ভাইয়ের_বন্ধু_যখন_বর😍 -------(season 2) [🖤] Part_26🍁
"গাড়ি ছুটছে,শহর থেকে একটু দূরে।আরো কিছুক্ষণ যাওয়ার পর গাড়ীটি থেমে গেলো।জিসান ও তিশা দুজনেই গাড়ী থেকে নেমে দাঁড়ালো।
কি মনোরম পরিবেশ।যতোদূর চোখ যায় শুভ্র সাদা কাশফুলের সমারোহ।এলোমেলো খোলা বাতাসে কাশফুল গুলো যেনো মনের আনন্দে খেলা করছে।"
---এখন বৃষ্টির ঋতু বলে,ছিন্নবিচ্ছিন্ন বিলগুলো পানিতে কিছুটা থৈ থৈ করছে।মনোমুগ্ধকর এমন পরিবেশ এ তিশা খুশিতে আত্তোহারা।জিসান ভাবতেও পারেনি তিশা এতোটা খুশি হবে।
তাহলে অনেক আগেই নিয়ে আসতো। তিশার মন চাইছে,কাশফুলগুলোর সাথে একটু লুকোচরি খেলতে।এমন পরিবেশে মনটাও কেমন শান্তি শান্তি ফিলিং আসে।
" পিচঢালা পথ দিয়ে জিসান তিশার হাতটা ধরে হাটছে।এক অদ্ভুত অনুভুতি মনের দরজায় কড়া নাড়ছে।আসলে কথাটা সত্যিই প্রিয়জন সাথে থাকলে তার হাতটি ধরে অনেক দূর পথ চলা যায়।তবে তাদের আনন্দ বেশিক্ষণ টিকতে পাড়লো না,ঘন্টাখানিক ঘুড়ে কিছু খেয়েদেয়ে তিশাকে বাসায় নামিয়ে দিলো জিসান।কারন জিসানকে আর্জেন্ট অফিসে যেতে হবে।প্রজেক্ট এর কাজ নিয়ে কোনও একটা সমস্যা হয়েছে বলে।"
____জিসান ও তিশার নতুন সম্পর্কটা ভালোই চলছিলো।তবে এর মধ্যে তিশার দাদীর শরীরটা ভালো যাচ্ছিলো না,তাই পরের দিন তিশা ও তার বাবা দাদীকে ফুল চেকআপ এর জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসলো।চেকআপ করে যখন ওরা ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হলো তখন কারো সাথে দেখা হয়ে গেলো আচানক ।
"অচেনা ছেলেটি শামসুর রহমান কে সালাম করলো।ভালো আছেন মামা।"
-কে তুমি বাবা।আমাকে চিনো।
"অচেনা হেসে জবাব দিলো আপনিও আমাকে চিনেন।হয়তো মনে করতে পারছেন না।আমি নিবিড় ইসলাম।"
____শামসুর রহমান এখনো ছেলেটির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
"অচেনা ছেলেটি,আমার মায়ের নাম শেফালি।বাবা মুস্তাহিদ ইসলাম।"
--- এবার শামসুর রহমান হেসে বললো,তুমি আমাদের শেফার ছেলে।
"নিবিড় মাথা নেড়ে সায় দিলো।"
---মা ও মা দেখো,এটা আমাদের শেফার ছেলে।তিশার দাদী চশমার ভেতরদিয়ে তাকিয়ে দেখে একটা সুদর্শন ছেলে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।ছেলেটা দেখতেও বেশ।চিনতে বেশি সময় লাগিনি তার।শেফার ছেলে হাতটি ধরে।তুই দেখি একদম তোর মায়ের মতো হইছিস।তোর মাও এতো সুন্দর ছিলো।
"সবাই নিবিড়ের চেম্বারে বসে আছে।তো নিবিড় তুমি এখানে কি ডাক্তার।"
---জি মামা,এতো বছর বাহিরে ছিলাম।পড়াশুনা শেষ করে এই হাসপাতালে মাসখানিক হলো জয়েন করলাম।মা কিন্তু আপনাদের অনেক স্মরণ করে।
"আমরাও করি।কিন্তু তোমার বাবা মা হঠাৎ করে কোথায় চলে গেলো না বলে বুঝতেও পারিনি।"
