ভাইয়ের_বন্ধু_যখন_বর😍 -------(season 2) [🖤] Part_33🍁
"জিসান ও তিশা আজ বাড়ী ফিরে এসেছে।কাউকে আগে থেকে কিছুই বলেনি,সারপ্রাইজ দিবে বলে।কিন্তু বাসায় এসে ওরাই কিছুটা অবাক।কারন পুরো বাড়ীটা কেমন নিস্তেজ হয়ে পরে আছে।মনে হয় এই বাড়ীতে আধো কেউ থাকতো কিনা সন্দেহ।
জিসান ড্রয়িংরুমে বসেই রাবেয়া বেগমকে নিশিকে সহ সবাইকে ডাকতে লাগলো।রাবেয়া বেগম নিজের ঘরেই ছিলেন।জিসানের গলার শব্দে কিছুটা চমকে জান তিনি।ড্রয়িংরুমে এসে দেখে জিসান ও তিশা সত্যিই এসে পরেছে।রাবেয়ার মলিন মুখটা দেখে জিসান কিছুটা চিন্তিত হয়ে পরলো।"
___কি হয়েছে মা,শরীর ভালো না তোমার।রাবেয়া ছেলের কথা শুনে একটা মলিন হাসি দিয়ে বললো,আমি ঠিক আছি।তোরা হঠাৎ করে এসে পড়লি।একবার ফোন করলি না কেনো।
"আমরাতো তোমাদের সারপ্রাইজ দেবো বলে,না বলে এসেছি।কিন্তু বাসায় এসে মনে হয় আমরাই সারপ্রাইজ হলাম।এতো নিড়ব কেনো।বাড়ীর সবাই কোথায়।"
___আরে,তানজিলা ওর বাবার বাড়ীতে,আর তাওহিদ হসপিটালে।তোর বাবাকেও আজ অফিসে যেতে হলো তাই হয়তো এমন লাগছে।ওসব বাদদে তোরা অনেক জার্নি করে এসেছিস।গিয়ে কিছুক্ষন আগে বিশ্রাম নে।আমি তোদের জন্য খাবার পাঠাচ্ছি।
"তিশা রাবেয়া বেগমের কাছে আসতে নিলে, তিশাকে থামিয়ে আগে রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নেও তিশা।পরে কথা বলা যাবে।"
___তিশার বিষয়টা ভালো না লাগলেও কিছু বললো না।ব্যাপারটা জিসানও খেয়াল করেছে।মা তিশার সাথে কেমন পর পর বিভেব করছে।কিন্তু কিছু না যেনে কিছু বলাটা ঠিক না।তাই জিসান এসব বিষয় মাথা না ঘামিয়ে তিশার হাতটা ধরে রুমে চলে গেলো।
"রাতে সবাই ডিনার করতে একসাথে বসেছে,কিন্তু নিশি নেই।তিশা অবাক হলো,কারন তারা আসছে অনেকক্ষন কিন্তু নিশি এখনো তিশার সাথে বা জিসানের সাথে একটিবারও দেখা করতে আসেনি।স্ট্রেঞ্জ!
এই মেয়ে এতোক্ষন আমাকে পাগল করে ফেলার কথা,আমরা কোথায় কোথায় গিয়েছি।ওর জন্য কি কি এনেছি।কিন্তু আজ ওর কোনও খোঁজ নেই।ডাইনিং টেবিলেও সবার মুখ কেমন বিষণ্ণ দেখা যাচ্ছে।হয়েছি কি ?"
