ভাইয়ের_বন্ধ_যখন_বর😍 --------(season 2) [🖤] part_32🍁
"সকাল সকাল আড়মোড়া দিয়ে তিশা ঘুম থেকে উঠে।মাথাটা ভীষন পেইন করছে।ছোট ছোট চোখ দিয়ে রুমের চারপাশ টা দেখে নিলো,জিসান নেই।বাথরুমে পানির শব্দ পেয়ে বুঝতে পারলো হয়তো বাথরুমে।তিশা উঠতে গিয়ে বুঝলো ওর শরীরে কম্বলটা ছাড়া আর কিছুই নেই।কম্বলটা তিশা আরো ভালো করে টেনে নিয়ে চিন্তা করতে লাগলো,কাল রাতে কি হয়েছে।আর ওর এ অবস্থা কেনো।কালতো পার্টিতে ছিলাম এখানে কিভাবে আসলাম।চিন্তায় মাথাটা আরো পেইন করতে লাগলো।"
___দরজার শব্দে তিশা তাকিয়ে দেখে জিসান মাত্রই শাওয়ার নিয়ে তোয়াল পরেই বের হয়েছে।চুলটা দিয়ে এখনো পানি পরছে,হাতে রাখা তোয়াল দিয়ে মাথাটা মুছতে মুছতে তিশাকে বলে,গুড মর্নিং জান।
অবশেষে ঘুম ভাঙ্গলো আপনার।জিসান ড্রেসিং টেবিলের আয়না দিয়ে দেখতে পায়,তিশা কেমন অদ্ভুট ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।মনে হয় মঙ্গল গ্রহ থেকে কোনও এলিয়ান এসেছে।জিসান তোয়ালটা সোফায় ফেলে,কি হলো আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো।রাতের নেশা এখনো কাটেনি মনে হয়।
"এই আপনাকে কোন বিলাই এভাবে খামচিয়েছে।আর আমার কাপড়গুলো কোন চরে চুড়ি করেছে বলেনতো।আর আমি এখানে কিভাবে।আমিতো পার্টিতে ছিলাম।
-জিসান হাসতে হাসতে তিশার কোলে শুয়ে পড়লো। ম্যাডাম আমিতো আপনাকে খোরগোশ মনে করেছিলাম,কিন্তু কাল রাতে আপনে যে ট্রেইলার দেখিয়েছেন,তাতে আপনি প্রমাণ করলেন আপনি খোরগোশ না,জংলী বিলাই।দেখেন দেখেন আমার পিঠ এখনো চিৎকার করে সাক্ষী দিচ্ছে।তিশা জিসানের পিঠের দিকে তাকিয়ে আছে।এরপর তরিৎগতিতে বলে উঠলো,মিথ্যা বলছেন আমি এসব মোটেও করিনি।"
___আচ্ছা, আমি জানতাম,আপনি এসবই বলবেন।জিসান সাইড টেবিল থেকে লেপটপটা নিয়ে তিশাকে কিছু ভিডিও দেখালো।যেখানে তিশা নিজেই নিজের কাপড় খুলে ফেলছে।এর পর তিশা আর দেখতে পারলো না।কম্বলটা দিয়ে মুখ ডেকে আবার শুয়ে পড়লো।লজ্জায় আর জিসানের দিকে তাকাতে পারছে না।ছিঃআমি এসব করছি।
-জিসান কোম্বল সহ তিশাকে জরিয়ে ধরে,জান কাল তো আপনি আমাকে জান্নাতের সফর করিয়ে এনেছেন।আগে জানলে আপনাকে বাশর রাতেই একটু হুইসকি খাইয়ে দিতাম।
ছিঃ কি সব বলছেন।আমি ওসব ছাইপাঁশ খাইনা।কম্বলের নিচ থেকে মাথাটা বের করে।আমি কালও এসব খাইনি।আমিতো জাস্ট কোক খেয়েছি। তাহলে!
