ভাইয়ের_বন্ধু_যখন_বর😍 --------------(season 2) [🖤] Part_27🍁
"নীরব রাত,চারদিকে অন্ধকার।শুধু বাগানের লাইটের আবছা আলো এসে পরছে বারান্দায়।নিস্তব্ধ এই রাতে ডিভানে জিসানের সাথে লেপ্টে শুয়ে আছে তিশা।একচাদরের নিচে দুটো মানবের হ্রদপিন্ডের স্পন্দন গুলো ছাড়া হয়তো আর কিছুই শুনা যাচ্ছে না।নিজের আরো একটু কাছে টেনে এনে কপালে চুমু দিয়ে দিলো জিসান।
আজ তিশার অন্য একটা রুপ দেখতে পেয়েছে জিসান।তিশা আজ ওর মনের অনেক অনুভুতিগুলো শেয়ার করেছে জিসানের সাথে।জিসান কখনো ভাবতেই পারেনি,এই দিনটিও কোনও দিন আসবে ওর জীবনে।যে মেয়েটি ওকে দেখলে ভয়ে কুঁকড়িয়ে যেতো,সবসময় নিজেকে ওর কাছ থেকে দূরে দূরে রাখতো।আজ সে মেয়েটিই ওর জীবনের অনেক না বলা কথাগুলো শেয়ার করছে।যা হয়তো তিশা অন্য কাউকেও করেনি এখনো।
জিসান বুঝতে পেরেছে ওর ভালোবাসার মানুষটির মন ও দখল করতে সক্ষম হয়েছে।তাইতো মানুষটি আজ এতো কাছে বিনা সংকোচনে।এটা ভেবেই একচিলতি হাসি জিসানের ঠোঁটে ভেসে উঠলো।"
___দূরের আকাশটার দিকে চেয়ে আছে জিসান।চারদিকে কতো শতশত তারার মেলা।এতোগুলো তারার মধ্যে কয়টি তারাকেই বা আমরা চিনি বা জানি।আমাদের মানুষের জীবনটাও তারার মতো।এতো মানুষের ভিড়েও আমরা কেউ কাউকে চিনি না।কি অদ্ভুত!
কিন্তু একটা জিনিস তাদের খুব ভালো লাগে।বিশাল সেই আকাশটাকে সূর্য যখন ধোকা দিয়ে,তাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে তুলে,তখন এই তারাগুলোই মিটিমিটি করে জ্বলে আকাশের অন্ধকার দূর করে দেয়।কি অদ্ভুত সুন্দর লাগে তখন তাদের।
"কিন্তু মাঝে মাঝে ঘন কালো মেঘ এসে সব কিছু কেমন ঘোলাটে করে দেয়।জিসানের মনের আকাশেও একফালি মেঘ জমেছে।কেনো?জিসান বুঝতে পারছে না।মনে হচ্ছে কোনও একটা ঝড় আস্থে আস্থে ধেয়ে আসছে ওদের জীবনে।কেনো এমন অনুভূতি হচ্ছে জানে না।আজ তিশাকে নিজের ভেতরে লুকিয়ে রাখতে মন চাইছে।কোন ঝড় আমাদের আলাদা করতে পারবে না জান নিজের মনেই বলে উঠছে।
অনেক রাত পর্যন্ত জিসান তিশা বারান্দায়ই ছিলো।তিশা ঘুমিয়ে থাকলেও জিসান সারারাত জাগনা ছিলো।ভোড়রাতে হালকা ঠাণ্ডা বাতাস বইলে,তিশাকে কোলে করে রুমে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিয়ে নিজেও কিছুক্ষণ ঘুমানোর চেস্টা করে জিসান।"
___অফিস থেকে বের হয়ে বাসায় আসার পথে, হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হওয়ায় রায়হান কাক ভেজা হয়ে বাসায় ফিরলো আজ।রেনু বেগম রায়হানকে এই অবস্থায় দেখেই ক্ষেপে গেলো।কারণ এর আগের বারও বৃষ্টিতে ভিজার কারণে রাতে জ্বর এসে পরেছে,আর আজতো সমানে হাচির পর হাচি দিয়ে যাচ্ছে।সামান্য বৃষ্টির পানিও এই ছেলের সহ্য হয়না।
তাই রেনু বেগম ছেলেকে বৃষ্টি থেকে দূরে থাকতে বলে।আজ রাতও নিশ্চিত জ্বর আসবে।আমার হচ্ছে সব জ্বালা।এতো বড় ধামড়া ধামড়া ছেলেমেয়েদের এখনো সেবা করতে হবে।রায়হানের জন্য মশলা চা বানাচ্ছে আর প্রলোপ করছে।
