Update Story
📢 গল্পঃসিনিয়র_খালাত_বোন_যখন_বউ পর্বঃ০৬    📢 গল্পঃসিনিয়র_খালাতো_বোন_যখন_বউ পর্বঃ০৫    

ভাইয়ের_বন্ধ_যখন_বর😍 ---------( season 2) [🖤] part_34🍁


"আকাশ থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে,সাথে কিছু ধমকা হওয়া।ছাদের রেলিং এ পা ঝুলিয়ে বসে আছে রায়হান।হাতের জলন্ত সিগেরেট টাকে বৃষ্টিরজলও আজ নিভাতে পাড়ছে না।ঠিক রায়হানের বুকের জ্বালাটার মতো।
নিচে পরে আছে আরো অসংখ্য সিগেরেট এর শেষাংশ।জীবনে এই প্রথম রায়হান এতো সিগেরেট খেলো।কিন্তু তবুও কেনো সিগেরেট এর নেশা ধরছে না বুঝতে পারছে না।এরি মাঝে দুআঙ্গুলে রাখা সিগেরেট টিও শেষ হয়ে সেদিনের মতো আঙ্গুল দুটো পুড়িয়ে দিলো।আবারও রায়হানকে মনে করিয়ে দিলো অতিতে ফেলে আসা সেই দিনের স্মৃতিগুলো।"

___সেদিন নিশি ছিলো,আমার পুড়ে যাওয়া আঙ্গুলটিকে একটু শীতল করতে।কিন্তু আজ!আজতো কেউ নেই।
আর এই পোড়ার চেয়ে বেশি আমার মনটা পুড়ছে সেটা আমি কাকে দেখাবো।আমি যে আর পাড়ছি না,নিশি।রায়হান হঠাৎ কাঁদতে লাগলো হয়তো কষ্ট গুলোকে আর নিজের ভেতরে আটকাতে পাড়ছে না রায়হান ।

"আমি যে আর পাড়ছি না।"(চিল্লিয়ে)।

___আমিতো তোকে এই বুকে আগলে রেখে বাঁচতে চেয়েছিলাম।ভালোবেসে তোর সাথে বাকি জীবনটা পার করতে চেয়েছিলাম।হারাতে তোকে কখনো চাইনি,তবুও কেনো হারিয়ে ফেললাম।কেনো এমন ঝড় এলো আমার জীবনে,কেনো আমার সব কেড়ে নিলো,কেনো আজ আমি এতোটা নিঃস্ব। কেনো?

"নিশিইইইই........চিৎকার করে রায়হান কাঁদতে লাগলো।"

___আমি যে পাড়ছি না, পাড়ছি না তোকে ছাড়া থাকতে।কি নিয়ে বাঁচবো আমি নিশি,কি নিয়ে।তোকে কষ্ট দিয়ে আমিও যে ভালো নেই।আমার এই পুড়ে যাওয়া মনটা তোকে বলে দিবে কিভাবে বেঁচে আছি তোকে হারিয়ে।আমার ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছে,আমি আর পাড়ছি না এর জ্বালা সইতে,আমি যে আর পাড়ছি না তোকে ছাড়া থাকতে।রায়হানের ভেতরটা আজ ধুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।কিন্তু তবুও পাড়ছে না কাউকে বলতে,না পাড়ছে কাউকে দেখাতে।কিছু কষ্ট হয়তো এমনি হয়।

"কাঁদতে কাঁদতে রায়হান হঠাৎ আবার নিজেকে সামলিয়ে নিলো।আমাকে পারতেই হবে,তা না হলে এই তুফান সবার জীবনটা লণ্ডভণ্ড করে দিবে।তোর আর আমার বিচ্ছেদ যদি সবার সুখের কারন হয় তাহলে আমরা দুজন আলাদা থাকাই ভালো।আমি না হয় আগের মতো, তোকে দূরে থেকেই ভালোবাসবো।এটাই হয়তো আমার নিয়তি।হঠাৎ পিছন থেকে কেউ রায়হান কে ডাক দিলো।"

--তুমি এই বৃষ্টির মধ্যে এখানে কি করছো রায়হান,ঘরে চলো।না হলে তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে।তোমারতো বৃষ্টি একদম সহ্য হয় না।

___মুহুর্তের মধ্যে রায়হানের চোখগুলো লাল হয়ে গেলো,পেছনে ঘুরে রুহির দিকে তাকালে রুহিও কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।
ভয়ংকর কন্ঠে রায়হান রুহিকে বললো,তুমি এখানে কি করছো রুহি?আমি আগেও বলেছি আমাকে একা ছেড়ে দেও।চলে যাও এখান থেকে।চিল্লিয়ে।

