Update Story
📢 গল্পঃসিনিয়র_খালাত_বোন_যখন_বউ পর্বঃ০৬    📢 গল্পঃসিনিয়র_খালাতো_বোন_যখন_বউ পর্বঃ০৫    

ভাইয়ের_বন্ধু_যখন_বর😍 -----------(season 2) part_8🍁




"আমি অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি তখন।বাড়ীর কাছেই স্কুলটা ছিলো আমার।তাই প্রতিদিন একাই যাওয়া আসা করতাম।স্কুলে যেতে আমার খুব ভালো লাগতো।কারনটা পড়া লেখা ছিলো না।
পড়া লেখায় আমি বরাবরই কাঁচা ছিলাম।ডক্তর, ইন্জরীয়ান হবার কোনও শখ কোনও কালই ছিলো না,তাই পড়া লেখায় এতো সিরিয়াস কখনো হইনি।…কিন্তু এতোটুকু বুঝতাম আজকাল একজন মেয়ের নিজের পায়ে দাঁড়াবার জন্য পড়ালেখা করাটা জরুরী।তাই চালিয়ে যেতাম।"

----স্কুল আমার প্রিয় জায়গাটার মধ্যে একটি ছিলো।কারন এখানে এসে আমি বিন্দাস চলতে পারতাম।বাসায় তো মায়ের বকনি থাকে ননস্টপ, আর রায়হান ভাইয়ের শাসন।উফফ!
আমি এদের জ্বালায় হাফিয়ে উঠতাম।

'-ভালোর মধ্যে ছিলাম আমি আর বাবা।বাবা বরাবরই নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতো তাদের মাঝে।তবে আমায় অনেক আদর করতো।এই মানুষটিকে সব সময় আমার পাশে পেয়েছি।আমি যতোই ভুল করিনা,বাবা একটি হাসি দিয়ে শুধু বলতো………ভুলই তো করেছে,কারো খুনতো করেনি।বাদ দেও……………।
মা তখন বাবার উপর চরম বিরক্ত হতো।অথচ বাবার তাতে কোনও রিয়েকশন হতো না।'

"বাবার পরে কেউ যদি আমায় বুঝতো তারা হলো আমার স্কুল লাইফের ফ্রেন্ডসরা।আর এই  ফ্রেন্ডসদের সাথেই আড্ডা,আর মাঝে মাঝে টিচারদের সাথে কিছু দুষ্টুমি করে দিনগুলো ভালোই চলছিলো।"

---কিন্তু একদিন ঘটলো এক অঘটন।আমি স্কুল ছুটির পর আমার কিছু ফ্রেন্ডসদের সাথে দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি খাচ্ছিলাম।ইউসুফ চাচার ঝালমুড়ি। আমাদের এলাকার বেস্ট ঝালমুড়ি উনি বানায়।শুধু আমাদের এলাকা না, তার ঝালমুড়ি খেতে  অন্যান্য জায়গা থেকে লোকজন এসে ভিড় জমাতো।
এতোদিন অবশ্য উনি ছিলেন না।শুনেছিলাম চাচা নাকি গ্রামে গিয়েছিলো।উনার একমাত্র মেয়ের বাচ্চা হবে।তাই চাচাও এতোদিন মেয়ের সাথেই ছিলো।এতোদিন পর চাচাকে পেয়ে সবাই ভিড় জমালো আবার।

"আমিও চাচার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম, চাচা খুব প্রাণবন্ত মানুষ।সবার সাথে খুব সুন্দর করে হেসে কথা বলে।তার সাথে কথা বলে কেউ বুঝতেই পাড়বে না,উনি অশিক্ষিত। 
যেখানে আমাদের সমাজে শিক্ষিত লোকগুলো নিজের শিক্ষার অহংকারে এমন ভাব করে যে,অল্প শিক্ষিত মানুষ গুলো কে নগন্য মনে করে।কিন্তু তারা কেনো বোঝে না,শিক্ষিত হলেই মানুষ হওয়া যায় না,মানুষ হতে হলে আগে নিজের মনুষ্যত্বকে জাগাতে হবে।
যাই হোক____আমাকে দেখে চাচা হাসিমুখে জিঙ্গেস করলেন কেমন আছো মামুনি।"

'--আলহামদুলিল্লাহ চাচা।আপুরতো বেবি হয়েছে।কি বেবি।'
'--চাচা আমার দিকে তাকিয়ে হাসিটা আরো একটু বড় করে বললো,একটা রাজকন্যা হইছে।দেখতে জানো একদম তোমার মতো।টোকা দিলেই মনে হয় এহনি রক্ত ঝড়বো।