"তখনি রায়হান পাকের ঘরের সামনে এসে দাঁড়ায়,মা কি হয়েছে। আজ তাওয়া এতো গরম কেনো।সব কিছুতো পুরে যাবে।
-রেনু বেগম চা টা ছেলের হাতে দিয়ে,বিয়ে করবি কবে বলতো।তোর পছন্দ থাকলে বল,না হলে আমি মেয়ে দেখা শুরু করি।মার কথা তো ভালো লাগেনা।তাহলে বউ এনে দিই।বউয়ের কথা শুনিস।"
---কথা নাই বার্তি নাই।হঠাৎ আমার বিয়ের প্যারা তোমার মাথায় কেনো আসলো।
"এ কেমন কথা রায়হান,এখনও বলবো নাতো কখন বলবো।বয়সতো কম হলো না।তোর সাথের বন্ধুবান্ধব দের দেখি বউ বাচ্চা নিয়ে ঘুড়ে বেড়ায়।আর আমার কি কপাল মেয়ে বিয়ে দিয়ে ঘরে বসিয়ে রেখেছি আর ছেলে বুড়ো হয়ে যাচ্ছে এখনো নাকি তারা করছি।
আরে কখন করবি,চুল পাকার অপেক্ষায় আছিস।এরপরতো তোর ঘরের বাচ্চা হলে তোকে বাবা না ডেকে দাদা ডাকবে মনে রাখিস। আর সমস্যা কি বলতো।বিয়ের কথা উঠলেই মেয়ে লোকের মতো এমন পালাস কেনো।"
---মা কোনও সমস্যা নেই।আগে বাবাকে বলো,জিদ ছেড়ে তিশাকে জিসানের হাতে তুলে দিতে,অনেক হয়েছে।কেনো এমন করছে।কিছু বলছেও না।এমন তো না জিসানকে নতুন চিনে,ছোট থাকতে দেখে আসছে।আর সব থেকে বড় কথা জিসান তিশার বিয়ের সময়ও বাবার কোনও সমস্যা ছিলো না তাহলে এখন কেনো।
"-রেণু বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে,একথা আমিও অনেক বার জিঙ্গেস করেছি কিন্তু কিছুই বলছে না।"
---না বললে বুঝাও।তা না হলে,জিসানের ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে গেলে,কারও জন্যই ভালো হবে না।
"রেণু বেগমও এটা নিয়ে চিন্তিত। জিসানকে খুব ভালো করেই জানে,সাথে ওর রাগকেও।"
---কালরাতে রায়হানের সত্যিই জ্বর এসে পরেছিলো।তিশার বাবা মা দাদীকে নিয়ে আজও হাসপাতালে যেতে হবে।তাই তিশাকে বাসায় থাকতে বলে গেলো,আজ ভার্সিটি যাওয়া লাগবে না।
'রায়হানের জ্বরের কথা শুনে নিশি নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না,চলে এলো তিশার বাসায়।নিশিকে দেখে তিশা একটুও অবাক হলো না।ভালোবাসার টানটা কি তিশা এখন ঠিকই বুঝতে পারে।তাই বিনা সংকোচে বলে দিলো,
ভাইয়া ওর রুমে,আর বাসায় কেউ নেই,সো ডোন্ট ওয়ারি।তিশার কথা শুনে নিশির মুখে হাসি ফুটে উঠলো।'
___আমি রুমে আছি,কিছু লাগলে বলিস।তিশা ওদের একা ছেড়ে চলে গেলো।
"নিশি রায়হানের রুমে প্রবেশ করে দেখে রায়হান কাথা গায় দিয়ে শুয়ে আছে।রায়হানের মাথার সামনে বসে মাথায় হাত দিয়ে দেখে জ্বর আছে কিনা।জ্বর এখনো আছে।
মাথায় কারো হাতের শীতল স্পর্শ আর নাকে চেনা সেই পারফিউম এর ঘ্রানে রায়হান না দেখেই বুঝে গিয়েছে।এটা আর কেউ না ওরই প্রিয়তমা। রায়হান কপালে রাখা হাতটা শক্ত করে ধরে।
হঠাৎ নিশির কোলের উপর মাথাটা রেখে বলে,নিশি মাথাটা টিপে দেতো,অনেক ব্যথা করছে।নিশি কিছুটা অবাক হলো,কারণ ওতো কোনও কথা বলেনি,তাহলে জানলো কি করে রায়হান ।"