"রায়হান প্লিস আমার কথাটা বোঝার চেস্টা করো।আমরা চাইলে সব ঠিক হয়ে যাবে,দেখো একদিন তুমি আমি অনেক সুখে থাকবো একসাথে।"

___তাই নাকি!তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে রায়হান ।তোমার এমন মনে হয়।তুমি আর আমি একসাথে।রাবিশ! 
তুমি আমি একসাথে না ছিলাম নাহি থাকবো।আর কি মনে করেছো।আমার ভেতরে আগুন লাগিয়ে তুমি বেঁচে যাবে।এটা তোমার ভুল ধারনা।যে আগুনে আজ আমি,নিশি জ্বলছি।তোমাকেও জ্বলতে হবে।তুমি সব পেয়েও কখনো কিছু পাবে না।ব্লাকম্যাল করে বিয়ে করে বিবাহিতর পদক তো পেয়েছো। কিন্তু কোনও দিন স্বামী পাবে না।বিবাহিত হয়েও তোমাকে বিধবার মতো থাকতে হবে।নিজেকে দেখে একদিন নিজেই ঘৃর্ণা করবে।দেখো সেদিন খুব শীঘ্রই আসবে তোমার জীবনে।

"তুমি এসব কি বলছো রায়হান, আমি তোমাকে ভালোবাসি।আমাকে একবার আপন করে দেখো,আমি তোমার সব কষ্ট দূর করে দিবো।"

___রায়হান এবার উঠে দাঁড়ালো।রুহির একটু কাছে এসে।ইউ নো রুহি আগে তোমাকে দেখলে একটু কষ্ট হতো কিন্তু এখন জাস্ট ঘৃর্ণা হয়।আর আমি হেপি,এটা ভেবে যে,তোমার মতো মেয়েকে আমি কখনো ভালোবাসিনি।কি বলেছিলে সেদিন,তুমিতো নিশি থেকেও সুন্দর।কিন্তু জানো কি রুহি!
তোমার মনটা এই রাতের থেকেও কালো।আর আমার নিশি সে তো আমার চোখে পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর মেয়ে।আর তার সেই সৌন্দর্য শুধু আমি দেখতে পাই।কারন আমার নিশির সৌন্দর্য দেখতে হলে,একটা ভালো মনের প্রয়োজন যা তোমার মাঝে নেই।তুমি ওর থেকে শুধু রায়হান নামের এই জীবন্ত লাশটাকে কেড়ে নিয়েছো,কিন্তু কেড়ে নিয়েও কি লাভ হলো বলো।আমার মন প্রাণ জুড়ে তো সেই মেয়েটিই এখনো বিরাজ করছে।আর সারাজীবন করবেও।
ও যদি এখন অন্য কারোও হয়ে যায়,তবুও আমি দূরে থেকে ওকেই ভালোবাসবো।
আমার ভালোবাসার জন্য নিশিকে আমার হতে হবে এমন কোনও কথা নেই।আমি শুধু চাই ও সুখে থাকুক,ভালো থাকুক।আর ভালোবাসার মানুষটিকে সুখে থাকতে দেখার আনন্দ তুমি বুঝবে না রুহি।কারন ভালোবাসা কি তুমি জানোই না।

"রায়হান রুহিকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিয়ে আবার থেমে যায়।রুহির দিকে না তাকিয়েই, বার বার আমার কাছে আসার চেস্টা করবে না রুহি।তুমি যদি ভাবো আবার ব্লাকম্যাল করে আমাকে নিজের কাছে আসতে বাধ্য করবে,তা হলে যেনে রেখো আমার লাশের ভারও তোমাকেই বহন করতে হবে।"

___রুহি স্থব্ধ!রায়হানের বলা শেষ কথাটা শুনে।রায়হানের এক একটা কথা যেনো তিড়ের মতো বিঁধলো মনে।কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠলো,আমিও তো তোমাকে অনেক ভালোবাসি রায়হান। তাহলে তুমি কেনো আমার কষ্টটা দেখতে পাওনা।ভালোবেসে আমিও তো অনেক কষ্ট পাচ্ছি।আমাকে কি একটু ভালোবাসা যায় না রায়হান। রুহি কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে পড়লো।কিন্তু রুহির এই আর্তনাদ শোনারমত কেউ নেই এখানে।রায়হান চলে গিয়েছে আরো আগে।
__________