---আসলে মামা,বাবার একটা অপরেশনের জন্য আমাদের আর্জেন্ট কলতায় যাওয়া লাগে। প্রায় ছয় মাস ওখানেই থাকতে হয়ছে।এছাড়া কলকাতায় মায়ের ফোনটাও চুরি হয়ে গেলো।যেটাতে আপনার নাম্বার ছিলো।আর এরপর এসে দেখি আপনারাও নাকি এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন, তারপর মা অনেক খুঁজার চেস্টা করেছিলো কিন্তু পাইনি।এর পর আমরাও নানুবাড়ী চলে গেলাম।কারণ বাবার রেস্ট এর প্রয়োজন ছিলো।আর তখন আমিও ছোট ছিলাম।
"হুম!আসলে আমারি ভুল হয়েছে একবার শেফার সাথে দেখা করার দরকার ছিলো।আচ্ছা তুমি আমায় চিনলে কি করে,তুমিতো অনেক ছোট ছিলে তখন।"
---মায়ের কাছে আপনার ছবি বেশ কয়েকদিন দেখেছিলাম।তাই চিনতে অসুবিধে হয়নি।হঠাৎ নিবিড়ের তিশার দিকে চোখ গেলো।এটা কে মামা।
"ও নিবিড়, তুমি ওকে চিনতে পারো নি।ও হলো তিশা আমার মেয়ে।তুমি যখন দেখেছিলে,তখন তো ও খুব ছোট ছিলো।তাই হয়তো চিনতে পারোনি।"
---নিবিড় হেসে, কেমন আছো তিশা।তুমিতো দেখি অনেক বড় হয়ে গেছো।
"তিশাও হেসে জবাব দিলো।"
পরিচয় পর্ব শেষে সবাই কিছুক্ষণ কথা বলে বিদায় নিয়ে চলে এলো।
[নিবিড় কে পরে বলে দেওয়া হবে।জাস্ট ওয়েট করুন]
---বিকেলে কিছু জরুরি কাগজ পত্র সিগনেচার করার জন্য আহমেদ ভিলায় আসতে হলো রায়হান কে।তৌফিক সাহেব আজকাল খুব টেনশনে থাকেন।অফিসেও কম আসেন,তাই অজ্ঞতা রায়হানকেই আসতে হলো।
সিগনেচার নিয়ে,কিছুক্ষণ অফিসের বেশ কিছু প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা করলো তৌফিক সাহেবের রুমে বসেই।এরপর রায়হান বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার সময় কিছুমনে করে থেমে গেলো।
"পাঁচ মিনিট ধরে রায়হান শুধু ভাবতেই লাগলো ভেতরে ডুকবে কিনা।এভাবে একটা মেয়ের রুমে পারমিশন ছাড়া যাওয়া রায়হান কখনোই পছন্দ করেনা।তবুও মনকে জোর করে রাজি করালো,দরজার ওপাশের মানুষটি রায়হান তোর।ওই মানুষটিকে তুই যে কোনও অবস্থায় দেখতেই পারিস।আর কিছু না থাকুক,ভালোবাসার অধিকারতো আছে দুজনের মাঝে।নিশির রুমের দরজাটা খোলাই ছিলো।দরজাটা ধাক্কা দেওয়ার সাথে সাথে খুলে গেলো।
তবে রুমের লাইটগুলো বন্ধ।শুধু রুমের জানালায়,ড্রেসিংটেবিলে কিছু ছোট ছোট ঝাড়বাতি জ্বলে আছে।আর তারই আলকা মৃদ আলো জুরে আছে রুমটিতে।তবে রুমে প্রবেশ করার পর রায়হানের নাকে মিস্টি একটা ঘ্রান আসে।নিশ্চিত নিশির পারফিউম এর।"
----মাতাল করা এই ঘ্রাণ টা রায়হান কখনোই ভুলবে না।মনে পরে গেলো রায়হানের সেদিনের কথা।রুপকদের গায়ে হলুদের দিন,নিশি নিলুর পুরো মুখে হলুদ দিয়ে দেয়,যার ফলে নিলু ভীষন রেগে যায়।