---আমিও চাচার কথায় একটা মিস্টি হাসি দিলাম।কিন্তু আমার সেই হাসিটা হয়তো একজনের একদমই  পছন্দ হয়নি।তার গায়ে জ্বালা বাড়িয়ে দিয়েছে।হঠাৎ কিছুর শব্দ ফেলাম।শব্দটা ছিলো থাপ্পরের।কেউ আমাকে খুব জরে একটা থাপ্পর মারলো।না চাওয়া সত্যেও চোখ দিয়ে একফোঁটা পানি পরলো।
এতোগুলো মানুষের সামনে কে এটা করলো,তাকেতো আজ আমি মেরে কাবাব বানিয়ে রাস্তার কুকুর বিড়ালদের খাওয়াবো।এমন আকাশ পাতাল চিন্তা করে সামনে তাকাতেই আমার সব রাগ ফুস।

"এই প্যারা কোথা থেকে আসলো নিজের অজান্তেই বলে ফেললাম।"

--একজোড়া রক্তিম চোখ আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে এখনি আমাকে চিবিয়ে শরবত বানিয়ে খাবে।আমি শুকনো একটা ডোক গিলে জিঙ্গেস করতে যাবো,তার আগেই জিসান নামের এই প্যারা আমার হাতটা ধরে টেনে বাইকে বসালো।
উনার এমন রুড বিহেভিয়ার আমার একদম পছন্দ না।সবসময় আমার সাথে এমন করে।আমার সব বিষয় তার নাকটা না ঢুকালে কি হয় না।না সে তবুও ঢুকাবে।কেন রে ভাই তুই আমার কে?শুধু ভাইয়ের বন্ধু বলে সহ্য করি।কিন্তু সব কিছুর একটা সীমা থাকে।

'বাইক বাসার সামনে এসে থামলে,আমি তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই দৌঁড়ে বাড়ীর ভেতরে চলে গেলাম।'

||
||

"মনটা ভীষন খারাপ,তাই ছাদে খোলা চুল গুলো ছেড়ে দাঁড়িয়ে আছি।হালকা মৃদ বাতাস এসে চুলগুলোর সাথে যেনো খেলা করছে।দূরের আকাশে কিছুটা মেঘ জমে যাওয়ায় সূর্যের গ্লানিটা কম লাগছে।মন ভালো করার মতো একটা পরিবেশ,কিন্তু আমার মনটা ভালো নয়।"

---একটুকরো ঘনকালো মেঘ যেনো আমার মনের বাগানকে ঘিরে রেখেছে।আর যে কোনও সময় সেই মেঘ থেকে বৃস্টি নেমে পড়বে, আর আমাকে ভিজিয়ে দেবে।আর এতে আমার ঠাণ্ডা, কাশি,জ্বর হলেও কারো কিছু আসে যায় না।ঠিক যেমন আজ হলো।

"আজকের ঘটনা জানার পরও রায়হান ভাইয়ের নিরব ভুমিকা আমার ছোট্ট মনটাকে অভিমানে ভরিয়ে দিলো।রায়হান ভাইয়ের কাছে বোনের থেকে বন্ধুর মূল্যটা মনে হয় বেশি,তাইতো এমন করলো।
শুধু কি রায়হান ভাই,আমার মায়ের ও তো একই অবস্থা।জিসান বলতে পাগল।আমার মায়ের নযরে জিসান ভাই যা করে তাই ঠিক,তার কোনও কাজ ভুল হতেই পারে না।সে তো যথারীতি সবাইকে বলেই বেড়ায় তার দুটো ছেলে।রায়হান আর জিসান।"

---আমি যে তার  এক মাত্র মেয়ে তার সামনে বার বার উঁকিঝুঁকি দিয়ে বোঝানোর চেস্টা করি,আমার নামটাও বলো,তাহলে জনসাধারণ মানুষ আমাকেও চিনতে পারবে।কিন্তু না,প্রত্যেক বারের মতো আমার ভাবনায় মা এক বালতি জল ঢেলে বলবে,
___কি এমন অসাধারণ কাজ করেছিস, যে তোর নামের ঢোল পিটাবো।আরে একবার তো ক্লাশে প্রথম হয়ে দেখা,তখন দেখবি আমি কি করি।এলাকার প্রত্যেকের ঘরে ঘরে গিয়ে তোর সুনামের জয় জয় করে বেড়াবো।দরকার পড়লে,তোর ছবিও দিয়ে আসবো,যাতে রাস্তা ঘাটে সবাই তোকে চিনতে পারে।

