ভাইয়ের_বন্ধু_যখন_বর😍 --------(season 2) [🖤] Part_28🍁
"বেলকানিতে দাঁড়িয়ে হাতে সিগেরেট ঝালিয়ে, সামনের ভিউয়ের দিকে তাকিয়ে আছে জিসান।চারদিকে তেমন বাড়ীঘর নেই, খোলা মাঠ বিশাল জায়গা জুড়ে সবুজ গাছের সমারোহ।সামনে কিছু দূরে সরু রাস্তা থাকার পরও গাছপালার আড়ালে তা দেখা যায় না এখান থেকে।"
---বাড়ীর চারপাশে সারি সারি গাছ লাগানো।একদম সবুজের সমারোহ।এমন নিরব আর সবুজে ঢাকা পরিবেশ জিসানের খুব পছন্দ। জিসানের ইচ্ছা ছুটির দিনগুলো তিশার সাথে এখানেই একান্ত সময় কাটানোর।হঠাৎ তিশার ডাকে জিসান পেছনে তাকায়।সাদা রং এর থ্রীপিসটিতে কি সুন্দর না লাগছে তিশাকে,যেনো কোনও মায়ার দেশের এক মায়াপরী।
'ফুফুর সামনে রাগ দেখিয়ে জিসান তিশাকে ওর নিজের সেই বাড়ীতে নিয়ে এসেছিলো তখন।'
"আমরা এখানে কেনো এসেছি।"
---তিশার কথায় জিসানের ধ্যান ভাঙ্গে,তাই জিসান হাতের ইশারায় তিশাকে সামনে আসতে বলে কিন্তু তিশা দু'পা পেছনে গিয়ে মাথা নাড়ায় ও আসবে না।জিসান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তিশার দিকে তাকিয়ে,হাতের সিগেরেট টা ফেলে দিয়ে একদম তিশার সামনে এসে কোমড় ধরে নিজের দিকে টেনে আনে।
"সমস্যা কি!"
---গন্ধ! তিশা মুখটা কুঁচকিয়ে বললো।ছিঃ! বিছরি গন্ধ। আপনে ওই ছাইপাঁশ খেয়ে আমার কাছে আসবেন না।ছাড়ুন।
"জিসান তিশাকে আরো কাছে টেনে নিলো।তিশার ঘাড়ে নাক দিয়ে স্লাইড করে গভীরভাবে নিশ্বাস নিয়ে ঘ্রান নিচ্ছে।কি করে ছাড়ি জান,তুই যখন ছিলিনা তখন এটাই একমাত্র উপায় ছিলো যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার।
তোর নেশায় এতোটাই আসক্তি ছিলাম যে,পুরো একপেকেট সিগেরেট এর নেশাও আমায় ধরতো না।এখন এটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছে,ছাড়া এতো সহয না।"
'তবুও আপনাকে ছাড়তে হবে,এটা খুব বাজে অভ্যাস।'
---আদেশ দিচ্ছিস আমায়।তিশার দিকে তাকিয়ে।
"তিশা জিসানের দিকে তাকিয়ে,আমতা আমতা করে বলে,আ আদেশ না, রিকোয়েস্ট করছি।প্লিজ!"
---ওকে,বাট আস্তে আস্তে ছেড়ে দেবো।কিন্তু ছেড়ে দিলে তুই আমাকে কি দিবি।
আ আমি!আমিই কি দিতে পারি।আপনার কাছে তো সব আছে।
"তবুও দেখ আমি আজ কতোটা নিঃস্ব,তোর ভালোবাসার অভাবে।আমাকে অনেক ভালোবাসবি।তাহলে আমি সব ছেড়ে দেবো।বল!