___আপনে জানলেন কি করে আমি।
"রায়হান নিশির হাতটি নাকের কাছে এনে,তোর শরীরের এই ঘ্রানটাতে অনেক আগেই মাতাল হয়েছি আমি।আরও মাতাল করতে এসেছিস এখানে।"
___নিশি কিছুটা শোকড হয়ে বসে আছে।কিসব বলে লোকটি।
"নিশির হাতটা মাথায় রেখে,নে টিপ এখন।
নিশি মাথা টিপছে আর রায়হানের বলা কথাগুলো ভাবছে।হঠাৎ রায়হান ওর দিকে ঘুড়ে কোমড়টা দুহাত দিয়ে জরিয়ে ধরলো।রায়হানের এমন কান্ডে নিশি স্ট্যাচু হয়ে গেলো।নড়তেও সাহস পাচ্ছে না।"
___রায়হানের গরম নিশ্বাস নিশির পেটে পড়লে,নিশি কেঁপে উঠে।মেরুদণ্ডের শিরধারায় যেনো একটা শীতল বাতাস বয়ে যাচ্ছে।রায়হান নিশিকে আরো একটু শক্ত করে ধরে পেটে একটা কিস করলো।নিশির মুখ দিয়ে কোনও কথা বের হচ্ছে না,তবে বুঝতে পারছে না এসব কি সত্য।একটার পর একটা ঝটকা হজম করতে কস্ট হচ্ছে নিশির আজ।
"নিশি বলতো তোর এতোটুকু একটা পেটে আমাদের বাবু কিভাবে থাকবে।বাবুর কস্ট হবে না।আমার না তোর মতো একটা মেয়ে বাবু লাগবে।একদম তোর মতো।তোর মতো চোখ,নাক কান সব।দিবি বল।"
___নিশি কি বলবে বুঝতে পারছে না।তবে এতোটুকু বুঝতে পারছে,রায়হান জ্বরের ঘোরে এসব বলছে।
"-বল না দিবি।বাচ্চাদের মতো জিদ করে।আমার বেবির মা শুধু তুই হবি।আমি বানাবো।রায়হানের কথা শুনে নিশির হাসিও পাচ্ছে সাথে লজ্জাও।নিশি জানে এই লোকটি জ্বরের ঘোরেই এসব বলতে পারবে।জ্বর ভালো হলে,আবার পুরোনও বোরিং রুপে ফিরে আসবে।তাতে কি,সত্য তো বদলাবে না।এই বোরিং মানুষটির প্রেমেইতো আমি পড়ি বার বার।নিশি তাই চুপ থেকে রায়হানে কথাগুলো শুনে। হাতের কাছে রাখা পাতলা কম্বল টা দিয়েও ঢেকে দিয়ে রায়হানের গরম কপালে,নিজের ঠোঁটের উষ্ণ পরশ দিয়ে দেয়।এসময়টা দুজনে পাবে কিনা দ্বিতীয়বার কেউ জানে না।তবে সময়টাকে ধরে রাখা গেলে হয়তো দুজনেই ধরে রাখতো আজ।"
||
||
"আজকাল তিশার বাবার নিবিড়ের প্রতি বিশ্বাস একটু বেশিই বেড়ে গেছে।নিবিড়ের যখন তখন এই বাসায় আসা যাওয়ার মাত্রাও বেরে গিয়েছে।শামসুর রহমানের পাতানো বোনের ছেলে বলে,কেউ কিছু বলেনা।তবে রায়হানের ব্যাপারটা একদম পছন্দ না।
নিবিড়ের মা শেফালির নিজের কোনও ভাই ছিলো না বলে,বান্ধবীর ভাই শামসুর রহমানকে ভাই বানিয়ে ছিলো।আর এভাবেই শেফালি আর শামসুর রহমানের ভাই বোনের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো।ভাগ্য ক্রমে শেফালিও তার পরিবার নিয়ে একই এলাকায় থাকতে আসে।বেশ কয়েক বছর একসাথেই ছিলো তারা।তখন তিশা একদমই ছোট বাচ্চা ছিলো।তাই তিশার এ ব্যাপারে কোনও জানা নেই।"