___উম,কোকে হয়তো কেউ ফাইজলামি করে কিছু মিলিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু কে করবে।
___জানি না,সিউর না।তবে ডোন্ট ওয়ারি।আমি খবর নেবো নি।তুই উঠ নাস্তা করেই আমাদের বের হতে হবে।অনেক জায়গা আছে এখানে দেখার মতো,আর আমাদের সময় কম।
"ঘুড়ার কথা শুনে তিশাও তারাতারি উঠে পড়লো।এরপর দুজন রেডি হয়ে,নিচের রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে নাস্তা করে বের হলো প্যারিস শহর দেখতে।"
___এরি মধ্যে নিলয় একবার ফোন দিলো
জিসানকে,তিশার অবস্থা এখন কেমন জানতে।কারন তিশা কাল পার্টিতে পুরো নেশায় আবোল তাবোল বকছিলো।সবচেয়ে বেশি বকেছে লাবনিকে।
লাবনি তিশার এমন বিহেভ দেখে নিজের মাথাটা নিজেরি ফাটিয়ে দিতে মন চেয়েছিলো।কারন তিশার সোপ্ট ড্রিংকস এ লাবনিই নেশা টাইপের কিছু মিলিয়ে দিয়েছিলো,জাতে তিশা পার্টিতে সিনক্রিয়েট করে আর জিসান সবার সামনে লজ্জিত হয়।
কিন্তু হলো উল্টা তিশা নেশা করে সব জাল উঠালো লাবনিকে দিয়ে।তিশার জালায় লাবনি নিজেই পার্টি ছেড়ে পালিয়েছে।আর জিসান তিশার এই নেশাগ্রস্থ রুপটাকে অনেক এনজয় করলো।তবে ব্যাচারাকে নিলয়ের সামনে একটু লজ্জাও পেতে হয়েছে।কারন তিশা গাড়ীতে বসে জিসানকে বার বার এই গালে ওই গালে কিস করছিলো।গাড়ীর লুকিং গ্লাশ দিয়ে নিলয় তিশার কান্ডে দেখে শুধু মিটমিটিয়ে হাসছিলো।
"ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস। প্রায় ৭কোটির জনসংখ্যা অধ্যয়ষয়িত ফ্রান্সের রাজধানীতে ২২লাখ লোকের বসবাস।তবে এতো জনসংখ্যার মাঝেও প্যারিস শহরটা চমৎকার। মনে হয় ছবির মতো সব।প্যারিসের লোক আইন শৃঙ্খলা নিয়মনীতি খুব মানে।শহরে ঘুড়ে যতোটা বুঝলাম এই শহরের রাস্তায় হোটেল,রেস্টুরেন্ট, নাইটবার,ক্লাবে ভরপুর।আর এ শহরের মানুষ ঘরে থেকে বাহিরে থাকা বেশি পছন্দ করে আর তাই এরা রেস্টুরেন্ট এ খাওয়াও পছন্দ করে।"
||
||
"জিসান আর আমি প্যারিসের গলিগুলোতে হেটেই যাচ্ছি।কারন জিসানের এখানকার সব অলিগলি গুলো খুব চেনা।তবে নতুন আসলে হাতে ম্যাপ নিয়েও একাই ঘুরতে পারা যায়,কোনও সমস্যা হয় না।
একটা বিশেষ জিনিস দেখলাম এই শহরে কফি সোপ,ফুড সোপ,আর শেপস সোপ দিয়ে ভরা।জিসানের মুখে শুনেছিলাম এখানকার মানুষ খাদ্য প্রিয়,তবে ঘরের থেকে বাহিরেই এরা খাওয়াদাওয়া করে বেশি।আর এদের পছন্দের তালিকায় কাচা খাবারই বেশি উল্লেক যোগ্য।যেমন-মাছ মাংস থেকে রক্ত জরা এই টাইপের খাবার।আমার শুনেই বমি আসতে লাগলো।উয়াক!'