তিশার গালে নিজের খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি দিয়ে ঘষে বলছে।"
--তিশা হালকা ব্যথায় পেয়ে সরে আসতে নিলে।জিসান থেকে নিজেকে সরাতে পারে না।তিশার পুরো মুখে জিসান নাক দিয়ে স্লাইড করছে, আবার জেনো তিশার মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে জিসান।তাই জিসানকে ডিসট্রেক করার জন্য তিশা,বলুন না এখানে কেনো এসেছি আমরা।
"তিশার উদ্দেশ্য বুঝে ফেলে জিসান,তাই কানেকানে ফিসফিসিয়ে বলে,হানিমুন করতে।তিশা বড় বড় চোখ করে জিসানের দিকে তাকিয়ে, ম মমানে এ।"
---তোর জেলার বাবাকে ওয়ার্নিং দেওয়া হয়েছে।আমাদের বিয়ের ডেট ফিক্সড না করা পর্যন্ত তোকে বাসায় জেতে দেবোনা।বিয়ের ডেট যতো তারাতারি ফিক্সড হবে ততো তাদের জন্য ভালো।আর দেরি হলে.....।
"তিশা ভ্রুটা কুঁচকিয়ে আর দেরি হলে কি!"
---কি আর হবে!তুই রিসিপশনে বড় একটা পেট নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবি।আর তোর বাবাকে সবাই ডোবল কংগ্রেচুলেশন করবে।জিসান বলেই হাসতে হাসতে ভেতরে চলে গেলো।তিশা মুখ হা করে জিসানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।প্রথমে বুঝতে না পারলে পরে বুঝতে পেরে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।অসভ্য মানুষ!সবসময় বাজে কথা।
"পুরো দুদিন হয়ে গেলো,তিশা এখনো বাসায় আসেনি।রেগে শামসুর রহমান জিসানকে ফোন করে অনেক কথা বলে।
সমস্যা কি! জিসান বার বার জিঙ্গেস করায়,শামসুর রহমান তৌফিক সাহেবের সাথে কথা বলতে বলে কারণ তৌফিক সাহেব জানে সমস্যা টা কি।"
---সত্যটা কি জানতে বলে জিসানকে,যা তার পরিবার এতোবছর ধরে গোপন করে আসছে।সত্য জানার পর দেখা যাবে ওদের ব্যাপারে কি করা যায়।তাই জিসান সেদিনই তিশাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে নিজের বাড়ীতে চলে যায়।কি সত্য,আর কি সমস্যা জানার জন্য।
||
||
"রায়হান এর মেঝাজ প্রচণ্ড গরম।জীবনে প্রথম নিজের বাবার সাথে আজ খুব রুডলি ব্যবহার করেছে ও।সবকিছু শোনার পর রায়হানে বিশ্বাসই হচ্ছে না।এই কারণে ওর বাবার জিসানকে মানতে সমস্যা হচ্ছিলো।আর কি দরকার ছিলো,জিসানকে এসব বলার।
কিছু সত্য আড়ালে থাকলেই সবার জন্য ভালো।অথচ ওর বাবা মেয়ের সুখের অযথা টেনশনে একথাটাই ভুলে গিয়েছে।
রায়হানের এখন টেনশন হচ্ছে জিসানকে নিয়ে।একটু আগে তাওহিদ ফোন দিয়ে বলেছে,জিসান এখনো বাসায় আসেনি।এতো রাত হয়ে গিয়েছে অথচ ও এখনো বাহিরে ।
---রায়হান ও বের হয়ে গেলো জিসানকে খুঁজতে। খুব ভালো করে জানে এখন জিসানের মনের অবস্থাটা কেমন।অনেক জায়গায় খুঁজে না পেয়ে নিরাশ হয়ে যখন রায়হান বাড়ীর দিকে আসছিলো।তখন একটা ব্রিজের উপর জিসানের গাড়ী দেখতে পায়।রায়হান সামনে গিয়ে দেখে জিসান দাঁড়িয়ে আছে।মাত্র কয়েক ঘন্টায় জিসান কেমন বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে।