___আজ তিশাও খুব বিরক্ত নিবিড়ের উপর।তিশার মনে হচ্ছে নিবিড় একটু বেশিই ইন্টেফেয়ার করছে তিশার লাইফে।মাঝে মাঝে তিশার কলেজেও ভূত দেখার মতো চলে আসে।তিশাতো ভয়ে আছে জিসানের।হিটলার জানতে পারলে আমাকে তুলে একটা আছাড় মারবে।আল্লাহ বাঁচাও আমাকে।
"জিসান কিছু দিন বেশ ব্যস্ত ছিলো,একতো পোডাক্ট ডেলিভারির জন্য।আরেক হলো লাবণিকে ওর জায়গা দেখানোর জন্য।জিসান তার নতুন পার্টনার সিপ নিয়েও ব্যস্ত।এই সময় লাবণি কেবিনে নক না করেই প্রবেশ করে রেগে।"
___জিসান কি শুনছি,আমার কেবিন তুমি অন্য কাউকে কিভাবে দিতে পারো।
'জিসান লাবণির দিকে না তাকিয়েই, মিস লাবনি আপনাকে আগেও বলেছি কেবিনে প্রবেশ করার আগে নক করে আসবেন।ম্যানারস হয়তো ভুলে গিয়েছেন।যাই হোক,সোম মিস লাবণিকে পেপার গুলো দিয়ে দেও।'
___কিসের পেপার জিসান।
"-মিস লাবণি আপনি ভুলে গিয়েছেন মনে হয়,আপনার সাথে আমার জাস্ট এই ডিলটার জন্যই কন্ট্রাক্ট সাইন হয়ে ছিলো।আমাদের ডিলটা কমপ্লিট তাই আপনার আর আমার রাস্তাও এখন আলাদা।পেপারগুলো চেক করে নিন ভালো করে।আরো একটা কথা আপনার প্যারিসের কোম্পানিতে যে টাকা আমি লাগিয়েছি তা আমার ফিরত চাই।লাভ সহ,আশা করি আগামী একমাসের মধ্যে আপনি তা ফিরতের ব্যবস্থা করবেন।"
__আর ইউ মেড জিসান,তুমি ভালো করে জানো।এখন কোম্পানি থেকে টাকা বের করা মানে কোম্পানি পুরো লসে চলে যাবে।
"আই ডোন্ট কেয়ার,লাবণি।এটা তোমার সমস্যা আমার না।তোমাকে আমি ধার দিয়েছি তোমার দরকারের সময়,এখন আমারটা আমি ফিরত চাই।"
___কিন্তু জিসান....নো মোর ওয়ার্ড লাবণি।আমি আর কিছু শুনতে চাইনা।টাইম মতো না দিতে পারলে,আমার উকিল আপনার সাথে কথা বলবে।আপনি এখন আসতে পারেন।
'লাবনি জানে জিসান এমন কেনো করছে।তাই বলেও লাভ নেই।তাই রাগে দুঃখে চলে গেলো সেখান থেকে।'
___সপ্তাহিক ছুটি আজ, সকাল থেকেই তিশাদের বাসায় কিছু একটার আয়োজন চলছে।হয়তো মেহমান আসবে।কিন্তু কে আসবে তা জানার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই তিশার।তাই কাউকে কিছুই জিঙ্গেস করেনি।নাস্তা করে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো।বিছায়নায় বসে কিছু একটা ভাবছে তিশা।হঠাৎ মোবাইলের শব্দে ধ্যান ভাঙ্গে।
ফোনের স্ক্রিনে নামটি দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠে।তিশা ফোনটি হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে আসে।
কিছুক্ষন পর তিশার মা রুমে এসে,তিশা তোর শেফা ফুফু আর নিবিড় এসেছে।তোকে ও ডাকছে ড্রয়িংরুম এ।
তিশা ফোনটা কানের থেকে একটু সরিয়ে,মা হঠাৎ উনারা কেনো এসেছে।
___কে জানে কি কারণ।কিন্তু আমারতো তাদের মতলব ভালো মনে হচ্ছে না।তুই একটু দূরেই থাকিস এদের থেকে।আমার আর কোনও ভেজাল ভালো লাগছে না।
"রেনুবেগম চলে গেলে,তিশা ফোনটা কানে নিয়ে কিছু বলবে তার আগেই জিসানের প্রশ্ন,নিবিড় কে।
তিশা জানে এখন কিছু লুকানো মানে নিজের পায়ে কুড়াল মারা।তাই সব বলে দিলো।জিসান খুব মনোযোগ সহকারে সব শুনলো।
ওকে, যা ভালো মতো রেডি হয়ে তারপর দেখা করিস।তোর ফুফি এসেছে এতোদিন পর।"