___মা নিশি কোথায়,আসার পর ওকে এখনো দেখতে পেলাম না।ও কোথায়?
"জিসান নিশি রুমে,আর ও রুমেই ডিনার করবে।তোরা করে নে।"
___কিন্তু কেনো।ও কি অসুস্থ মা।দাঁড়াও আমি দেখছি।(জিসান)
'-রাবেয়া বেগম বাধা দিতে চাইলে তৌফিক সাহেব রাবেয়া বেগমকে চুপ থাকতে ইশারা করে।আর এটা তিশার চোখ এড়ায়নি।'
___জিসান নিশির রুমের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে, দেখে পুরো রুমটা অন্ধকার।রুমের লাইট জ্বালিয়ে দেখে নিশি বিছানায় হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে আছে।জিসান কাছে গিয়ে কিছুটা আতকে উঠে।
নিশি একি অবস্থা তোর।এলোমেলো চুল,চোখের নিচেও খানিকটা কালচে পরে গিয়েছে নিশির।
আর তুই এভাবে বসে আছিস কেন।জিসানও পাশে গিয়ে বসে বোনের।
'এতোদিন পর ভাইকে দেখে নিশি নিজেকে সামলাতে পারেনা।ভাইয়ের বুকে মাথা রেখে ডুকরে কেঁদে উঠে।'
-জিসান বুঝতে পারছে না,ওর ছোটবোনটার হঠাৎ এমন কি হলো।ছোটখাটো বিষয় নিয়ে কাঁদার মতো মেয়ে না নিশি।নিশ্চয়ই বড় কিছু ঘটেছে।আর তা জানতে হবে।তবে সবার আগে এখন ওকে শান্ত করতে হবে।
"নিশিকে অনেক কষ্টে জিসান বুঝিয়ে নিচে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে আসলো ডিনারের জন্য।নিশিকে আসতে দেখে তিশা ওর সামনে গেলে,নিশি তিশার পাশ কাটিয়ে জিসানের সাথে বসে পরে।তিশার খুব খারাপ লাগলেও ব্যাপারটা মাথায় আর নেয়নি।
সবার ডিনার শেষ হলে,তিশা নিজের রুমে না গিয়ে নিশির রুমের দিকে পা বাড়ায়। আর তখনি কেউ একজন তিশার হাত ধরে ফেলে।তিশা তাকিয়ে দেখে ওর শ্বাশুরী ওর হাতটা ধরে রেখেছে।"
___কি হলো মা,কিছু বলবেন।
"কোথায় যাচ্ছো তুমি তিশা।"
___ আমি তো নিশি…তিশার মুখের কথা ছিনিয়ে নিয়ে রাবেয়া বেগম বলে উঠলো,নিশি ঘুমায়।এখন ওকে ডিস্টার্ব করো না।তুমি তোমার রুমে যাও।
"মা আমি একবার....আমি এক কথা দ্বিতীয়বার বলবো না।তুমি যাও।"
___তিশা আশার পর থেকে বাড়ীর সবাই কেমন পর পর আচরণ করছে ওর সাথে।মনে হচ্ছে আমি ভুলে অচেনা এক জায়গায় এসে পড়েছি।আমার আপন মানুষগুলো যেনো হারিয়ে ফেলেছি।
তিশা ভাবতে ভাবতে রুমে এসে পরে।জিসান তিশার জন্যই অপেক্ষা করছিলো।কিন্তু তিশার সেদিকে কোনও খেয়াল নেই।ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।হঠাৎ জিসানের স্পর্শে সংবেদন ফিরে পেলো তিশা।আপনি ঘুমাননি।
"আমিতো জাগনাই ছিলাম,তোরই কোনও খেয়াল নেই।কি চিন্তা করছিস।তিশা এবার ঘুরে জিসানের বুকে মাথা রেখে, আচ্ছা আপনার মনে হয়না বাড়ীর সবাই একটু কেমন আচরণ করছে।
নিশি একটি বারও আমার সাথে কথা বলতে আসেনি।মাও কেমন আপসেট আমার প্রতি।কি হয়েছে।কিছু জানেন।"