রায়হানকে দেখেও জিসান কিছুই বললো না।কিন্তু জিসানের চোখ মুখ দেখেই বুঝতে বাকি নেই জিসানের মনের অবস্থা কেমন এখন।
"রায়হান জীবনে প্রথম জিসানকে এমন অবস্থায় দেখলো।রায়হানের নিজের বুকটা জেনো ফেটে যাচ্ছে।কিন্তু মুখে বলার কিছু নেই,কারণ বন্ধুর এই অবস্থার জন্যও ওর নিজের বাবাই দায়ী।"
'--জিসান মানসিকভাবে কিছুটা ভেঙ্গে পরেছে।ওর ভেতরে কি চলছে রায়হান জানতে চেস্টা করছে।কিন্তু জিসান কেমন জানি চুপ হয়ে গিয়েছে।জিসানের এই নিরবতা রায়হান সহ্য করতে পারছে না।তাই জিসানকে অনেক কস্টে নিজের সাথে নিয়ে গেলো বাসায়।আজ কিছুতেই একা ছাড়া যাবেনা।রায়হান কলিংবেল টিপ দেওয়ার সাথে সাথেই তিশা এসে দরজা খুলে দিলো।জিসানকে এভাবে দেখে তিশার বুকের ভেতরটাও মোচড় দিয়ে উঠলো।
রায়হান ইশারা করলো জিসানকে ভেতরে নিয়ে জেতে।তিশাও জিসানের হাতটা ধরে সোজা নিজের রুমে নিয়ে গেলো।শামসুর রহমান দরজার আড়াল থেকে সবই দেখলো,কিন্ত কিছু বললো না।এখন বলার মতো কোনও মুখ নেই তার।'
"জিসান হাত দুটো হাটুতে ভর করে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।আমার ভেতরটা উনাকে এ অবস্থায় দেখে ফেটে যাচ্ছে।আস্থে আস্থে করে উনার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।
উনি কিছু না বলে আমার হাতটা টান দিয়ে কাছে টেনে কোমড়কে দুহাত দিয়ে জরিয়ে ধরে পেটে মুখ গুজে দিলো।তার চোখের পানি আমাকে জানাচ্ছে তার নিরবে কাঁদার কথা।তার চোখের পানিতে আমার জামার পেটের অংশটি ভিজে যাচ্ছে।আমি কিছুই বললাম না,আসলে কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।আমার একহাত দিয়ে উনার মাথাটা ধরে রাখলাম।আরেক হাত দিয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।আমি চাই উনি কাঁদুক, উনার মনে হয়তো কিছু একটা চলছে।"
---কিছুক্ষণ পর উনি একটু শান্ত হয়ে নিজেই বলা শুরু করলো,তিশা আমার মা আমাকে জন্ম দেওয়ার জন্য হাসিমুখে নিজের মৃত্যু বেছে নিয়েছে।কেনো বলতো!
সে কি বুঝতে পারেনি।কখনো আমি এটা জানলে কিভাবে সহ্য করবো।আমাকে জীবন দিতে গিয়ে মা নিজের জীবন হারালো।কেনো করলো, এমন।কেনো?
আমি এই গিল্ট নিয়ে কিভাবে থাকবো তিশা কিভাবে।আমার সহ্য হচ্ছে না।মায়ের চেহারাটা আমার চোখে বার বার ভেসে আসছে।
আমি কতোটা অভাগা, যে মা আমাকে বাঁচাতে নিজের জীবন ত্যাগ করে দিয়েছে।সে মাকে ভুলে গিয়েছি।মা নিশ্চয়ই আমাকে ক্ষমা করবে না।জিসান আবার ফুফিয়ে কেঁদে উঠলো।আমি কি বলে শান্তনা দেবো ভেবে পাচ্ছি না।আমি শক্ত করে তাকে জরিয়ে ধরলাম।উনার কষ্টে আমার নিজের বুকটা ফেটে যাচ্ছে।