আর নিলুর রাগি ফেস দেখে ভয়ে নিশি বাড়ীর ভেতরে গিয়ে পালাতে নিলে শাড়ীর সাথে পা আটকে কারো গায়ে পরে যায়।নিশি মুখ উঠিয়ে লোকটিকে দেখে লজ্জা পেয়ে যায়।কারণ নিশি রায়হানের উপর পরেছে।রায়হান অপলক দৃষ্টিতে নিশির দিকে সেদিন তাকিয়ে ছিলো।
"শুধু তাকায়নি ভয়ংকর একটা কাজ করে বসে।নিশিকে জরিয়ে ধরে ঘুরে যায়।যার ফলে নিশি নিচে,আর রায়হান নিশির উপরে। নিশির পুরো হাতে হলুদ থাকায়,হাত দুটো উঁচু করে রেখেছিলো।রায়হান নিশির হাতে হাত রেখে হলুদ নিজের হাতে নিয়ে নিশির শাড়ীর পেটের খোলা অংশে পুরো হাতের ছাপ দিয়ে দিলো।নিশিতো ৪২০ ভোল্টেজ শকড খেলো।এরপর রায়হান উঠে পরে এবং নিশিকেও টেনে উঠালো।"
---নিশিতো ওর খোলামুখ দিয়ে একবার রায়হানের দিকে,আর একবার নিজের পেটের দিকে তাকালো।রায়হান একটু কাছে আসার চেস্টা করলে,নিশি ভয়ে কচুমোচু হয়ে সরে যায়।
"আর কোনও দিন এই অংশটি খোলা দেখলে,গরম স্ত্রী লাগিয়ে দেবো।নিশি সেদিন সত্যিই রায়হানকে ভয় পেয়েছিলো।
আর সেদিন নিশি এই পারফিউম টি ইউস করেছিলো,যার ঘ্রাণ এখনো মাতাল করে রায়হানকে।মৃদ হেসে চিন্তা থেকে বের হয়ে আসলো রায়হান।"
---রায়হানের চোখ পড়লো,বিছায়নায় ঘুমিয়ে থাকা নিশির উপর।নিশি একটা টেডিবিয়ার কে নিজের বুকের সাথে জরিয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে আছে।রায়হানে মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
টেডিবিয়ার দিয়ে খেলার বয়স হয়তো এখন নেই।তবে এই টেডিবিয়ারটা খুব স্পেশিয়াল।কারণ এটা রায়হান অনেক আগে নিশির জন্মদিনে দিয়েছিলো।রায়হান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,এতো বছর ধরে এই মেয়েটি এই সামান্য টেডিবিয়ার টি সামলিয়ে রাখছে।
"রায়হান নিশির বিছানার সামনে হাটুগেরে বসলো।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে,নিজেই মনে বলতে লাগলো।আমি জানি সুইটহার্ট,তুমি রেগে আছো।জিসান ও তিশাকে একসাথে দেখলে তোমার মনটা যে তখন কি চায়,আমি সবই বুঝি।কিন্তু আমি এখন নিরুপায়।দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ছেড়ে,
এই শ্যামবর্ণ মেয়েটির প্রেমে যে কি পরিমাণ পাগল আমি তা হয়তো তুমি জানোই না।আমিও চাই তোমাকে আমার ভালোবাসার রং এ রাঙ্গাতে।আর একদিন রাঙ্গাবো।
একবার জিসান আর তিশার ঝামেলাটা শেষ হোক।আমি চাইনা,আমাদের সম্পর্কটা এখন কারো সামনে আসুক।তাই দূরত্ব টা জরুরী।আমি জানিনা তুমি বুঝবে কিনা।কিন্তু সবশেষে একটা কথা সত্য,আমি ভালোবাসি তোমাকে।
জানি না,এই জীবনে পাবো কিনা তোমাকে,তবুও ভালোবেসে যাবো।নিশির কপালে রায়হান তার ঠোঁটের উষ্ণ ছোয়া দিয়ে দিলো।এর পর নিশির বুঝার আগেই রায়হান চলে গেলো।"
