Update Story
📢 গল্পঃসিনিয়র_খালাত_বোন_যখন_বউ পর্বঃ০৬    📢 গল্পঃসিনিয়র_খালাতো_বোন_যখন_বউ পর্বঃ০৫    

ভাইয়ের_বন্ধু_যখন_বর😍 --------(season 2) [🖤] part_35🍁



"দেখতে দেখতে কয়েক সপ্তাহ পার হয়ে গেলো।নিশি নিজের কষ্টটা লুকানো শিখে গেলো পরিবারের জন্য।তবে এসবের মধ্যে নিশি আর তিশার সম্পর্কটা আগের মতো হয় নি এখনো।খুব কম কথা বলে তিশার সাথে নিশি।তাও যদি তিশা বলে।কিন্তু তিশা হার মানে নিই।তিশা বার বার চেষ্টা করছে,আগের নিশিকে ফিরিয়ে আনতে।"

---আজ দুদিন হলো জিসানের কাজিনরাও বাড়ীতে এসেছে,আর ওরাই নিশিকে কিছুটা স্বাভাবিক করে তুলছে হাসি আনন্দের মধ্যমে।নীড়,হীরা,ঝুমুর,মিলি,মুক্তা এরা পাঁচজন মিলে নিশিকে ব্যস্ত রেখেছে। আর এসব প্লানিং আর কারো না জিসানের।নিশি যাতে ড্রিপরেশনে এর মধ্যে না চলে যায় তাই এসব ব্যবস্থা।

"আজ ওরা সবাই বাহিরে যাওয়ার প্লানিং করলো।আমাকে আর জিসানকেও যেতে বললো।কিন্তু আমি জানি আমি গেলে নিশি ভালো মতো এন্জয় করতে পারবে না,আর তাছাড়া জিসানও নেই।জিসানের আজ ক্লাবে একটা পার্টির ইনভাইটেশন আছে  ফ্রেন্ডসদের সাথে।তাই জিসান অফিস শেষে ওখানেই যাবে।জিসানকে ছাড়া কোথাও যাওয়া এখন কেনো জানি ভালো লাগে না।তাই আমি বাসায় থেকে গেলাম।"

---তানজিলা ভাবি কাপড়গুলো ভাজ করছে, আর আমি তারিনের সাথে খেলছি ভাবির রুমে বসে।

"তিশা পড়ালিখা কি নেই তোমার।দিনদিন পড়ালিখা নিয়ে বেশ অবহেলা দেখছি।
জিসান জানতে পারলে কিন্তু তোমার খবর আছে।(তানজিলা) 

---ভাবি ভয় দেখিও নাতো।আমাকে তারিনের সাথে খেলতে দেও।
ভাবি তারিনতো বড় হয়ে যাচ্ছে আরেকটা বাবু কেনো নিচ্ছো না।তাহলে আমি আর তারিন একটা খেলার সাথি পেতাম।তাইনা তারিন।
তারিনও খিলখিলে এ হেসে দিলো কি বুঝলো আল্লাহই জানে।

"দেবরানী,আমি একটাতেই খুশি।এখন তোমার পালা। তোমার  স্বামীকে বলো এই কথা।তোমার জন্য একটা বেবি এনে দিবে।"

--ভাবি, তুমিও না....।

"কি হলো,দেবরানী এখন লজ্জা পাচ্ছো কেনো।"

---ভাবি তোমার সাথে আর কোনও কথা নেই,সরো তো।আমার পড়া আছে,আমি পড়তে বসবো।

"হুম,যাও,যাও।তোমার হিরো আসলে আবার অন্য পড়া শুরু করবে।"

---আমি লজ্জায় ভাবির রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে এসে পড়লাম।কি সব বলে,আল্লাহ। এই বাড়ীর সব পাবলিক একটু লাগাম ছাড়া।