___তিশা তো শোকড কথা শুনে কি বলে জিসান।
"কি হলো,জান।ফোন রাখ।সবাই অপেক্ষা করছে তোর জন্য।"
___ড্রয়িংরুম এর সোফায় শেফালির সাথে বসে আছে তিশা।জিসান যেভাবে বলেছে,ঠিক সেভাবেই রেডি হয়েছে।তিশার এমন রুপ দেখে রায়হান ও রেণুবেগম ভীষন অবাক।রেণুবেগমের ধারণা মেয়ে তার পাগল হয়ে গিয়েছে।
কথার এক পর্যায় শেফালি বলেই দিলো,সে তিশাকে নিবিড়ের বউ বানাতে চায়।
"তিশা এটা শুনে মনে হয় আকাশ থেকে পড়লো।কি বলে,আমিতো অলরেডি একজনের বউ।আবার বউ হবো কেনো।আর আমার বর জানলে কেয়ামত এসে পড়বে।তিশা একবার ওর পিতার দিকে,আর একবার রায়হানের দিকে তাকাচ্ছে।"
___রায়হানের নিজেরই মেঝাজ গরম হয়ে যাচ্ছে।
"তিশার দাদীও শেফালির সাথে একমত হলো,এমনকি নিবিড়কে নাত জামাই বলে ডাকতেও লাগলো।তিশার ভেতরে ভেতরে ভীষন রাগ হচ্ছে নিজের বাবার নিরবতা দেখে।শামসুর রহমান হা না এখনো কিছু বলেনি।রায়হান কিছু বলবে,ঠিক এসময় কলিংবেল বেজে উঠে।"
___দরজা খুলে রায়হান বড়সড় একটা শোকড পেলো। জিসান তুই।এ সময়।
"হুম,আমি!তুইতো দাওয়াত দিবি না।আমার বউয়ের বিয়ের কথা চলছে, তাই নিজেই শ্বাশুর বাড়ী এসে পরেছি দাওয়াত নিতে।"
___রায়হান কি বলবে তা শুনার তওয়াক্কা না করেই,জিসান ভেতরে ডুকে গেলো।জিসানকে দেখে তিশাও লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো ভয়ে।এখনি মনে হয় ওর,ছোট হার্টটা স্টোক করবে।
'জিসানকে দেখে শামসুর রহমানও কিছুটা অবাক হলো।কিন্তু কিছু বললো না।কারণ উনি জিসানের সামনে কিছুই বলতে পারেনা।তাইতো জিসানও যথেস্ট সম্মান করে শামসুর রহমানকে।কিন্তু রহমান সাহেব আন্দাজ করতে পারছে কি হবে এখানে,বিনা কারণে তো জিসান আসেনি।নিশ্চয় যেনেই এসেছে।'
--জিসান সবাইকে সালাম করে সোফায় বসে পড়লো।চোখ দিয়ে তিশাকে ইশারা করলো,তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেনো।বসার জন্য ইনভাইটেশন দিতে হবে।
"-তিশা মাথা নেড়ে না বলে,বসতে গিয়েও বসে না।একটু সরে মায়ের পাশে গিয়ে বসে।"
---শেফা রেণুবেগম কে ইশারা করলো ছেলেটা কে।রেনুবেগম দাঁত কেলিয়ে হাসি দিয়ে, শেফা বু ও হলো জিসান।রায়হানের ফ্রেন্ড আর..... বলে রহমান সাহেবের দিকে তাকালো।ভাবছে বলবে কিনা।
"জিসান রেণু বেগমের থেকে চোখ সরিয়ে রায়হানের দিকে তাকালো।জিসানের এই চাওনির মানে রায়হান খুব ভালো করেই জানে,তাই সব উপেক্ষা করে নিজেই বলে দিলো।ফুফু ও জিসান আমার ফ্রেন্ড আর তিশার হাসবেন্ড। রায়হানের কথায় সবথেকে বেশি আহত হলো নিবিড়।নিবিড় এখনো রায়হানের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো ব্যাপারটা জানতে।"
---ম মানে,মানে কি!ভাইজান তিশার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
"শামসুর রহমান মাথা নিচু করে হা বললো।"