---কিছু মানুষের ভালোবাসা আড়ালে থাকে।রায়হান আর নিশির ভালাবাসাটাও এমন।নিশি লজ্জায় প্রকাশ করতে পারছে না।আর রায়হান তার নিজের পরিবারের প্রতি ওর দায়িত্ব প্রকাশ করতে দিচ্ছে না।তিশা ও জিসানের সম্পর্ক টা আগে সহয মনে হলে,এখন ও নিজেই জানেনা এ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কি।তার উপর পরিবার ওর আর নিশির সম্পর্ক টা কিভাবে দেখবে তাও আগে বুঝতে হবে।কারণ এখানে ওর বোনের ভবিষ্যৎ ও জরিত।
||
||
"জিসান অফিস শেষ করে বাড়ী যাওয়ার জন্য গাড়ীতে উঠলো।হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো।লাবণির বাসার কেয়ার টেকার ফোনটা করেছে।লাবণি অসুস্থ, আর লাবণির যেহেতু এখানে দেখার মতো কেউ নেই তাই বাধ্য হয়ে মানবতার ক্ষাতিরে জিসানকে যেতে হলো।জিসান লাবনির বাড়ীর ড্রয়িংরুম এ এসে দেখে কেউ নেই বাড়ীতে।কারন কয়েকবার আওয়াজ দেওয়ার পরও কেউ আসে নি।
জিসান লাবণির নাম্বারে কল দিলে ফোনটা উপরে কোন একটা রুমে বেজে উঠে।জিসান শব্দ শুনে উপরে উঠে।যে রুম থেকে শব্দটি আসছে,সে রুমের দরজাটা ধাক্কা দিলে সাথে সাথে খুলে যায়।জিসান রুমে প্রবেশ করে অবাক হয়ে যায়।কারণ পুরো রুমটি সুগন্ধি যুক্ত ক্যান্ডেল ও ফুল দিয়ে সাজানো।জিসান কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।"
---আচানক জিসানকে কেউ পিছন দিয়ে জরিয়ে ধরলো।হঠাৎ এমন হওয়ায় জিসান কিছুটা হচকিয়ে গেলো।নেলপালিশ লাগানো হাত দুটি জিসানের বুকের সামনে।মুহুর্তে জিসানের মাথা বিগড়ে গেলো।হাতের ভাজ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে পিছনে তাকালে,ওয়াট দা হে....!
আর কিছু বলতে পারলো না জিসান।কারন ওর সামনে লাবণি দাঁড়িয়ে আছে,তাও আবার থ্রী কোয়ার্টার একটা নাইটি।যার দুকাধে ফিতা সংযুক্ত লাল রং এর।জিসান সাথে সাথে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে ফেললো।
প্রচণ্ড রাগ উঠছে জিসানের।জিসানের বুঝতে বাকি নেই,লাবণি ওকে মিথ্যা বলে নিয়ে এসেছে।আর ওর উদ্দেশ্য কি।
"-জিসান দ্রুতি স্থান ত্যাগ করার জন্যও পা বাড়ালে,লাবণি জিসানের হাতটা ধরে ফেলে।জিসান প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না।আই লাভ ইউ।
জিসান দাঁতেদাঁত চেপে,লিভ মি লাবণি।"
---না!আজ তোমাকে ছাড়বো না,আমার দিকে তাকাও।একবার ভালো করে দেখো।দেখবে তুমি সব ভুলে যাবে।আমি তোমাকে সব থেকে সুখে রাখবো।
"জিসান সহ্য করতে না পেড়ে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেয় লাবণির গালে।ছিঃ লাবণি,আমার ভাবতেও অবাক লাগছে।তুমি এ কাজটি করবে।তাও আমাকে সিডিউস করার চেস্টা।তুমি ভাবলে কি করে,এভাবে আমার সামনে এলে আমি সিডিউস হয়ে যাবো।কথাগুলো জিসান লাবণির দিকে না তাকিয়েই বলছে।তুমি ভালো করে জানো আই লাভ তিশা, এন্ড আই এম মেরিড ম্যান।তবুও এসব!"