'-কিছুক্ষণ পর একটু শান্ত হলে,
জানেন জিসান, প্রতিদিন হাজারো মা সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায়।তবুও প্রতিটি মেয়ে মন থেকে একবার হলেও মা হতে চায়।মা হওয়ার সুখটা অর্জন করার জন্য,কতো নারী নিজেদের জীবন বিপর্যয় করে কারণ তার কিছু হলেও তার সন্তানতো থাকবে পৃথিবীতে।
এই ভরসায় যে, সে মারা গেলেও তার সন্তানের মাঝে সে বেঁচে থাকবে।কোনও সন্তানেই তার মাকে ভুলতে পারেনা।জীবনের শেষ পর্যায় যখন কোন মানুষ অন্তিম মুহুর্তের অপেক্ষা করে তখন সে ব্যক্তিটিও তার মাকে একবার হলেও স্মরণ করে।
আর এভাবে প্রতিটি মা তার সন্তানের মাঝে বেঁচে থাকে।তাইতো একজন মা তার জীবনের বিনিময় সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখে।আপনার মাও আপনার মাঝে বেঁচে আছে।আর আপনি নিজেকে অভাগা কিভাবে বললেন।আপনি দুজন মাকে পেয়েছেন একজীবনে।একজন আপনাকে জন্মদিয়েছে আর একজন আপনাকে নিজের আঁচলে রেখে লালনপালন করেছে।'
---আমি উনার মুখটা দুহাতের মাঝে ধরে,রাবেয়া মাও তো আপনার মা তাইনা।সে কি আপনাকে কম ভালোবেসেছে কখনো।আপনার এক মা আপনাকে জন্ম দেওয়ার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ দিয়েছে,তো আরেক মা আপনার জন্য নিজের সব কিছু ত্যাগ করেছে।
"আমি যতোটুকু দেখেছি,মা আপনাকে তাওহিদ ভাই ও নিশি থেকেও বেশি ভালোবাসে।তাইতো আপনার এভাবে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়া উনার সহ্য হয়নি।"
তিশার কথা শুনো জিসান জিঙ্গাসা দৃষ্টিতে তিশার দিকে তাকিয়ে আছে।মানে!
__আপনি বের হবার পর মার পেসার একদম লো হয়ে যায়,উনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
'কি?আমাকে আগে বলিসনি কেনো।আমার এখনি জেতে হবে।আমি জানি মা আমার কারণে টেনশনে আছে।
আমি কি পাগল দেখ,মৃতো মাকে স্মরণ করে জীবত মাকে মৃত্যুর দিকে কিভাবে ঢেলে দিলাম।আমার এখনি জেতে হবে বাসায়।তিশা জিসানকে একা ছাড়বে না,তাই তিশা ও রায়হান ও সাথে গেলো।
||
||
"তাওহিদ ও তানজিলা একঘণ্টা যাবৎ চেস্টা করছে রাবেয়া বেগমকে কিছু খাওয়ানোর।কিন্তু উনার এক কথা আগে আমার ছেলেকে এনে দেও, তারপর আমি মুখে কিছু দেবো।তাছাড়া আমি একবিন্দু পানিও খাবোনা।
হঠাৎ কারো শব্দে সবাই পিছনে তাকালো,না খেয়ে তুমিও আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার প্লানিং করছো।জিসানকে দেখে রাবেয়া বেগমের চোখের বাধ জেনো ভেঙ্গে গেলো।জিসানকে ইশারা করলো কাছে আসতে।জিসান মার পাশে বসেই মাকে জরিয়ে ধরলো।
---আম সরি মা।আমাকে ক্ষমা করে দেও,আমি তোমাকে কস্ট দিয়েছি।আমি আসলেই একটা খারাপ ছেলে তাই না,মায়ের হাতটা ধরে।