"তিশা পড়ার টেবিলে বসে ভাবছে,সত্যি আমার যদি একটা বেবি হয়,তাহলে কতো ভালো হতো।কিন্তু এই হিটলার  যদি শুনে আমি বিয়ে হতে না হতে বেবি নিতে চাই।কে জানে কি করবে।এমনেই আমাকে বলে দিয়েছে উনাকে আর পড়ালিখা ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে আমি যেনো চিন্তা না করি,সংসার নিয়েও যেনো একদমই মাথা না ঘামাই,আমার নাকি সংসার করার বয়স হয়নি।তাহলে বিয়ে করছে কেনো হিটলার আমায়। "
__________

"জিসান ক্লাবে বসে রনির সাথে কথা বলছিলো,ওই সময় রায়হান ও ক্লাবে আসে।রনি রায়হানকে দেখে ডাক দেয় এখানে আসতে।রায়হান সবার সাথে দেখা করে,রনির কাছে আসে।আর এসেই জিসানকে দেখতে পেলো।আজ অনেকদিন পর তাদের দেখা হলো।সেদিনের পর থেকে রায়হান আর জিসানের মাঝে কোনও কথা হয়নি।জিসান বসে মোবাইলে কিছু দেখছিলো।রায়হান গিয়েও জিসানের পাশে বসে হাতে একটা ড্রিংকস তুলে নেয়।"

---জিসান মাথা না তুলেই,তুইতো ড্রিংকস করতি না,তা আজ হঠাৎ ড্রিংকস করতে মন চাইলো কেনো।শুনেছি প্রেম করে বিয়ে করেছিস,তোর বউ কিছু বলবে না।এখনতো এসব ছাড়ার পালা,আর তুই শুরু করছিস।বউ আবার ছেঁকাটেকা দেয়নি তো।

"রায়হান মলিন হাসি দিয়ে,হঠাৎ অনেক কিছু হয়ে যায়,হঠাৎ করে জীবনটা পালটিয়ে যায়,হঠাৎ সব শেষও হয়ে যায়।এতো হঠাৎ এর মধ্যে আমার হঠাৎ ড্রিংকস নেওয়াটা খুবই তুচ্ছ বিষয় তাই না।"

---হুম,ঠিক বলছিস।তুইতে আবার ভদ্র ছেলে,সবই খুব বেশি বুঝিস।জিসান পকেটে মোবাইলটা রেখে,নিজের হাতেও একটা সোপ্ট ড্রিংকস তুলে নেয়।
হয়তো খুব শীঘ্রই দাওয়াত পাবি।তবে তোকে দাওয়াত আগেই দিয়ে দিলাম।পরে যাতে কোনও বাহানা করতে না পারিস।

"রায়হান ভ্রুকুচকে জিসানের দিকে তাকায় বাকি কথা শুনার জন্য।"

---জিসান রায়হানের দিকে না তাকিয়েই বলে,নিশির বিয়ের কথা আমার কাজিন নীড়ের সাথে চলছে।মা তো পারে না কালই বিয়ে দিয়ে দেখ।কিন্তু নিশির জন্য আমরা ওয়েট করছি।আই হোপ ও এবার রাজি হবে।না হবার কারণতো নেই।

"রায়হান কিছুক্ষণ জিসানের দিকে তাকিয়ে থেকে,মুখটা ঘুড়িয়ে ফেলে।হাতের গ্লাসে রাখা ড্রিংকসটি এক ঢোকে শেষ করে ফেললো।ওয়েটারকে দিয়ে আরও কিছু ড্রিংক এনে সেগুলোও শেষ করে দিলো।জিসান বসে বসে শুধু রায়হানের কান্ড দেখছে। 
কয়েকজন ফ্রেন্ডস এসে রায়হানকে আটকানোর চেস্টা করলো,কারন রায়হানের এসব খাওয়ার অভ্যাস নেই।কিন্ত কেউ পারলো না।
নিশির বিয়ের কথা শুনেই যে ওর ভেতরে আগুন লেগে গিয়েছে।জিসান তা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে।জিসান জানে কোথায় কি বলতে হয়,আর কাকে কিভাবে টাইট দিতে হয়।"