"নির্ঝন রাতে বারান্দার গ্রিল ধরে আকাশের দিকে চেয়ে আছে নিশি।মনে একরাশ অভিমান আর কষ্ট নিয়ে।মাঝে মাঝে ধমকা হওয়ার সাথে একপশলা বৃষ্টি এসে নিশিকে ভিজিয়ে দিয়ে যায়।হয়তো বৃষ্টিও চায় আজ নিশির ভেতরে জমে থাকা কষ্টগুলোকে ফেলে দিতে।কিন্তু তা যদি সম্ভব হতো তাহলে আজ দুইপ্রান্তে বসে থাকা দুটো মানুষকে এতো কষ্ট পেতে হতো না।"

___বাতাসে নিশির খোলা চুলগুলো উড়ছে।ঘরের বাতি নিভানো,বারান্দার লাইটাও জ্বালানো নেই।তবুও রাস্তার ল্যাম্প সাইডের বাতির আবছা আলোয় নিশির মায়াবী মুখটা দেখতে পাচ্ছে রায়হান। রইতে না পেরে রায়হান এখানে এসে পরেছে।প্রায় দুঘন্টা ধরে একটা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে কখন নিশি একটিবার বারান্দায় আসবে।
আর রায়হানের মনের বাসনা পূর্ন করতে নিশি সত্যিই বারান্দায় এসে দাঁড়ালো।নিশিকে দূর থেকেই এক পলক দেখে রায়হান মনের ভেতরে এক অদ্ভুত শান্তি পেলো।

"কারো ডাকে নিশি ভেতরে চলে গেলো।পরক্ষনে আবার পিছে ফিরে  বাহিরে তাকালো।কেনো জানি নিশির মনে হলো কেউ ওকে দেখছে।কিন্তু নিশি কাউকে দেখতে পেলো না এই রাতের আধারে।"

___কিন্তু রায়হান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখলো।দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে সামনের দিকে হাটা ধরলো।কিছু ভালোবাসা অপূর্ণ রয়ে যায়,কিছু চাওয়ার কোনও মূল্য থাকে না।তাতে কি!আমিতো ভালোবেসে যাবো।যতোদিন বেঁচে থাকবো।তোর স্মৃতিগুলো মনে রেখে, আমি তো ভালোবেসে যাবো।হয়তো কখনো জানতে পারবি আমার পাল্টানোর কারন,সেদিন হয়তো বলবি আমি অনেক স্বার্থপর।হুম, ঠিক।আমি অনেক স্বার্থপর।

"গভীর রাত,চারদিকে নিরবতা বিস্তার করছে।কেমন যেনো থমথমে পরিবেশ।হয়তো ব্যস্ত মানুষগুলো তাদের আপন নীড়ে ফিরে গিয়েছে বলে।
রাস্তার ফুটপাত গুলোও ফাঁকা,কয়েটা ক্ষু্ধার্ত কুকুর ছাড়া কাউকে দেখা যাচ্ছে না।কিছু দূরে কয়েকজন ছেলেমেয়েদের ঝটলা দেখতে পেলো রায়হান।এতো রাতে এদের দেখে রায়হানের অনেক কিছু ভাবতে মন চাইলেও কিছু ভাবতে পারছে না।তাদের পাশেই গাড়ীর ড্রাইভার গাড়ীটি ঠিক করার বৃথা চেস্টা করছে।আর ছেলেগুলোর হাতে গিটার,আরো কিছু বাদ্যযন্ত্র দেখতে পেয়ে রায়হান বুঝে গেলো এরা হয়তো কোথাও কনসার্ট করে ফিরছে,আর এখন মাঝ রাস্তায় গাড়ী নষ্ট হওয়ায় দাঁড়িয়ে আছে।"

____রায়হান কিছু না বলে,ওদের পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে,হঠাৎ পিছন থেকে একজন ডাক দেয়।

"হ্যালো ব্রো।"

___রায়হান পিছনে ঘুরলে দেখতে পায় গিটার হাতে নেওয়া ছেলেটি ওকে ডাকছে।

"এখানে কোথায় মেকানিক পাওয়া যাবে।একচুয়েলি আমরা অনেক দূর থেকে এসেছি।আর এখন গাড়ীটিও মাঝ রাস্তায় নষ্ট হয়ে গিয়েছি।একটু বলে সাহায্য করবেন।"