___কবে?আর এতো তারাতারি মেয়ের বিয়ে দেওয়ার কি ছিলো ভাই।
"তখন পরিস্থিতি অন্যছিলো ফুফু,সেটা এখন বলে লাভ নেই।সবথেকে বড় কথা হচ্ছে জিসান তিশার হাসবেন্ড।"
___আমার কিছুটা মনে আছে,এটা ঐ ছেলেটা না,রায়হানের সাথে সাথেই থাকতো।একসাথে স্কুলে যাওয়া আসা করতো।আর একদিন নিবিড় তিশাকে নিয়ে খেলা করছিলো বলে,নিবিড়কে মারতে এসেছিলো।
"হুম,ফুফু,তুমি ঠিকই ভাবছো।"(রায়হান)
___কিন্তু রায়হান একটু রং বলছে ফুফু ।নিবিড়কে সেদিন তিশার সাথে খেলার জন্য না,ওকে ধমক দেওয়ার জন্য মারতে চেয়েছিলাম।কি হলো নিবিড় কিছু বলছো না কেনো,নাকি মনে নেই।জিসান একটু বাকা হেসে।
"নিবিড় কিছুই বললো না।উঠে চলে গেলো সেখান থেকে।"
___শামসুর রহমানও শেফাকে খুলে বলল সব।সবশুনে শেফা বেগম বলে উঠলো,এতো বাল্য বিবাহ।এই বিয়ের কোনও মূল্য নেই,আইনের নজরে।আর এছাড়া তিশা তখন ছোট ছিলো,ভালোমন্দ কিছুই বুঝতো না।তোমরা জোড় করে বিয়ে দিয়ে মেয়েটার জীবন নষ্ট করে দিয়েছো ভাই।
"আইনগত না হলেও ধর্মীয় মতে আমরা হাসবেন্ড ওয়াইফ ফুফু।আর এ সত্য কেউ চেন্জ করতে পারবে না।এছাড়া খুব শীঘ্রই আমাদের বিয়ে আবার সবার সামনে হবে,আর এবার আইনত ও ধর্মীও দুভাবেই, সো ডোন্ট ওয়ারি।
আর বললেন না,তিশার মর্জি ছিলো না।
জিসান বসা থেকে উঠে তিশার দিকে হাতটা বাড়ালে,তিশাও বিনা সংকোচে হাতটা ধরে ফেলে।আপনার উত্তর হয়তো পেয়ে গিয়েছেন ফুফু।জিসান তিশাকে নিয়ে ওখান থেকে চলে যায়।
আর শেফালি তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।"
||
||
"আহমেদ ভিলা।আজ আবার অনেকদিন পর থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। জিসানের ঠিক সামনে ওর বাবা মা বসে আছে।অপর পাশের সোফায় তাওহিদ, তানজিলা বসে আছে।আর ওদের ঠিক পেছনে নিশি দাঁড়িয়ে আছে।তৌফিক সাহেব ও রাবেয়া বেগম দুজনের মুখে বিষণ্ণতা ও চিন্তা বিরাজ করছে।কিন্তু কারো মুখে কোনও কথা নেই।নিরবতা ভেঙ্গে জিসানই জিঙ্গেস করলো।"
---কি সত্য বাবা।বাবা প্লিজ টেইল মি,আই ডোন্ট টলেরেট ইট।কি এমন সত্য যা আমি জানি না।প্লিজ টেইল মি।আর আজ আমি কোনও এক্সকিউজ শুনতে চাই না।রাবেয়া বেগম তৌফিক সাহেবের হাতটা ধরে করুন চোখে তাকালো।এই চোখের অসহায় মায়ের অকুলতা তৌফিক সাহেব খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।
"জিসান ও তৌফিক সাহেব সেই রুমটার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে।যেটা এতো বছর বন্ধ রাখা হয়েছিলো।আর তৌফিক সাহেব বাদে সবার প্রবেশ নিশেধ ছিলো।বছরে একদিন তিনি নিয়মমাফিক এই রুমটি খুলতেন।তা হলো দেওয়ালে টাঙ্গানো ছবিটির মানুষটির মৃত্যু বার্ষিকীতে।
জিসান মুগ্ধ হয়ে ছবিটির দিকে তাকিয়ে আছে।একজন মহিলার ছবি।কিন্তু মুখে প্রচণ্ড তেজ আর লাবণ্যময় বিরাজ করছে।কেনো জানি জিসানের খুব পরিচিত মনে হলো।তৎক্ষণাৎ জিসান তৌফিক সাহেব কে প্রশ্ন করলো,মহিলাটি কে?"
---ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে ভাঙ্গা গলায়,উনি তোমার মা জিসান।জিসান তৌফিক সাহেবের কথা বুঝে উঠতে পারলো না।
"মা মানে!"
---ছেলের কাধে হাত রেখে আবারও অস্পোর্ট বলে দিলো।ইনি তোমার আসল মা।
"কিসব বলছো,বাবা।আর ইউ মেড।আমার মা নিচে বসে আছে।এটা সত্য হতে পারেনা।"
---এটাই সত্য জিসান।দেওয়ালে টাঙ্গানো এই ছবিটি তোমার আসল মা আয়েশা আহমেদ। আমার প্রথম ওয়াইফ, আমার প্রথম ভালোবাসা।তুমি আমার আর আয়েশার সন্তান জিসান।এটাই সত্যি।
"-জিসান সত্যটা হজম করতে পারলো না।হঠাৎ নিচে বসে পড়লো।"
'-তৌফিক সাহেবও ছেলের সাথে নিচে বসে বলা শুরু করলো।তোমার দাদার বন্ধুর মেয়ে ছিলো আয়েশা।খুব স্নেহ করতো আয়েশাকে।আমি পড়ালেখা শেষ করে দেশে ফিরে আসলে আয়েশার সাথে আমার বিবাহ হয়।চৌধুরী বাড়ীর মেয়ে ছিলো তোমার মা।রুপে গুণে আল্লাহ কোনও দিক দিয়ে কম দেয়নি।কিন্তু বলে না,কোনও মানুষ পার্ফেক্ট না দুনিয়াতে।তোমার মার বেলাও এমন হলো।ভালোই ছিলাম তোমার মাকে নিয়ে।কিন্তু বিয়ের পাঁচ বছর পরও অনেক চিকিৎসা করার পরও যখন আমাদের কোনও সন্তান হচ্ছিলো না।তখন তোমার মা দিনদিন ডিপ্রেশন এ ভুগতে লাগলো।'
___বংশের একমাত্র ছেলে ছিলাম বলে,আমার পরে আমাদের বংশের কি হবে এ নিয়ে তোমার দাদাও টেনশনে দিন কাটাতো।একদিন তোমার দাদা আমাকে দ্বিতীয় বিয়ের জন্য চাপ দিতে লাগলো।আমি রাজি হচ্ছি না দেখে,তোমার মায়ের কাছে নিজের বংশ বাঁচাবার ভার দিয়ে আমাকে বিয়ের জন্য বলতে লাগলো।তোমার মাও একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের কন্যা ছিলেন।বংশ মর্যাদা, বংশের চিরাগ এসব খুব মানতেন।অবশেষে তোমার মায়ের আর দাদার চাপে পরে রাবেয়াকে বিয়ে করতে রাজী হয়ে গেলাম।
"-একবছরের মধ্যেই রাবেয়ার কোলজুড়ে তাওহিদ এলো।কিন্ত এই দুজন মহিলা আমাকে সব সময় অবাক করতো জানিস।তাওহিদ কে নিজের হাতে আয়েশার হাতে তুলে দিয়ে বললো,আজ থেকে ওর মা শুধু আয়েশা।আয়েশাকে সেদিন আমি অনেক খুশি দেখেছি।ছোট তাওহিদ কে কোলে নিয়ে খুশিতে বাচ্চাদের মতো কাঁদতেও দেখেছি।
জানিস,খুব অদ্ভুত তাদের সম্পর্ক ছিলো।আমার সাথে রাবেয়ার বিয়ের কারণে,তোমার নানার বাড়ীর মানুষ খুব রেগে ছিলো।তোমার মা আয়েশার সাথেও কোনও সম্পর্ক রাখলো না তারা।তোমার মা এতে আরো ভেঙ্গে পড়লো।কারণ তোমার নানাকে খুব ভালোবাসতো আয়েশা।"