___আমরা প্রথমেই গেলাম সিন নদীতে।ঐতিহাসিক এই নদীর উপর দিয়ে প্যারিস নগরীর চতুর্দিকে টুরিস্ট বোর্ড দিয়ে ঘুরতে কি যে মনোমুগ্ধকর লাগছে তা বলে শেষ করা যাবে না।এই সিন নদী অনিন্দসুন্দর প্যারিসকে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে আছে।এই নদীর উপর দিয়ে ৩৭টি ব্রিজ আছে।আর এখন আমরা তালার ব্রিজ এর উপর আছি।
তালার ব্রিজ।কি অদ্ভুত নাম তাই না।এটাও প্যারিসের একটা দর্শনীয় স্থান।কিছু পাগলরা তাদের ভালোবাসার তালা লাগিয়ে, চাবি নদীতে ফেলে দিতো।প্রতিদিন লাগানো হতো তালা,ছোটবড় অসংখ্য তালা।প্রিয়জনকে নিজের কাছে ধরে রাখার তালা।তবে এই তালায় নাকি অতিষ্ঠ এই শহরের কর্তৃপক্ষ, কারণ তালার ভার নাকি সইতে না পেরে ব্রিজের কিছু অংশে ভেঙ্গে পরে।তাই কর্তৃপক্ষ বড় একটা সাইন বোর্ড লাগিয়ে দেন।"ফ্রি ইউর লাভ এন্ড সেভ আওয়ার ব্রিজ"।তাই এখন আর তালা লাগানো হয়না।আমারতো খুব ইচ্ছে ছিলো এখানে একটা তালা লাগানোর।
"এখান থেকে বের হয়ে আমরা কয়েকটা নামকরা মিউজিয়ামও দেখলাম। এই শহরে প্রায় ১৭৩ টি মিউজিয়াম আছে।মিউজিয়াম এর জন্যও এই শহরটি অনেক খ্যাতি অর্জন করেছে।
এদের মধ্যে উল্লেক যোগ্য হলো ল্যুভর মিউজিয়াম। সেখানে সংরক্ষিত আছে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির অমর কীর্তি "মোনালিসা"।
সবথেকে অবাক করার বিষয় হলো এই মিউজিয়াম এর প্রতিটি শিল্পকর্ম দেখতে যদি পাঁচ সেকেন্ড সময় ব্যয় করি তাহলে পুরো মিউজিয়াম দেখতে সময় লাগবে নাকি ১০০দিন।আমি শুনেই হতোভম্ভ।তাই আমাদের পুরো দেখা হলো না।"
___লাঞ্চ টাইম হয়ে গিয়েছে,তাই ভালো কোনও রেস্টুরেন্ট এ ডুকে লাঞ্চটা সেরে নিলাম।এর পর আশে পাশের বেশ কয়েকটি জায়গা ঘুড়ে খুব টায়ার্ড হয়ে হোটেলে ফিরে এলাম।এসেই আমি শাওয়ার করে ডিনার না করেই ঘুমিয়ে পরেছি।জিসানও আজ আর ডাক দেয়নি।কারণ হোটেলে আসার আগেও কিছু হালকা পাতলা নাস্তা করে এসেছিলাম।এভাবে আমরা প্যারিস গেট,বাস্তিল দূর্ঘ,প্যারিসের সবচেয়ে বড় ডিপার্টমেন্ট স্টোল,গ্যালারি লাফায়াত,পার্লামেন্ট হাউজ,কনকর্ড টাওয়ার এ কয়েকদিনে দেখেছি।এখন নাকি বাকি আছে প্যারিসের সবচেয়ে আকর্ষণী নিদির্ষন আইফেল টাওয়ার।
"-আস্তে আস্তে আমাদের দিনও শেষ হয়ে যাচ্ছে প্যারিসে। জিসানের সাথে কাটানো এই দিনগুলো সত্যিই স্মরণীয় হয়ে থাকবে আমার।আজ একটু তারাতারিই আমরা হোটেলে ফিরেছি।কাল যাবো আমরা আইফেল টাওয়ার দেখতে।
বেলকানিতে দাঁড়িয়ে প্যারিসের হালকা ঠাণ্ডা বাতাসটা কেমন গায়ে শিরশির করে উঠে।একটা পাতলা চাদর এনে আমাকে নিজের সাথে জরিয়ে নেয় জিসান।"