---রাওয়া ক্লাব,ঢাকার অভিজাত ক্লাবগুলোর মধ্যে একটি।এই ক্লাবের দ্বিতীয় তলায় কার্ডরুম বার এ জিসান আর রায়হান বসে আছে।জিসান সম্পূর্ণ তালে,আর রায়হান বেতালে।কিছুক্ষণ পর রায়হান উঠে করিডোর এ চলে যায়,একটু মুক্ত বাতাসের প্রয়োজন।চোখ বন্ধ করে কিছু একটা ভাবার চেস্টা করছে।

"ঠিক তখনি জিসান প্যান্টের পকেটে দুহাত রেখে রায়হানের কাছে এসে দাঁড়ালো।"

---ইতিহাস তুই শুরু করবি,নাকি আমি খোঁজ নেবো।এই কথা বলেই একটা সিগেরেট ধরালো।ধূয়াগুলো বাতাসে উড়িয়ে রায়হানকে আবারও প্রশ্ন করলো,জানিস তো রায়হান আমি আর তুই কথা দিয়েছিলাম আমরা দুজন দুজনার কাছ থেকে কিছুই লুকাবো না,তুই কিন্ত বন্ধুত্বের সব শর্ত ভেঙ্গে দিচ্ছিস।
"রায়হান মলিন একটা হাসি দিয়ে,জিসানের হাতে থেকে সিগেরেট টা নিয়ে নিজেও টানতে লাগলো।"

---দুবন্ধুর মাঝে চললো কিছু না বলা কথা অনেকক্ষণ।

"আকাশপানে তাকিয়ে আছে রায়হান আর জিসান।দুজনেই চুপ,কিন্তু আজ দুজনের মন কিছুটা হলে শান্তি পেয়েছে।এতোদিন দুজন আলাদা থেকে ভেতরে ভেতরে অনেকটা ভেঙ্গে গিয়েছিলো।"
_________

"জিসান বাসায় আসতে আজ একটু লেট করে ফেলেছে।ভেবে নিয়েছিলো তিশা হয়তো ঘুমিয়ে গিয়েছে।রুমে প্রবেশ করে দেখে ঘরটি পুরো অন্ধকার,তবে ড্রিম লাইটের আবছা আলোতে দেখা যাচ্ছে বিছানা খালি।মুখে কিঞ্চিত হাসি ফুটে উঠলো,এটা ভেবে যে তার প্রিয়তমা বউটি তারই জন্য জেগে আছে।।হাতের কোটটা আর টাইটা খুলে পাশের সোফায় রেখে দিলো।আস্তে আস্তে তিশার দিকে পা বাড়ালো।"

---বালকানিতে দাঁড়িয়ে আছে তিশা,হালকা বাতাসে তিশার চুলগুলো উড়ছে,সাথে শাড়ীর আচলটি।

"জিসান বারান্দার দরজায় হেলান দিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তিশার দিকে।লাল জরজেট এর শাড়ীতে পরিধান তিশাকে দেখে আজ একদম ওদের বিয়ের প্রথম রাতের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে জিসানকে।
তাদের প্রথম মিলনের রাত ছিলো,যা জিসান কোনও দিনও ভুলবে না।আজও তিশাকে সেই দিনের মতোই এতো সুন্দর লাগছে।
জিসান নিজের মনেই বলে ফেললো,জিসান তু তো গেয়া আজ।এই রমনী তার জাদু দিয়ে তোকে একদিন মেরেই ফেলবে।"

---জিসান তিশাকে জড়িয়ে ধরে,চুলে মুখ ডুবালো।

"তিশাও জিসানের হাতের উপর নিজের হাতটা রাখলো।
কখন এসেছেন।আমিতো বুঝতেই পারলাম না।"(তিশা)

---এতো চিন্তায় মগ্ন থাকলে কিভাবে বুঝবি।

"হুম।"

---তিশাএএএএ

"হুম"।

---আপসেট।(জিসান)

"উঁহু।"

---মুড ভালো না।(জিসান)

"তেমন কিছু না।"