---জিসান প্লিজ বোঝার চেস্টা করও আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি।থাকতে পারবো না তোমাকে ছাড়া।
"জাস্ট সেট আপ।আমি আর এমন কিছু শুনতে চাইনা।"
---জিসান চলে জেতে নিলে লাবণি আবার জিসানের হাতটা ধরে ফেলে।
প্লিজ জিসান আমাকে ছেড়ে যেওনা।আমি তোমাকে তিশাকে ছাড়তে বলবো না,তিশা সামনে থাকুক।আমি না হয় তোমার জীবনে আড়ালে থাকলাম।কখনো কারো সামনে অধিকার নিয়ে আসবো না।তবুও আমাকে আপন করে নেও জিসান।প্লিজ।
"-জিসানের মাথা পুরো গরম হয়ে গেলো।জাস্ট ডিসগাস্টিং লাবণি,তুমি ভাবলে কি করে আমি তিশাকে ধোকা দেবো।আমার লাইফে শুধু আমি একটা মেয়েকেই ইম্পোরটেন্ট দিয়েছি।আর তার জায়গা কেউ নিতে পারবে না।কেউ না।"
---ঐ মেয়েটা তোমাকে ধোকা দেওয়ার পরও এসব বলছো।লাবণির চিল্লিয়ে।
____এবার জিসান লাবণির দিকে তাকালো,কিন্তু শুধু ওর চোখের দিকে।জিসানের রক্তিম চোখগুলো দেখে লাবণির কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো।
তুমি যে গেম খেলতে চেয়েছো।সে গ্যাম এ এখনো তুমি কাচা লাবণি।তুমি কি মনে করেছো।আমি জানতে পারবো না।তিশার ছবিগুলো কে এডিট করেছে।ভুলে যেওনা আমি জিসান।আর আমাকে বোকা বানানো এতো সহয না।
আমার জিনিস কিভাবে সুরক্ষিত করতে হয় আমি জিসান খুব ভালো করেই জানি।মনে রেখো শরীরের চায়িদা মিটানোর জন্য বাজারে মেয়ে মানুষের অভাব নেই।কিন্তু আমার কাছে শরীরের চায়িদাটা যদি ইম্পোরটেন্টই হতো,তাহলে তিশার সাথেই মিটিয়ে নিতাম।ও তো আমার বউ,মানা করার সাহসও পেতো না।কিন্তু তোমার মতো মেয়ে এসব বুঝবে না।নিজের চাহিদার জন্য অন্য কাউকে খুঁজে নেও।
জিসান চলে যেতে নিয়েও আবার থেমে গেলো।মনে রেখো লাবণি তিশাকে নিয়ে যে নোংরা গেম খেলতে চেয়েছো।তার জন্য তোমাকে অনেক মূল্যদিতে হবে।অনেক!
"লাবণি ধপাস করে ফ্লোরে বসে পড়লো।চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।কিন্তু তার শব্দ জিসানের কানে আসার আগেই জিসান চলে গেলো।"
---হাতির ঝিলের ব্রিজে দাঁড়িয়ে আছে রায়হান ও জিসান।মনটা ভালো নেই,তাই কল করার সাথে সাথে চলে এলো রায়হান।বন্ধুত্ব বুঝি এমনি হয়।
জিসান রায়হান কে সব খুলে বললো।রায়হান শুনে মোটেও অবাক হলো না।কারণ লাবণিকে রায়হান প্রথম দিন থেকেই পছন্দ করতো না তেমন,কিন্তু জিসানকে তা বুঝতে দেয়নি।কারণ লাবণি জিসানের কাজের সাথেও জরিত।এতে জিসানেরই ক্ষতি হবে।
"এখন কি করবি ভেবেছিস।"
---জিসান ওর হাতের কোল্ড ড্রিংকের বোতলটা শেষ করে,কি করবো!