___জিসানও এসব চিন্তা করছিলো,এতোক্ষন। সবাইকে জিঙ্গেস করার পরও কারো কাছে তেমন সন্তোষ জনক উত্তর পেলো না।তিশার মাথার চুলগুলো হাত দিয়ে বুলিয়ে,তুই চিন্তা করিস না।সব ঠিক হয়ে যাবে।আমি দেখছি সমস্যা কি।সব চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে এখন ঘুমা।আমি আছিতো সব ঠিক করে দিবো।
"তিশাও নিশ্চিন্ত হলো,কারন তিশা জানে জিসান পাশে থাকলে ওকে আর এসব নিয়ে ভাবতে দিবে না।তাই চুপচাপ জিসানের বুকে মাথা রেখে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পরে ক্লান্ত বলে।"
||
||
"আজ তিশা বাপের বাড়ী যাওয়ার জন্য রেডি হতে লাগলো সকাল সকাল।সাথে অবশ্যই জিসানও যাবে।কারন বিয়ের পর পরই ওরা হানিমুনে চলে গিয়েছিলো। তাই তিশা তার নিজের বাড়ীতে যেতে পারেনি।আর কাল থেকে তিশা রায়হান, আর ওর বাবা মাকে কয়েকবার কল করেছে কিন্তু কেউ রিসিভ করছেনা।তিশার টেনশন টা বেড়ে যায়,তাই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই জিসানের কাছে আবদার করে বাসায় যাওয়ার জন্য।"
___আজ তিশা শাড়ী পড়বে,তাই একটা মিস্টি কালারের শাড়ী হাতে নিয়ে যেই না পড়তে যাবে,তখনি জিসান রুমে এসে পরে।জিসানকে দেখে তিশা শাড়ীটা কোনও রকম শরীরে পেছিয়ে নেয়।তা দেখে জিসান ভ্রুটা কুচকিয়ে তিশার সামনে এসে,কিরে ভূত দেখেছিস।আর এভাবে সং সেজে আছিস কেনো।
"আ আপনি এখানে কি করেন।আমি না আপনাকে নিচে রেখে এসেছি।"
___এই আমি কি কোনও আসবাবপত্র যে তুই নিচে রেখে আসবি আর আমি আসতে পারবো না।আর আমার বউ রুমে আমি নিচে একা একা কি করবো।তাই চলে এসেছি। এখন কথা কম বলে এদিক আয়।
"কেনো?"
___কেনো আবার শাড়ী পড়িয়ে দিই।
"উম,সেই ঘুড়ে বালি।আমি শাড়ী পড়তে পারি,তাই আপনাকে এতো পরিশ্রম করতে হবে না।আপনি আসতে পারেন।"
___আর কতো আসবো জান,দেখ আসতে আসতে তোর কতো কাছে চলে এসেছি।
"উফ!এই লোকটা মানুষ হবে না।"
___মানুষ পরে হই,আগে তোর রোমান্টিক স্বামী হয়েনি।তিশার শাড়ী টা একটান দিয়ে খুলে নেয়।এতো সুবর্ণ সুযোগ কিভাবে হাত ছাড়া করি বল,আমারতো অনেক শখ ছিলো নিজের বউকে নিজের হাতে শাড়ী পড়াবো সাজিয়ে দেবো।কিন্ত আমার কপাল!বউ আমার শাড়ী পড়তে পারে।
জিসান এমন ভাবে বললো,মনে হয় শাড়ী পরা শিখে তিশা মস্তবড় একটা অপরাধ করে ফেলেছে।তিশার এখন পেট ফেটে হাসি পাচ্ছে জিসানের কথা শুনে।
"হাসবি না একদম,আজ আমিই তোকে শাড়ী পড়িয়ে নিজের ইচ্ছাটা পূরন করে ছাড়বো।"
___আমার লাগবে না।
"কিন্তু আমার তো লাগবে বলেই জিসান তিশার আরো একটু কাছে এসে দাঁড়ালো। তিশার খালি কোমড়টাতে হাত বুলানোর সাথে সাথে তিশার শির ধাড়া দিয়ে যেনো একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো।তিশা একটা শুকনো ডোক গিলে,হাতটা সরাতে নিলে,জিসান আরো একটু শক্ত করে ধরে।"
___স্টোপ প্লিস,আমি নিজেই পরে নিবো।
"-একদম না।আর সরানোর চেস্টা করলে,আরো শক্ত করে ধরবো কিন্তু।তখন কিন্তু সমস্যা তোরই হবে।সো জান আমাকে আমার কাজ করতে দেও।