সারাজীবন তোমাকে জ্বালিয়েছি।এখনো তোমাকে শান্তি দিচ্ছি না।তুমি আমাকে মারো।খুব বকো।আমি কিছু বলবো না,রাগও করবো না আর।দেখো নিজেকে চেন্জ ও করার চেস্টা করবো।
"আর কোনও দিন এসব বললে,আমি সত্যি তোকে ছেড়ে চলে যাবো জিসান।তুইতো আমার ছেলে,আমার সোনার ছেলে।আর কখনো এসব বলবি না।তুই যেমন আছিস সারা জীবন তেমনিই থাকবি।এসবের জন্য তুই নিজেকে যদি একবিন্দু ও চেন্জ করিস,তাহলে মনে করবো,তুই আমাকে মা বলে মনে করিস না।আমার জিসান যেমন আছে তেমনি থাকবে।আমার থেকে নিজেকে আলাদা করার চিন্তা করলে,আমার লাশ কিন্তু দেখবি।"
---মাএএএ,এসব বলো না।মায়ের হাতে চুমু দিয়ে।তুমিই আমার মা,আর আমার মাই থাকবে।নিশি যেমন আগে নালিশ করতো,তুমি নাকি আমাকে ভালোবাসো বেশি।সারাজীবন আমাকেই বেশি ভালোবাসবে।
আমি আগেও ওদেরকে তোমার ভালোবাসর ভাগ দেইনি এখনো দেবো না বলে দিও।
"রাবেয়া বেগমও আবেগে ছেলের কপালে আদর করে দিলো।আয়েশা বু অনেক ভাগ্যবান যে, উনি তোর মতো একটা হীরা জন্মদিয়েছে।আর আমি তোর মতো হীরাকে ছেলেরুপে পেয়ে নিজেকে আরো বেশি ভাগ্যবান মনে করি।
"পরিস্থিতিটা কিছুটা হালকা করতে,নিশি বলে উঠলো--দেখলে তাওহিদ ভাইয়া।মায়ের চোখে জিসান ভাই হীরা, আর আমরা হলাম তামা পিতল।তাওহিদ হেসে বললো,কেনো তোর হিংসা হয়।
___উম,বয়ে গেছে হিংসা করতে।থাকো তোমরা তোমাদের মাকে নিয়ে,আমার কাছে আমার বাবা আছে।আর তাকে তোমাদের কাউকে দেবো না।
জিসান হাসতে হাসতে বলে,যা দিয়ে দিলাম,পুরো তৌফিক আহমেদকে তোকে।কিন্তু আমার মায়ের সামনে তোর ঐ হিরো ভেজা বিড়াল হয়ে যায়।তখন কি করবি।রুমের সবাই হঠাৎ অট্টহাসিতে ফেটে উঠে।
____তিশা ও রায়হান রুমের বাহিরে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে সব দেখছিলো।আসলে তাদের সামনে যাওয়ার সাহস পাচ্ছিলো না।ওর বাবার একটা বোকামির কারণে এই পরিবারটি ধ্বংস হতে হতে বেঁচে গেলো।রায়হান ভয় পাচ্ছে বাবার করা বোকামির মাশুল ওর বোনকে না আবার দিতে হয় এখন।সবাই যদি বিষয়টা ইজিলি না নেয় তখন ।
"ঠিক ঐ সময় তৌফিক সাহেব ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো। রায়হান তিশা তোমরা এখানে,কখন এলে।একচুয়েলি আংকেল আমরা জিসানকে সাথে করে নিয়ে এসেছি।
তাই নাকি,ও এসেছে তাহলে।ধন্যবাদ সান,আমি জানতাম একমাত্র তুমি পারবে ওকে বাসায় আনতে।রায়হানের কাধে হাত রেখে।"
___রায়হান কিছু বলতে চায়,তৌফিক সাহেব তা বুঝতে পারে।তুমি কিছু বলবে রায়হান।
"একচুয়েলি আংকেল বাবার তরফ থেকে আমি সরি বলছি।আসলে আমি বুঝতেই পারছি না,বাবা এমন একটা বোকামি কিভাবে করলো।সামান্য বিষয়টা নিয়ে এতো মাতামাতির করার।প্লিজ আংকেল আপনি মনে কিছু রাখবেন না।আমি জানি বাবাও হয়তো কিছুটা অনুতপ্ত। উনিও খুব শীঘ্রই সরি বলবে।