"-মায়ের এমন কথায় বারাবারের মতো আমার এই পিচ্ছি মনটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো,আমি বুঝতে পারলাম এই জনমে আমি ক্লাশে প্রথম হতে ও পারবো না,আর মায়ের মুখে নিজের জয়ধ্বনি শোনাও হবে না।হায়রে আমার কপাল!উনি থাক উনার দু'ছেলে নিয়ে।"

----জিসান ভাইয়ের প্রতি আমার মায়ের এই অগাধ ভালোবাসার একটি কারন আছে।জিসান ভাই রায়হান ভাইয়ের বাল্যকালের বন্ধু।তারা স্কুল,কলেজ,ভার্সিটি সব জায়গায় এক সাথে ছিলো।এতো বছরেও তাদের বন্ধুত্ব্যের কোনও ফাটল ধরেনি,বরং বেড়েছে।

"মায়ের মুখে শুনেছিলাম,রায়হান ভাই আর জিসান ভাই যখন ক্লাস সেভেন বা এইটে পড়তো,তখন একদিন স্কুল ছুটির পর দু'বন্ধু স্কুলের পাশের মাঠে ক্রিকেট খেলছিলো।খেলার সময় হঠাৎ বলকে জোরে মারায় বল মাঠ থেকে রাস্তায় গিয়ে পড়লো।
রায়হান ভাই বেখায়াল হয়ে বলটা নিতে গেলো।সামনে আসা ট্রাকটার দিকে কোনও ধ্যান ছিলোনা।কিন্তু জিসান ভাই ঠিক সময় এসে রায়হান ভাইকে ধাক্কা মারে।রায়হান ভাইয়ের কিছু না হলেও জিসান ভাই  প্রচণ্ড ব্যাথা পায় সে দূর্ঘটনায়।"

--এর পর থেকেই জিসান হয়ে উঠে আমার পরিবারের সরিষা ফুল।আর আমি হলাম তাদের বাগানের কাটা।আমাকে কেউ ভালোবাসে না।উম!

"-হঠাৎ মনে হলো আমার পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।আমি ঘুড়ে দেখি জিসান ভাই পেন্টের পকেটে হাত ডুকিয়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,আমি তাকাবার সাথে সাথে চোখগুলো অন্যদিকে ঘুরিয়ে বললো,এখানে কি করছিস তুই।

----আমি তার কথা শুনেও না শোনার ভান করে চলে যেতে চাইলাম,কিন্তু কপাল আমার পারলাম কই।তার আগেই জিসান ভাই আমার হাতটা ধরে ফেললো।আমাকে সামনে দাঁড় করিয়ে বলে____এক কদমও নড়বি না,আমি না বলা পর্যন্ত।

"না চাইতেও দাঁড়াতে হবে,কারন তার কথা না শুনলে,নিজের কপালে নিজের কুড়াল মারা সমান।কখন কি করে বসে আল্লাহই জানে।"

---জিসান ভাই খুব গম্ভীর কন্ঠ বললো_____বড় হচ্ছিস, শরীরের গঠনরূপে পরিবর্তন আসছে,এখনো কি তকে বলে দিতে হবে রাস্তাঘাটে তোকে কিভাবে চলা ফেরা করতে হবে।নিজের ভি বেল্টাকে ও সামলাতে পারিস না।তাহলে পরিস কেনো।

'জিসান ভাইয়ের এ কথায় আমি উনার দিকে তাকালাম,এখন মাথার সব নাটবল্টু গুলো কাজ করতে শুরু করলো,আমি এতোক্ষনে বুঝতে পারলাম,পাবলিকের সামনে আমাকে মারার রহস্য।'

---আমি লজ্জায় মাথাটা নিচু করে ফেললাম,ছিঃ!এমন দূর্ঘটনা গুলো অলটাইম জিসান ভাইয়ের সামনেই কেনো হয়।
তখন নিশ্চয়ই  সবাই দেখেছে কি লজ্জার বিষয়,সাথে জিসান ভাইও।আমার তো মাটি খুঁড়ে ডুব দিতে মন চাইছে।

"আমার অবস্থা বুঝে জিসান ভাই বললো______আজ লাস্টবার বলছি,এর পরও এমন ভুল দেখলে।আর এমন বেখায়াল ভাবে চলাফেরা করলে,তোর জন্য ভালো হবে না।আমাকে ভালো করেই জানিস তুই।
তোর ঘরে দু'টো সাদা ওড়না এনে রেখেছি।কাল থেকে ও গুলো পরে যাবি স্কুলে।"

"আমি কি বলেছি শুনতে পেয়েছিস।" (একটু চিৎকার দিয়ে)