___ঠাণ্ডা লাগছে না,এভাবে দাঁড়িয়ে কেনো ছিলি।
"আচ্ছা এই শহরটাতো অনেক সুন্দর। তাহলে একে ছেড়ে চলে এলেন কেনো।শুনেছি প্যারিস আসার সৌভাগ্য সবার হয়না,সেদিক দিয়ে আপনি তো লাকি ছিলেন।এখানেই স্যাটেল হতে পারতেন।আর এখানকার মেয়েদের দেখছেন কতো সুন্দর সুন্দর। এদের মধ্যে কাউকে পছন্দ হয়নি কখনো।"
___জিসান কিছুক্ষণ তিশার দিকে তাকিয়ে থাকলো।তার পর তিশাকে ঘুড়িয়ে কোমরটা ধরে তিশার কাধে নিজের থুতনি রেখে উল্টো জিঙ্গেস করলো,তোর পছন্দের হিরো এসে তোকে যদি বলে,এখন আমাকে ছেড়ে দিতে তুই ছেড়ে দিবি।বা কেউ আমাকে ছেড়ে দেওয়ার বিনিময় তোকে এই শহরে থাকার সব ব্যবস্থা করে দেয়,তাহলে বা কি আমাকে ছেড়ে দিবি।
"তিশা জিসানের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে না বলে।"
___কেনো,কেনো পারবি না।
"কারন আপনাকে আমি ভালোবাসি,ওই হিরো ফিরোকে না।আর আপনার সাথে আমি মরুভূমিতে থেকে যে সুখ পাবো,তা এই শহর আমাকে দিতে পারবে না।"
___জিসান তিশার কাধে একটা কিস করে।এবার বুঝলি কেনো আমারও এই শহরে থাকার একদম মন চায়নি।সব ছিলো কিন্তু তুই ছিলি না।আর তোকে ছাড়া এসব কিছুই আমার কাছে বিষাদ মনে হতো
"আমি আপনাকে অনেক কস্ট দিয়েছি তাইনা।সরি!তিশা নিজের একটা কান ধরে।আর দেবো না।"
'-জিসান তিশাকে নিজের বুকের সাথে জরিয়ে,তখন আমার ভালোবাসাটা প্রখর ছিলো,কিন্তু তোর বয়সটা কম।আমার রাগটাকে ভয় পেয়ে আমার থেকে সরে থাকতি।কিন্তু কেউ একজন আমাকে বলেছে,ভালোবাসাকে ভালোবাসা দিয়েই জয় করতে হয়,সেখানে রাগ,অভিমানের কোনও জায়গা নেই।তাইতো তোকে ভালোবাসা দিয়েই আপন করে নিলাম।'
___আজ আমরা আইফেল টাওয়ার দেখতে এলাম।বিশ্বমেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে ১৮৮৯ সালে গুস্তাফি আইফেল এটি নির্মাণ করে।এটা নিয়ে একটা মজার ঘটনা জিসান আমাকে বলেছিলো।
২০০৭ সালে এক নাড়ী তার বিবাহিত জীবনে আশান্তির কারণে সংসার ত্যাগ করে আইফেল টাওয়ার কে বিবাহ করে।আর আইফেল টাওয়ারের নাম অনুযায়ী নিজের নামও চেন্জ করে রাখেন Erik la Tower Eiffel... কি অদ্ভুত মানুষের কাজকর্ম।টাওয়ারকে বিবাহ করার এতো কি দরকার ছিলো।
আমরা চলে এলাম আইফেল টাওয়ারে।এটি নাকি ১৮হাজার ৩৮টি লোহার টুকরো দিয়ে তৈরি হয়েছে। বেশির ভাগ নবদম্পতিকে আইফেল টাওয়ারে দেখতে পাওয়া যায়।আর এখানে ১২ মাস কোনও না কোনও ছবির শুটিং চলতেই থাকে।পুরো প্যারিস শহরকে দেখতে চাইলে আইফেল টাওয়ারে উঠা চাই।একথাটা একদম সত্য ইউরোপের দর্শনীয় শহরগুলোর মধ্যে প্যারিস শহর অন্যতম।আর এই আইফেল টাওয়ার মধ্যযুগে সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে একটি ছিলো।খুব চমৎকার একটা সময় কাটালাম আমরা এখানে দুজন।
||
||
"বিয়ের অনুষ্ঠান এর পর থেকে নিশি একটিবারও রায়হান কে দেখেনি।আগে তো তিশার বাহানায় দিনে একবার হলেও দেখা হতো,কিন্তু আজকাল তো কোনও সপ্তাহে মাঝে মাঝে দেখাও হয়না।আজকাল নিশিকে রায়হানের এই দূরত্ব টা অনেক বেশি পুরায়।