ছুড়ে মারবো ঠিক এই খালি বোতলটার মতো।
"কিন্তু তোর প্রজেক্ট! "
---কাজ প্রায় শেষ।কাল প্যাকেজিং এর কাজ শুরু হবে।এই সপ্তাহই অর্ডারটা ডেলিভারি করে দিতে পারবো।তার পর ওর সাথে আমার কোনও কন্ট্রাক্ট নেই।তাহলে আমি কেনো আমার আশেপাশে এই নোর্দমা রাখবো। এমন ব্যবস্থা করবো,দ্বিতীয় বার তিশার দিকে হাত বাড়াতেও ১০০বার ভাবতে হবে।
||
||
"রায়হান খুব টেনশনে বসে আছে। আজ ১৬ই জুন,জিসানের আজকের আবদার পুরণ করতে না পারলে জিসান সারা শহর দৌড়ানি দিবে রায়হান কে আগেই ওয়ার্নিং দিয়ে দিয়েছে।এ দেখি মহা বিপদ।একদিকে জেলার বাবা।অন্যদিকে হিটলার বন্ধু।শালা এদের মনে হয় আমার উপর একটুও মায়াও হয়না।ঠিক এসময় জিসানের ফোন এসেছে।"
___ওল সেট দোস্তো।
" রাখ তোর দোস্তো। তুই সবসময় আমাকে এমন চিপায় ফেলিস কেনো।"
____কি করবো বল,তুইতো আমার একখান মাত্র জানে জিগার,পরাণের প্রিয় বন্ধু তোকে বলবো না তো কাকে বলবো।তার উপর আমার একটা মাত্র বউয়ের একটা মাত্র ভাই। তুই আমার কস্ট না বুঝলে কে বুঝবে।
"হয়েছে শালা এতো পাম মারতে হবে না।বাবা জানলে আমাকে বাড়ী থেকে বের করে দেবে।"
____ও রায়হান, আমার শ্বশুর মশাইকে বলিস,ছেলেকে না।মেয়েকে বের করে দিতে।তাহলেই তো আমি আমার বউ নিয়ে আসতে পারবো।আর কোনও ভেজালো হবে না। কি বলিস।জিসান বলেই হেসে দিলো।এরপর রায়হান কে বললো,
শোন রায়হান ভালোবাসা বেশিদিন গোপনে রাখতে হয়না।এতে অনেকে সময় দেরি হয়ে যায়।প্রিয়তমা অন্যের হাত ধরার আগে তার হাতটা ধরে ফেলা উচিৎ।
রায়হান বুঝেও না বোঝার ভান করে বলে,মানে!কি বুঝাতে চাইছিস।
____কিছু না,রাখি।
"রাত ১১:০০।ওয়াইট শার্ট আর ব্লাক জিন্স পরে এতো রাতে গাড়ীতে হেলান দিয়ে কারো জন্য অপেক্ষা করছে জিসান।হঠাৎ যেনো চোখগুলো আটকে গেলো।মনে মনে বলে উঠলো,জিসান তু তো আজ গেয়া।"
___সাদা জামদানি লাল ব্লাউজ। দুহাতে জিসানের দেওয়া ডায়মন্ড এর দুটো চুড়ি।গলায় কিছুই নেই।না আছে কানে।চুলগুলো ছাড়া।ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। গাল দুটো লাল হয়ে আছে লজ্জায় নাকি ব্লাশনে।তা জিসানের জানা নেই।
কেনো জানি এই রমনীকে দেখে জিসান শেষ আজ।নিজে নিজেই বিড়বিড়য়ে বলছে,জিসান কন্ট্রোল, কন্ট্রোল ইউর সেল্ফ।
বউ হয়েছে তো কি।পরিবার এখানো আমাদের মেনে নেয়নি।কিন্ত কিভাবে নিজেকে আজ আটকাবো।এই মেয়েটিকে আজ ভয়ংকর সুন্দর লাগছে।
"জিসানের ভাবনার মাঝে তিশা কখন এসে দাঁড়িয়ে আছে,খেয়ালি নেই।তিশা কিছুটা বিরক্ত হয়ে,কি হলো কথা বলছেন না কেনো।আর তখনি জিসানের ধ্যান ভেঙ্গে এলো।এরপর কেউ দেখার আগেই তিশার হাতটা ধরে আগে গাড়ীতে বসালো।