___রায়হান এবার ব্যাক করে ওদের সামনে দাঁড়ালো।পকেট থেকে ফোনটা নিয়ে নিজের পরিচিত মেকানিক কে ফোন করে এড্রেস দিয়ে দিলো।রায়হানের এমন সৌজন্য মূলক আচরনে রাস্তায় দাঁড়ানো ছেলেমেয়ে গুলো খুবই খুশি হলো সাথে অবাক।

"রায়হান ছেলেটির হাতের গিটারটি নিয়ে একটু বাজিয়ে জিঙ্গেস করলো কোথা থেকে এসেছো তোমরা।"

____তাদের মধ্যে একজন বলে উঠলো আমরা রাজশাহী থেকে এসেছি।কাল আমাদের এখানে একটা কনসার্ট আছে,তা এটেন্ডন করার জন্যই।
বাই দা ওয়ে,আমি আশফি,ও জুয়েল,কবির,নীরা,অন্তি আর আমাদের ব্র্যান্ডের রকস্টার দিহান।

"রায়হান খুব পলয়েটলি সবার সাথে পরিচিত হয়ে, নিজের পরিচয় জানালো।আমি রায়হান।ঢাকারি অধিবাসী।"

____রায়হানের গিটারে টুনটুন শব্দ শুনে,দিহান জিঙ্গেস করলো,আপনি গিটার বাজাতে পারেন।

"রায়হান মুচকি হেসে, হুম ভার্সিটিতে পড়ার সময় আমাদেরও একটা ছোটখাটো ব্যান্ড ছিলো।"

___তাহলেতো গানও গাইতে পারবেন।

"রায়হান একটু মুচকি আসলো।"

___সবাই জোর দিলো,মেকানিক না আসা পর্যন্ত রায়হান যেনো একটা গান গেয়ে শুনায় তাদের।রায়হান ও আর মানা করলো না।আজ আবার সেই দিন গুলো মনে করতে চায় রায়হান।গাড়ীতে হেলান দিয়ে এক পা ভাজ করে দাঁড়ালো রায়হান।শুরু করলো নিজের কন্ঠে একটি গান...

    Tum mere ho iss pal mere ho
        Kal shayad yeh aalam na rahe
           Kuch aisa ho tum tum na raho
                Kuch aisa ho hum, hum na rahein…

Yeh raaste alag ho jaaye
Chalte chalte hum kho jaayein…

Main phir bhi tumko chahunga… [x4]
---------------------------------------------------------

____রায়হানের চোখ দিয়ে না চাওয়া সত্যেও পানি পড়ছে।গানের মধ্যেই রায়হান ওর নিজের ফিলিংগুলো বলে দিয়েছে সবাইকে।আর দিহান,আশফি,জুয়েল,কবির, নীরা,অন্তি অবাক হয়ে শুনছে।গানের প্রতিটি কলিতে রায়হান এর কষ্ট ওরা অনুভোব করছে।

Iss chahat mein marr jaaunga
Main phir bhi tumko chahunga
Meri jaan mein har khamoshi le
Tere pyaar ke naghme gaaunga
Mmm…

Main phir bhi tumko chahunga
Main phir bhi tumko chahunga
Iss chahat mein marr jaaunga
Main phir bhi tumko chahunga

____পুরো গানটা রায়হান চোখ বন্ধ করে নিশিকে স্মরন করেই গেয়েছে।তাইতো নিজের আবেগ ধরে রাখতে পাড়লো না।গান শেষে চারদিকের নিরবতায় রায়হান চোখ খুলে।আশফির হাতে গিটারটা দিয়ে রায়হান আর কিছু না বলেই আবার হাটা ধরে।আর ওরা ছয়জন রায়হানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।কারো মুখে কিছু বলার যেনো ভাষা নেই।

Main phir bhi tumko chahunga
Main phir bhi tumko chahunga.......
___________

"রায়হান অনেক রাত করে সেদিন বাসায় ফিরলো।কলিংবেল হাত দেওয়ার আগেই রেনু বেগম দরজা খুলে দিলো।হয়তো ছেলের জন্যই অপেক্ষা করছিলো।মাকে এতোরাত জেগে থাকতে দেখে,রায়হান কিছুটা অনুতপ্ত হলো।সরি মা।আর হবে না বলেই চলে গেলো।"