নিশি বাচ্চা নয়,যথেষ্ট বুঝার বয়স হয়েছে।তার ধারণা রায়হানও ওকে পছন্দ করে কিন্তু মুখে শিকার করছে না।নিশি বুঝতে পারছে না,কেনো।নিশির হাতে তিশা ও জিসানের বিয়ের পিকের মাঝে ওর আর রায়হানেরও জুটিতে বেশ কয়েকটা পিক আছে।নিশি সেই ছবিগুলো সবার নযর থেকে আড়ালে সরিয়ে ফেলেছে বিয়ের এলবাম থেকে।আর রায়হানের ছবির দিকে তাকিয়েই নিশি এখন এসব ভাবছে।"
___তিশার মা রেনু বেগম বসে নিজের বড় বোন রিনার সাথে কথা বলছে।তাদের এখন ভাবার বিষয় হলো,রায়হান।সাথের বন্ধুবান্ধব সবার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে,তাহলে রায়হান কেনো বাদ যাবে।আর তিশার বিয়ের জন্যই নাকি রায়হান অপেক্ষা করছিলো।কিন্তু এখনতো তিশারও বিয়ে হয়ে গিয়েছে।তো এখন রায়হানের জন্য একটা ভালোমেয়ে দেখতে হবে।
"রেণু বেগমের কথার মাঝে রিনা বলে উঠলো,আচ্ছা রেণু,তোর আমাদের নুপুরকে কেমন লাগে।"
__কেমন লাগে মানে ভালোইতো।
"আমি বলছিলাম কি, দেখ রাগ করিস না।আমি নুপুরের সাথে রায়হানের বিয়ের কথা ভাবছি।তোর যদি আপত্তি না থাকে।"
-আপা আমার কোনও সমস্যা নেই।তোমার ঘরের মেয়ে মানে একই পরিবার আমরা,তবে রায়হানের সাথে কথা না বলে কিছু বলতে পারবো না।
"ঠিক আছে, বলে দেখ আমার মনে হয় রাজি হবে। রাজি না হবার কারনতো দেখি না।"
__রায়হানের অফিসে কাজের চাপটা আজকাল একটু বেড়ে গেছে।বিয়ের কারনে কাজ অনেক পেন্ডিং হয়ে গিয়েছে তাই এসব কাজ আর্জেন্ট সারতে হবে।তা না হলে কোম্পানির লসের মুখ দেখতে হবে।রায়হানকে সাহায্য করার জন্য আজ তৌফিক সাহেবও অফিসে চলে আসছেন।তিনিও খুব ভালো করে জানেন ক্লাইন্টদের সঠিক সময় ডেলিভারি করতে না পারলে,কোম্পানির নাম বদনাম হবে।তৌফিক সাহেবের কেবিনে বসে দুজনেই কাজে মগ্ন।এমন সময় তৌফিক সাহেবের মোবাইলে কল আসে,ফোনটা রিসিভ করে তৌফিক সাহেব হ্যালো নিশি বল মা।
বাবা,তুমি কোথায়।
___আমিতো অফিসে।কেনো।
"আমার কিছু বই লাগবে,আজই।কিন্তু বাসায় কোনও গাড়ী নেই।তুমি ড্রাইভার চাচাকে বল আমাকে বাসা থেকে পিক করতে।আমার নীলক্ষেত যাওয়া প্রয়োজন।"
___কিন্তু তোর ড্রাইভার চাচাতো চলে গিয়েছে। কয়েক ঘন্টার ছুটি নিয়েছে।ডাক্তারের কাছে যাবে বলে।বাসার গাড়ী কি হয়েছে।
"তাওহিদ ভাই নিজের গাড়ী নিয়ে গিয়েছে।জিসান ভাইয়ের গাড়ীতে করে মা আর ভাবি সোপিং এ গিয়েছে।আরেকটা নাকি সার্ভিসিং এ আছে।এখন আমি কি করবো।"
---ওকে আমি দেখছি।
"রায়হান তুমি বরং এগুলো রাখো।বাসায় যাও একটু।না হলে এই মেয়ে একাই বের হয়ে যাবে।জানোই তো আজকাল দেশের পরিস্থিতি ভালো না।মেয়েটাকে একা ছাড়তে মন সায় দেয়না।তুমি বরং ওকে একটু নীলক্ষেত নিয়ে যাও।আমি এদিক দিয়ে সব সামলিয়ে নেবো।নিশির কথা শুনে রায়হানও আর কিছু বললো না।কারন অনেক দিন হলো নিশিকে একটু চোখে দেখে না,তাই এই সুযোগ রায়হান ছাড়তে নারায।চলে গেলো নিশির সাথে দেখা করতে।"