---কয়েক বছর পর আবার একটা খুশির সংবাদ এলো আহমেদ ভিলায়।বাড়ীতে আরো একজন নতুন অতিথি আসার।তবে এবার রাবেয়া না,আয়েশা মা হতে চলছে।পুরো আহমেদ ভিলা যেনো আনন্দে আত্মহারা,সবথেকে খুশি তোমার দাদা ছিলো।বাড়ীর সবাই তোমার মায়ের সেবায় কোনও ত্রুটি রাখেনি।এমনকি রাবেয়া তো তোমার মায়ের ছায়া হয়ে থাকতো।কিন্তু এতো কিছু করার পরও দিন দিন তোমার মায়ের শরীরটা খারাপের দিকে যাচ্ছিলো।কিছুই বুঝতে পারছিলাম না সমস্যা কি।
"এরপর সেই সময় এলো,তুই ভূমিষ্ঠ হলি,আর আয়েশার অবস্থা আরো খারাপ হতে লাগলো।ভাগ্যের কি লিলা,তোকে নিজের হাতে রাবেয়ার হাতে তুলে দিলো আয়েশা।সারা জীবন তোর মা হয়ে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি নিলো।আমাকে ডেকে শুধু বললো,তোর খেয়াল রাখতে,তকে যাতে কোনও দিন বুঝতে না দেই,তোর মা নেই।এরপর আমার এই হাতেই মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলো আয়েশা।তৌফিক সাহেবের গলা ভার হয়ে চোখ দিয়ে জল পরতে লাগলো।"
___আর জিসান সেতো এখনও মূর্তির মতো বসে আছে।কিছুই চিন্তা করার মতো অবস্থায় নেই।
"তৌফিক সাহেব চোখ মুছে আবার বলতে শুরু করে।সেদিন ডাক্তারের কাছে জানতে পারি।তোর মা নাকি সবই জানতো।ডাক্তার আয়েশাকে বার বার মানা করেছিলো।বাচ্চাটা এবোরশন করে ফেলতে কারণ বাচ্চাটা রাখলে আয়েশা মৃত্যুর মুখে চলে যাবে।কিন্তু আয়েশা এ কথা শুনে সবার থেকে সত্যটা লুকিয়ে রেখেছিলো।ও ভালো করেই জানতো,আমি জানলে ওকে কখনো এই কাজ করতে দিতাম না।কিন্তু আয়েশা মা হতে চেয়েছিলো।তোর মা।তাই ও নিজের কথা চিন্তা করেনি।
আয়েশার কথা রাখার জন্য,তোকে নিয়ে আমরা শহরে চলে আসি।আর এখানেই সেটেল হয়ে যাই।যাতে করে তুই কখনো জানতে না পারিস,রাবেয়া তোর আসল মা না।"
___আয়েশার মৃত্যুরপর তোর নানা বাড়ীর মানুষ অনেকবার যোগাযোগ করতে চেয়েছিলো।কিন্তু আমিই রাগ করে তাদের সাথে দেখা করিনি।কিছুদিন আগে তোর নানা বাড়ী থেকে আবার কিছু লোক আসে, কারণ তোর নানার অবস্থা টা তেমন ভালো যাচ্ছেনা।সে তোকে দেখতে চায়।আর তখনি তাদের কথা দূর্ভাগ্য ক্রমে শামসুর ভাই শুনতে পায় বলে তাকে সব সত্য বলতে হয়।
বাবা...,মা আমাকে জন্ম দিতে গিয়ে মরে গিয়েছে,তাইনা।জিসান মাটির দিকে তাকিয়েই কথাটা বলে।
____না জিসান,আসলে.......বাবাকে আর কোনও কথা বলতে না দিয়ে জিসান চলে গেলো।
চলবে......।
No comments