"আমি তার ধমকে একটু কেঁপে উঠলাম,মাথা নেড়ে হ্যা বললাম।"

---এখন রুমে যা,কিছুক্ষন পর সন্ধ্যার আযান দিবে,এই সময় কখনো ছাদে আসবি না।রুমে গিয়ে পড়তে বস।

'তিশা আর এক মিনিটও অপেক্ষা করেনি,দৌঁড়ে নিচে চলে গেলো।'

||
||

"আজ জিসান ভাইয়ের পুরো পরিবার আসছে আমাদের বাসায়,শুধু তাওহিদ ভাইয়া ছাড়া।নিজের বিয়ের দাওয়াত নিজে দিতে হয়তো লজ্জা পাচ্ছে তাই হয়তো আসেনি।
'আর এছাড়া তাওহিদ ভাই খুব ব্যস্তও থাকে।জিসান ভাই থেকে তিন থেকে চার বছরের বড় হবে উনি।বিদেশ থেকে ডাক্তারী পড়ে এসেছে। এখন নিজেদের হসপিটালের পুরো দায়িত্ব নিজের কাধে নিয়েছে।
ঢাকা শহরে প্রায় তিন তিনটি হসপিটাল তাদের।এর মধ্যে একটাতে গরীব দুঃখীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেয়া হয়।এসব হসপিটাল গুলো তাওহিদ ভাইয়া এখন একাই সামলায়।খুব বাস্তববাদী মানুষ নাকি তিনি।রায়হান ভাইয়ার মুখ থেকে শুনেছিলাম"

----যাই হোক তার বিয়ে ঠিক হয়েছে,তানজিলা আপুর সাথে।তানজিলা জিসান ভাইয়ের বাবার বন্ধুর মেয়ে।দেখতেও বেশ সুন্দর।
তাওহিদ ভাই নিজের বাবা মায়ের পছন্দেই বিয়ে করবে বলে,কারো কোনও সমস্যা নেই এই বিয়ে নিয়ে।বিয়ে এক মাস পর।তাই কার্ড দেওয়া এখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে।

"আমি মাত্র কোচিং থেকে বাসায় আসলাম।এসেই দরজার সামনে এতো মানুষের জুতো দেখে মনে মনে ভাবলাম কে আসলো। চিন্তা করতে করতে কলিং বেল বাজাতে লাগলাম।
হঠাৎ চোখ গেলো সামনের বিল্ডিং এর দিকে...... কয়েকজন প্রতিবেশি উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখছে,হয়তো তাদের মনেও আমার মতো কিউরিসিটি কাজ করছে।"

---আমি হাসতে হাসতে দরজা ধাক্কাতে যাবো তার আগেই কেউ দরজাটা খুলে ফেলে আর আমি তার উপর পরে যেতে নিলেই সে আমার বাহু দু'টো ধরে ব্যালেন্স করে দাঁড় করায়।জিসান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে,আমিও তাকে দেখে একটা শুকনো হাসি দিয়ে ঘরে ডুকলাম।

"ঘরে ডুকে জিসান ভাইয়ের পরিবারদের দেখে আমি শোকড______পরে জানতে পারলাম তারা দাওয়াত দিতে এসেছে।জিসান ভাইয়ের মা আমাকে তার কাছে বসালো,আমার মাথাটা টেনে কপালে একটা আদর দিলো।তার আমার প্রতি এতোটা ভালোবাসা খুবই মুগ্ধ করলো।উনি আসলেই অনেক ভালো,কিন্তু উনার মতো ভালো মানুষের ঘরে এই তিতা করলা(জিসান)কোথা থেকে এলো এটা বুঝতে পারছি না।"

---জিসানের মা তিশার মুখটা দুহাতে নিয়ে বললো,আমার ছেলেটা একদম ঠিকই বলেছে,তুমি আসলেই একটা চাঁদের টুকরা।তোমার হাসিতে মায়া লেগে আসে।

'আমিতো তার কথা শুনে অবাকের চরম সীমায়।জিসান ভাই এসব বলেছে তার মায়ের কাছে আমার সম্পর্কে ।বাট হোয়াই!'

