোটাই দূর্বল যে সামাম্য ধাক্কাটুকুও দিতে পারবে না।এদিক দিয়ে জিসান সুযোগ পেয়ে তিশার কোমড়টা জরিয়ে নিজের কোলে নিয়ে আসলো।কিন্তু এতোকিছুর মধ্যেও ঠোঁটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেনি।সুযোগ পেয়ে তিশার মাথার হিজাবটাও খুলে ফেললো।অনেকক্ষণ পর জিসান তিশাকে ছেড়ে ঘাড়ে মুখ ঘষতে লাগলো।
-আর তিশা জিসান থেকে ছাড়া পেয়ে জোড়ে কয়েকটা নিশ্বাস নিলো।
"-জিসান নেশা ভরা কন্ঠে তিশার কাধে মুখ রেখেই বললো,তোর বাবাকে বল আমার জিনিস আমাকে দিয়ে দিতে।"
---আ আপনার আ আবা র ককোন জিনিস।
"-এই যে তুই।তুইতো পুরোটাই আমার।অথচ আমার জিনিসকে নিজের ঘরে আটকে রেখে কার্ফু জারি করেছে আমার জন্য।মনে হয় আমি খেয়ে ফেলবো উনার মেয়েকে।"
---তিশা একটু হেসে নিচের দিকে তাকিয়ে।খেয়েই তো ফেলেন।
"-তিশাপাখি,মিথ্যে বলা ভালো না।কানের কাছে গিয়ে।
তুই আর তোর জেলার বাবা খেতে কই দিলি।আমি শুধু টেস্ট করেছি,খেতে কেমন লাগবে।জিসান এখনো তিশার কোমড়কে জরিয়ে ছিলো।"
---তিশা জিসান থেকে ছুটার চেষ্টা করে,ছিঃ কিসব বলছেন।আপনি দিনদিন বেহায়া হয়ে পরছেন।
"জিসান তিশার ঘাড়ে নাক দিয়ে ঘষছিলো,কিন্তু তিশার কথা শুনে ঘাড়ে জোড়ে একটা কামড় দিয়ে দিলো।"
---তিশা আ আ করে উঠে।তিশাকে ছেড়ে দিয়ে আমি বেহায়া শুধু তোর বেলায়।তা না হলে এই জিসানকে বশে আনা এতো সহয না ম্যাডাম।আর তোর জেলার বাবাকে বলে দিস,আপসে তোকে আমার হাতে তুলে দিতে।তা না হলে তুলে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাবো।এর পর দুবাচ্চার মা করে ফিরে আসবো।তখন দেখবোনি কি করে শ্বাশুর মশাই।
"জিসানের কথা শুনে তিশা হা হয়ে আছে।তা দেখে জিসান,মুখ বন্ধকর নাহলো মোশা ডুকবে।"
চলবে.....
No comments