---জিসান তিশার ঘাড়ে নাক ঘষতে ঘষতে কানের কাছে এসে কানের লতিতে হালকা একটা কামড় দিয়ে দিলো।মুড করার জন্য কি করতে হবে এখন।

"জিসানের এমন বিহেভে তিশা একটু কেঁপে উঠলো।কিছুই ক করতে হ হবে না।অনেক রাত হয়েছে চলুন ঘুমাবেন।"

---তিশা যেতে চাইলে জিসান আরো শক্ত করে ধরে,পালাতে চাস।তাও আবার আমার কাছ থেকে।তিশাকে এক ঝটকায় নিজের সামনে ঘুড়িয়ে।আগেই দিই নাই,আর এখন তো ইম্পসিবল।

"তিশা তাকিয়ে দেখে জিসান কেমন নেশাভরা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।জিসানের এমন তাকানোতেই তিশা যেনো লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।"
--কিন্তু জিসানের সেদিকে কোনও খবর নেই।সেতো তার প্রিয়তমার মুড বানাতে ব্যস্ত ।জিসান যখন বুঝতে পারলো,ওর পদ্ধতি কাজ দিয়েছে,সাথে সাথে তিশাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো।
এর পর কি হবে তা ভেবেই তিশা লজ্জায় মুখ লুকালো জিসানের বুকে।জিসান এমনেই আজ অনেকটা খুশি রায়হানের সাথে কথা বলে।আর নিজের এই আনন্দটাকে আরো ডাবল করবে,তার ভালোবাসার মানুষটির মাঝে আজ আবার ডুব দিয়ে।"

----সকালে তিশার ঘুম আগে ভাঙ্গে, চোখ খুলে নিজেকে জিসানের বুকের উপর শুয়ে থাকতে পায়। মাথাটা হালকা উঠিয়ে দেখে জিসান মুখটা হা করে ঘুমিয়ে আছে।জিসানের মুখ হা করা দেখে তিশার ভীষন হাসি পেলো।হাত দিয়ে মুখটা বন্ধ করে,গালে একটা ডিপলি কিস করে,গুড মর্নিং কানের কাছে গিয়ে।

"জিসানও তিশাকে দুহাতের মধ্যে নিয়ে জড়িয়ে ধরে,কপালে একটা আদর দিয়ে দিলো।গুড মর্নিং জান।তো কাল রাত আপনার কেমন কাটলো।"

---তিশা জিসান থেকে নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে,অসভ্য। মুখে কিছু আটকায় না।ছাড়েন আমাকে,আজ কলেজ এ যেতে হবে আমায়।

"কিন্তু জিসানতো ছাড়ার মানুষ না,যখনই তিশা দূরে সরতে চায়,জিসানের তখন তিশাকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আরো বেরে যায়।আজও তাই হলো,তিশাকে আরো কিছুক্ষন জ্বালালো।"

---তিশা জিসানের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে,কিছুক্ষণ আগে জিসানের ভালোবাসার টর্চারে ব্যাচারী ক্লান্ত হয়ে পরেছে।

"জিসান তিশার চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
তিশা।"

--হুম।

"রায়হানের সাথে কথা বলিস না কেনো।"

---তিশা এবার মাথা উঠিয়ে জিসানের দিকে তাকায়,আপনি জানেন কি করে।

"রায়হান বলেছে।"(জিসান)

---ভাইয়ার সাথে কথা হয়েছে।

"তিশার মুখের সামনের চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে।হুম,কাল ক্লাবে দেখা হয়েছে।"

---তিশা চাদরটা সুন্দর করে জড়িয়ে উঠে বসলো।ভাইয়ার জন্য নিশি আমার সাথে কথা বলে না।ও আমাকে ভুল বুঝে বসে আছে।আমি রাগ, তার উপর ভীষন রাগ।নিশিকে এতোটা কষ্ট দেওয়ার কোনও রাইট নাই ভাইয়ার।

"জিসানও উঠে বসলো।তিশার কোমড়টা ধরে তিশাকে নিজের কোলে বসালো।নিজের হাতের আঙ্গুল গুলো দিয়ে তিশার হাতটা মুঠে করে নিয়ে নিলো।