---রেনু বেগম ছেলের মুখ দেখেই বুঝে গেলো,ছেলের মনের কষ্ট।সে জানতো না তার ছেলে যে মনে মনে নিশিকে ভালোবাসতো।যদি জানতো তাহলে আগেই বউ করে নিয়ে আসতো নিশিকে।তাহলে হয়তো আজ ছেলেকে এতো ভুগতে হতো না।
কোন অলক্ষনে এই মেয়েটাকে আমার বাসায় আসতে দিলাম।সুই হয়ে ডুকে কুড়াল হয়ে বের হলো।আমার ছেলে মেয়েদের জীবনের সুখ শান্তি সব কেড়ে নিলো।এতো ঘর রেখে এই কালনাগিনী আমার ঘরকেই ছোবল মারতে মন চাইলো।

"তিশার চোখেও আজ ঘুম নেই,তাই বালকানিতে দাঁড়িয়ে  আজ সকালের কথাগুলো চিন্তা করছে।

আজ সকালে____

"রায়হান যখন বললো,রুহি ওর বউ।তিশা বিশ্বাসই করতে চাইলো না।বার বার ভাইকে অনুরোধ করলো, এসব যেনো মিথ্যা হয়।"

___ভাই,তুমি আমাকে বোকা বানাবার চেস্টা করছো।তাই না!তুমি আর নিশি মিলে নিশ্চয়ই কোনও প্লানিং করেছে।এমনি হবে।তুমি রুহি আপু কে,কিভাবে সম্ভব।এটা কখনো সম্ভব না।আর ভাবলে কি করে তুমি বলবে আর আমি বিশ্বাস করবো।এধরনের স্টুপিট মার্কা ফান আমার একদম পছন্দ না।

"রেনু বেগম মেয়েকে কিছু বলতে চাইলো,কিন্তু তিশা কিছু বলতে না দিয়ে নিজেই বলা শুরু করলো।জানো মা তোমার ছেলে ডুবে ডুবে জল খায়।আর ভাবে কেউ জানতে পারবে না।কিন্তু ভুল সবাই জানে ভাইয়া।মা তোমার ছেলে আমাদের  নিশিকে মনে মনে অনেক ভালোবাসে।আর দেখো আমাকে বোকা বানাবার জন্য এখন কতোবড় মিথ্যা বলছে।"

____রেনু বেগম তিশার হাতটা ধরে নিজের কাছে এনে,শান্ত হো তিশা।আর রায়হান মিথ্যা বলছে না।রায়হান আর রুহি বিয়ে করেছে, এটা সত্য।
"তিশা নিষ্পলক মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।বুঝতে পারছে না কি বলবে।দুনিয়াটা মনে হয় ঘুড়ে গেলো।নিশির কথা মনে পড়তেই চোখ দিয়ে যেনো পানির বন্যা বয়ে যাচ্ছে।"

"তিশা রায়হানের সামনে গিয়ে চোখে চোখ রেখে জিঙ্গেস করলো।কেনো ভাইয়া!কেনো এমন করলে নিশির সাথে।ওই মেয়েটা তোমাকে অনেক ভালোবাসে,এটা জেনোও তুমি এতো বড় ধোকা দিলে কিভাবে ওকে।একবারও কি ওর কথা মনে পড়েনি।বল না ভাইয়া কেনো করলি।তিশা কান্না জরিত কন্ঠে।"

___জিসান প্যান্টের পকেটে হাত রেখে শুধু রায়হানের দিকে তাকিয়ে আছে।কেনো জানি আজকের রায়হান কে খুব অপরিচিত লাগছে জিসানের।হুম জিসান জানতো রায়হান আর নিশির কথা।আর ও ভেবেই নিয়েছিলো হানিমুন থেকে এসে সবার সাথে এই বিষয় কথা বলবে।কিন্তু তার আগেই এসব হয়ে গেলো।

"তিশাকে শান্ত করার জন্য রায়হান তিশার বাহুটা ধরে, শান্ত হো বোন।এখন এসব বলে আর লাভ নেই।যা হবার হয়ে গিয়েছে।মনে কর এটাই নিয়তি ছিলো।
তোর নিজের নতুন  একটা জীবন শুরু হয়েছে,তুই এসব নিয়ে চিন্তা না করে শুধু নিজের সংসারের কথা ভাব।কথা ঘুড়ানোর জন্য রায়হান, এখন বল কেমন ঘুরলি এ কয়েকদিন।রায়হান ঠোঁটে একটা মলিন হাসি দিয়ে।"

___ভাইয়া নিশি পর কেউ না।আমার পরিবারের অংশ।ওর চিন্তাতো করতেই হবে তাই না।আর পরিবারের একজন সদস্য ভালো না থাকলে পরিবারের বাকি সদস্যরা কিভাবে ভালো থাকবে।আর নিশি ভালো নেই।একদম ভালো নেই।তুমি খুব অন্যায় করেছো ওর সাথে ভাইয়া।খুব অন্যায়।তিশা আবার কাঁদতে লাগে।