"আমি আড় চোখে জিসান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম,সেও নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।আমি তার এই হাসির রহস্য তখন বুঝতে পারিনি।"

'নিশি আর তিশা তো সেম বয়স তাই না আপা।'(তিশার মা)

---হুম,শুধু দুতিন মাসের বড় ছোট ওরা।

"জানো তিশা তুমি যেদিন হয়েছিলে,রায়হান তো ভয়ে তোমাকে কলেই নিতে চায়নি।জিসানকে ফোনদিয়ে বলে,জানিস জিসান,বাবা না আমার জন্য একটা পুতুল নিয়ে এসেছে।একদম তুলতুলে পুতুল।একদম রুপকথার গল্পের পরীর মতো দেখতে এই পুতুলটা।"

---তখন জিসানও জিদ করলো, সে এই মুহুর্তে এই পুতুলকে দেখবে।ওকে অনেক বুঝানোর পরও যখন শুনছিলো না,তখন বাধ্য হয়ে রাত ১১ টায় তোমার আংকেল ওকে হসপিটালে নিয়ে আসে।রায়হান কোলে না নিলেও সেদিন তোমাকে জিসান কোলে নিয়েছিলো।

"আর তখনি সে আরেক আবদার করে বসে,এই পুতুল তার চাই।সে কাউকে তার পুতুল ধরতে দিবে না।এই পুতুল শুধু তার।
রায়হান কে তো যথারীতি ধমকাতে লাগলো,আজ থেকে এটা শুধু তোর পুতুল না,আমার ও।আমরা দু'জনি ওকে আগলে রাখবো আজ থেকে।"

----আন্টির মুখে এসব কথা শুনে কেনো জানি খুব লজ্জা লাগছিলো আমার।জিসান ভাইয়ের দিকেও তাকাতে পারছিলাম।জিসান ভাইয়ের মনে আমার জন্য এমন চিন্তাতো আমি কখনো কল্পনাও করেনি।কারন আমার কাছে জিসান ভাইকে টেবিলে পড়ে থাকা সেই ডিকশনারিটার মতো মনে হতো, যেটার উপকারিতা থাকলেও পড়তে বরই বোরিং লাগে।

"আমার কানে এখনো সেই কথাটা বাজছে,আমরা দু'জনেই ওকে আগলে রাখবো।হুম,আগলেই তো রেখেছে।'
জিসান নামক প্যারাটি আমার সমস্ত জীবনে জড়িয়ে আছে।ছোটবেলা থেকেই আমি তার কড়া শাসন পেয়ে আসছি।উনি আমার সাথে ভালো করে একটু কথা বলেছে এমন কোনও দিন মনে নেই আমার। মনে পরবেই বা কিভাবে,জিসান ভাই এমন কখনো করেনি।

---সব সময় আমার উপর চিল্লাচিল্লি, হাউকাউ ছাড়া কিছুই বলতো না।এখানে যেতে পারবিনা,ওখানে যেতে পারবিনা,এটা কেনো করিস,ওটা কেনো পরিস।উফ!......আমার পুরো লাইফ শুধু তার বিধিনিষেধ মানতে মানতে পার হয়েছে।।উনি আমার কাছে একটা বিষাদময় মাথা ব্যাথা ছাড়া আর কিছুই না।আর এই মাথা ব্যাথা থেকে মুক্তি চাই আমি।

||
||

"দেখতে দেখতে এক মাস কেটে গেলো,এই এক মাস আমি একটু ভালোই ছিলাম। কারন জিসান ও রায়হান ভাই দু'জনেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলো বিয়ের আয়োজনে,তাই আমাকে নিয়ে তাদের টেনশন টা একটু কম।আর আমার কাছে মনে হলো কতো বছর পর আমি  যেনো কারো খাঁচা থেকে মুক্তি পেয়েছি।আমিও আমার মন মর্জি মতো চলতে লাগলাম।"

---দুদিন ধরে মায়ের কানের সামনে ঘ্যান ঘ্যান করেই যাচ্ছি,সোপিং এর জন্য।সোপিং না করে দিলে বিয়েতে যাবো না বলে দিলাম।
কিন্তু আমার মা বলে কথা।কথা যেনো কান দিয়ে যায়ই না তার।হতাশ হয়ে নিজের রুমে বসে হেডফোন কানে দিয়ে গান শুনছিলাম।

"কিছুক্ষন পর মা কতোগুলো সোপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে রুমে ডুকলো,আমি মাকে কিছু জিঙ্গেস করতে যাবো তার আগেই মা বলে উঠলো,নে তিশা তোর সোপিং, গায়ে হলুদ,বিয়ে, বৌভাতে কি কি পড়বি সব আছে।"

---আমি পেকেটগুলো খুলে শোকড এর উপর শোকড হলাম।প্রতিটা ড্রেস অসাধারন।আর আমার পছন্দের রং এর।এর সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি ও আছে।
আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম,আমার মায়ের চয়েজ এতো উন্নত হলো কি করে।আর মা সোপিং করতে গেলো কখন।আর আমাকে নিলো না কেনো।

চলবে………।

No comments