তিশাতো বকবক করেই যাচ্ছে,জানেন বাবা জানতে পারলে,আমার শনি,রবি,সোম, মঙ্গল করে ফেলবে।ঘর থেকেও বের করে দিবে ঠোঁটটা উল্টিয়ে।জিসান তিশার মুখটা দুহাত দিয়ে ধরে বলে,জান রিলেক্স।"
---জানিস তোকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে।এক কথায় ভয়ংকর সুন্দর।যে সৌন্দর্যের বর্ননা করা যায় না।শুধু অনুভোব করা যায়।এতো সুন্দর কেনো লাগছে বলতো।আমি যদি এখন কন্ট্রোলেস হয়ে পরি,তখন কি হবে জান।
"জিসানের কথায় তিশার গালদুটো মনে হয় আরও লাল হয়ে গেলো।জিসান বুঝতে পেরে তিশার কপালে একটা আদর দিয়ে সোজা হয়ে বসলো।ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।সো রিলেক্স। "
____আর শোন এতো টেনশনেরও কিছুই নেই।রায়হান সব সামলিয়ে নিবে।আর তোকে ঘর থেকে বের করে দিলেতো আমার জন্যই ভালো,আমি আমার সাথে তোকে নিয়ে যাবো।কি বলিস।ভ্রুদুটো উঁচু নিচু করে।
"তিশা একটু মুচকি হাসে।একটু পর জিঙ্গেস করে, আমরা কোথায় যাবো এখন এতো রাতে।"
___সারপ্রাইজ জান।জাস্ট ওয়েট।
"ঘন্টাখানিক এর মধ্যে তিশা ও জিসান পৌছে গেলো।তিশাকে আজ জিসান নিজের বাড়ীতে নিয়ে এসেছে।এটা ঐ বাড়ী যেখানে জিসান একলা সময় কাটায়।কেউ জানেনা এই বাড়ীর কথা।আজ তিশাকে এখানেই নিয়ে এসেছে।
বিশাল জায়গা নিয়ে বাড়ীটি বানানো।ডান এবং বাম সাইডে বিশাল বাগান।আর বাড়ীর পেছনে নাকি সুইমিংপুল ও আছে।বাড়ীতে এসে বুঝতে পারে তিশা,এখানে কেউ নেই।বাড়ীর মেন গেটও জিসান নিজের ফিংগার প্রিন্ট দিয়ে খুলেছে। বাড়ীর চারপাশে এলার্ম দেওয়া।কেউ অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করার কোনও পথ নেই।"
____কি আশ্চর্য, একদম বিদেশি ধাজে বাড়ীটি বানানো।কেনো জানি ভয় করছে আজ তিশার,বুকের ভেতরের ধপধপ শব্দটা বেড়ে গেলো।হয়তো জিসানও তিশার ভয়টা বুজতে পেরেছে।
"আমার প্রতি বিশ্বাস আছে তো জান।জিসানের কথায় শুধু মাথা নাড়ালো তিশা।এরপর তিশার হাতটি ধরে ভেতরে নিয়ে গেলো।"
____এটা কার বাড়ী।
"জিসান তিশার দিকে তাকিয়ে আমাদের।"
---আমাদের মানে!
"এটা আমি অনেক শখ করে বানিয়েছি।যখন আমার একা থাকতে মন চায় কিছু সময়ের জন্য।তখন এখানে চলে আসি।আর আমার বাড়ী মানে তোরও বাড়ী।মানে আমাদের বাড়ী।"
---বেডরুমের বিশাল বারান্দাটায় খুব সুন্দর ভাবে ফুল আর রেড কালারের লাভ সেফ বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। তিশা বুঝতে পারছে না কেনো।সামনের ছোট টেবিলে একটা কেক রাখা।কেকের দিকে তাকিয়ে দেখে,হ্যাপি এনিভারসেরি লিখা।তিশার এখন মনে পড়লো,আজ তাদের বিবাহ বার্ষিক।তিশার মনটা খারাপ হয়ে গেলো আজকের দিনটি ও কিভাবে ভুলে গেলো।
"হঠাৎ তিশাকে কেউ পিছন দিয়ে জরিয়ে ধরলো।তার মাতাল করা পারফিউম এর ঘ্রান বলে দিচ্ছে কে সে।"