"রায়হান কিছু বলতে নিবে,তার আগেই জিসান এসে তিশার হাতটা ধরে বাহিরে নিয়ে যায়।জিসান এখানে আর এক মুহুর্ত থাকতে পারবে না।হয়তো থাকলে রায়হানের উপর রাগটা কন্ট্রোল করতে পারবে না,তাই তিশাকে নিয়েই বের হয়ে গেলো।সারা রাস্তায়ও জিসান আর একটা কথাও বলেনি তিশার সাথে।আহমেদ বাড়ীর গেটের সামনে তিশাকে নামিয়ে দিয়ে জিসান চলে গেলো অফিসে।"

___তিশা বাসায় এসে বেশ কয়েকবার নিশির সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো।কিন্তু নিশি একটি বারও দারজা খুলে নিই।তিশা জানে,নিশি কষ্টে আছে।খুব কষ্টে।কিন্তু এখানে তিশার দোষ কি।নিশি কেনো তিশার থেকে মুখ গুড়িয়ে ফেললো।তিশা বুঝতে পারছে না।

"তিশাকে নিশির রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,রাবেয়া বেগম কিছুটা রেগে গেলেন।
-তিশা তুমি এখানে কি করছো।"

---মা,প্লিস নিশিকে বলুন না, আমার সাথে একবার কথা বলতে।ও আমার সাথে রেগে আছে,কিন্তু কেনো?আমি কি করেছি।

"দেখো তিশা,যা হবার হয়েছে।আমি আর এ বিষয় কথা বলতে চাই না।আর তুমি প্লিস নিশি থেকে দূরে থাকো।বর্তমান পরিস্থিতিতে এটাই ভালো।ওকে একা থাকতে দাও। সময়ের সাথে ওর ঘা টা শুকিয়ে যাবে।"

---একটা কথা বলতো তিশা,তোমার ভাই বললো,সে রুহিকে আগে থেকেই পছন্দ করতো।তুমি কি এটা জানতে না।

"তিশা ছলছল চোখে ওর শ্বাশুরীর দিকে তাকিয়ে, মা আমি বিন্দুমাত্র যদি আভাষ পেতাম,তাহলে এসব হবার আগেই সব ঠিক করে দিতাম।শ্বাশুরীকে কথাগুলো বলেই তিশা নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।তিশা বুঝে গেলো,ওর শ্বাশুরী ওর কথাগুলো বিশ্বাস করেনি।হয়তো সিচুয়েশন তাকে করতে দিচ্ছে না।"

---হঠাৎ কোমড়ে কারোর শীতল স্পর্শ পেয়ে তিশার ধ্যান ভেঙ্গে যায়।জিসান তিশাকে জড়িয়ে ধরে,আপসেট।

"তিশা মাথা নিচু করেই বলে, না।"

---জিসান তিশাকে সামনে ঘুড়িয়ে মুখটা দুহাত দিয়ে তুলে,তাহলে কাঁদছিস কেনো।কেউ কিছু বলেছে।

"তিশা মাথা নাড়ায়, না।"

___তাহলে!

আপনিও কি আমার উপর রাগ করে আছেন।বিশ্বাস করুন আমি কিছুই জানতাম না।ভাই নাকি সবাইকে বলেছে,সে রুহি আপুকে পছন্দ করে,তাই তাকে বিয়ে করেছে।আমার এগুলো বিশ্বাস হয়না।আর আমি কিছুই জানি না।সত্যিই বলছি।

____রিলেক্স জান,সমস্যা কি?আমি কখন বললাম আমি তোর উপর রেগে আছি।আমি কেনোই বা তোর উপর রাগবো।আর আমি জানি আমার তিশা কেমন, তাই এসব চিন্তা বাদ দেও।
তিশাকে নিজের সাথে জড়িয়ে।আমি জানি এতে তোর কোনও দোষ নেই।কিন্তু এখন সিচুয়েশনটাই এমন।তাই একটু ধৈর্য ধর।সব ঠিক হয়ে যাবে।সবাইকে একটু সময় দে।
জিসান তিশাকে শান্ততো করিয়ে দিলো,কিন্তু জিসান নিজেও গভীর চিন্তায় মগ্ন।জিসানের মাথায় কি চলছে একমাত্র জিসানই জানে।

চলবে....।


No comments