____ইটস ওকে রায়হান,উনি একজন পিতা।তিশার কথা চিন্তা করা তার দায়িত্ব। তার ভেতরে একটা ভয় ডুকে গিয়েছিলো।যা থেকে সে নিজেকে সরাতে পারছিলো না।সেদিন আমিও তাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছি।কিন্তু সে ছোট বাচ্চাদের মতো জিদ করে কিছুই বুঝতে চাইছিলো না।তাই আমিও আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিলাম।আর তোমাকে গিল্টফিল করার প্রয়োজন নেই।এটা একদিন না একদিন জিসানের জানারি ছিলো।আমরা শুধু ভয়ে ছিলাম ব্যাপারটা জিসান কিভাবে নিবে।কিন্তু সব কিছু এতো ইজিলি হবে ভাবতে পারিনি।আর চিন্তা করো না।তোমার বাবাও বুঝে যাবে।
"রায়হান ও তৌফিক সাহেবের সব কথা শুনছিলো,জিসান ও রাবেয়া বেগম রুম থেকে এতোক্ষন।তাই রাবেয়া রুম থেকে বের হয়ে রায়হানকে উদ্দেশ্য করে বলে,রায়হান তুমি টেনশন নিও না,উনি একজন বাবা,আর সব বাবা মায়েই চায় সন্তান সুখে থাকুক।আসলে উনার মনে একটা ভয় ডুকে গিয়েছে,তুমি হয়তো জানো না,শামসুর ভাইয়ের কোন বন্ধু জানি মারা যাওয়ার পর তার প্রথম স্ত্রীর সন্তান আর তার ছেলের বউকে নাকি সৎ ভাই বোনেরা মিলে বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছে।অথচ উনার বন্ধু জীবিত থাকাকালীন নাকি সবাই মিলেমিশেই থাকতো।এসব দেখে তোমার বাবার মনেও একটা ভয় ডুকে গেছে।আর এটাই স্বাভাবিক।তার জায়গায় আমরা হলে,এমন পরিবারের কাছে মেয়ে তুলে দিতে একটু হলেও ভয় পেতাম।তাই তোমরা ছোটরা এসব বিষয় নিয়ে কোনও কথা উনার সাথে বলবে না।আমরা বড়রাই দেখে নিবো।ঠিক আছে।রায়হান খুবই অবাক হলো,তাদের এমন আচরনে।বিষয়টা কতোটা ইজিলি করে দিলো তারা।"
||
||
"শামসুর রহমানের সামনে বসে আছে,রাবেয়া বেগন,তাওহিদ, তানজিলা আর নিশি।শামসুর রহমান বুঝে উঠতে পারছে না এতো সকাল সকাল তারা কেনো এসেছে।কালকের ঘটনার পর রাবেয়া বেগমের দিকে তাকাতেই পারছে না শামসুর রহমান।
তাই নিরবতা ভেঙ্গে রাবেয়া বেগমই বললো,কি হলো ভাইজান বলুন।আমাকে দেখে কি আপনার দজ্জাল শ্বাশুরী মনে হয়।শামসুর রহমান ভেবাচেকা হয়ে রাবেয়া বেগমের দিকে তাকায়।এমন প্রশ্নের জন্যও হয়তো রেডি ছিলো না।
--তানজিলা ও বলে উঠলো আংকেল আমাকে দেখলে কি আপনার এমন মনে হয় আমি খারাপ জাল হবো।
"আর আমিও তো আছি ভাবি। আংকেল আমাকেও দজ্জাল ননদ ভাবে,যে বসে বসে ভাইয়ের কান ভরবে,বউকে মারার জন্য।তাইনা আংকেল।"
--এদের কথা শুনে রেনু বেগম ও রায়হান মুচকি মুচকি হাসছে।কিন্তু শামসুর রহমান অবাক।এসব কিছু এই পরিবারের সমন্ধে কখনো উনি চিন্তাই করেনি।