---হেপি এনিভারসেরি জান।আজ আমাদের বিয়ের পাঁচ বছর হলো।
___রিয়েলি!
" হুম!এতো বছর আমি একা এই দিনটি পালন করে এসেছি। আজ এতো বছর পর দুজনে একসাথে পালন করবো।তাইতো এতো রাতে আপনাকে এখানে লুকিয়ে নিয়ে এসেছি।"
____ছলছল চোখে তিশা জিসানকে বললো আম সরি।আমার না মনেই ছিলো না।
"ইটস ওকে জান,আমি আছি না।আমি মনে করে দিবো নি,যখনি তুই ভুলে যাবি।এখন চল আগে কেকটা কাটি।দুজনে একসাথে কেক কাটে,এবং দুজন দুজনকে খাইয়ে দিলো।"
____জিসান নিজের পকেট থেকে একটা বক্স বের করে।বক্সটি খুলে,একটি আংটি বের করে।আংটির ডিজাইন টা তিশার কাছে অসাধারণ লাগলো।নিঃসন্দেহ এটিও হীরার।জিসান তিশার অনামিকা আঙ্গুলে আংটিটি পড়িয়ে দিলো।হাতটাতে একটা কিস করে বললো,জানিস প্রিয় মানুষটিকে এই আঙ্গুলেই কেনো আংটি পড়ানো হয়।তিশা মাথা নাড়িয়ে জানায়, না।
'-জিসান একটু হেসে তিশার হাতটি বুকের বামপাশে রেখে,কারণ অনামিকা আঙ্গুলটি সরাসারি হ্রদপিন্ডের সাথে সংযুক্ত।একে ভালোবাসার ধমনীও বলা হয়।দুটো ভিন্ন মানুষকে এই একটি আংটির মধ্যমে এক করার প্রথম ধাপ শুরু হয়।সবথেকে বিশেষ কি জানিস।আংটির এই গোলাকার হওয়া।কখনো ভেবেছিস এটা বৃত্তকার কেনো।তিশা এবারও মাথা নাড়ায় না।
---কারণ বৃত্তের কোনও প্রান্ত নেই,অসীম এর যাত্রা।ভালোবাসারও যাতে কোনও প্রান্ত না থাকে তারই রুপক এটি।
"আপনে এতো কিছু জানেন কি করে।"
____বই পড়ে ম্যাডাম।তিশার গালটা টেনে।
" তিশা মাথা নিচু করে বলে,আমিতো কোনও গিফট আনিনি আপনার জন্য।জিসান তিশাকে ঘুড়িয়ে নিজের বুকের সাথে তিশার পিঠ ঠেকিয়ে জরিয়ে ধরলো।জান,আমার সব থেকে বড় গিফট তো তুই।তোর আমার পাশে থাকা,কাপাকাপা হাতে আমাকে স্পর্শ করা,তোর লজ্জায় লাল হওয়া গাল দুটো,তোর বোকাবোকা কথা গুলো।ভয়ে চুপছে যাওয়া মুখখানি এসবই তোর তরফ থেকে আমার জন্য গিফট।আমিতো এতেই ফিদা।আর আমি আমার তিশাকে এভাবেই চাই।এরপরও আরো একটা জিনিস চাই।একটা ওয়াদা করবি।এবার তিশা সামনে ঘুড়ে জিসানের দিকে তাকালো।জানতে কি?"
____এই আংটিটা কখনো খুলবি না।যতো কিছুই হোক জীবনে আমাকে ছেড়ে কখনো যাবি না।
"কেনো জানি জিসানের চোখে আজ তিশা অন্যকিছু দেখতে পাচ্ছে।তিশা জানে,জিসান ওকে নিয়ে খুব বেশি পজেসিভ।কিন্তু আজ আমাকে হারানোর ভয়টা যেনো বেশি জিসানের চোখে।"
_____তিশা জিসানকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।জিসানের বুকে মাথা রেখে,বললো।যতোদিন বেঁচে থাকবো,স্বজ্ঞানে কখনো খুলবো না।আর বেঁচে থাকতে কখনো ছাড়বো না।জিসানও নিজের সাথে তিশাকে আরো মিশিয়ে নিলো।
চলবে.....
No comments