জিসান শাড়ীটা নিয়ে পড়াতে শুরু করলো।যেই প্রথমবার শাড়ীটি গুজতে লাগলো,তিশার নিশ্বাস যেনো আটকে গেলো।আজও তিশা জিসানের প্রতিটি স্পর্শে কেপে উঠে।শাড়ী পড়ার ফাঁকেফাঁকে তিশার ব্লাশিং করা মুখটা দেখে জিসানের ভীষন মজা লাগছে।"
---কিন্তু তিশার অবস্থা ভালো না।জিসানের এমন টর্চারকেই ভয় পায় ও।ঈদানিং টর্চার একটু বেশি বেড়ে গেছে।জিসান শাড়ীটা পড়ানো কমপ্লিট করে তিশাকে আয়নার সামনো দাঁড় করিয়ে পিছন দিয়ে জরিয়ে ধরলো।এবার দেখ আজতো আমার বউকে আরো সুন্দর লাগছে।
তিশা লজ্জায় শুধু ব্লাশিং করছে,আর কিছুই বলতে পারলো না জিসানকে।
||
||
"আজ আকাশে এক পশলা বৃষ্টি দেখা যাচ্ছে।কিন্তু এখন তো বৃষ্টির সিজন না।তবুও কেনো আজকের আকাশটা এতো মেঘলা।কালো মেঘটা আজ সূর্যটাকে ঢেকে রেখেছে।ঠিক আমার জীবনের মতো।
আমার মনের আকাশটাও আজ মেঘলা।শুধু আপনার জন্য রায়হান।কেনো এমন হলো বলবেন, গল্পটা কি আরো সুন্দর হতে পারতো না।আমার ভালোবাসার আকাশটাকে সাত রঙ্গে রাঙ্গিয়ে,এখন কালো মেঘে সব ধূয়াসা করে দিলেন।দেখুন আজ আমার মতো আকাশটাও কাঁদছে। আমার কষ্ট আজ সেই আকাশটা অনুভোব করতে পারলে আপনি কেনো পারছেন না রায়হান।নিশি ডুব দিলো অতিতের কিছু মিস্টি স্মৃতিতে,
___সেদিন রায়হান নিশিকে সাথে নিয়ে নীলক্ষেত যায়।এর পর ওর দারকারি সব বই গুলো কিনে আসার সময় নিশির কিছু ফ্রেন্ডসদের সাথে দেখা হয়ে যায় রাস্তায়।
আরে নিশি, ওয়াটস আপ বেব।
___ও আকাশ! তুই এখানে।
"আমরাও আছি,গাড়ী থেকে উকি দিয়ে মাথাটা বের করে রোহান,ইশা আর জেনি।"
___তোরা সবাই একসাথে, কোথায় যাওয়া হচ্ছে। পিকনিক!
"নো ইয়ার!পিকনিক সিকনিক বড়ই বোরিং জিনিস।আই কান্ট হ্যান্ডল দিস।আমরাতো লং ড্রাইভে যাচ্ছি।"
__ওয়াও! সো এক্সাইটিং..!
"ও নিশি কাম, জয়েন আয।খুব মজা হবে।"(রোহান)
___নিশি হাসি মুখে হা বলে,রায়হানের দিকে তাকায়।
"কিন্তু রায়হান রোদ ছাড়াই লাল হয়ে গিয়েছে।"
___তবুও সাহস ঝুটিয়ে নিশি রায়হানকে বলে,রায়হান ভাই আপনি চলে যান।ওরা আমাকে বাসায় ড্রপ করে দেবেনি।কি বলিস তোরা।
"ইয়া....সিউর!আমাদের কোনও সমস্যা নেই।"
___নিশি পা টা বাড়াতে নিলে,রায়হান হাতটা ধরে ফেলে।
এককদমও পা বাড়াবি না।থাপড়িয়ে গাল লাল করে ফেলবো পাবলিকের সামনেই।
-নিশি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো।
"রায়হান নিশির ফ্রেন্ডসদের উদ্দেশ্য করে বলে,তোমরা যাও।নিশি আজ জয়েন হতে পারবে না।"
___রোহান ছেলেটা একটি জোরাজোরি করছে বলে,রায়হানের ধমকে সব গাড়ী নিয়ে পালায়।আর রায়হান নিশিকে বাইকে বসিয়ে রওনা দিলো।
"কিছুক্ষণ পর নিশি বুঝতে পারলো বাইক ওর বাসার দিকে না গিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে।নিশি বুঝতে পারছে না রায়হান ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।তবুও কিছু বললো না।কারন নিশি এই সময়টাকে এখন শুধু উপভোগ করতো চায়।এই মুহুর্তটাকে নিজের মুঠোতে বন্দি করতে চায়।নিশি মনের অজান্তেই গুনগুন করা শুরু করলো....
"এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো তুমি বলতো"
___এমন একটা দিনের রায়হানের খুব ইচ্ছা ছিলো।প্রিয়তমার সাথে কোনও এক অজানা পথে পাড়ি দেওয়ার।কোথায় যাবে,কেনো যাবে দুজনেরই অজানা। আছে শুধু তাদের মধ্যে ভরসা আর আছে মনের মধ্যে সুপ্ত ভালোবাসা।
প্রিয়তমাকে বাইকে পাশে বসিয়ে,লং ড্রাইভে যাওয়া।প্রিয়তমার বাতাসে উড়ো উড়ো চুলগুলোর খেলা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে পাওয়া।প্রিয়তমাকে আরো একটু কাছে টানতে মাঝে মাঝে ইচ্ছেজনক ব্রেক করা।
তাহার হাতটি বুকের বা পাশে রেখে হ্রদপিন্ডের স্পন্দন গুলো তাকে অনুভোব করার সুযোগ দেওয়া।মাংশপিন্ডের নিচে যে হার্ডটা আছে,সেটা যে তাহার জন্যই ধুপধুপ শব্দ করে,সে শব্দ তাকেও একদিন শুনতে হবে। সে যে কেনো বুঝে না।
___রায়হান বাইক নিয়ে শহর থেকে অনেকটা দূরে চলে এসেছে।
"নিশি সামনে তাকিয়ে বিশাল এক নদী দেখতে পাচ্ছে। নিশি বুঝতে পারলো এটা মেঘনা নদী।কারন আসার সময় সাইনবোর্ড এ আড়াইহাজার জায়গার নাম উল্লেখ করা ছিলো।তার মনে এটা মেঘনার চর।দুজনেই বাইক থেকে নেমে পড়লো।
সামনে বিশাল বালুর চর।নিশি দৌঁড়ে গিয়ে জুতা গুলো খুলে খালি পায়ে বালির চরে হাটতে লাগলো।হাটতে হাটতে কাশবন ঘেড়া বনের মধ্যে ডুকে পড়লো।কাশবনে নিশির লুকোচরি খেলা রায়হান দূর থেকেই দাঁড়িয়ে দেখতে পেয়ে তৃপ্তির হাসি দেয়।নিশিকে এতো খুশি দেখে রায়হানের মনটাও ভরে গেলো।
আর নিশিতো বাচ্চাদের মতো বালি দিয়ে খেলছে,মনে হয় কতো দিনের মনের বাসনা আজ পূর্ণ হলো।রায়হান ও আস্তে আস্তে নিশির পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
___কিছুক্ষণ সামনের বিস্তৃত নদীর দিকে তাকিয়ে থেকে নিশিকে ডাক দিলো।নদী ভ্রমন করবি নিশি।
"নিশি ঠোঁটদুটো উল্টিয়ে যদি পরে যাই।আমার ভয় করে।"
___রায়হান হাতটা বাড়িয়ে,আমি আছিতো,তোর কিছুই হতে দেবো না।বিশ্বাস করিস তো আমায়।
"মুহুর্তের মধ্যেই নিশির মনের বাগানের হাজারো প্রজাপতিগুলো যেনো তাদের রংয়ের পাখা দিয়ে নিশির গালটাকে রাঙ্গিয়ে দিলো।নিশি একটু ব্লাশিং করে রায়হানের হাতটা শক্ত করে ধরে উঠে দাঁড়ালো নদী ভ্রমন করবে বলে।"
___রায়হান একটা ট্রলার ভাড়া করে নিলো নিজেদের জন্য।নিশিকে নিয়ে ট্রলারে উঠে, নিশিকে একদম নিজের কাছেই বসালো।ট্রলার চলতে লাগলো।চলতি ট্রলারে বসে থাকা নিশির চুলগুলো বাতাসে উড়ে বারংবার রায়হানের মুখে আচড়ে পরছে।অদ্ভুত ফিলিং কাজ করছে রায়হানের মনে।নিশির হাতটা ধরে,নদীর পানিতে হাতটা চুবিয়ে দিলো।নিশির আনন্দটা যেনো আরো বেরে গেলো।হাত দিয়ে নিশি পানির ঝাপটা রায়হানের দিকে ছুড়ে মারলো।
"হঠাৎ নিশির ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো।চারপাশে একবার তাকিয়ে নিশি ডুকরে আবার কেঁদে উঠলো।আমি বিশ্বাস করতাম আপনাকে রায়হান ভাই।কিন্তু আপনি আমার বিশ্বাস ভেঙ্গে আমাকে নিঃস্ব করে দিলেন।কেনো করলেন আমার সাথে এমন কেনো।নিশি আবার চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।