দেখ জান,মাঝে মাঝে না চাওয়া সত্যেও আমাদের এমন কিছু কাজ করতে হয়,যার ফলে আমাদের ঘনিষ্ঠ মানুষগুলো হয়তো খুব কষ্ট পায়।কিন্তু তবুও সবার হিতের জন্য আমাদের করতে হয়।রায়হান খুব বুদ্ধিমান ছেলে,ও এমনেই না বুঝে এসব করবে না।হয়তো কোনও রিজন আছে।সেটা একদিন জানা যাবে।কিন্তু তুই যে ভুল বুঝে রায়হান কে কষ্ট দিচ্ছিস তা একদম ঠিক না।তুই জানিস না রায়হান তোকে অনেক ভালোবাসে।হয়তো প্রকাশ করে না,কিন্তু তোর জন্য নিজের জীবনটা দিতেও ভাববে না।"

---তিশা জিসানকে হঠাৎ জড়িয়ে ধরে,আপনি এতো ভালো কেনো বলেন তো।ভাইয়া এতো কিছু করার পরও আপনি একটি বারও আমার বা ভাইয়ার উপর রাগ করেনি। আপনার কি রাগ হয়না।

"জিসান একটু মুচকি হেসে,আরে পাগলি আমি রাগ করবো তো কার উপর করবো।তোরা দুজনই আমার জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। তাহলে রাগ করার প্রশ্নই আসে না।"

---আর নিশি?(তিশা)

"নিশি আমার বোন,ওর সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক। ও কষ্ট পাক বা ওর ক্ষতি হয় এমন কিছুই করবো না।কিন্তু আল্লাহ যদি ওর কপালে রায়হানকে না লিখে তাহলে কিছুই করার নেই।আমি বলছি না, যা হয়েছে ঠিক হয়েছে।আমি বলবো সময়ের কাছে ছেড়ে দে সবকিছু।সময় বলে দিবে কি হবে।নিশির কপালে যা লিখা আছে তাই হবে।তাই এসব চিন্তাভাবনা ছেড়ে দে।"

---তুই আজই ফোন দিয়ে বাসায় সবার সাথে কথা বলবি।মা নাকি কান্না করে তোর জন্য।
তিশা মাথা নাড়ায়,হ্যা।

"এরপর জিসান উঠে ফ্রেস হতে চলে গেলো,আর তিশা ভাবছে কতোটা লাকি আমি জিসান,আপনাকে পেয়ে।কিভাবে আমার সব কষ্টও গুলো নিমিষে দূর করে দেন।আমি আসলেই অনেক ভাগ্যবতী। "
____________

"রুহি রাত দিন চেষ্টা করছে রায়হানের মন জয় করতে কিন্তু কোনও কিছু করে কিছুই পাচ্ছে না।রায়হান রুহির সাথে কথা বলাতো দূরে থাক তাকাও না।সকালে নাস্তা রুহি বানায় বলে,নাস্তা না করেই ঈদানিং অফিসে চলে যায় রায়হান।আর রাতেও খুব দেরি করে বাসায় আসে।এমনকি রায়হান রুহির সাথে এক রুমেও থাকে না।রুহি বিয়ের পর থেকেই তিশার রুমে থাকে।রায়হান নিজের রুমেও জায়গা দেয়নি।"

---দিনদিন রায়হানের অবহেলা গুলো,রুহিকে বিরক্ত করে তুলছে।শুধু রায়হান না রেনু বেগমও রুহির সাথে তেমন কথা বলে না।বিয়ের আগে কতে না গল্প করতো,অথচ এখন রুহির দিকে তাকাও না।