____কি বলছেন আপা,আমি কখনো আপনাদের সম্পর্কে এসব চিন্তাও করেনি।তিশার মতো তানজিলা, নিশিও আমার মেয়ের মতোই।আমি জানি আমার মেয়েরা কেমন।
"তাহলে সমস্যা কি ভাই জান।আমি জানি,আমি হয়তো জিসানকে জন্ম দিই নাই বলে,আপনি ভাবছেন জিসানকে আমি কম ভালোবাসি।কিন্তু ভাইজান শুধু জন্ম দিলেই কি মা হওয়া যায়।আমি এই হাতে ওকে বড় করেছি।নিজের সম্পূর্ণ ভালোবাসা দিয়ে ওকে আগলে রেখেছি।কখনো কি মনে হয়েছে আমি ওর সাথে সৎ আচরণ করেছি,বলুন।আমার নিজ সন্তান থেকেও বেশি ভালোবাসি আমি ওকে।এটা আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না।আপনার ভয় আমি বুঝি,কিন্তু সবাইকে এক পাল্লায় মাপলেতো হবে না।আপনার বন্ধুর ছেলের সাথে হয়েছে বলে,আপনি তার জন্য আমার ছেলেকে কষ্ট দিতে পারেন না।আমি এটা একদম সহ্য করবো না।ভালো করে বলছি ভাইজান,আমার বউ মাকে আমার ছেলের হাতে তুলে দেন,তানা হলে ছেলেকে বলবো তুলে নিয়ে যেতে।আর এবার আপনারা না,আমি নিজেই আমার ছেলেকে আর বউকে প্যারিসে পাঠিয়ে দেবো একেবারের জন্য।আমার ছেলেটার জীবন আপনি আর আমার স্বামী মিলে তেজপাতা বানিয়ে ফেলেছেন।এতোদিন আমি যেমন আমার ছেলে ছাড়া ছিলাম,এখন
দেখবোনি মেয়ে ছাড়া থাকেন কিভাবে আপনি।"
____শামসুর রহমান তো পুরোই শোকড।ছেলের হুমকি কি কম ছিলো, এখন মাও হুমকি দিচ্ছি।শামসুর রহমান হেসে বলে,আপা কোনও সন্দেহ নেই,জিসান আপনারি ছেলে।যেমন মা,তেমনি আপনার ছেলে।ড্রয়িংরুম এর সবাই অট্টহাসিতে ফেটে উঠলো।অবশেষে তিশার বাবার মনের ভয়টা দূর হলো।
[শামসুর রহমানের দৃষ্টতে,আজকাল আপনভাই বোনরাই পরের মতো ব্যবহার করে।রক্তের বন্ধন ছিন্ন করতে ভাবে না।সেখানে জিসানতো রাবেয়া বেগমের সৎ ছেলে।তাহলে তানজিলার মতো কি সে আদর আর ভালোবাসা পাবে তিশা।আর জিসান সেতো জানেই না কিছু,তাহলে তার উপর কোনও অন্যায় হলে হয়তো সে বুঝতেও পারবে না।আজ তৌফিক সাহেব বেঁচে আছে, কিন্তু কাল যখন উনি থাকবে না তখন ও কি এরা এমন থাকবে।আমাদের সমাজে ঘরে ঘরে এমন অনেক কিছু দেখা যায়।তাইতো তিশাকে তুলে জিসানের হাতে দিতে তার মন মানছিলো না ।]
--সবাই মিলে এবার ডিসাইড করলো,এই শুক্রবারে বসে ওদের চারহাত এক করে দেওয়ার ব্যবস্তা করবে।আর এসবের কিছুই এখনো জিসান আর তিশার কানে যায়নি।নিশিকেও মানা করে বলতে।ওদের সারপ্রাইজ দেওয়া হবে বলে।
"আজ শুক্র বার।জিসান তিশার পরিবারকে নিজের বাসায় দেখে খুবই অবাক হলো।তার থেকে বেশি সারপ্রাইজ হলো যখন জানলো ওদের বিয়ের ডেট ফিক্সড করার জন্যই সবার একত্রিত হওয়া।তবে এসবের মাঝে তিশা ছিলো না।তিশা এখনো কিছু জানে না।তাই জিসানও সবাইকে মানা করলো তিশাকে বলতে।কারণ তিশাকে সারপ্রাইজ দেওয়া হবে।"
চলবে....।
সবাইকে জিসান ও তিশার বিয়ের দাওয়াত রইলো
No comments