||
||
"তিশা ও জিসান বাড়ীর সবাইকে বলে তিশার বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।এদিক দিয়ে রাবেয়া বেগম ভাবছে না জানি আজ কি হবে।যখন জিসান ও তিশা সত্যটা জানতে পারবে।"
___জিসান ও তিশা গাড়ী থেকে নেমেই,বাড়ীতে প্রবেশ করতে নিলে জিসানের একটা আর্জেন্ট ফোন আসায় তিশাকে বলে আগে বাড়তে। তিশা বাড়ীর কলিংবেল এ টিপ দিলেই কেউ একজন দারজাটা খুলে দেয়।দরজায় দাঁড়ানো মানুষটিকে দেখে তিশা কিছুটা অবাক হলো।
আরে আপু তুমি!তাও আবার এই সময়।যাই হোক ভালো আছো।
___মেয়েটিও হেসে জবাব দিলো ভালো আছি।
"তিশার মা ড্রয়িংরুম এ শব্দ পেয়ে ছুটে আসে।তিশাকে দেখে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।এতো দিন পর দেখেছে বলে।"
___তিশা সোপায় বসতে বসতে বললো,তো আপু আজও কি মায়ের সাথে গল্প করতে এসেছো।কিন্তু এই সময় কেনো।আর তোমাকে একদম নতুন বউ এর মতো লাগছে।এভাবে সেজেছো কেনো।
"তিশার মা, মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।তার ধারনাই ঠিক তিশাকে ওই বাড়ীর মানুষ কিছুই বলেনি এখনো।তাইতো এতো শান্ত তিশা।রাবেয়া বেগম আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে তখনি রায়হান এসে পরে।"
___ভাইকে এতোদিন পর দেখে তিশা খুশিতে জড়িয়ে ধরে।ভাইয়া কোথায় ছিলে,কাল থেকে ফোন করে তোমাদের কাউকে পাচ্ছি না কেনো।
"রায়হান ও তিশার কথার মাঝখানো মেয়েটি বলে উঠলো,তোমরা ভাইবোন বসে বসে গল্প করো,আমি তোমাদের জন্য স্পেশিয়াল কিছু বানিয়ে আনছি।"
___আরেরে আপু তুমি কেনো যাবে।তুমি এই বাড়ীর মেহমান,আর মেহমানদের কাজ করাতে নেই, ঠিক মা।তিশার মা, মাথা নতো করে বসে আছে।সে অনেক কিছু বলতে চায় কিন্তু পারছে না।
"মেয়েটি,তিশার হাত ধরে,এটা আমার সংসার আমি করবো না তো কে করবে।আর তুমি আমার পাঁচটা না দশটা না একটা মাত্র ননদিনী।তোমাকে আদর সোহাগ করা তো আমার কর্তব্য।"
___এতোক্ষন পর জিসান মাত্র বাসায় প্রবেশ করলো।আর এসেই এসব শুনে কিছুটা চমকে গেলো।
"তিশা ভাইয়ের হাতটা ধরে,ভাই এসব কি।আর উনি যা বলছে...
____রায়হান তিশার দিকে তাকিয়ে শান্ত দৃষ্টিতে বললো,তিশা ও সত্য বলছে।
রুহি আমার বিবাহিত স্ত্রী,তোর ভাবি আর এই বাড়ীর বউ।
তিশার মনে হলো পায়ের নিচের জমিটা কেউ টান দিয়ে সরিয়ে ফেললো।এখন তিশা বুঝতে পারছে নিশি কেনো এমন করছে।
চলছে......
No comments