রুহি ভাবতে লাগলো,এতো কিছু করেও কি লাভ হলো।রায়হান কে পেয়েও আজ পেলো না ও।এর অধিক অধিকার চাইলে নাকি রায়হান নিজের জীবন শেষ করে দিবে।তাইতো রায়হানকে হারানোর ভয়ে নিজের স্ত্রীর অধিকার চাইতে সাহস পায় না রুহি।কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।
.............
----বিলাশবহুল হোটেল AMARI DHAKA (আমারই ঢাকা)তে আজ একটা বিজনেস পার্টি আয়োজন করা হয়েছে।আর এই পার্টিতে পুরো আহমেদ ভিলার লোকজনও ইনভাইটেশন পেয়েছে।তাই না চাওয়া সত্যেও সবাইকে আজ পার্টিতে উপস্থিত হতে হয়েছে।কারন পার্টিতে ইনভাইট করা ব্যক্তিটি আহমেদ কোম্পানির খুব পুরাতন ক্লাইন্ট।আর ক্লাইন্টদের মন রক্ষার্থে এসব পার্টিতে উপস্থিত থাকতে হয়।

"জিসান আর তিশা বাদে সবাই পার্টিতে এসে পরেছে।কারন তারা একসাথে আসবে।"

---তিশা রেডি হয়ে ড্রয়িংরুম এ বসে জিসানের জন্য ওয়েট করছে,কিন্তু জিসান বাসায় এসেই তিশার উপর ক্ষেপে যায়।কারন তিশার পাড়নের শাড়ীটি একটু বেশি পাতলা।আর তিশার এতো সাজগোজ জিসানের একদমই পছন্দ না।দাঁতেদাঁত চেপে জিসান জিঙ্গেস করলো,

এসব কি পরেছিস তুই।পার্টিতে যাচ্ছিস নাকি মডেলিং করতে,ঠিক করে বলতো।

"তিশা জিসানের কথার আগামাথা বুঝতে না পেরে,কেনো কি হয়েছে।আমাকে ভালো লাগছে না।সবাই যে বললো আমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।তাহলে!

---জিসান আর কিছু না বলে,তিশার হাতটা ধরে রুমে নিয়ে গেলো।কাবার্ড থেকে একটা পেকেট বের করে তিশাকে দিয়ে বললো,এটা পড়ে রেডি হো তারাতারি। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

"তিশা খুশিতে গদগদ হয়ে পেকেট টা খুললো,কিন্তু ওর হাসি বেশিক্ষন থাকলো না।পেকেটটার ভেতরে ছিলো একটা ডিজাইনার আবেয়া আর হিজাব।তিশা এসব হাতে নিয়ে বেড এ বসে পরেছে।"

---জিসান ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখে তিশা এখনো বসে আছে,এগুলো হাতে নিয়ে।জিসানের রাগ উঠলেও নিজেকে সংযোত করে নেয়।তিশার সামনে হাটু গেড়ে বসে,কি হলো জান।ডিজাইন পছন্দ হয়নি।

"তিশা কাঁদো কাঁদো ফেস নিয়ে বলে,আমি পার্টিতে এসব পরে যাবো।"

---তিশার হাতটা ধরে,আমি এসব বিজনেস পার্টিগুলো একদম পছন্দ করি না।কিন্তু বিজনেস এর জন্য সৌজন্যতা বজায় রাখতে যেতে হবে,তাও আবার তোকে নিয়ে।আমি আগেও বলেছি তোকে কেউ দেখুক সেটা আমি চাই না।যেখানে তোর কলেজে বোরকা ছাড়া যেতে দিই না, সেখানে এসব পার্টিতে তোকে এভাবে নিতেই আমার ভয় করে।
কে কিভাবে আসছে তা আমার দেখার বিষয় না,আমি চাই তুই একদম শালিন পোশাক পরে সেখানে যাবি।বল,আমি কি খুব বেশি চাইছি।

"তিশা মাথা নাড়ায়,না।জিসানের দেওয়া পোশাকগুলোই তিশা পরে ভালো মতো হিজাবটা বেধে নেয়।"

---জিসানও রেডি হয়ে গাড়ীর সামনে অপেক্ষা করছে।

তিশা রেডি হয়ে নিচে নেমে গাড়ীর সামনে আসলে,জিসান তিশার মুখটা ধরে,মাশআল্লাহ অসাধারণ লাগছে তোকে।এর পর দুজনেই গাড়ীতে  উঠে পার্টিতে রওনা দিলো।