----আইফেল টাওয়ার দেখে জিসান ও তিশা আজ ডিনারের জন্য নিলয়ের বাড়ী এলো।নিলয়ের বাড়ীটা দেখে তিশা কিছুটা অবাক কারন জিসান নিজের জন্য যে বাড়ীটি বানিয়েছে এটার সেম ডিজাইন।নিলয় নিজে এসে তিশা ও জিসানকে রিসিভ করে ভেতরে নিয়ে গেলো।
ওর পরিবারের সাথে পরিচয় করে দিলো।সবার ব্যবহার খুবই অমায়িক।জিসানের কিছু ফ্রেন্ডও জয়েন হলো আমাদের সাথে,কারন আজ রাতই আমাদের শেষ রাত প্যারিসে।কাল আমাদের ফ্লাইট কনফার্ম করা হয়েছে।
"আমাকে একা বসে থাকতে দেখে,নিলয় আমার সাথে জয়েন হলো।তো তিশু প্যারিস কেমন লাগলো।"
---ভাইয়া,আমার নাম তিশা,নট তিশু।
"কিন্তু আমি তিশুই বলবো।তোমার জিসানকে জিঙ্গেস করো আমি তোমাকে তিশু বলেই ডাকি।"
--আপনি আমাকে আগে দেখেছেন।
"হুম।"
---কোথায়।
"জিসানের বেডরুমের দেয়ালে।"
"মানে।"
---মানে,জিসান যখন এখানে থাকতো তখন ওর রুমে তোমার অনেক ছবি ছিলো।এমনকি তোমার লেটেস্ট ছবিও ওর কাছে এসে পড়তো।যখন খুব বেশি মন খারাপ থাকতো তখনি তোমার ছবির দিকেই তাকিয়ে থাকতো।কে জানি কি শান্তি পেতো ও।
ড্রিংকস করেও ও তোমার কথাই বলতো।জানো তিশু আমি জিসানকে কাঁদতেও দেখেছি তোমার জন্য।আমার কাছে এসব ভালোবাসা আবেগ সব ফুলিসনেস মনে হতো।কিন্তু আমি জিসানকে দেখে বুঝেছি ভালোবাসা একটা মিস্টি অনুভুতি।
"তিশা জিসানের দিকে তাকিয়েই নিলয়ের কথাগুলো শুনছিলো।নিজেকে ওর অনেক ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে।
হঠাৎ জিসানের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলয়ের দিকে তাকালো,কারন নিলয় একপলকে তিশার দিকেই তাকিয়ে আছে।যা তিশা নিলয়ের দিকে না তাকিয়েই বুঝতে পারছে।পরিস্থিতি নরমাল করতে তিশা নিলয়কে জিঙ্গেস করলো আপনি ভালোবাসেন কাউকে।"
___নিলয় একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে,হুম বাসিতো।এমন একজনকে যাকে প্রথম দেখাতেই মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত ফিলিং জন্ম হয়েছিলো।তখন সেই ফিলিংসটা সম্পর্কে কোনও ধারনাই ছিলোনা।কিন্তু যখন জেনেছি,আফসোস ছাড়া কিছুই জুটলো না।
"কেনো।"
---কারন আমি জাকে ভালোবাসি,সে আমার কখনো হবে না।সে অন্যকারো সাথী।আমি তার ছায়া হতে পারবো কিন্তু তার পাশে চলতে না।
"আপনে তাকে বলেছেন।"
---বললে কি হবে।
"হয়তো একসেপ্ট করে নিতে পারে।"
---সে বিবাহিত। আর তার হাসবেন্ড তাকে অনেক ভালোবাসে।
"ও, তাহলে ভুলে যান।মনে করেন সে আপনার কপালে নেই।আপনার জন্য আরো ভালো কেউ আছে।"
---তিশার কথায় নিলয় একটু হাসলো।হয়তো!
চলবে.....
No comments