"পার্টিতে রায়হানও আসছে।তবে যথারীতি কারো সাথে কথা না বলে বারে বসে আছে।আপাততো রায়হানের তীক্ষ্ণ নযর নিশির দিকে।কারন নিশি সেই কখন থেকে নীড়ের সাথে চিপকে আছে,যা রায়হানের একদমই সহ্য হচ্ছে না।মন তো চাইছে,হাত ধরে টেনে নিশিকে নিজের কাছে নিয়ে আনতে।কিন্তু সেই অধিকার কি আছে এখন।"

---এই হোটেলের রুপটপে পার্টিটা আয়োজন করা হয়েছে।কারন রুপটপ থেকে বাহিরের ভিউটা দেখতে চমৎকার।

"গুলশান -২ এর ৪১নং রোডে অবস্থিত হওয়ায়,যাতায়াততে তেমন কোনও সমস্যা নেই।তাই জিসান, তিশাও তারাতারি পার্টিতে জয়েন হতে পরেছে।তিশাকে মা আর তানজিলার কাছে রেখে জিসান বাকি বিজনেস ক্লাইন্টদের সাথে দেখা সাক্ষাত করতে গিয়েছে।"

---এতোক্ষন পর নিশিও রায়হান কে খেয়াল করলো।চোখে চোখ পড়ায় সাথে সাথে চোখ সরিয়ে ফেললো নিশি।এই লোকটির আর কোনও মায়ায় নিজেকে জরাতে চায় না ও।যে আমার না তাকে দেখারি বা কি দরকার।

"কিছুক্ষন পর কাপেল ডান্স শুরু হলো,যারা ডান্স করবে তারা ডান্স ফ্লেরে এসে পরছে।জিসানও তিশার সাথে জয়েন হয়েছে।তবে সবার মুখে মাস্ক দেওয়া নিজ নিজ পছন্দ মতো।নিশিও ভেবে নিয়েছে ও ডান্স করবে,তাই নীড়কে বললো মাস্ক নিয়ে আসতে।"

---হঠাৎ সব লাইট নিবে গেলো।কেবল ডিজে লাইট জ্বলছে।গানও চালু  হয়ে গেলো,নিশি ওয়েট করছে নীড়ের জন্য।

হঠাৎ কেউ নিশিকে টান দিয়ে ডান্স ফ্লোরে নিয়ে আসলো।একহাত দিয়ে শক্ত করে নিশির কোমড়টা চেপে ধরলো, আরের হাত দিয়ে নিশির হাত ধরে নাচতে লাগলো।নিশি বুঝে উঠার আগেই এসব হলো।একতো ডিজে লাইট,যার কারনে সাদাকে আর কালোকে কিছুই বুঝা যায় না।তার উপর মাস্ক পড়ে থাকার কারনে নিশি চিনতে পারলো না রায়হানকে।
প্রথমে নিশি নীড় মনে করলেও পরে বুঝতে পারে এটা নীড় না।তাহলে কে?

"নিশি ছুটার চেস্টা করে কিন্তু রায়হান নিশির কোমড় ধরে আরো কাছে টেনে এনে শক্ত করে ধরে।নিশি অনুভব করে লোকটির নক ডুকে গিয়েছে ওর কোমড়ে।নিশি বুঝতে পারছে না কি হচ্ছেটা কি ওর সাথে।নিশি লোকটিকে যতোই সরানোর চেস্টা করছে।রায়হান নিশিকে ততোই নিজের কাছে টেনে নিচ্ছে।হঠাৎ রায়হান এর পারফিউম এর ঘ্রান নিশির নাকে আসে।নিশি একটু চুপ হয়ে যায়।লোকটির দিকে তাকিয়ে বুঝার চেস্টা করে,আসলে কে?কেনো জানি মনে হচ্ছে এটা আর অন্য কেউ না রায়হান ভাই।

চলবে......।

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]


No comments